আত্রেয়ী একটি নদীর নাম। আত্রেয়ীকে রাগতে আমি দেখিনি যা বলছে মৃন্ময় হয়তো ওর সেই অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে এই দীর্ঘ সংসার পথে হাঁটতে হাঁটতে। আসলে নদী রেগে গেছে এটা একটু বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় আর কি। সেই হাসিমুখের চেনা পরিচিত মেয়েটি ভয়ংকর রাগী এটা ভাবতেই কেমন যেন খারাপ লাগে আমার। যাকগে আজ ওর জন্মদিনের দিন এইসব কথা থাক না হয়। রাগ, অনুরাগ, বিরাগ বাদ দিয়ে আজ সেই কবেকার হায়দরাবাদে বাংলা ডেস্ক এর কাছে স্টুডিওর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা বহু পুরোনো ছবিতে ওকে খুঁজে পেলাম আমি এতদিন পরে এত বছর পরে। সেই কবেকার একটা পুরোনো বিবর্ণ একটা ছবি। কিছু স্মৃতি আর সেই ছবিতে সুন্দর ফেলে আসা কিছু স্বর্ণযুগের সময়।
সেই ডিসেম্বর এর ছুটিতে আমার হায়দরাবাদ ঘুরতে যাওয়া আমার মেয়ে বুটাকে নিয়ে আর সোমাকে নিয়ে। বুটা তখন কত ছোট। সেই আমার বাংলা ডেস্ক ঘুরে ঘুরে দেখা। সেই আমার মেয়ে আর বউকে পাশে দাঁড় করিয়ে হাসি মুখে বলা অভিজিৎ দা সবাই মিলে ছবি তুলি আমরা একটা বৌদির সাথে। সেই আমলে তো আর এতো মুঠো ফোনের রমরমা ছিল না। সেই বিখ্যাত রামোজি রাও এর আদিম কালের সেই ইটিভি বাংলার প্রস্তর যুগে। হাতের মুঠো ফোনেই বন্দী করা যেতো না এত মুহূর্ত, এত ছবি এক লহমায়। সেই পুরোনো আমলের একটি ক্যামেরায় ছবি তোলা এটি। দাঁড়িয়ে আছে আত্রেয়ী, রেডিওর শাশ্বতী দি, আর আমার পরিবার আর জয়িতা ওর সাথে কিছু দিন আগেও দেখা হলো প্রেস ক্লাবে। দেখেই চিনতে পারল আমায়। অভিজিৎ দা বলে এগিয়ে এসে কথা বললো জয়িতা। বেশ ভালো লাগলো আমার। আজকাল তো কেউ আর কথা বলে না আমার সাথে।
আজ ওর জন্মদিনের দিন শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে সেই কবেকার একটা ধুলো পড়া ছবি দেখে কত কিছুই না মনে পড়ে গেলো। কিছু মানুষ, আর সেই কলকাতা শহর থেকে বাংলা থেকে অনেক দূরে তৈরি হওয়া একটা খুব ঝাঁ চকচকে নয় একটা মেঠো বাংলা চ্যানেল। আর যে চ্যানেলে কর্মরত এই শহরের, এই বাংলার বহু ছেলে আর মেয়ে। ঘর ছেড়ে, বাড়ী ছেড়ে, পরিবার ছেড়ে তারা সবাই হাসিমুখে কর্মরত। একসাথে হাসিমুখে কাজ করা সবার। সেই জীবনে হয়তো বেশির ভাগ ছেলে মেয়ের কাছেই এটাই প্রথম চাকরি। বাক্স প্যাটরা গুছিয়ে ঘর ছেড়ে এই দূরে কাজ করতে চলে আসা। অচেনা অজানা হয়েও একে অপরের সাথে কেমন করে বন্ধু হয়ে যাওয়া। কাছের মানুষ হয়ে যাওয়া। ঠিক যেনো একটা একান্নবর্তী পরিবারের মতো মিশে যাওয়া। সেই চিত্রই ধরা পড়েছে এই বিবর্ণ হয়ে যাওয়া রং চটা একটা ছবিতে। যা খুঁজে পেলাম আমি এই গভীর রাতে।
আজ ওর জন্মদিনের দিন ওর ঝাঁ চকচকে জীবন এর মাঝে এই বিবর্ণ কিছু স্মৃতি হয়তো একদম ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। ওর ঠিক মনেই নেই হয়তো ওর সেই পুরোনো দিনের এই সব কথা। তবু ওর ঝলমলে উজ্জ্বল জীবনে এই জন্মদিনের দিন ওকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে আমার মনে পড়ে গেলো এই ছবির কথা। সেই আমার বাংলায় দৃপ্ত ভঙ্গীতে ওর খবর পড়া আত্রেয়ীর কথা। সেই ওর চেনা হাসি একদম সহজ সরল ব্যবহার যা আজও মনে আছে আমার। একদম বিখ্যাত টিভির পর্দায় দেখা অচেনা জগতের বাসিন্দা হলেও কেমন হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নেওয়া একদম পাশের বাড়ীর চেনা প্রতিবেশীর মতই। আমার মেয়েকে বউকে একদম আপন করে নেওয়া। যা আজও মনে পড়ে যায় আমার এতোদিন পরেও ওর জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে। সত্যিই অসাধারণ এই ফেলে আসা অতীত দিনের জীবন। যে জীবনে অনেক কষ্ট ছিল কিন্তু আনন্দও কম ছিল না কিন্তু সেই সময়। কেউ কেউ বলবে এমন ভাবনা ঠিক নয়।
একদিন ভেঙে গেলো সেই একান্নবর্তী পরিবার। টুকরো টুকরো হয়ে গেল আমাদের এই জুড়ে থাকা আঁকড়ে থাকা জীবন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে এদিক ওদিক সব ঘুরে বেড়ালাম আমরা যে যার মতো করে,নিজেরা বাঁচার জন্য আর পরিবারকে বাঁচানোর জন্য। ওর সাথে বোধহয় আমার দেখা হলো আবার সেই ২৪ ঘণ্টায় কতদিন পর। তার আগে ওর বোধহয় সেই চ্যানেল টেন, সি এন, আরও অনেক জায়গায় কাজ করেছে ও ঘুরে ঘুরে। খুব বেশি স্মৃতি ঘটনা নেই আমার ওর সাথে কাজ করার। তবু আজ ওর জন্মদিনের দিন শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে মনে হলো আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে কিছু কথা লিখে ফেলি আমি ওকে নিয়ে।
সেই যে একটি বহতা নদীর নাম আত্রেয়ী তাকে নিয়ে। সেই হায়দ্রাবাদ এর অফিস, সেই রামোজি ফিল্ম সিটির আঁকা বাঁকা পাহাড়ি রাস্তা, সেই চ্যানেল টেন এর হৈ হুল্লোড়, ট্রাম লাইন টপকে চা খেতে আসা আর নানা চেনা লোকের ভীড়, সেই বিরাটির ঘেরাটোপে নজর বন্দী সি এন এর অফিসে ঘাড় গুঁজে কাজ করা। আর এরপর সেই ২৪ ঘণ্টার মিডিয়া সিটির এগারোতলার ঝাঁ চকচকে অফিস, সেই অফিসের ছোটো একটা বারান্দা, মাথার ওপর নীল আকাশ, সাদা বকের ডানা মেলে উড়ে যাওয়া। আর একদৃষ্টিতে ওর তাকিয়ে থাকা আনমনে উদাস হয়ে।
কে বলে আত্রেয়ী খুব রাগী। এটা মনে হয় একদম ঠিক কথা নয়। বহুদিন ওর সাথে দেখাই হয়না আর আমার। কতদিন যে স্টুডিও থেকে খবর পড়ে এসে সেই মিডিয়া সিটির অ্যাসাইনমেন্টের টেবিলের পেছনে এসে হাজির হয়নি ও। কথা হয়নি বহুদিন ওর সাথে আমার। আজ ওর জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে লিখে ফেললাম আমি দু চার কথা। ভালো থেকো তুমি আত্রেয়ী। আর এমন প্রাণখোলা হাসি মাখা মুখে মৃন্ময়কে জবাব দাও ওর কথা একদম ভুল। তোমার জন্মদিনের দিন এক টোটো চালকের শুভেচ্ছা। ভালো থেকো তুমি দিদি।
আত্রেয়ীর জন্মদিনে শুভেচ্ছা - অভিজিৎ বসু।
ষোলো ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন