সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে


ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে
জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে
হোথায় হবে বনবাসী,
          কেউ কোত্থাও নেই।
ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে
বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে,
শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে
          থাকব দুজনেই।

বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে-
আসবে না কেউ তোমার কাছে,
দিনরাত্তির কোমর বেঁধে
          থাকব পাহারাতে।
রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে
মারবে উঁকি আড়ে আড়ে,
দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি
          ধনুক নিয়ে হাতে।

.......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর



টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।

 একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়। 

জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো। সেগুলো কোথায় ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছে কে জানে। সারাদিন যারা বক বকম করে মাথা খেত তারাই উধাও হয়ে গেছে এই বৃষ্টিতে।

 কবুতর গুলো ভিজে চুপসে গিয়ে ঘুল ঘুলিতে সেঁধিয়ে গেছে ওরা। মাঝে মাঝেই গা ঝেড়ে জল ঝাড়ছে ওরা গা থেকে। আর ঘোলা চোখে দেখছে আকাশকে ঘুল ঘুলি থেকে মুখ বের করে। সত্যিই বলতে কি এমন বৃষ্টি ভেজা দিনে মনে পরে যায় ঝর ঝর বাদল দিনে গানের কথা।

 গ্রামের লোকদের কথায়।
"শীতের শুরুতে বৃষ্টি
সেযে বড়ই অনাসৃষ্টি!
ছোট থেকে শুনে আসছি এই কথা। খনার সেই বিখ্যাত বচন "যদি বর্ষে মাঘের শেষ--ধন্যি রাজার পুন্য দেশ!"এই বচনের নিশ্চয়ই কোনও যথার্থতা বা সত্যতা আছে!না হলে এই কথা বলতেন না তিনি। 

আগেকার দিনে জমিতে সেচ ব্যবস্থার তেমন উন্নতি ছিল না। তাই সাধারনত বর্ষার জলের ওপর ভরসা করেই একবার ধান চাষ হত। অঘ্রান পৌষ মাসে ধান জমি থেকে উঠে গেলে। আর সেই খালি জমিতে মাঘের বৃষ্টি পেলে জমি উর্বরতা পেত অনেকটাই। এটাই হয়তো খনার বচনের যথার্থতা। সেই কথা ভেবেই এটা তিনি বলেছিলেন।

 কিন্তু এখন তো অঘ্রানের শেষ। এই সময় বৃষ্টি হলে শীতের আলু, কপি অন্য সবজি সহ আরো যাবতীয় ফসলের ক্ষতি হবে। অনেক জমিতে এখনও ধান কাটা হয়নি সেগুলোর কি হবে। মাঠের ধান মাঠেই পড়ে থাকবে।চাষীদের মাথায় হাত পড়বে। যাই হোক প্রকৃতির ওপর তো আর কারো হাত নেই আমাদের। 

আগেকার দিনে নিম্নচাপ এর কথা খুব বেশি শুনতাম না আমরা। হাল আমলে নিম্ন চাপের কথা মুখে মুখে ফেরে। ওয়েদার নিয়ে সচেতন মানুষ এখন অনেক বেশি। নিম্ন আয়ের দেশ এর মানুষ গুলো নিম্ন চাপের কাছে মাথা নত করবে এটাই স্বাভাবিক। তবু আগে এমনটা কম শুনতাম।

আগে বৃষ্টির দুপুরে চুপ করে বসে থাকতাম। গায় ঠাণ্ডা লাগলে মা সেই পুরানো ট্রাংক থেকে একটা লাল রঙের রোয়া ওঠা চাদর বের করে গায় জড়িয়ে দিতেন।বহু পুরনো সেই চাদরের উত্তাপ আলাদা। চুপ করে বসে থাকতাম আমি খাটের উপর চাদর জড়িয়ে। আর জানলা দিয়ে বৃষ্টি দেখতাম এক মনে। 

মা টালি ঘেরা বারান্দায় বৃষ্টির ছাট এড়িয়ে রান্না করতেন এক মনে। কয়লার উনুনে রান্না করতেন তিনি।লোহার কড়ায় লাল লাল ছোটো মুসুর ডালের বড়ি ভাজতেন। সেই গন্ধ শুঁকে মন ভালো হয়ে যেত আমার মুখে না বললেও মা ঠিক বুঝতে পারতেন তাই রান্না করতে করতে ডাক দিতেন বাবু নিয়ে যা।

এই কথা বলা মাত্রই খাট থেকে নেমে সোজা বাটি হাতে উনুনের একদম সামনে। কয়লার উনুনের ধোয়ায় মার চোখের কোনে জল দেখতাম। সত্যিই বাটিতে গুনে গুনে বড়ি ভাজা দিতেন মা। বাটি হাতে নিয়ে খাটে বসে খেতাম একটা একটা করে কুর কুরে লাল বড়ি। 

কি ভালো যে লাগতো খেতে সেই বড়ির স্বাদ আজ কোথায় পাবো। সাদা কাপড়ে মুসুর ডাল বেটে মা বড়ি দিতেন নিজে হাতে। সেই বড়ি ভাজা আর টক ডাল পেলেই মনে হতো কি সুন্দর খেলাম। সত্যিই বৃষ্টির দুপুরের অতীত অনেক ভালো ছিল আমার। 

আমাদের বাড়ির পুকুর পাড়ে জিওল গাছ না থাকলেও একটা ঘোড়ামারা গাছ ছিল। শুনে ছিলাম সেই গাছে ভুত থাকে।যদিও তার দর্শন পাইনি কোনো দিন। সন্ধ্যা হলেই অপেক্ষা করতাম আমি। আজ শনিবার যদি দেখা পাই, কিন্তু কোথায় সে।

একদিন সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গা চোখে শুনলাম ওই গাছেই গলায় ওড়না জড়িয়ে মরেছে দীপ্তি। পাড়ার মেয়ে দীপ্তি,বাবুলকে ভালোবাসতো। কিন্তু দুজনের জাতে না মেলায় ওদের দুজনের বিয়ে হবে না জানতে পারে সে। তারপরেই গলায় দড়ি দিয়ে মরে যায় দীপ্তি।

কী ভীড় হয়ে ছিল দীপ্তিকে দেখতে সেদিন।নিজের লাল ওড়না জড়িয়ে গলায় দড়ি দেয় সে। পাড়ায় পুলিশ এসেছিল। না,বাবুলকে আর দেখা যায়নি কোনো দিন পাড়ায়। বহু বছর পর বাবুল ফিরে আসে পাড়ায়। ভালো সুখের সংসার পেতে চাকরি করে ঘরে ফিরে আসে সুন্দর বউ নিয়ে। 

শোনা যায় সে নাকি বিয়ে করেছে অন্য জাতের মেয়েকেই। চাকরি করতে করতে প্রেম, তারপর বিয়ে। অফিসের বসের মেয়েকে বিয়ে করে সে। অন্য জাতের তো ক্ষতি কি। ভালবাসার দামী বিয়ে তো।

তাহলে দীপ্তির কি দোষ ছিল কে জানে। হয়তো ওর গায়ের রং টা একটু চাপা ছিল তাই। তাতে কি ওরা তো ভালোবাসতো একে অপরকে সেই ছোটো বেলা থেকে। সবাই সেটা জানতো তবু। 

রামচিতা গাছের ডাল দিয়ে ঘেরা ছিল আমাদের বাড়ি। সেই গাছের ওপর স্বর্ণলতা লতিয়ে বেড়ে উঠতো। একদম আষ্ঠে পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বেড়ে উঠতো স্বর্ণলতা। দুপুরে বৃষ্টির জলের ধারায় স্নান করে স্বর্ণলতার রূপ খুলে যেত আরও। দীপ্তি ও তো বাবুলকে এই ভাবেই জড়িয়ে ধরেই বাঁচতে চেয়েছিল। স্বপ্ন দেখেছিল অনেক। কিন্তু।

আমার ছোট বেলার স্কুল যেতে হতো মার হাত ধরে ট্রেন পথে। প্রথমে সেই ছোটো বেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় এর ক্লাস রুমে বসে,কেমন অজানা ভয় গ্রাস করতো আমায়। খালি মনে হতো কখন ছাড়া পাবো স্কুল থেকে। 

কোনো ভাবে প্রাথমিকের পাঠ শেষ করলাম আমি।চলে এলাম বাড়ির কাছে হাইস্কুলে। পড়ায় যে খুব খারাপ ছিলাম সেটা নয়। কিন্তু এই ভয়টা ছিলই আমার। ক্লাস রুমে বসে কেমন যেনো মার কথা মনে হতো। দুপুরে মা এখন নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে পড়েছে। বাবা তো কাজে গেছে সেই সকালে।

 একটু পর ছুটি হলেই দৌড় দিতাম বাড়ির পথে। ঘরে ফিরে রান্না ঘরে এসে ঝুড়ি উল্টে দেখতাম, ঠিক মা ভাত রেখে দিয়েছে ঢাকা দিয়ে পরম যত্নে। আমি এসে হাত না ধুয়ে বসে ঝুড়ি উল্টো করতাম। আর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মা বলতেন হাত ধুয়ে খা বাবু। কী করে যে বুঝতে পারতেন মা কে জানে। 

পৃথিবীর সব মা বোধ হয় বুঝতে পারেন এটা। একেই কি বলে নাড়ির টান। কে জানে। সন্ধ্যা হলেই পড়তে বসতাম জানলার দিকে তাকিয়ে বই খুলে।দুলে দুলে এই ছড়াটা বলতাম। ভাবতাম হাতে ধনুক নিয়ে দাঁড়িয়ে নিশ্চয়ই মাকে পাহারা দিতে পারবো আমি বড়ো হয়ে। বাঘ,ভাল্লুক, রাক্ষস তাড়াতে পারবো আমি। 

ছোটো বেলার মন কি বদলে যায় বড়ো হলে,কে জানে। বৃষ্টির জলের ধারায় স্নান করে ধুয়ে যায় সেই ছোটো বেলার মনের কুসুমটা। কে জানে। ধীরে ধীরে কি নাড়ীর টান কমতে থাকে। কে জানে। হয়তো তাই হয় আমরা জানতে পারি না।

না হলে এই এক জীবন অন্য জীবনের সন্ধান করে কি করে। কাজ পেয়ে, নতুন সংসার পেতে ধীরে ধীরে কি বদলে গেলাম আমিও। কে জানে।

যে ছোটো বেলার আমি তীর ধনুক নিয়ে মাকে পাহারা দেবার কথা ভাবতাম। সেই তো মাকে পাহারা দিয়ে রাখতে পারলাম না।মা চলে গেলেন আমায় ছেড়ে অনেক দূরে, কোথায় কে জানে। 

নিঝুম রাতে, নিঝুম দুপুরে আচমকা আমার মনের জানলা খুলে গেলো দমকা হাওয়ায়। সত্যিই কি তাহলে শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে ফেরার যে স্বপ্ন দেখতাম আমি সেটা আর সফল হবে না কোনো দিন।

 ঝোপ ঝাড় থেকে বেরিয়ে এসে রাক্ষসেরা আমার মাকে নিয়ে চলে গেল। আমি পারলাম না তীর ধনুক নিয়ে পাহারা দিয়ে মাকে বাঁচাতে। এলোমেলো দমকা হাওয়ায় দেখি জানলা দিয়ে বৃষ্টির ছাটে আমি ভিজছি। আরো বেশি করে ভিজে যাচ্ছি আমি।আমার সারা শরীর ভিজে যাচ্ছে।

 অসময়ের বৃষ্টি আমাকে ভিজিয়ে দিলো। আমি সেই জলে ভিজে আরও বেশি করে ঘরে ফিরতে চাইলাম। যে ঘরের জানলায় বসে আমি দেখতে চাই সেই হলুদ স্বর্ণলতাকে। যে ওই শক্ত রামচিতা গাছকে জড়িয়ে ধরে বেঁচে ছিল এত দিন ধরে। 
আমিও যে ওর মতই আমার হারিয়ে যাওয়া মাকে জড়িয়ে ধরে বাঁচতে চাই। আবার আগের ছোটো বেলার মতই। যদি সত্যিই সেই পুরোনো দিনে ফিরতে পারতাম আবার। যদি তীর ধনুক নিয়ে পাহারা দিয়ে মাকে আগলে রাখতে পারতাম সারা জীবন। তাহলে বোধহয় জীবনটা এমন এলো মেলো হয়ে যেত না এই ভাবে। আকাশ পানে তাকিয়ে মাকে খুঁজতে থাকলাম আমি।

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে - অভিজিৎ বসু।
আট ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে নিজের সংগ্রহ।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...