আজ জামালদার জন্মদিন। আকাশবাণীর সেই সৈয়দ কওসর জামাল। কবিতা লেখক ও প্রাবন্ধিক জামাল দা। সেই ফরাসী কবিতার অনুবাদ করেন যিনি স্বচ্ছন্দে হাসিমুখে। সেই তাঁর লেখা কবিতার বই পাঠ করেন তিনি নানা অনুষ্ঠানে। কিছু কিছু মানুষ আছেন যাঁদের সাথে কথা বলতেই বেশ ভয় করে আমার। তাঁর বলয় ভেদ করে তাঁর কাছে যেতেই কেমন ভয় করে যেনো। সেই আকাশবাণীর লম্বা করিডর। সেই পরপর ঘরের দরজার বাইরে ভারী ভারী পর্দা ঝুলছে। ফ্যানের হাওয়ায় পর্দা নড়ছে একটু একটু করে। সেই একটি ঘরে বসে আছেন তিনি। ধোপদুরস্ত পোশাক আর সুন্দর ঝকঝকে জুতো পরে বারান্দা দিয়ে হেঁটে যেতেন তিনি একদম ফিটফাট হয়ে সেই কোনও সময় ডিউটি রুমে আবার সেই দোতলায় স্টেশন ডিরেক্টর এর ঘরে। দেখেই কেমন যেনো সমীহ করেই তাঁকে একটু রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পড়া আমাদের একটু জড়সড় হয়ে।
আমরা সেই সময়ে আকাশবাণীর অস্থায়ী কর্মী সব। সবে মাত্র তখন স্নাতক হয়ে কলকাতা শহরে কাজের সন্ধানে ঘুরছি এদিক সেদিক ওদিক। ভাগ্যে যদি জুট যায় একটা কাজ। সেই সময়ে আকাশবাণীর লম্বা বারান্দার এককোনে বিজ্ঞানের ঘর, যুববানী বিভাগ, কৃষি বিভাগ, বাংলা কথিকা বিভাগ, ইংরাজি বিভাগ, ড্রামা বিভাগ, সঙ্গীত বিভাগ সব নানা বিখ্যাত মানুষজনের সমাহার এই সব বিভাগে। সব মিলিয়ে একটা চাঁদের হাট যেনো। সেই স্বাতীদি যাঁর কাছে আমার কাজের শুরু, সেই মানস মিশ্র যিনি প্রথম আমায় যুববানীর অনুষ্ঠান এর সূযোগ করে দিলেন সেই গ্রাম থেকে বলছি অনুষ্ঠান। সেই কৃষ্ণশর্বরী দি, সেই সমরেশ দা ড্রামা বিভাগের, সেই অগ্নিভ দা গানের, বাসবী দি, সেই নুরুল দাও ছিলেন, আর অসীমা দি, অন্যদিকে সংবাদ বিভাগে তখন সুনিত দা ছিলেন। খবর পড়তেন বরুণ মজুমদার, তরুণ চক্রবর্তী, সেই দেবদুলাল বন্দোপাধ্যায় সব বিখ্যাত মানুষজনকে কাছ থেকে দেখেছি আমি।
আজ জামালদার জন্মদিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গিয়ে এইসব নানা কথাই মনে পড়ে যায় আমার। সেই সব ফেলে আসা দিনের কথা জীবনের শুরুর সেই কাজের জায়গার কথা মনে পড়ে যায় আমার এই বুড়ো বয়সে এসে। আকাশবাণীর সেই অস্থায়ী কাজের জগৎ খুব ভালো লাগতো আমার। সেই রেকর্ডিং শিখে নেওয়া। সেই স্টুডিওতে অডিশন শুরু হওয়া। সেই লাল আলো জ্বলা স্টুডিওর বাইরে। সেই পুরোনো দিনের সব নানা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা আর কি। সেই অস্থায়ী কর্মীদের সাথে স্থায়ী কর্মীদের একটা বন্ধন তৈরি হয়ে যাওয়া সেই সময়। সেই মিলেমিশে কাজ করা একটা ঘরোয়া পরিবারের মতোই যেনো আমাদের এই সংসার আসলে আজকাল যেমন মিডিয়া বদলে গেছে সেই অবস্থা ছিল না আজ থেকে ত্রিশ বছর আগের সেই যুগে। সেই ১৯৯৫ সাল বা তার আগের কলকাতা, সেই আমলের বাংলা, সেই সময়ের মিডিয়া তো এমন হয়ে যায়নি একদমই।
আর তাই জামালদার লেখা শত্রু শত্রু খেলা কবিতার লাইন পড়তে পড়তে বেশ ভালই লাগে আমার। সেই বন্ধু বন্ধু খেলতে খেলতে কখন যে শত্রু হয়ে গেছি আমরা কেউ বুঝতে পারিনি আর। সেই মণিকর্ণিকার ঘাট, সেই চিতার আগুন, আর ভালবাসা যেনো মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় তাঁর লেখায়। তবুও তিনি লিখে চলেন তাঁর কবিতার লাইন। সেই শান্তিনিকেতনে তাঁর মিটিং করতে যাওয়া। সেই পুরোনো দিনের নানা কথা মনে পড়ে যায় আমার বারবার। যে মানুষটা এতো সুন্দর লেখেন তাঁকে আর ভয় কী। তবুও কোনওদিন তাঁর কাছে যাবার সাহস হয়নি আমার। আজ এতো বছর পরে তাঁর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে সেই সব কথা মনে পড়ে গেলো আমার। সেই আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় লিখে ফেললাম আমি জামাল দার কথা। ভালো থাকবেন আপনি। সুস্থ থাকুন দাদা। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।
জানি আমাকে আপনি চিনতে পারবেন না আজ আর। তবুও সেই পুরোনো দিনের স্মৃতি কথা মনে রেখেই লিখে ফেললাম আমি আপনার কথা, সেই সব পুরোনো দিনের আকাশবাণীর কথা,সেই শীতের দুপুরে ইডেন এর মাঠে খেলার কথা, সেই কত পুরোনো দিনের কথা যে মনে পড়ে যায় আমার আজকাল এটা একটা রোগ খারাপ রোগ বলা যায়। ভালো থাকবেন আপনি দাদা। সুস্থ থাকুন। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। আর এইভাবেই কবিতার লাইন লিখে ফেলুন যা পড়ে আমরা সবাই মুগ্ধ হই। জীবনের এই দীর্ঘ যাত্রাপথে আপনার এই স্মৃতির কথা বলার ইচ্ছা হলো আমার। কবিদের আর ভয় কিসের। তাই ভয় কাটিয়ে লিখে ফেললাম আমি আজ কিছু কথা। ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন।
হ্যাপি বার্থডে জামাল দা - অভিজিৎ বসু।
চব্বিশ অক্টোবর দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন