আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।
সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর চুপিসাড়ে। আর সেই ছবি পাইনি বলে মাটির ভয়ে বা দেবমতীর ভয়ে আমার মতো ডাকাবুকো ঝগড়াটে খারাপ কর্মীর হৃদকম্পন হওয়া ২৪ এর টেবিলে বসে কেঁপে ওঠা আমার। কোনো সময় ঘরে ঝনঝন করে বাসন পড়ে যাওয়ার মত পরিস্থিতি হয়েছে যেনো আমাদের।
আবার কোনো সময় একটা মিষ্টি মধুর সম্পর্ক নিয়েই কাজ হয়েছে আমাদের সবার। সেই মিডিয়া সিটির মিডিয়া ছেড়ে ব্যাগ নিয়ে আমার বেরিয়ে পড়া টোটো চালকের জীবনকে বেছে নেওয়ার চেষ্টা করা একদিন। দাপুটে সব বিখ্যাত দাদা দিদিদের ছেড়ে। আর তার মাঝেও যার সাথে কারণে অকারণে যোগাযোগ থাকা সেই ফব মার্কা আইচ, মানে শুভ্রজিৎ আইচ। ওকে কেন যে এই নামে ডাকতাম আমি কে জানে। সেই গৌহাটির বাংলা চ্যানেল তৈরীর সময় কলেজ মোড়ের অফিসে যোগাযোগ করা আমাদের দুজনের বিকেল বেলায় কত গল্প হাসি ঠাট্টা মজা করা। ওর অফিস দেখে ভালো বলা। সেই অফিস ছেড়ে একদিন আমার চেনা লোকদের সংসার ছেড়ে চলে আসা।
আর সেই প্রবল দুঃখের মাঝেও সীমাবদ্ধ জীবন আর জীবনের বন্ধুত্বের মেঠো সম্পর্ক কে সামলে নিয়েই বেঁচে থাকা আমাদের। যে বাঁচার মধ্য কোনোও আওয়াজ নেই, কোনোও ধরনের বিতর্ক নেই, কোনো ধরনের বিষয় সমূহ লুকিয়ে নেই। শুধু আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে এটা বলা আছে আমি টোটো চালক হয়ে যা পারি সেটা ফ ব মার্কা আইচ সেটা পারে না। অনেক ভাবনা চিন্তা করে সিপিএমকে সরকারে থেকে টাইট দেওয়া রাজনৈতিক দল ফ ব মানে দল ফরওয়ার্ড ব্লক যা পারে সেটা পারে না আমাদের এই শুভ্রজিৎ আইচ। মাঝে মাঝে এটা নিয়ে আমি ওকে বলি কি যে করো দাদা। পরে বুঝি আমার মত পাগল তো সবাই নয় যে জীবনকে নিয়ে এইভাবেই ছিনিমিনি খেলতে জানে পোস্টমর্টেম করতে পারে। জীবন তো এমন নয়। তাহলে আর মিছিমিছি ওকে এইসব বলে কি লাভ।
সেই বিখ্যাত সব সাংবাদিক ঘেরা স্বর্ণ যুগের আমলের ২৪ ঘণ্টার চ্যানেলের হাত বদল। এক দাদার রাজত্ব থেকে অন্য এক ভিন্ন ঘরানার দাদার হাতে ক্ষমতার ব্যাটন বদল। সেই ক্ষমতাহীন হয়ে ক্রিমির মত বেঁচে থাকা এই এক অফিসে বেঁচে থাকা কিছু লোকজনের নতুন দাদাকে ধরে হঠাৎ করেই ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে নড়েচড়ে বসে চাগাড় দিয়ে ওঠা এই অফিস চত্বরে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ানো। আর যারা বা যে সব আমলেই সমান ভাবেই ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে অভ্যস্ত সে দিব্যি গটমট করে পুরোনো আমলের দাদাকে ছেড়ে আর এক পরিচিত দাদাকে জড়িয়ে ধরা তার হাসি মুখে। অন্যদের দেখিয়ে বলা দেখ কেমন লাগে এইবার। সত্যিই অসাধারণ কিন্তু এই মিডিয়ার জীবন। যে জীবনে সাদার থেকে কালো বেশি। যে জীবনে আঁকাবাঁকা পথ ধরে হেঁটে চলে বেড়াতে গিয়ে কত কিছুই যে চোখে পড়ে যায় আমার। আজ সেই ওদের দুজনের কথা লিখতে বসে কত কিছুই যে মনে পড়ে যায় আমার এই ভোরবেলায়।
সেই চেনা প্রার্থনা, মধুবন্তী, সৌম্য সিনহা, রুমকীর চেনা সংসার। সেই প্রবল দাপুটে তিন্নি যার ভয়ে আমি কেন্নোর মত গুটিয়ে যেতাম আর সেই হারিয়ে যাওয়া ভাস্কর দা, পত্রলেখার আর পুলকদার সুখের সংসার। যে সংসারে একদিন কতই না মজা আনন্দ আর ভালো লুকিয়ে ছিল। যা আজ কবেই ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। সেই ওর বিখ্যাত স্কুটার নিয়ে জলে ভিজে ঘরে ফিরে মাকে দেখা। সেই ওদের মিস্টি মেয়ের আবদার পূরন করা। সেই এইবাড়ি আর ওই বাড়ী করে কোনোও ভাবেই ম্যানেজ করে এগিয়ে চলা ওদের দুজনের সংসার মাটি আর আইচের বাম্পার হীন সংসার। ছোঁয়া বাঁচিয়ে, আন্দোলন না করে, হাসি মুখে পান চিবিয়ে বা গুটখা খেয়ে। আর ঘরে মাটিকে সামলে বাইরে নানা ঝড় ঝাপটা সামলে আইচের এগিয়ে চলা। এই সবের মাঝে শুধুই মেয়ের আবদার পূরন করে ওদের দুজনের এগিয়ে চলা।
সত্যিই অসাধারণ এই আমার সাদা জীবনের কালো কথা আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই সংসারের কথা লিখে রাখা, ওদের দুজনের কথা লিখে রাখা। শুধু এটা বলতে ইচ্ছা হয় আমার ওরা দুজন একসাথে সংসার চালাতে আর বাঁচাতে যেটা পারলো আমি টোটো চালক হয়ে সেটা করতে পারিনি। তাই মুখে যে কথা বলি আমি আজ বোধহয় আইচের কাছে, ফ ব কাছে আমি হেরেই গেলাম। যদিও জানি বন্ধুর কাছে হেরে গেলে আর ক্ষতি কী। মাটির কাছে হেরে গেলেই বা ক্ষতি কী। ভালো থেকো তোমরা দুজন। এইভাবেই ঝড় ঝাপটা সামলে হাসিমুখে কাজ করো তোমরা। ভালো থেকো তোমরা দুজন। তোমাদের মিষ্টি মেয়েকে নিয়ে। অন্ততঃ আমার মত মেয়ের কাছে এটা শুনতে হচ্ছে না যে বাবা হয়ে সংসারের দায়িত্ব না সামলে টোটো চালক বলে ঘুরে বেড়াও। আর শিরদাঁড়া সোজা বলে জানান দাও তোমার লজ্জা করে না।
ভালো থেকো তুমি আইচ। ভালো থেকো তুমি দেবমতী। ভেঙে গেছে স্বর্ণযুগের সেই আমাদের দুই দাদার সংসার, ভেঙে গেছে আমাদের সেই অ্যাসাইনমেন্টের টেবিল, ভেঙে গেছে আমাদের সবার প্রিয় সেই চেনা পোদ্দার কোর্টের মিস্টি সংসার, আমি শুধু কোনোও রকমে এই বুড়ো বয়সে নিজের শিরদাঁড়াকে সোজা রেখে বাঁচার চেষ্টা করছি আমি। এই শেষ বয়সে শুধু মাত্র কারুর কাছে হাত পেতে নয়, কারুর দাক্ষিণ্য নিয়ে নয়। নিজের পরিচয়ে নিজের ওই দুর্বল শিরদাঁড়ার জোরে।
আইচ আর মাটির সংসার - অভিজিৎ বসু।
বারো জুন, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন