সাদা জীবনের কালো কথায় আজ পুলিশ সাংবাদিক এর লড়াই এর কাহিনী। আসলে সাংবাদিক এর সাথে পুলিশের গা ঘষাঘষির সম্পর্ক আমার কোনো সময় ছিল না। সব সময় একটা যুদ্ধং দেহি, রনং দেহি মনোভাব কাজ করত এই দীর্ঘ তিরিশ বছরের বেশী সাংবাদিকতার জীবনে। এই ছবিটা দেখে কত কিছুই না মনে পড়ে গেল আমার আজ।
আসলে এখনকার আমলে যেমন সব কিছুর কাজের হিসাব নিকাশ মোবাইল ফোনে ধরে রাখা সম্ভব হয় আগে সেই সব সময় তো এত কিছু সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা যেত না। আর তেমন অভ্যাস আমার কোনো কালে ছিল না। তবু যা পাওয়া যায় স্মৃতি আর ছবি হাতড়ে এই আর কি।
এই ছবির সেই লাঠি হাতে দাপুটে পুলিশ অফিসার এর সাথে কাজের সময় খবর করার সময় কত ঝগড়া, লড়াই, চিৎকার, চেঁচামেচি করতে হয়েছে আমায় দিনের পর দিন। কত সম্পর্কের অবনতি হয়েছে পুলিশের সাথে, রাজনৈতিক দলের নেতার সাথে। কিন্তু সেদিনের সেই সব কথা ভুলে গিয়ে ওনার একটা ফোন পেয়ে মনটা কেমন হয়ে গেলো আমার। বললেন অভিজিৎ আমি অবসর নিয়েছি কাজ থেকে। শুনে আমার মনটা খারাপ লাগলো খুব।
কল্যাণ মুখোপাধ্যায় যিনি সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় ছিলেন চন্দননগরের এস ডি পি ও। দাপুটে পুলিশ অফিসার। সেই তাপসী মালিকের মৃত্যুর দিন যিনি ভোর বেলায় শীতের রাতে আঠারো ডিসেম্বর টাটাদের কারখানার জমির ভেতর থেকে আধ পোড়া, দগ্ধ তাপসীর দেহ উদ্ধার করে সবে কম্বল জড়িয়ে গাড়িতে তুলতে যাচ্ছেন দ্রুত। কিন্তু তার মাঝেই ওই একটুকরো পোড়া দেহের ছবি হয়ে গেলো আমাদের ক্যামেরায়। আর সেই ছবি ছড়িয়ে পড়ল সব জায়গায়। যে ছবির জন্য ওই ভোরবেলায় কলকাতার ধর্মতলার অনশন মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোন এসেছিল আমার কাছে। সে সব তো আসলে এখন অতীত অতিথির স্মৃতি চারণ মাত্র। সাংবাদিক জীবনের ঘাম ঝড়ানো কথা মাত্র এর বেশি কিছুই নয়।
যাই হোক সেই কল্যাণ বাবুর আঁকা ছবি , লেখা কবিতা ফেসবুকের দৌলতে দেখেই আমার কেমন মনটা ভালো হয়ে গেলো। এই মানুষটার ফোন পেয়ে মনটা ভালো হয়ে গেলো। মনে হলো সত্যিই কত দিন যত ঝগড়া করেছি ছবি করা নিয়ে। আর আজ সেই মানুষটাই বললেন অভিজিৎ, আমি অবসর নিয়েছি। আপনি আসুন একদিন বাড়িতে মধ্যমগ্রামে। বেশ ভালো লাগবে আড্ডা হবে দুজনের।
কত পুরোনো কথা হলো দুজনের দশ মিনিটের ফোনালাপে। এই ছবিটাই কত পুরোনো দিনের স্মৃতি উস্কে দিল আবার। কত রাগ, ঝগড়া, লড়াই করেছি এই মানুষটার সাথে। আর আজ এতদিন বাদে সেই মানুষটার প্রশংসা করতে হচ্ছে। সত্যিই সেদিন কল্যাণ বাবুর ফোন পেয়ে ভালো লাগলো বেশ। আসলে ঝগড়া হলেও কেউ আর মনে রাখিনি আমরা সেই সব পুরোনো কথা।
তাই একজন অবসর নেওয়া পুলিশ অফিসার আমার সাথে কথা বললেন নিজেই। কিছু রাগ না করে, পুরোনো কথা একদম না মনে রেখে। ভালো থাকবেন আপনি কল্যাণ বাবু। সৃষ্টির কাজে মেতে থাকুন আপনি। শুধু এই ছবিটা আমাদের দুজনের সম্পর্কে কোনো দূরত্ব তৈরি করেনি জেনে এত দিন পর খুব ভালো লাগলো আমার।
আসলে সাংবাদিক আর পুলিশের সম্পর্ক মধুর না হলেও আপনার ফোন পেয়ে এত কথা লিখে ফেললাম আমি। সমঝোতার রাজনীতির কারবারিদের মত আমরা সাংবাদিক আর পুলিশ দুজনেই সমঝোতা করে চলতে পারিনি কোনোদিন। কিন্তু আজ দুজনের সমঝোতা হয়ে গেলো অজান্তেই। আবার বলি আপনি ভালো থাকবেন।
পুলিশ আর সাংবাদিক - অভিজিৎ বসু।
আট জুন, দু হাজার চব্বিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন