বাবা দিবসে আমার আর বুটার কিছু স্মৃতি ঝলমল পুরোনো ছবির কোলাজ। যে ছবির বুটা আজ অনেক বদলে গেছে। ছোটো থেকে অনেক বড়ো হয়ে গেছে সে। তবু আজও আমার বুটার সেই গলা ধরে ঝুলে থাকা ছবিটা আমার বড় প্রিয় ছবি। আমার সাথে ওর দিন রাত চিপকে থাকা ব্যাপারটা ছোটকাল থেকেই ছিল। সেই ছাদে ঘুড়ি লাটাই নিয়ে ঘুড়ি উৎসবে সামিল হওয়া। ভাতের হাঁড়ি থেকে মাকে লুকিয়ে ভাত এনে ঘুড়ি জোড়া এসব ধীরে ধীরে কেমন করে হারিয়ে গেলো কে জানে।
হাসপাতাল থেকে ওই একরত্তি মেয়েটা যখন ঘরে এলো সেই সময় এত ভালোবাসার স্পর্শ অনুভব করিনি আমি। ধীরে ধীরে আমি ওর কাছে কেনা গোলাম হয়ে গেলাম কেমন করে কে জানে। ও যা বলবে সেটা না করতে পারলে কেমন একটা বুকের মাঝে খচখচ করে সারাদিন। পিতৃত্ব অনেক বড় বিষয়। অনেক বড় ব্যাপার। সেই বোধ শক্তি আমার নেই। শুধু ঐ একরত্তি মেয়েটা যেনো কষ্ট না পায়, দুঃখ না পায়। মুখ গুঁজে শুয়ে না থাকে কিছু চেয়ে না পেয়ে। সেটা করতে করতেই আমার আর ওর প্রেম, ভালোবাসা, খুনসুটি, ঝগড়া জমে গেলো দুজনের অজান্তে ধীরে ধীরে।
ধীরে ধীরে বু বলা আমার প্রিয় বুটা কেমন করে যেন বড়ো হয়ে লেডি হয়ে গেলো। এখন সে চোখ পাকিয়ে বলে কোনো কান্ডজ্ঞান নেই তোমার গান্ডু বাপ একটা। কোথাও কাজ করতে পারো না তুমি, মিশতে পারো না কারুর সাথে। সবাই ঠকিয়ে নিয়ে চলে যায় তোমায়। চাকরি ছেড়ে দুমদাম বসে পড়ো তুমি। সংসার নিয়ে ভাবো না তুমি। মা একা কাজ করে চলেছে কষ্ট করে এই রোদে। আর তুমি ঘরে বসে আছো। ফেসবুকে পোস্ট করছো আমার শিরদাড়া সোজা। এই বলে কপালে স্টিকার লাগিয়ে দেয় গান্ডু বাপের। সত্যিই তো একদম বোকা সোকা মানুষ আমি।
তাই বাবা দিবসে অন্যরকম একটা অনুভূতি আমার। যে ছাতা হয়ে মেয়ের কাছে দাঁড়াবার কথা ছিল ছোটো বেলা থেকে বড় বেলা পর্যন্ত। সেই ছাতা কেমন করে যেন আচমকা ঝড়ে উড়ে গেলো। লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলো আমাদের সুখের সংসার। বুটার চাওয়া পাওয়ার মাত্রা কমে গেলো একদম। ও আর বায়না করে না আমার কাছে আজকাল সময় অসময়ে। দুজনে আর রাত জেগে অন লাইনে পূজোর আগে কতদিন যে জামা কাপড় কিনি না কে জানে। ওকে বলি কিনে নিয়ে নে মাকে বলতে হবে না আর। ওর দু চোখের চিক চিক করে ওঠা আনন্দ উপভোগ করতে দেখিনি বহুকাল আমি।
সত্যিই তো বাবা হিসেবে আমি একদম ফেল করা একটি বাবা। একদম বোকা বাবা। যে বাবাকে নিয়ে বুটা আজকাল খুব বিরক্ত নাজেহাল। তবু সেই মেয়েটাই তো রাতের অন্ধকারে আচমকা আমি বাতিল হয়ে কেঁদে ফেলে দিলে কিম্বা মার কথা মনে পড়লে কেঁদে ফেলে দিলে। আমায় বুকে জড়িয়ে চোখের জল মুছিয়ে দেয় গভীর বন্ধনে গোপনে যাতে কেউ জানতে না পারে। ওর মাও জানতে পারে না সেই বাবা মেয়ের যুগলবন্দী রাত জাগা দুজনের কষ্টের চোখের জলের গল্পের কথা।
যে মেয়ে এত বিরক্ত সেই আবার নিজের টাকা দিয়ে আমার এই বোকা বাবার জন্মদিনে দৌড়ে খাবার কিনে আনে, কেক কিনে আনে। চোখ পাকিয়ে বলে ঠিক করে বস তুমি ছবি তুলে দিচ্ছি আমি। ওর কঠিন কঠোর বিরক্ত ভাবের মাঝেও যে সেই গলা ধরে ঝুলে থাকা চিপকে থাকা বুটাকে আমি খুঁজে পাই এখনোও। এই বাবা দিবসের দিনে তাই আমি ওর কাছে ঋণী, কৃতজ্ঞ।
এমন একজন গণ্ড গ্রামের মেঠো পথের পথিক হয়ে গান্ডু বাবাকে আমার মেয়ে আজও ভালোবাসে প্রাণ দিয়ে। সত্যিই তো পিতা, পিতৃত্ব, ভালোবাসা এসব অনেক বড় ব্যাপার। অনেক ভারী ভারী শব্দ। শুধু এটা জানি যে আমার আর বুটার এই চিপকে থাকা জুটি আজও টিকে আছে আনন্দ করে হৈ হৈ করে। আমায় বুটা শাসন করলেও সে আমায় ভালবাসে প্রাণ দিয়ে। বাবা দিবসে অন্যরকম একটা অনুভূতি আমার। ভালো থাকিস বুটা।
ইতি তোর,
বু।
বাবা দিবস ও বুটা - অভিজিৎ বসু।
ষোল জুন, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন