সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইটিভির বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য

কত দিন ধরেই তো খুঁজে বেড়াচ্ছি আমি বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যকে। সেই কোথায় যে হারিয়ে গেলো কে জানে সেই বিখ্যাত সাংবাদিকটি। সেই কেমন হাসিখুশি জীবন নিয়েও হাজারও বড়ো অ্যাসাইনমেন্টে গিয়েও কত কুল থাকা যায় সেটা আমি বিশ্বজিৎদাকে দেখে শিখলাম আর কী। সেটা সেই জঙ্গলে মাওবাদী নেতাদের সাথে কথা বলতে যাওয়া হোক বা তাঁদের কোনোও এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার নেওয়া হোক। কিম্বা আলিমুদ্দিন স্ট্রীট এর অফিসে গিয়ে বিমান বসুর সাথে একান্তে কথা বলা হোক। কিম্বা অনিল বিশ্বাসের মুখোমুখি হয়ে কথা বলা হোক।

কিম্বা সেই মূখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বন্যাদুর্গত এলাকা আরামবাগ মহকুমায় বন্যা পরিস্থিতি দেখতে হাজির হয়েছেন। খুব সম্ভবত বিশ্বজিৎ দা হাজির আকাশ বাংলা চ্যানেল থেকে সেই সময়। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কথা বলছেন গ্রামের মানুষদের সঙ্গে একটু দূরে। রিপোর্টার আর ক্যামেরাম্যানকে আটকে দিয়েছে পুলিশ। যাতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমরা কেউ যেতে না পারি। আমি উত্তেজিত কিন্তু আমার পাশে দাঁড়িয়ে একদম নির্বিকার হাসিমুখ বিশ্বজিৎদার কথা ছাড় তো, আমাদের যেতে না দিলে আমরা কি করবো। প্রচার হবে না ওদেরই। একটু পরেই সেটা বুঝতে পেরে পুলিশকে নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর, সাংবাদিকদের ছেড়ে দিন আপনারা। আর তখন বিশ্বজিৎদার মুখে মৃদু হাসি দেখলি তো কেমন হলো। 

সেই আকাশ বাংলা, ইটিভি বাংলা, ২৪ ঘন্টা, কালান্তর, চ্যানেল টেন, কত পুরনো দিনের এই বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিক তিনি। যাঁর কাছ থেকে খবর পেতে আর কাজ শিখতে অসুবিধা হয়নি কোনোদিন কোনো সময় জুনিয়র রিপোর্টারদের। তাঁর খবরের সোর্স যে অনেক বড়ো, অনেক বেশি ভালো রিপোর্টার তিনি অনেক সিনিয়র এটা বোধহয় কিছুতেই বুঝতেই দেননি তিনি কোনোদিন কাউকেই আমাদের মত চুনোপুঁটিদের।

 কেমন একটা বিন্দাস জীবন নিয়ে কাটিয়ে দিলেন হাসিমুখে। সেই আর প্লাস এর কাজের সময় কতদিন দেখা হয়েছে প্রেস ক্লাবে আমার সাথে। সেই মহাকরণে কতদিন দেখা হয়েছে। সেই ইটিভির বিখ্যাত পুরোনো দিনের সংসারে কতদিন কত ঘটনাই ঘটেছে। সেই রবিশঙ্কর দত্ত আর বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের বিখ্যাত জুটি। সেই ঠিক যেনো ফুটবল মাঠে কৃশানু বিকাশ জুটির মতই ওদের দুজনের বিচরণ করা খবরের ময়দানে। হাসি মুখে গোল করে কেমন যেন বিন্দাস হয়ে ঘুরে বেড়ানো ভাবটা এমন যেন কিছুই হয়নি এই আর কি। 

এই বহুজনের সাথে একটা ছবিতে বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যকে দেখে আমার বড্ড ভালো লাগলো আজ। বাম বিটের একজন দাপুটে সাংবাদিক। কিন্তু দাপুটে হলেও নিজের সাংবাদিক সত্তাকে বিক্রি করে দেননি কোনোদিনই তিনি কারুর কাছেই। সেই কবেকার পুরোনো আমলে ইটিভি বাংলার পর্দায় মাওবাদী নিয়ে সিরিজ করে হৈ চৈ হুল্লোড় ফেলে দিলেন তিনি বাংলা টিভির পর্দায় একটা সময়। যে সোর্স নিয়ে তিনি কাজ করেছেন সেটা খুব কম সাংবাদিকের আছে বলে আমার অন্ততঃ মনে হয়। কিন্তু কেমন নির্লিপ্ত আর বিন্দাস হয়ে নিজেকে জাহির না করে কাটিয়ে দেওয়া হাসিমুখেই তাঁর। আজকালের সিনিয়র সাংবাদিকদের দেখে কেমন যেনো থমকে দাঁড়াতে হয় আর কি।
 
সেই চ্যানেল টেন এর অফিসে বর্তমানের দাপুটে এক বিখ্যাত মহিলা অ্যাঙ্কর কি প্রশ্ন করবেন তাঁর রাজনৈতিক গেস্টকে বিকেলের বা সন্ধ্যার শোতে সেটাও বলে দিতেন তিনি হাসিমুখেই। কোনও অহংকার নিয়ে নয়। আসলে আজকাল মিডিয়ায় এমন একজন মানুষের বড়ো অভাব মনে হয় আমার। চারিদিকে এত ঢক্কানিনাদ এর মাঝে কেমন যেনো লাগে আমার। আগে ফোন করে কত গল্প হতো দুজনের এই বাংলা মিডিয়ার নানা মজার হাসিঠাট্টা খবর নিয়ে। কাজের জন্য দু একবার কথাও হয়েছে আমার। কিন্তু তারপর ধীরে ধীরে নিজেই কেমন অন্তরালে চলে গেলেন তিনি। বহুদিন দেখা হয়নি আমার সাথে তাঁর। 

সেই তাঁর ২৪ ঘণ্টায় চাকরির সময় অভীক দত্ত আর অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তাঁর আসা। কেমন যেনো একদম নিজের চেনা ঘরে ফেরা যেনো তাঁর। আর সেই তাঁর বেতন নিয়ে আলোচনা করার গল্প শোনা এক প্রাক্তন ২৪ এর বড়ো কর্তার কাছে। সে সব কিছু শুনে মনে হয় ভালো সাংবাদিকদের বোধহয় এমন সম্মান দিয়েই কাজে যোগ দিতে বলতে হয়। আজ বহুদিন পর দেখলাম বিশ্বজিৎদার একটা ছবি। যে ছবিতে অনেকের মাঝে দেখে তাঁকে বেশ ভালই লাগলো।

 বহুদিন দেখা হয়নি, কথাও হয়নি আমার বিশ্বজিৎদার সাথে। ভালো লাগলো দাদা। সেই তুহিন দাস চন্দ্র, সেই সৌরভ গুহ, সেই মনীশ কীর্তনিয়া,সেই বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য্য এমন কতজনকে যে মনে পড়ে গেলো আজ আমার এই রাতদুপুরে। সেই কথাই আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় লেখা থাকবে সেই বিখ্যাত সাংবাদিক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য্যের কথা। যে কথা না লিখলে আমার এই ব্লগ পূর্ণতা পাচ্ছিল না কিছুতেই। তাই আজ মনে করে সেই ইটিভির বিখ্যাত পুরোনো দিনের এক সাংবাদিকের কথা লিখে ফেললাম। 

ইটিভির বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য - অভিজিৎ বসু।
তেরো ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...