আঁকাবাঁকা পথ ধরে আমার এগিয়ে চলা। এলোমেলো এলেবেলে জীবন নিয়ে এগিয়ে চলা। যে জীবনে আবাহন আর বিসর্জন নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই কোনোদিন। যে জীবনে জড়িয়ে থাকে সুখ আবার দুঃখও। যে জীবনে জড়িয়ে থাকে নতুন কিছু পাওয়ার আশায় আনন্দে উদ্বেলিত হওয়া। আবার আমার এই সাদা জীবনের কালো কথা বা কালো জীবনের সাদা কথার ছোপ ছোপ দাগ। সেই বাঘের গায়ে ডোরা কাটা দাগ নিয়ে বেঁচে থাকা আমার। একদম নিজের মতো করেই যেখানে কারুর কাছে কোনোভাবেই তাঁর বশ্যতা মেনে নিয়ে নয় যেটা আমি পারলাম না কোনোভাবেই কোনওদিন।
তবুও জীবন যাপন তো করতেই হয় আমাদের। যে জীবনের বাঁশবনের ছায়ায় বসে দেখতে হয় বাঁশপাতার মাঝে গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকে ফিঙের নাচন। সেই ঝিরিঝিরি পাতার ফাঁকে মিষ্টি রোদের নরম আলো ছায়ার খেলা। যে খেলা দেখতে আমার বেশ ভালই লাগে আজকাল। যে খেলায় কত চেনা মুখের অচেনা ছবি যে ধরা পরে যায় হঠাৎ করেই কে জানে। আমি সেই ছবির ভীড়ের মাঝে কেমন বেঁহুশ হয়ে নিজেই হারিয়ে যাই এদিক, ওদিক, সেদিক। চেনা অচেনার পথ ধরে বাঁশবনের ছায়া মেখে হারিয়ে যাওয়া সেই জীবন। যে জীবনে সাদা কালো কত কিছুই না থেকে যায় দাগ রেখে যায়। যা দেখে আমার বেশ ভালই লাগে।
এই নিঃস্তব্ধ ভোরের ঊষা লগ্নে আমি কেমন যেন চুপটি করে অনুভব করি রাত শেষে ভোরের আলোয় আর কিছুক্ষণ পরেই উদ্ভাসিত হবে এই বিশ্ব চরাচর। যে চরাচরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে এদিক ওদিক কত চেনা টুকরো মুখের বিশ্বাস আর বিশ্বাস ভঙ্গের চাপা নিশ্বাস, আলোর নাচন, ভালোবাসার স্পর্শ মাখা মানুষের জীবনের অনুরণন, যে অনুরণনে কখনও আমি আনন্দ পাই, দুঃখ পাই, কষ্ট পাই, যন্ত্রণা পাই আবার সেই সব কিছুই ভুলে এগিয়ে চলি একা একাই নিজের লক্ষ্য পথ ধরে। সত্যিই অসাধারণ এই জীবন আর জীবনের চারপাশের নানা অনুভূতি। হেরে যাওয়া আর হারিয়ে দেবার অনুভূতি। যে অনুভূতির জারক রসে জারিত হতে আমার আজকাল বেশ ভালোই লাগে এই ভোরের বেলায়।
আমার এই ভাঙাচোরা জীবনে হঠাৎ করেই বদলে যাওয়া জীবনে এ যেনো রূপকথার রাজ্যে প্রবেশ করা। আর সেই রাজ্যে জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা লোভ, হিংসা,পরশ্রীকাতরতা, আত্মভরিতা, বিশ্বাস ভঙ্গের করুন সুর আর নরম ঝাপটা আমায় আক্রান্ত করে। আমি কেমন যেন নির্বাক হয়ে যাই আমার এই আঁকাবাঁকা পথ ধরে হেঁটে চলা বেবাক জীবন নিয়ে। যে জীবন আমায় বারবার আহত করে। আমি একা একাই ঘুরে বেঁচে থাকতে চাই সেই বাঁশবনের ছায়া মাখা পথ ধরে। যে পথের ধারে এইসব কিছুই অপেক্ষা করে না।
যে পথের ধারে দাঁড়িয়ে থাকে আনমনে এলোমেলো জীবন নিয়ে দুখু মিঞার সুখী নামের মিষ্টি কালো বউ। যে কর্মহীন অর্থহীন দুখীকে বড্ড বেশি ভালোবাসে। যার চোখের অলোর ঝিলিক দেখে আমার মনের কষ্ট দুর হয়। দূরে পুকুর ধারে সাদা হাঁসের ধীরে ধীরে এগিয়ে চলা, পানকৌড়ির স্বপ্ন দেখে ঘাড় ঘুরিয়ে জলে ডুব দেওয়া, মাথার ওপর সাদা বকের ডানায় ভর করে মেঘের পথ ধরে এগিয়ে চলা আমায় কেমন আশ্বস্ত করে। আহত আমি, যন্ত্রণা বিদ্ধ আমি, ক্লান্ত অবসন্ন আমি, চেনা অচেনার দ্বন্দ্বে খাদের কিনারে পড়ে যাওয়া আমি কেমন যেনো শক্তি পাই। ঘুরে দাঁড়ানোর, বাঁচার আর বাঁচানোর শক্তি।
সত্যিই অসাধারণ এই জীবন আর জীবনের ছায়ামাখা বাঁশবনের পথ। যে পথ কখনও উপল, আবার কখনও চপল। যে পথের চারিপাশে নানা জনের আনাগোনা। আর সেই পথ ধরে আমার এগিয়ে চলা অন্ধকার রাত থেকে ভোরের আলো মাখা পথে। যে পথের বাঁকের ধারে অপেক্ষা করে আশা নিয়ে ভরসা নিয়ে একদল মানুষ। যাঁরা আমায় ভালোবাসেন সত্যিই ভালোবাসেন। যাঁদের ভালবাসার নরম উত্তাপ গায়ে মেখে আমার এই বুড়ো বয়সেও বেঁচে থাকতে আমার সত্যিই খুব ভালো লাগে। আমার এই হেরে যাওয়া জীবনে আর হারিয়ে যাওয়া জীবনে। বেঁচে থাকার যে এত আনন্দ,আমার সাদা কালো জীবনের এই যে বর্ণময় ছন্দ তাকে নিয়ে বেঁচে থাকতে আমার বেশ ভালই লাগে। শুধু মাত্র শেষে এটাই বলি, জীবনকে দেখো জীবনই হলো সবথেকে বড় শিক্ষক। সেই জীবনের থেকে শিক্ষা নিয়ে আমার আঁকাবাঁকা পথ ধরে এগিয়ে চলি আমি একা একদম একা।
আঁকাবাঁকা পথ ধরে এগিয়ে চলা - অভিজিৎ বসু।
তেইশ মে, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তোলা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন