সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ঘরে ফেরা

ঘরে ফেরার এই ছবি দেখে সত্যিই ভোরবেলায় মনটা কেমন বিধুর হয়ে উঠলো আমার। সেই চেনা ঘর দুয়ার ছেড়ে কতদিন বাইরে থাকা। সেই বিখ্যাত ফ্রেড্রিকনগর শ্রীরামপুর শহরের ঘিঞ্জি আলো হাওয়া বাতাসহীন দু কামরার নিজের ঘর একমাত্র নিজের। সেই ঘর ছেড়ে চলে যাওয়া শান্তিনিকেতনে। ঘরে ফেরার আনন্দে আমার বুটার মুখে আজ ভোর বেলায় কেমন উজ্জ্বল হাসি। একা সেই ঘরে পড়ে থাকা অগোছালো সংসার আর সংসারের মাঝে মাকড়সার জাল বোনা সুচারু ভাবে। যে জাল কেটে বের হয়ে যাওয়া মুসকিল। তবু তো আমার এই বুড়ো বয়সে অপেক্ষার পালা ঘরে ফিরে আসার অপেক্ষা বুটার জন্য। যে ঘর ছেড়ে একদিন হঠাৎ করেই চলে যেতে হয় দূরে, অনেক দূরে। ঘর ছেড়ে,সংসার ছেড়ে, সম্পর্ক ছেড়ে, সমাজ ছেড়ে, প্রাণের আর অপ্রানের মানূষকে ছেড়ে। তবু ঘরে ফিরে আসার অনিন্দ্য আনন্দই আলাদা। যে আনন্দ আমায় বিমোহিত করে এই ভোরের আলো মাখা ঝিম ধরা সকালে। 


সীমান্তে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা শেষ প্রায়। আকাশপথে এখন সাদা কবুতরের ঘর মুখী উড়ে যাওয়া দেখতে বেশ ভালই লাগে আমার। সেই সিনেমার রাজাকে কোরামিন খাইয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় নামিয়ে দেওয়া, আর জোর করে যুদ্ধ করে হল্লা রাজার সেই গান গাওয়ার কথা মনে পড়ে যায় আমার। সেই আকাশ পথে মিষ্টি উড়ে আসা আর যুদ্ধ ফেলে দিয়ে ভাইয়ের কাছে ফিরে আসা গুপী আর বাঘার হাত ধরে। সেও তো একপ্রকার ঘরে ফিরে আসা। যে ভাই নিজের ভাই। যে যুদ্ধ সে করতে চায়নি কিছুতেই তবু যে কেনো যুদ্ধ শুরু হয় ভাই আর ভাইয়ে কে জানে। কারা যে ইন্ধন দেয় কে জানে। সেই সীমান্তে সুরক্ষা করতে গিয়ে যুদ্ধ। যে যুদ্ধ আমাদের সবার মাথা ব্যাথা কারণ হলো। আর তারপর আবার সেই যুদ্ধ থেমে গেলো হঠাৎ করেই কারুর আঙ্গুলি হেলনে। হৈ চৈ হুল্লোড় করে যুদ্ধে নেমে পড়া আর আবার যুদ্ধ থেমে যাওয়া হিসেব কষে আর অঙ্ক কষে মেপে মেপে। ঘরে ফেরার আনন্দে সেনাদের আত্মহারা হয়ে নাচ করা দেখতে বেশ ভালই লাগে আমার।

আসলে ঘরে ফিরে আসতে চাই আমরা সবাই। সেই নিজের ঘর, নিজের দুয়ার, সেই শ্যাওলা পড়া চৌবাচ্চা, সেই সবুজ পাতায় ভরা ধূসর জগতের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তুলসী মঞ্চ, সেই ভোর বেলায় দুর থেকে ভেসে আসা হরে কৃষ্ণ হরে রাম গান করতে আসা সেই খঞ্জনি বাজানো বাউল, সেই ভোর বেলায় রাস্তায় হলদে আলো জ্বলা ইঁট পাতা এবড়ো খেবড়ো রাস্তা, সেই পাড়ার চেনা গন্ধ, সেই পুকুরের ধার, সেই জামরুল গাছের ঝাঁকড়া ছায়া। যে ছায়া মাখা নিঃস্তব্ধ দুপুর আমার আর ফিরে আসে না কিছুতেই। এই ঘরে ফিরে আসার ছবি দেখে কত কিছুই যে মনে পড়ে যায় আমার। সেই ভোরবেলায় উঠোনে কয়লার উনুনে আঁচ দেওয়া মার ব্যস্ত হয়ে রান্নার জোগাড় করা। সকাল সকাল অফিসের ভাত এর যোগান দেওয়া সাথে গরম রুটি আর আলুর তরকারী করে টিফিন বক্সে ভরে দেওয়া। সেই চেনা ঘর, চেনা সংসার কবেই ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে হঠাৎ করেই। কতদিন আর আমার সেই ঘরে ফেরা হয়নি। আসলে সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে আর ঘরে ফিরে যেতে মন চায় না আমার। আসলে ঘরে ফেরা যার জন্য সেই মানুষটাই যে আজ ঘর ছাড়া কতদিন ধরেই।

আসলে এই সকালের বোলপুরের ছবি দেখে, ওদের ঘরে ফেরার ছবি দেখে সাত সকালেই আমার চোখে ঘরে ফেরার জলছবি। যে ছবি আমায় কখনও কাঁদায় আবার কখনও অনিন্দ্য আনন্দ দেয়। সত্যিই বোধহয় ঘরে ফিরে আসা খুব জরুরী। যে ঘর আমার নয় জানি। যে ঘর আমার চিরস্থায়ী নয় জানি তবু কেনো যে তাকে আঁকড়ে ধরি কে জানে। ঘরে ফেরার টান আলাদা। ঘরে ফেরার নেশা আলাদা। ঘরে ফেরার কথা ভাবলেই কেমন যেনো সব চোখের জলে ডুবে যেতে মন চায় বারবার। আমার ঘর, আমার দুয়ার, আমার সেই সকালের ভোর কবেই যে হারিয়ে গেছে কে জানে। আমার যে আর ঘরে ফেরা হবে না কোনওদিন।

ঘরে ফেরা - অভিজিৎ বসু।
এগারো মে দু হাজার পঁচিশ।
ছবি নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তোলা

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

জয় মা মঙ্গলচন্ডী

মা মঙ্গলচণ্ডী, যাঁহার নাম মধুর ও মনোহর, যাঁহার হস্তে বর ও অভয় মুদ্রা, যিনি দ্বিভুজা ও গৌরবর্ণা, যিনি রক্তপদ্মাসনে উপবিষ্টা ও মুকুট দ্বারা উজ্জ্বলরূপে ভূষিতা, যিনি রক্তবর্ণ কৌষেয় (চেলির) বস্ত্র পরিধান করিয়া আছেন, যিনি সহাস্যবদনা, সুন্দরাননা ও নবযৌবনা, যিনি সুন্দরাঙ্গী ও মধুর লাবণ্যযুক্তা, তিনিই হলেন দেবী মঙ্গলচণ্ডী। বিশ্বের মূল স্বরূপা প্রকৃতিদেবীর মুখ হ’তে মঙ্গলচণ্ডী দেবী উৎপন্না হয়েছেন। তিনি সৃষ্টিকার্য্যে মঙ্গলরূপা এবং সংহারকার্য্যে কোপরূপিণী, এইজন্য পণ্ডিতগণ তাঁকে মঙ্গলচণ্ডী বলিয়া অভিহিত করেন।” “দক্ষ অর্থে চণ্ডী এবং কল্যাণ অর্থে মঙ্গল। মঙ্গলকর বস্তুর মধ্যে দক্ষ বলে তিনি মঙ্গলচণ্ডী নামে প্রসিদ্ধ। প্রতি মঙ্গলবারে তাঁহার পূজা বিধেয়। মনু বংশীয় মঙ্গল রাজা নিরন্তর তাঁহার পূজা করিতেন।” জৈষ্ঠ্যমাসের প্রতি মঙ্গলবারে মা চণ্ডীর আরাধনা করা হয় বলে এই ব্রতের নাম মঙ্গলচণ্ডী ব্রত। জীবনে শ্রেষ্ঠ মাঙ্গল্যের প্রতিষ্ঠার জন্যই এ ব্রতের অনুষ্ঠান। মঙ্গলচণ্ডী ব্রতের নানা রূপ আছে। কুমারীরা যে মঙ্গলচণ্ডী ব্রতের আচরণ করে, তা অতি সহজ ও সংক্ষিপ্ত। দেবী অপ্রাকৃত মহিমার প্রশস্তিগীতি ব্রতের ছড়ায় এস...

পানকৌড়ির স্বপ্ন

উজ্জ্বল নক্ষত্র খচিত সব মুখে, কেমন মায়া জড়ানো হাসি, এ ওর গায়ে লেপটে যাওয়া জীবন।  সারা শরীরে ছড়িয়ে রয়েছে আলোকমালার বেআব্রু নীল, সাদা, সবুজ হরেক কিসিমের রং।  রং মাখা, সং সাজা শরীরে, মনে একটু উষ্ণতার হাতছানি, একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বেঁচে থাকার আকন্ঠ প্রয়াস। কত চেনা, অচেনা মানুষের মাঝে, উষ্ণতা ঢাকতে শীতবস্ত্র খোঁজে এই উষ্ণ রাতেও কেউ কেউ। জীবনের উষ্ণতার হাতছানি এড়িয়ে, শীতার্ত মানুষের উষ্ণতা অনুভব। ওরা সব কেমন যেন মায়াময় জীবনের, ছন্দহীন, গতিহীন সব বন্ধু মানুষ জন। যারা জানে না, সৌর জগতের কোন গ্রহের সন্ধান করতে নেমেছে তারা, এই রাত দুপুরে। যারা এখনো ভাবনার আগুন গায়ে মেখে, বেঁচে থাকার চেষ্টা করে বৃথাই। সব ওলোট পালট করে দিয়ে বলতে পারেনা তারা, আমরা সবাই বাঁচতে চাই। মানুষের অধিকার নিয়ে, সেই বাঁচার স্বপ্ন দেখতে চাই  দু চোখ ভরে। দয়া নয়, ভিক্ষা নয়, দান বা অনুগ্রহ নয়। নিজের মতো করে শিরদাঁড়া সোজা করে বাঁচার স্বপ্ন। যে বাঁচার জন্য কারুর কাছে,মুখাপেক্ষী হয়ে ভিক্ষাপাত্র নিয়ে থাকা নয়। উজ্জ্বল সেই সব মুখ গুলোয় নবমীর চাঁদের মিষ্টি টাটকা আলোয় ভরপুর। কেমন যেনো ট...

বাংলা জাগোর আউটপুট এডিটর

কিছু কিছু জনকে নিয়ে লিখতে গেলে থমকে দাঁড়িয়ে পড়তে হয়। মনে হয় এই রে কি ভাববেন তিনি। যদি কিছু মনে করেন। সম্পর্কের গভীরতা তো বেশি নয়। তাঁর সাথে কাজ করাও খুব বেশিদিন এর নয় মেরে কেটে দশ বা বারোদিন হবে হয়তো বা পনেরো দিন। আর তাতেই আমি লিখে ফেলব আমার সাদা জীবনের কালো কথা। তাতেই লিখে ফেলবো আমি আঁকিবুঁকি ব্লগের লেখা। যদি কিছু মনে করেন তিনি।  সেই বাংলা জাগোর অফিস। সেই হাজরা মোড় থেকে ই ওয়ান বাস থেকে নেমে দৌড়ে অফিস পৌঁছে যাওয়া। সেই রাজাময় এর দৌলতে চাকরি পাওয়া আমার। সেই অফিস এই দেখা হলো আমার চয়নিকার সাথে। এক সময়ের জনপ্রিয় মুখ খবরের দুনিয়ায়। সেই বিখ্যাত অ্যাঙ্কর তিনি। সুন্দর মুখের জয় সর্বত্রই। সেটা বারবার প্রমান হয়েছে নানা ভাবেই। সেই বাংলা জাগো চ্যানেলের আউটপুট এডিটর মনে হয়। ভুলে যাই আজকাল বয়স হচ্ছে বলে নানা কথা। সেই ছোটো বাংলা জাগোর সংসার। সেই বিকাশ, ইন্দ্র, সন্দীপ, অঙ্কিতা, অনন্ত দা, সিরাজুল রাহুল দা , সুদীপ্ত আরও কতজনকে নিয়ে যে সুখের সংসার ছিল তাঁর। সেই কত দৌড় ঝাঁপ করা। দুতলা থেকে তিনতলায় হাঁফাতে হাঁফাতে খবর ধরিয়ে দেওয়া ঠিক যেনো রিলে রেসের মত...

আমাদের সৌম্য সিনহা

কিছু কিছু স্মৃতি। কিছু কিছু সময়কে ভোলা যায় না কিছুতেই। আসলে এই সব ফেলে আসা সময়। ফেলে আসা মানুষজনকে নিয়েই তো দিন রাত দুপুর বিকেল সন্ধ্যার যুদ্ধ লেগে থাকতো একটা সময়। যে যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে গিয়ে এক এক সময় ভালোই লাগে আমার। আবার এক এক সময় মনে হয় এই তিন চাকার টোটোর জীবন ভালো, না দু পায়ের শিরদাঁড়ার জোরে সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারা নুয়ে পড়া, ভেঙে পড়া, পায়ে লুটিয়ে পড়া মানুষের জীবন ভালো। কে জানে কোনটা ভালো।  আজ একটা টোটো চালকের একটি লেখা পড়ে আমার এক পুরোনো দিনের বন্ধু বলা যায় না মনে হয় সেই পর্যায়ে আমাদের সম্পর্ক নয় দুজনের কারুরই। এক সময়ের কাজের জায়গার সহকর্মী হিসেবে পুরোনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করা আর কি। যাঁদের ঠিক বন্ধু বলা যায়না কিছুতেই। যে আমার একটা লেখা পড়ে আজ আমায় লিখলো টোটো চালকের লেখা ভালো। যা খুব একটা কেউ বলে না আমায় আর কেউই। কারণ আমার এই তিন চাকার জীবনের সাথে দু পায়ের জীবনের ফারাক যে অনেক।  সেই ভালো শুনেই আমি একেবারেই গলে জল। রাগ অভিমান দুঃখ অপমান কাটিয়ে লিখতে ইচ্ছা হলো আমার তাঁকে নিয়ে। সেই সাংবাদিক, কবি, সদা হাস্...