সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বিশ্ব সাইকেল দিবস

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ বিশ্ব সাইকেল দিবস এর কথা। এই দু চাকার যানকে নিয়ে যে কত অম্ল মধুর স্মৃতি জড়িয়ে আছে সবার জীবনেই তা বলে শেষ করা যাবে না বোধ হয়। আর আজ সেই সাইকেল উদযাপনের একটি আন্তর্জাতিক দিন। এই বিশ্ব সাইকেল দিবস প্রতিবছর জুন মাসের ৩ তারিখে সমগ্র বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় এই দিনটি।

 ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে রাষ্ট্রসংঘর সাধারণ সভায় ৩ জুন বিশ্ব সাইকেল দিবস হিসেবে উদ্‌যাপন করার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। রাষ্ট্রসংঘের প্রস্তাবে সাইকেলের দীর্ঘ জীবনকাল এবং বহু কাজে ব্যবহৃত হওয়ার প্রশংসা করা হয়। সঙ্গে প্রায় দুই শতক কাল এর সাধারণ,কম খরচ, বিশ্বাসযোগ্যতা, এবং পরিবেশের জন্য উপযুক্ত যানবাহনের মাধ্যম হিসাবে সাইকেলের উল্লেখ করা হয়েছিল। সাইকেল ব্যবহারের সুফলের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য মূলতঃ এই দিবস উদ্‌যাপন করা হয় সারা বিশ্ব জুড়েই। বিশ্ব সাইকেল দিবস আজ তাই সবার কাছেই জানা একটা বিষয়।

কিন্তু যে সাইকেল নিয়ে এত কথা সেই লাল টুকটুকে সাইকেল পেয়েছিলাম আমি স্কুল জীবনে ক্লাস এইট থেকে নাইনে উঠে। সময়টা যত দুর মনে পরে শীতকাল ডিসেম্বর মাস। মেজমামা আমায় প্রথম লাল টুকটুকে একটা সাইকেল কিনে দিলেন ঠিক মাধ্যমিক পরীক্ষার ঠিক আগে। সেই নতুন ঝকঝকে সাইকেল পেয়ে সেদিন মনে হয়েছিল হাতে চাঁদ পেলাম আমি। 

আমার আজও স্পষ্ট মনে আছে সেই দিনের কথা। রিষড়াতে পাড়ায় সেদিন শীতের রাতে ব্যাডমিন্টন খেলছিলাম বন্ধুদের সাথে পাড়ার মাঠে। আর সেই সময় মেজমামা নতুন সাইকেল নিয়ে দিয়ে এলেন আমায় খেলার মাঠে সন্ধ্যা বেলায়। সেকি উত্তেজনা আর আনন্দ আমার। পরদিন থেকে ঘুড়ি লাটাই ছেড়ে সাইকেল হয়ে গেলো আমার জীবনের প্রথম প্রেম। এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানো, স্কুলে যাওয়া সব ওই দু চাকার ঘাড়ে ভর করেই। এত গেলো প্রথম জীবনের সাইকেল নিয়ে স্মৃতির মিষ্টি মধুর কিছু কথা।

 কিন্তু একটু বড়ো হতেই স্কুল জীবন শেষ হলো। কলেজ জীবনে এই সাইকেলে করেই তো প্রথম প্রেম এর স্বাদ আস্বাদন করলাম আমি, এই দু চাকার সাইকেলে চেপেই। বলতে গেলে একদম চেটে পুটে উপভোগ করলাম সেই ভালোবাসার জীবনকে সাইকেলে চেপেই। কলেজ যাওয়া, পড়তে যাওয়া, দুজনে একসাথে বাড়ী ফেরা, গঙ্গার ধারে আড্ডা মারা সব ওই সাইকেলের দৌলতে। একদম সিনেমার হিরো আর হিরোইনের মতো প্রেম, সঙ্গী সেই দু চাকার পুরোনো সাইকেল যান।

তখন আর হাতে টাকা কোথায় যে সাইকেল ছেড়ে পায়ে হেঁটে ঘুরবো এদিক ওদিক। সময় বাঁচলো অনেকটাই আর অন্যদিকে অর্থ সাশ্রয় হলো কিছুটা। শ্রীরামপুর থেকে সাইকেলে করে শেওড়াফুলির অন্ধকার গলাপোল রেললাইন পার হয়েছি এই সাইকেল চেপেই দুজন মিলে। কত বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায়, নিঝুম রাতে, শীতের রোদ মাখা দুপুরে সাইকেলে করে চক্কর মেরেছি।
কত যে মধুর স্মৃতি, মধুর উত্তাপ বিনিময় ঝগড়া, খুনসুটি, ভালোবাসা লুকিয়ে ছিল এই দু চাকার গতিতে ছুটে চলার মধ্য দিয়ে আজ সেসব ভাবলে কেমন যেন বোকা হয়ে যাই আমি। এত সাইকেল চালাতাম কি করে সেই সময় কে জানে। হয়তো কাঁচা বয়সের প্রেম বলে পারতাম দৌড়তে নেশায়। নতুন কিছু পাওয়ার আশায় দৌড়ে বেড়াতাম এই দু চাকার ওপর ভর করেই এদিক থেকে ওদিক। কিন্তু কাঁচা প্রেম কি আর টেকে। 
আসলে কলেজ জীবনে চলতে গিয়ে এই দু চাকার সাইকেল ছিল আমার প্রধান অতিথি। যদিও অন্য সব বন্ধুরা সেই সময় মোটর বাইক করে ধুলো উড়িয়ে এদিক থেকে ওদিক হুস হুস করে উড়ে যেত আমার সামনে দিয়ে বান্ধবীদের নিয়ে। আর আমি পুরোনো আমলের উঁচু সাইকেলে চেপে সামনে লোহার রডে কলেজের বান্ধবীকে চাপিয়ে সুখ দুঃখের কথা বলতে বলতে গঙ্গার পাড় ধরে এগিয়ে যেতাম দুজনে। ওর চুলের ঝাপটা খেতে খেতে। দিন গুলো কেমন করে যে কেটে গেল, হারিয়ে গেলো কে জানে। 

 কেমন নিঝুম দুপুরে শালিকের ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ শুনতাম পথে যেতে যেতে, সাইকেলের বেলের ক্রিংক্রিং মিঠে আওয়াজ ছড়িয়ে পড়তো গঙ্গার নিঃস্তব্ধ তীরে,গঙ্গার জলে নৌকো বাঁধা ঘাটে জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ শুনতে শুনতে আমরা বাড়ী ফিরতাম এই সাইকেলে করেই। সত্যিই সে এক আলাদা মজা ছিল জীবনে আমাদের। 
 আসলে জীবনের অনেকটা অংশ জুড়েই এই দু চাকার যান আমাদের সবার জীবনে জড়িয়ে আছে। তাই আজ এত দিন পরেও তাকে ভুলতে পারিনি আমি। আর আজ আমার এই বোলপুরে ঘুরে বেড়ানো বেকার সাদা জীবনের আমার একমাত্র সঙ্গী হলো সেই লাল রঙের একটি সাইকেল। যে সাইকেল নিয়ে ফাঁকা রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে বেশ মজা লাগে আমার এই বুড়ো বয়সে যখন তখন। 
প্রকৃতিকে উপভোগ করতে ভালো লাগে বেশ। মন খারাপ হলে একা একা এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানো আমার নেশা এখন। বেশি রোদ হলে মাথায় টুপি পরে সাইকেল নিয়ে ফাঁকা রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি আমি। কোনো দিন দূরে বহুদূরে কোপাই এর তীরে চলে যাই একা একা। কোনো দিন চলে যায় খোয়াই এর হাটে। সোনাঝুড়ির জঙ্গলের পথ ধরে। লাল পলাশের পদাবলীর মাধুর্য উপভোগ করতে করতে সাইকেলে চালাই আমি আপন মনে, আপন খেয়ালে। কোনো দিন ভোর বেলায় চলে যাই মেলা মাঠের ধারে একা একা ফাঁকা রাস্তায়।
আসলে এই দু চাকার যান যেমন প্রথম জীবনের প্রেম ছিল আমার জীবনে। আজ বুড়ো হলেও সেই দু চাকার প্রতি প্রেম ভালোবাসা বন্ধুত্ব আজও অমলিন হয়ে টিকে আছে। আজ সেই কলেজ জীবনের প্রথম কাঁচা প্রেম আর মনের মাঝে বেঁচে নেই হয়তো। কোথায় যেন হারিয়ে গেছে সেও বাঁশ বনের ভেতর মেঠো পথের রাস্তায়। কিন্তু আমার এই দু চাকার যান মিষ্টি সাইকেলের প্রতি প্রেম ভালোবাসা হারিয়ে যায়নি আজও সে টিকে আছে।
কিন্তু আমার সেই দু চাকার এই সাইকেলের প্রতি টান ভালোবাসা আরও গভীর হয়েছে দিনে দিনে যত বয়স বেড়েছে তত। ক্রমশ বিছিন্ন হয়ে যাওয়া একাকী জীবন এখন এই দু চাকার বন্ধুকেই আঁকড়ে ধরেছে কেমন গভীর ভাবে পরম মমতায়। আর আজ সেই সাইকেল দিবস। যে সাইকেল নিয়ে গোটা বিশ্ব জুড়ে কত হৈ চৈ হট্টগোল। ভাবলেও কেমন অবাক লাগে বলুন।
১৮৮৮ সালে আধুনিক সাইকেলের সূচনা হয়। ফ্রান্সের পিয়ের মিশো এবং যুক্তরাষ্ট্রের পিয়ের লালেমেন্ট এই দু’জন প্রথম প্যাডেল চালিত সাইকেল আবিষ্কার করেন। তবে দু’জনের কে আসল উদ্ভাবক তা কিন্তু আজও সঠিকভাবে জানা যায়নি। যদিও ১৮৬৬ সালের ২০ নভেম্বর পিয়ের লালেমেন্ট সাইকেল উদ্ভাবনের জন্য তাঁর দেশে স্বীকৃতি লাভ করেন। সেই হিসেবেই আধুনিক এই বাই সাইকেলের আবিষ্কারের সময় বলে ধরা হয়।
বিশ্বে এই সাইকেল ব্যবহারে প্রথম স্থানে আছে যে দেশ সেটি হলো নেদারল্যান্ড। এই দেশকে বলা হয় ল্যান্ড অফ বাই সাইকেল। প্রায় তেইশ মিলিয়ন সাইকেল রয়েছে এই দেশে। দেশের একশো ভাগের আঠাশ শতাংশ যাতায়াত হয় এই সাইকেলে করেই। এরপরে আছে ডেনমার্ক, জার্মানি, নরওয়ে ও সুইডেন।
নরওয়ের মোট জনসংখ্যার প্রায় একষট্টি শতাংশ মানুষ সাইকেল ব্যবহার করে। এই বাইসাইকেল শব্দটি 1860 এর দশকে ফ্রান্সে সৃষ্টি হয়। 1888 সালে আধুনিক সাইকেলের সূচনা হয়। ফ্রান্সের পিয়ের মিশো এবং যুক্তরাষ্ট্রের পিয়ের লালমেন্ট এই দুজন প্রথম প্যাডেল চালিত সাইকেল আবিষ্কার করেন।
১৮১৭ সালের ১২ জুন ম্যানহিম নামক এক ব্যক্তি প্রথম সাইকেল চালনা করেন এবং তিনি বলেন যে, তিনি এক ঘণ্টারও কম সময়ে ১৩ কিলোমিটার (আট মাইল) যাত্রা করেছিলেন। প্রায় সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি ড্রাইসিনের ওজন ২২ কেজি (৪৮ পাউন্ড),একটি স্ব-কেন্দ্রীকরণ কাস্টার প্রভাব জন্য বাইসাইকেলের চাকায় ছিল বিয়ারিংয়ের মধ্যে পিতলের গুল্ম , লোহার শড চাকা, একটি পিছন চাকার ব্রেক এবং ১৫২ মি.মি. (৬ ইঞ্চি) সামনের চাকার লেজ।
 এই নকশাটি ভারসাম্য বজায় রাখার কারণে দু:সাহসী যান্ত্রিক চিন্তাধারার লোকেরা এটিকে স্বাগত জানিয়ে- ছিলেন এবং মূলত পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় কয়েক হাজার অনুলিপি তৈরি এবং ব্যবহার করা হয়েছিল। আংশিক ক্রমবর্ধমান দুর্ঘটনার কারণে, কিছু শহর কর্তৃপক্ষ এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে শুরু করলে এর জনপ্রিয়তা দ্রুত ম্লান হয়ে যায়। তবে, ১৮৬৬ সালে প্যারিসে বিন চুন নামে একজন চীনা দর্শনার্থী পা-ধাক্কা দেওয়া বাইসাইকেল চালাতে পারতেন বলে জানা যায়।
এই সাইকেল দিবস নিয়েও কম জলঘোলা হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর অধ্যাপক লেসজেক সিবিলস্কি তার সমাজশাস্ত্রের শ্রেণীতে তৃণ-মূল পর্যায়ে বিশ্ব সাইকেল দিবসের রাষ্ট্রসংঘর স্বীকৃতির জন্য এক অভিযানের সূচনা করেছিলেন। পরে তার এই অভিযান তুর্কমেনিস্তানকে নিয়ে ৫৬ টি দেশের সমর্থন লাভ করে। এর রাষ্ট্রসংঘ সরকারি বড় ও নীল রঙের লোগোটি আইজাক ফেলডে নির্মাণ করেছিলেন এবং অধ্যাপক জন ই. শানসন এর সঙ্গে থাকা এনিমেশন প্রস্তুত করেছিলেন। এই লোগোতে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের সাইকেল আরোহী দেখানো হয়েছে। সাইকেল মানবতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়; এই হল এর মূল উদ্দেশ্য।
বিশ্ব সাইকেল দিবস সমগ্র বিশ্বে জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, বয়স ভেদে উদ্‌যাপন করা হয়। "সাইকেল মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের এক প্রতীক। ইহা সহনশীলতা, পারস্পরিক বোঝাবুঝি এবং শ্রদ্ধা বৃদ্ধি করার সঙ্গে সামাজিক সমাবেশ এবং সাংস্কৃতিক শান্তি প্রদান করে।" বিশ্ব সাইকেল দিবস বর্তমান সুস্থ জীবন নির্বাহ পদ্ধতিকে প্রচারের জন্য অনুষ্ঠিত করা হয়। সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যর জন্য খুব লাভকারক বলে মনে করা হয়।
বাইসাইকেল মানুষ পরিবহণের জন্য ব্যবহৃত যানবহন। বাইসাইকেলের রয়েছে দুইটি চাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ হলো এটা চালানোর জন্য ভারসাম্য প্রয়োজন। ১৯ শতকের গোড়ার দিকে সাইকেল চালনার রচনা হয়। এই পরিবহন তৈরির প্রথম মাধ্যম ছিল দুইটি চাকা পরপর সাজানো এবং এভাবে ১৮১৭ সালে জার্মান ড্রাইসিন সাইকেলের আদিরূপ পাওয়া যায়। বাই- সাইকেল শব্দটি ১৮৬০ এর দশকে ফ্রান্সে সৃষ্টি হয় এবং "সাধারণ বাইসাইকেল"কে বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত বর্ণনামূলক শিরোনাম হল "পেনি ফরথিং", যা ১৯-শতাব্দীর শব্দ এটি।

বর্তমানে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সাইকেলের জনপ্রিয়তা খুব বেশি। আমাদের দেশেও দিন দিন
 এই সাইকেলের জনপ্রিয়তা খুব বেড়ে চলেছে। বাইসাইকেলের আবিষ্কার বেশ প্রাথমিক , তবে তা যাচাই করা হয়নি বলে দাবি রয়েছে। ১৫০০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি লিওনার্দো দা ভিঞ্চি্র এক ছাত্র জিয়ান গিয়াকোমো ক্যাপ্রোটি বাইসাইকেলের চিত্র অঙ্কন করেন, তবে এটি নিয়ে ১৯৯৮ সালে হান্স-এরহার্ড লেসিং বলেন এটি একটি উদ্দেশ্যমূলক জালিয়াতি । 

যাইহোক, বাইসাইকেল অঙ্কনের সত্য ঘটনা অধ্যাপক অগস্টো মেরিনোনির অনুসারীরা এখনও দৃঢ়রূপে রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন। অগস্টো মেরিনোনি ছিলেন একজন অভিধান সংকলক এবং ভাষাবিজ্ঞানী যিনি রোমের কমিশনে ভিনসিয়ানার লিওনার্দোর কোডেক্স আটলান্টিকাসের নকলকরণের প্রতি আগ্রহী ছিলেন।

পরে, এবং সমান যাচাইবিহীন বিতর্ক করা হয়েছে যে, ১৭৯২ সালে সুনিশ্চিত "কমট ডি সিভরাক" ক্যলেরিফেরি বিকাশ করেছে । এই ক্যলেরিফেরি ফ্রান্সের প্যালাইস-রয়্যালে প্রদর্শন করা হয়েছে। ক্যলেরিফেরিতে সম্ভবত দুটি চাকা যুক্ত ছিল এবং অনমনীয় কাঠের শরীর ও হাত দিয়ে পরিচালনার জন্য কিছু ছিলনা । গতিপথ নিয়ন্ত্রণ সীমাবদ্ধ ছিল এবং হেলান দিয়ে যে গতিপথ নিয়ন্ত্রণযোগ্য ছিল।
১৮১৭ সালের ড্রইজের নকশা পরিমাপ করার জন্য তৈরি। 

ব্যবহারিকভাবে ব্যবহৃত বাইসাইকেলের প্রথম যাচাইযোগ্য দাবী জার্মান ব্যারন কার্ল ভন ড্রাইস করেছিলেন। তিনি জার্মানির গ্র্যান্ড ডিউকের বাডেনের একজন সরকারী কর্মচারী ছিলেন। ১৮১৭ সালে ড্রিস তার লাউফমাসচিন (জার্মান "চলমান মেশিন") আবিষ্কার করেছিলেন। যাকে প্রেস দ্বারা ইংরেজিতে ড্রেইসিন বা ফ্রেঞ্চে ড্রেসিয়েন বলে ডাকা হয়। কার্ল ভন ড্রইস ১৮১৮ সালে এই নকশাকে পেটেন্ট করেন, এটি ছিল প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সফল দুই চাকা, চলমান, মানব চালিত যন্ত্র, যাকে সাধারণত একটি বেগ বলা হয এবং ডাকনাম শখের ঘোড়া বা ড্যান্ডি ঘোড়া বলা হয়। প্রাথমিকভাবে এটি জার্মানি এবং ফ্রান্সে তৈরি করা হয়েছিল।

হান্স-এরহার্ড লেসিং (ড্রইজের চরিতকার) থেকে পরিস্থিতিগত প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, ড্রইসের আগ্রহের জন্য ঘোড়ার বিকল্প অনুসন্ধান ছিল ব্যপক এবং ১৮১৬ সালে গ্রীষ্মদের দিন ছাড়াই (১৮১৫ সালে তাম্বোরার আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের পরে) বিফল ফসলের কারণে ঘোড়ার মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

সাইকেল চালানোর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের “সাইকেল চালক” বা “বাইকার” হিসাবে উল্লেখ করা হয়। দ্বি-চাকার সাইকেল ছাড়াও, “সাইকেল চালানো” এর মধ্যে রয়েছে ইউনিসাইকেল, ট্রাইসাইকেল, কোয়াড্রিসাইকেল, রেকম্বেন্ট এবং অনুরূপ মানব-চালিত যানবাহন।

 ১৯ শতকে সাইকেল চালু করা হয়েছিল এবং এখন বিশ্বব্যাপী প্রায় এক বিলিয়ন সংখ্যা। তারা বিশ্বের অনেক অংশে, বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ ইউরোপীয় শহরগুলিতে পরিবহনের প্রধান মাধ্যম এই সাইকেল।লন্ডনে বাইকে টহল দিচ্ছে মেট্রোপলিটন পুলিশ। সাইকেল মোটর গাড়ির তুলনায় অনেক সম্ভাব্য সুবিধা প্রদান করে, যার মধ্যে সাইকেল চালানোর সাথে জড়িত টেকসই শারীরিক ব্যায়াম, সহজ পার্কিং, বর্ধিত চালচলন এবং রাস্তা, বাইক পাথ এবং গ্রামীণ ট্রেইলে অ্যাক্সেস।
সাইকেল চালানো জীবাশ্ম জ্বালানীর কম খরচ, কম বায়ু এবং শব্দ দূষণ, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস এবং যানজটকে ব্যাপকভাবে হ্রাস করার প্রস্তাব দেয়। ব্যবহারকারীদের পাশাপাশি বৃহত্তর সমাজের জন্য এগুলির আর্থিক খরচ কম (রাস্তার নগণ্য ক্ষতি, কম রাস্তার এলাকা প্রয়োজন)। বাসের সামনের অংশে সাইকেল র‍্যাক লাগানোর মাধ্যমে, ট্রানজিট এজেন্সিগুলি তাদের পরিষেবা দিতে পারে এমন ক্ষেত্রগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে পারে।

সাইকেল চালানো বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করে এবং জীবনযাত্রায় প্রচলিত ক্যান্সার, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করে অনেক। ১৯ শতকে সাইকেল চালু হওয়ার পর সাইকেল চালানো দ্রুত একটি কার্যকলাপে পরিণত হয়। আজ, মানুষের জনসংখ্যার ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ জানে কিভাবে সাইকেল চালাতে হয়।

সাইকেল পুনরুদ্ধারের একটি পদ্ধতি হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে এবং সেইসাথে সৈন্যদের পরিবহন এবং যুদ্ধের অঞ্চলে সরবরাহ করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে এটি। এতে এটি যুদ্ধে ঘোড়ার অনেক কার্যভার গ্রহণ করেছে। দ্বিতীয় বোয়ার যুদ্ধে, উভয় পক্ষই স্কাউটিংয়ের জন্য সাইকেল ব্যবহার করত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড সৈন্যদের সরানোর জন্য সাইকেল ব্যবহার করেছিল। 

১৯৩৭ সালে চীনের আক্রমণে, জাপান প্রায় ৫০,০০০ বাইসাইকেল সৈন্য নিয়োগ করেছিল এবং অনুরূপ বাহিনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মালায়ার মধ্য দিয়ে জাপানের পদযাত্রা বা “রোল”-এ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি আবার সাইকেল ব্যবহার করেছিল, যখন ব্রিটিশরা ভাঁজ করা বাইকের সাথে বায়ুবাহিত “সাইকেল-কমান্ডো” নিযুক্ত করেছিল।

ভিয়েতনাম যুদ্ধে, কমিউনিস্ট বাহিনী হো চি মিন ট্রেইল বরাবর পণ্যবাহী বাহক হিসেবে সাইকেলকে ব্যাপক- ভাবে ব্যবহার করত। বাইসাইকেল সৈন্যদের একটি রেজিমেন্ট বজায় রাখার জন্য পরিচিত সর্বশেষ দেশটি ছিল সুইজারল্যান্ড, যা ২০০৩ সালে তার শেষ ইউনিটটি ভেঙে দেয়। 
অতএব প্রেম ভালবাসার ক্ষেত্র থেকে শুরু করে যুদ্ধ ক্ষেত্র সব জায়গায় এই দু চাকার সাইকেলের গতি অবাধ ও স্বচ্ছন্দ। তাই সে যে কোনো জায়গায় যে কোনো উপায়ে চলে যেতে পারে হাসতে হাসতেই। তাই এই বিশ্ব সাইকেল দিবসে শুধু ভালোবাসার দু চাকার সাইকেল যান নিয়ে কিছু কথা। যে কথা অকথিত ছিল সে কথাও বলে ফেললাম এই সাদা জীবনের কালো কথা সাইকেলের কথায়।  

বিশ্ব সাইকেল দিবস - অভিজিৎ বসু।
তেসরা জুন, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...