সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জামাই ষষ্ঠী

জামাইষষ্ঠী বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিক লৌকিক আচার। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে এই আচার পালন করা হয়।এই দিনে বিবাহিত মেয়ে ও জামাইকে নিমন্ত্রণ করে আপ্যায়ন করা হয়। এভাবে জামাইকে খুশি রাখার চেষ্টায় ষষ্ঠীপুজোর লৌকিক প্রথাই হয়ে উঠে বাঙালির জষ্টি মাসের উৎসব।জামাই ষষ্ঠীর অন্য নাম অরণ্য ষষ্ঠী।

ভারতবর্ষ তথা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে একসময় সংস্কার ছিল কন্যা যতদিন না পুত্রবতী হয় ততদিন কন্যার পিতা বা মাতা কন্যাগৃহে পদার্পণ করবেন না ৷ এই ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দেয়, সন্তানধারণে সমস্যা বা সন্তান মৃত্যুর (শিশুমৃত্যু) ফলে কন্যার পিতামাতাকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হত কন্যার বাড়ি যাওয়ার জন্য ৷ সেক্ষেত্রে বিবাহিত কন্যার মুখদর্শন জন্য সমাজের বিধানদাতা জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা ষষ্ঠীকে বেছে নেয় জামাই ষষ্ঠী হিসাবে ৷ যেখানে মেয়ে জামাইকে নিমন্ত্রণ করে সমাদর করা হবে ও কন্যার মুখ দর্শন করা যাবে এবং সেইসঙ্গে মা ষষ্ঠীর পুজো করে তাঁকে খুশি করা যাতে কন্যা শীঘ্র পুত্রমুখ দর্শন করতে পারে ৷

আরো কথিত আছে যে, একটি পরিবারে দুটি বউ ছিলেন। দুই বউয়ের মধ্যে ছোট বউ লোভী ছিল। যিনি সর্বদা বাড়িতে যখন ভালো খাবার রান্না হত তা লুকিয়ে খেয়ে নিত এবং বিড়ালের উপর দোষ চাপাতেন। বিড়াল দেবী ষষ্ঠী বাহন। নিজের বাহন বেড়ালের নামে এমন অভিযোগ শোনার পর অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন। ফলস্বরূপ ছোট বউয়ের সন্তানের প্রাণ কেড়ে নেন। কষ্টে ভেঙে পড়েন সেই বাড়ির ছোট বউ। পরে এক বৃদ্ধার রূপ ধারণ করে দেবী ষষ্ঠী তাঁর কাছে যান। ছোট বউকে তাঁর আচরণের কথা মনে করিয়ে দেন।

 ভুল বুঝতে পেরে, নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়ায় ষষ্ঠী দেবী ছোট বউকে তাঁর সন্তান ফিরিয়ে দেন। তবে ঘটনাটি জানতে পেরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে তার বাবার বাড়িতে যেতে বাধা দেয়। ষষ্ঠী পূজার দিন তাদের মেয়েকে দেখতে আগ্রহী বাবা-মা তাদের জামাই এবং তাদের মেয়েকে তাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। তাই সেই দিনটি জামাই ষষ্ঠী নামে পরিচিতি লাভ করে। এটি পুনর্মিলন এবং আনন্দের দিন হিসাবে পালিত হয়।

এই দিনে শাশুড়ি দেবী ষষ্ঠীকে খুশি করার জন্য ষষ্ঠী পূজা করেন এবং তার কন্যা এবং জামাইদের সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির জন্য তার আশীর্বাদ চান। জামাইকে বাড়িতে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং শাশুড়ির তৈরি নিরামিষ এবং আমিষ উভয় খাবারের একটি দুর্দান্ত ভোজ খাওয়ানো হয়। এই দিনে জামাই মেয়েকে উপহারও দেওয়া হয়। 

জামাই ষষ্ঠী একটি পরিবারের একত্রিত হওয়ার দিন হিসাবে উদযাপন করা হয় এবং পরিবারের সবাই একসাথে খাবার খাওয়ার মাধ্যমে একত্রিত হয়ে উদযাপন করা হয়। একদিকে প্রচণ্ড গরম, বাজারে নানা ধরনের ফল ওঠে এই সময়ে। সেই সুযোগে জামাইকে বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়ে তার মনোরঞ্জন করা, তাকে খুশি করা হয়। 

আর সেই সুযোগে পরিবারে একটা উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু নানা ফল,মিষ্টি দিয়ে ষষ্ঠী দেবীর পূজো করা হয়। তারপর সেই পূজো হলে জামাইকে আদর আপ্যায়ন করা হয়। এই লৌকিক আচার অনুষ্ঠান হয় আসছে বহু বছর ধরে। আজ সেই ঘরে ঘরে পালিত হচ্ছে জামাই ষষ্ঠীর অনুষ্ঠান।

জামাই ষষ্ঠী - অভিজিৎ বসু।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...