সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জয় মা মঙ্গল চণ্ডী

মা মঙ্গলচণ্ডী, যাঁহার নাম মধুর ও মনোহর, যাঁহার হস্তে বর ও অভয় মুদ্রা, যিনি দ্বিভুজা ও গৌরবর্ণা, যিনি রক্তপদ্মাসনে উপবিষ্টা ও মুকুট দ্বারা উজ্জ্বলরূপে ভূষিতা, যিনি রক্তবর্ণ কৌষেয় (চেলির) বস্ত্র পরিধান করিয়া আছেন, যিনি সহাস্যবদনা, সুন্দরাননা ও নবযৌবনা, যিনি সুন্দরাঙ্গী ও মধুর লাবণ্যযুক্তা, তিনিই হলেন দেবী মঙ্গলচণ্ডী।

বিশ্বের মূল স্বরূপা প্রকৃতিদেবীর মুখ হ’তে মঙ্গলচণ্ডী দেবী উৎপন্না হয়েছেন। তিনি সৃষ্টিকার্য্যে মঙ্গলরূপা এবং সংহারকার্য্যে কোপরূপিণী, এইজন্য পণ্ডিতগণ তাঁকে মঙ্গলচণ্ডী বলিয়া অভিহিত করেন।” “দক্ষ অর্থে চণ্ডী এবং কল্যাণ অর্থে মঙ্গল। মঙ্গলকর বস্তুর মধ্যে দক্ষ বলে তিনি মঙ্গলচণ্ডী নামে প্রসিদ্ধ। প্রতি মঙ্গলবারে তাঁহার পূজা বিধেয়। মনু বংশীয় মঙ্গল রাজা নিরন্তর তাঁহার পূজা করিতেন।”

জৈষ্ঠ্যমাসের প্রতি মঙ্গলবারে মা চণ্ডীর আরাধনা করা হয় বলে এই ব্রতের নাম মঙ্গলচণ্ডী ব্রত। জীবনে শ্রেষ্ঠ মাঙ্গল্যের প্রতিষ্ঠার জন্যই এ ব্রতের অনুষ্ঠান। মঙ্গলচণ্ডী ব্রতের নানা রূপ আছে। কুমারীরা যে মঙ্গলচণ্ডী ব্রতের আচরণ করে, তা অতি সহজ ও সংক্ষিপ্ত। দেবী অপ্রাকৃত মহিমার প্রশস্তিগীতি ব্রতের ছড়ায় এসে ধরা দেয়।

জয় মঙ্গলবারের ব্রতকথা নিয়ে নানা গল্প কথা আছে।
এক দেশে একজন সওদাগর আর একজন বেনে বাস করত। সওদাগরের সাত ছেলে, একটিও মেয়ে হয়নি।বেনের আবার সাত মেয়ে, ছেলে হয়নি। ‘একদিন মা মঙ্গলচণ্ডী বৃদ্ধ ব্রাহ্মণীর বেশধরে ছলতে গেল। আগে গেলেন বেনের বাড়ি ; গিয়ে বললেন, ‘ওমা! দুটি ভিক্ষা দাও গো। ‘বেনেবউ তাড়াতাড়ি ভিক্ষা নিয়ে এল ব্রাহ্মণী বললেন, ‘তোমার কটি ছেলে, কটি মেয়ে মা? ‘আমার সাতটি মেয়ে, ছেলে হয়নি বাছা! ‘’ছেলে হয়নি! আমি ছেলে – আটকুড়র মুখ দেখিনা, মেয়ে – আঁটকুড়ার ভিক্ষা লই না। ‘এই বলে ব্রাহ্মণী যেমনি চলে যাবে, অমনি বেনে বউ পায়ে ধরে কাঁদতে লাগল। ব্রাহ্মণী একটি ফুল দিয়ে বললেন, এই ফুল ধুয়ে জল খেলে তোমার ছেলে হবে, নাম রেখো জয়দেব।

 ‘এই বলে সেখান থেকে সওদাগরের বাড়ি চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে অনুরূপ ভাবে ভিক্ষা চাইলেন। সওদাগরের বউ ভিক্ষা নিয়ে এলে ব্রাহ্মণী তা নিতে অস্বীকার করেন। কারন তিনি ছেলে আঁটকুড়ার মুখ দেখেন না। তিনি বললেন ‘এই ফলটি রেখে দাও, ধুয়ে জল খেও।তাহলে তোমার একটি মেয়ে হবে, তার নাম রেখো জয়াবতী। ‘এই কথা বলে তিনি অন্তর্ধান হলেন। তারা সেই ফল খেতে দুজনেই অন্তঃসত্ত্বা হল।

 সওদাগরের মেয়ে হল, বেনের ছেলে হল। ছেলের নাম হল জয়দেব, মেয়ের নাম হল জয়াবতী। দুজন দিনে দিনে বড় হতে লাগলো। জয়াবতী ফুল তুলে, পূজা করে, মঙ্গলবার করে – কথা শোনে। একদিন জয়দেব বললে মা! আমি জয়াবতীকে বিবাহ করবো। মা বললেন, ‘সে কি বাবা! তুমি গরিব ছেলে – বড় মানুষের মেয়ে তোমার সঙ্গে বিয়ে দেবে কেনো? তারপর মা মঙ্গলচণ্ডী অন্তর্ধান হলেন। সওদাগরের ভয়ে আকুল হয়ে, সেই পাত্রের সাথে জয়াবতীর বিয়ে দিলেন। সোনা, দানা,বাউটি দিয়ে, হাওদা বেঁধে বর কনে পাঠিয়ে দিলেন।

পথে যেতে যেতে জয়াবতীর মনে পড়ল আজ মঙ্গলবার। তখন জয়াবতী গুনগুন করে কথা বলতে লাগল। জয়দেব বললো..’ও কি জয়াবতী? কি গুনগুন করছো, বিড় বিড় করে বকছো কেন?”, জয়াবতী বললে – ‘গুনগুন কিছুই করিনি, আজ মঙ্গলবার, তাই মা মঙ্গলচন্ডীর কথা শুনছি।’ জয়দেব বললো – ‘মঙ্গলবার করলে কি হয়?’, জয়াবতী – ‘হারালে পায়, স্বামী পুত্র জলে ডোবে না, আগুনে পোড়ে না, মরলে বাঁচে।’ 

খানিক পথ গিয়ে জয়দেব বললো, ‘জয়াবতী! এখানে বড় ডাকাতের ভয়! ওই যে নদী দেখছ, ওইখান থেকে ডাকাতেরা এসে সব লুটপাট করে নিয়ে যায়, তোমার গায়ের সব গয়না আমায় খুলে দাও।’ জয়দেব গয়না খুলে নিয়ে একটা পুঁটলি করে ঝপাং করে জলে ফেলে দিলো। জয়াবতী চুপ করে রইল, কিছু বললো না। বর কনে ঘরে গেল। জয়দেবের মা ও সাত বোন বরণ করে বর-কনে কে ঘরে তুলল। পাড়ার সব মেয়ে বউরা দেখতে এলো। যে দেখে সেই নিন্দে করে, বলে ‘ওমা! বড় মানুষের মেয়ে যে গো? গায়ে একটু রাঙরত্তি কিছুই  দেয়নি যে। একখানি ভালো কাপড় পর্যন্ত দেয়নি।’ বেনেগিন্নি বললো, ‘চুপ করো বোন, কিছু বলো না। আমার যেমন বরাত।’

আজ বউভাত হবে, মা মঙ্গলচন্ডী দেশের সব মাছ হরণ করলেন, কোথাও মাছ পাওয়া গেল না। সাত খানা গাঁয়ের বেনে কুটুম্ব খেতে বলা হয়েছে। কী হবে? নদীতে জাল ফেলে একটা প্রকাণ্ড রাঘব বোয়াল পাওয়া গেল। সে মাছ কেউ কুটতে পারলো না। কুড়ুল ভেঙে গেল, তবু মাছ কেউ কুটতে পারলো না। জয়দেব বললো – ‘মা! জয়াবতীকে মাছ কুটতে দাও।’ জয়দেবে মা বললে- ‘তুই কি ক্ষেপেছিস? ও ছেলেমানুষ, ও কি মাছ কুটতে পারে?’, ‘হ্যাঁ পারবে’ বলে জয়দেব বঁটি এগিয়ে দিল। জয়াবতী ঘোমটা দিয়ে মা মঙ্গলচন্ডীর নাম করে যেমনি মাছটি তুলে বঁটিতে ধরেছে, অমনি মাছটি দুখান হয়ে গেল। মাছের পেটের ভেতর থেকে জয়াবতীর সেই গয়নার পু্ঁটলি বের হয়ে এলো। জয়াবতী মাছ ফেলে রেখে পু্ঁটলিটি নিয়ে ঘরে চলে গেল। কিছুক্ষন পর ভালো কাপড় পড়ে, সাথে হিরে জড়োয়ার গয়না পড়ে, ঝম ঝম করে বাইরে এসে মাছ কুটতে বসলো।

সবাই অবাক হয়ে চেয়ে রইল, জয়দেব হাসতে থাকল। তারপর সকলে ভেবে অস্থির, এত লোকের রান্না কে রাঁধবে? জয়দেব বললো – ‘কেন? জয়াবতী রাঁধবে।’ জয়াবতী মাথা নেড়ে স্বীকার করলো.. মা মঙ্গলচন্ডীকে স্মরণ করে রান্নাঘরে যেতেই এক দন্ডের মধ্যে ৫০০ লোকের রান্না হয়ে গেল। লোকজন সব খেয়ে বলতে লাগলো – ‘এমন খাওয়া আমরা কখনো খাইনি। কী চমৎকার রান্না।’ – বলে ধন্যি ধন্যি করে চলে গেল।

 কিছুদিন পর জয়াবতীর এক ছেলে হল। নাতির মুখ দেখে জয়াবতীর শ্বশুর-শ্বাশুড়ি স্বর্গে গেলেন। জয়াবতী ছেলেকে ঘরে ঘুম পাড়িয়ে কাজকর্ম করছে, এমন সময় জয়দেব ছেলেটিকে তুলে নিয়ে কুমোরদের পনের মধ্যে গুঁজে রেখে এলো। তারা যতই পনে আগুন দেয়, ততই নিভে যায়। কুমোরদের গিন্নি গিয়ে দেখে, জয়াবতীর ছেলে পনের ভেতর শুয়ে খেলা করছে। সে তখন তাড়াতাড়ি ছেলেকে নিয়ে জয়াবতীর কাছে দিয়ে এল। আর একদিন জয়দেব ছেলেটিকে নিয়ে নদীর জলে ফেলে দিয়ে এল। জয়াবতী জল আনতে গেলে, ছেলেটিও তার সাথে সাথে উঠে এলো। জয়দেব দেখে আশ্চর্য হল কিন্তু ভ্রম গেল না। তারপর জয়াবতীর আর একটি ছেলে ও একটি মেয়ে হল। একদিন জয়াবতীর ছোট ছেলেটি দোতলায় শুয়ে আছে, ছেলে মেয়ে দুটি সেখানে খেলা করছে। জয়দেব একখান কাতান নিয়ে ছোট ছেলেটির গলায় কোপ মারছে কিন্তু ছেলে কাটা যাচ্ছে না। জয়াবতী তাড়াতাড়ি জয়দেবের হাত ধরে বললো, ‘একি তুমি কি করছো? এতবার এত পরীক্ষা করলে, তবুও বিশ্বাস হল না? আমি তো বলছি যে, মা মঙ্গলচন্ডীর কৃপায় আমার কোন অমঙ্গল ঘটবে না।’ তখন জয়দেব বললো – ‘তুমি যখন এমন ব্রত জানো, তাহলে আমরা মর্ত্যে থাকি কেন, চলো স্বর্গে যাই।’ জয়াবতী বললে – ‘আগে ছেলে মেয়ের বিয়ে হোক, বউমা হোক, জামাই হোক, তারপর স্বর্গে যাব।’ দিন কতক পরে জয়াবতীর ছেলে মেয়ের বিয়ে হল। মনের সুখে দিন কতক সংসার করে, জয়াবতী বউ-ঝিয়েদের ঘরকন্না বুঝিয়ে দিলে। স্বর্গ থেকে পুষ্পক রথ নেমে এল, চুয়া চন্দনের ছড়া পড়তে লাগলো। বউ ঝিয়ে দের জয় মঙ্গলবারের ব্রত করতে বলে, জয়দেব ও জয়াবতী স্বর্গে চলে গেল। সেই অবধি জয় মঙ্গলবার পৃথিবীতে প্রচার হল চারিদিকে।

মঙ্গলচণ্ডী ব্রতঃ
দেবী অপ্রাকৃত মহিমার প্রশস্তিগীতি ব্রতের ছড়ায় এসে ধরা দেয়।
যথা —
সোনার মা ঘট বামনী।
রূপোর মা মঙ্গলচণ্ডী।।
এতক্ষণ গিয়েছিলেন না
কাহার বাড়ি?
হাসতে খেলতে তেল সিন্দুর মাখতে
পাটের শাড়ি পরতে সোনার দোলায় দুলতে
হয়েছে এত দেরী।
নির্ধনের ধন দিতে
কানায় নয়ন দিতে
নিপুত্রের পুত্র দিতে
খোঁড়ায় চলতে দিতে
হয়েছে এত দেরী।”

মঙ্গলচণ্ডীর পুজোয় এখনও মেয়েরা আওড়ায় এই মন্ত্র ,
“আটকাটি,
আটমুঠি সোনার মঙ্গলচণ্ডী রুপোর পা,
কেন মাগো মঙ্গলচণ্ডী হল এত বেলা?
হাসতে খেলতে ,
তেলহলুদ মাখতে ,
আঘাটায় ঘাট করতে ,
আইবুড়োর বিয়ে দিতে ,
অন্ধের চক্ষু দিতে ,
বোবার বোল ফোটাতে,
ঘরের ঝি বৌ রাখতে ঢাকতে হল এত বেলা৷”

– এ ভাবেই সংসারের রমণীটি সংসারের সার্বিক সুখ শান্তি কামনা করে থাকে৷ আর একটা কারণ হল, গ্রীষ্মের দাবদাহে ফুটিফাটা বাংলার মাঠঘাট৷ মা চণ্ডীর পুজোয় যদি সময়মতো বর্ষা নামে, সেই আশায় মা চণ্ডীর শরণাপন্ন হওয়া৷

অভীষ্ট সিদ্ধিমানসে হিন্দু মহিলা মঙ্গলবারে মঙ্গলচণ্ডী দেবীর অর্চনা ও ব্রত উপসাবাদি করে থাকেন। ধনপতি সওদাগরের পত্নী খুল্লনা প্রথম মঙ্গলচণ্ডীদেবীর পূজার প্রবর্তন করেন। এই খুল্লনার নামানুসারেই বাংলাদেশের ‘খুলনা’ জেলার নামকরণ হয়েছে বলে জনশ্রুতি। দেবীর করুণাশক্তি অমোঘ। তাঁর শরণাগত হলে নির্ধন ধনী হয়, অন্ধ নয়ন পায়, বন্ধ্যা পুত্র লাভ করে, খঞ্জ চরণযুক্ত হয়। সংসারজীবনে এই মঙ্গলময়ীর আরাধনা তাই একান্তই প্রয়োজন। কুমারীজীবন থেকেই তারা আরাধনা শুরু করে এবং সমগ্র জীবনব্যাপী তা চলতে থাকে।

আজ জৈষ্ঠ্য মাসের শেষ মঙ্গলবার আজকের পুজোর সাথে সাথে এবছরের মতোন জয় মঙ্গলবারের ব্রত শেষ হলো। মায়ের কাছে প্রার্থনা করি সারা বছর যেন মায়ের আশীর্বাদ‌ সকলের সাথে থাকে। এই পূজোর দিন উত্তরপাড়ায় চেয়ারম্যান দিলীপ দার বাড়ী গেলাম।  বহুদিন ধরেই এই পূজো করে আসছেন তিনি। বহু পুরোনো মানুষজন এর সাথে দেখা হলো। আগের বছর যেতে পারিনি আমি। আমার মা মারা যাবার জন্য কাল অশৌচ ছিল তাই। এইবার বোলপুর থেকে এসে গেলাম তাই দিলীপ দার বাড়ী।

"আজি        দুখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী--
তোমার     অভয় বাজে হৃদয়মাঝে   হৃদয়হরণী!
ওগো        মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে!
তোমার     দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে ॥"
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

জয় মা🙏🙏🙏

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...