সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।
সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।
আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখন মহাকরণে ঘুরে ঘুরে খবর জোগাড় করলেও সবার ভুঁড়ি বেড়ে গেলেও তাঁর একদম স্লিম ফিগার ছিল যা সত্যিই বেশ ঈর্ষণীয়। যা দেখে আমরা অনেকেই হিংসা করতাম। আর মহাকরণের মহিলা সাংবাদিকরা বেশ ভালই বলতেন তাঁকে। আর তাই তো বোধহয় প্রায় প্রতিদিন সেই বিখ্যাত এক নম্বর চ্যানেলের এক মহিলা সাংবাদিককে রোজ লুচি খেতে নিয়ে যেতেন তিনি হাসি মুখে।
আর সেটা দেখে একদিন তো সেই কাজী দা সেই সিটিভিএন এর কাজী ইলাহী দা যিনি আজ আর নেই বলে বসলেন এক জনকে নিয়ে গেলে হবে আমাদের কবে খাওয়ানো হবে বলো। সেটা শুনে সেদিন ফোন করে বলে দিলেন মহাকরণের সেই একতলার ক্যান্টিনে তিনি সাংবাদিকরা যাবে এদের সবার লুচির ব্যবস্থা করে দাও। সত্যিই শনিবার ভাত খেতে হবে কিন্তু ভাতের দোকান বন্ধ মহাকরণে। দু একটি জায়গা খোলা কিন্তু সেখানে পুলিশ ছাড়া অন্য কেউ ভাত পাবে না ছুটির দিন। একদিন কথায় কথায় বললাম আমি দাদা এই সমস্যা ভাত খাওয়া হয়নি আজ। নিজেই হাতে ধরে সেই পুলিশের খাবার জায়গায় আমার খাবার ব্যবস্থা করে দিলেন। কিছুতেই আমার টাকা দিতে দেবেন না তিনি।
সেই জেল এর রিপোর্ট লিখে যিনি বিখ্যাত হলেন সেই জেল এর কর্তা বিডি শর্মা মানে পুরো নাম বংশীধর শর্মা তাঁর একদম নিজের লোক ছিলেন পরে যিনি খুব সম্ভবত সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে চলে যান বদলি হয়ে। সেই শর্মা সাহেবের দেওয়া নানা খবর লিখেই বেশ বিখ্যাত হলেন তিনি। আজ সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে সেই শ্যামল মুখোপাধ্যায় এর কথা। রুনার কথা লিখতে গিয়ে যাঁর কথা আমি লিখেছিলাম আগেই। রুনার সাথে তাঁর কথাও হয় এই বিষয়ে। নানা জনের মাঝে বেশ মজার মানুষ ছিলেন তিনি। তাঁর ছবি পেলাম আমি রুনার মাধ্যমেই।
সেই পুরোনো বাম আমলে উত্তরবঙ্গের এক দাপুটে মন্ত্রীর ঘরে তখন সাংবাদিকদের ভীড় উপচে পড়ছে। আনন্দবাজারের পত্রিকায় তখন এক মন্ত্রীর ঘরে দুজন করে প্রবেশ করে এটাই তাদের অফিসের নিয়ম। একজন আসল খবর জোগাড় করলে বাকীজন সেই সময় হাসিমুখে ফিল্ডিং করেন এটাই বড়ো কাগজের অফিসের বিশেষ একটা স্টাইল যাতে কিছুই মিস না হয় সেদিকে নজর রাখা দ্বিতীয়জনের।
কিছুদিন আগে অবসর নেওয়া একজন বিখ্যাত সাংবাদিক বর্তমানে যিনি ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে বিখ্যাত হলেন কিছুদিনের মধ্যেই তিনি মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য্যের ঘরে খবর সংগ্রহে কথা বলতে ব্যস্ত। পাশে আছেন বিখ্যাত জেল এর কপি লেখা সেই বিখ্যাত সাংবাদিক। রাইটার্স এর সাংবাদিকদের কাছে এক মন্ত্রীর ঘরে অনেক ছোটো ছোটো খবর পেলে কিছু খবর রেখে দিয়ে পরের দিন লেখা হবে বলে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এটাই একটা অলিখিত নিয়ম ছিল সেই সময় মহাকরণের বিটের সংবাদকর্মীদের সেই বাম আমলে। কিন্তু যে খবর বের হবার কথা নয় পরের দিন কলকাতার পাতায় সেই খবর ছেপে বের হতেই সেই রিপোর্টারকে চেপে ধরে সবাই। এটা তো আমরা কেউ লিখিনি তাহলে তোমার কাগজে কলকাতার পাতায় বের হলো কি করে। সেই বিখ্যাত সাংবাদিক বলেন আমিও তো এই খবর লিখিনি।
কিন্তু শুধু তাঁর কাগজে আনন্দবাজারের খবর আগে বের করতে হবে সেই নেশায় বিখ্যাত জেল রিপোর্টার সেই খবর আর চেপে রাখতে পারেননি অন্য রিপোর্টার দের কথা শুনেও। এটাই বোধহয় আসল উদ্দেশ্য ছিল তাঁর। আসলে একনম্বর কাগজের এই যে একটা দৌড় আর তাড়া আর নিয়ম ভেঙে অন্যকে যে কোনোও ভাবেই যে কোনো উপায়ে বিট করা ফিল্ডিং কেটে সেটাই একটা আলাদা ভাগ তৈরি করে দিত কেমন করে অন্য কাগজের রিপোর্টারদের সাথে। শুধু একটা খবরের ট্রিটমেন্টের মাধ্যমেই বদলে যেত একটা ছোট খবরের গুরত্ব।
সেই শ্যামলদা আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। এখনও শুনলাম দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। খবরের জন্য ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি সুখবর বলে কোনও এক কাগজের বিশেষ প্রতিনিধি হয়ে বর্তমানে। শুনলাম বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনে হাসিমুখে হাজির ছিলেন তিনি আজও সবার সাথেই। সত্যিই সেই কবে থেকে যে এখনও হাসিমুখে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি, খোঁজ খবর সংগ্রহ করে কাজ করছেন এটা ভেবেই বেশ ভালো লাগে আমার।
আমি যেখানে কাজ করতে পারলাম না বলে সবাইকে জানিয়ে বিদায় নিলাম সেখানে শ্যামল দা এখনও হাসিমুখে ব্যাট করে চলেছেন সবাইকে সেই এক স্টাইলে থ্যাঙ্ক ইউ বলে। সেই ধোপদুরস্ত পোষাকে মাথায় টুপি আর কোর্ট পড়ে একদম তরতাজা যুবক হয়ে তিনি হাসিমুখে ছুটে বেড়াচ্ছেন এই ঘর থেকে ওই ঘর হাসিমুখে। মিডিয়ার মায়াজাল কাটিয়ে ছিটকে বের হওয়া কি এতই সোজা।
আজ এই রাতের বেলায় মনে পড়ে যায় নানা কথা সেই আজকালের অংশুদার কথা, সেই গট গট করে হেঁটে যাওয়া শ্যামলদার কথা। সেই বিখ্যাত সাংবাদিক শ্যামলেন্দু দা, সেই টিভির সিটিভিএনের কাজী দা, তরুন দা, লাহিড়ী দা, কুন্ডু দা, রূপম দা, দেবজিৎ ভট্টাচার্য্য, সোমনাথ চক্রবর্তী, আজকালের রীনা, এবিপির সুমন ঘড়াই, সেই রুমা পাল, সেই সুতপা সেন, সেই জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, সেই সুনন্দ ঘোষ, সুকান্ত দা, সেই প্রাণেশ, অর্ণব টেলিগ্রাফ এর। সেই অজন্তা দি। আরও কতজন যে ছিল সেই সময় মহাকরণে। আর আমাদের সবার প্রিয় সেই কুন্ডু দা। যাঁর প্রশ্ন সবার আগে শুনতেন মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই সময় এই খবরের দুনিয়ায় ঘুরে বেড়ানো বেশ ভালই লাগত কিন্তু আমার। আজ মহাকরণ ছেড়ে চলে গেছে সেই কবেই মুখ্যমন্ত্রী নবান্নের ঘেরা টোপে। লাল বাড়ীর সুন্দর সেই দিনগুলো হারিয়ে গেছে কবেই আমাদের সবার সাংবাদিক জীবন থেকে। এমন সহজ পদ্ধতিতে ঘুরে বেড়ানো যায় না কোনোভাবেই নবান্নে এখন। তবু সেই হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোকে আজও বড্ড মিস করি আমরা সবাই। ভালো থাকবেন আপনি দাদা।
আনন্দবাজারের শ্যামল দা - অভিজিৎ বসু।
তেরো ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য রুনা ও গুগল।
খুব সুন্দর লেখা
উত্তরমুছুনসুন্দর স্মৃতিচারণ।
উত্তরমুছুন