আমার মোবাইলে নম্বরটা আজও সেভ করা আছে রনজিৎ মদন দা নামেই। কবে, কোথায় ওর সাথে দেখা হয়েছিল আজ আর সেটা স্মরণে নেই আমার। হয়তো সেই ২৪ চৌরঙ্গী রোডের অফিসে বা ভবানীপুরের সেই বিখ্যাত অফিসে দেখা হয়েছিল একদিন। ডাকাবুকো কংগ্রেস নেতা মদন মিত্র তখন প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সীর লোক। একদম ফর্সা গায়ের রং। চোখে রোদ চশমা, সাদা প্যান্ট সাদা জুতো পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এদিক আর ওদিক। আর সেই কিছু দরকার পড়লেই রনজিৎ রনজিৎ বলে ডাক দিচ্ছেন তিনি দরকারে আর অদরকারে।
রনজিৎ হলো মদনদার সেই পুরোনো দিনের একমাত্র সঙ্গী আর ছিল সেই স্বপন মাইতি বর্তমানে তিনি আর বেঁচে নেই। এস এস কে এম এ গেলেই স্বপনদা কে দেখতাম আমরা। কিন্তু সেই জাদুঘর এর ফুটপাথ ধরে বিকেলের কাগজ বের হলে পট পরিবর্তন আর অন্যদিকে প্রতিদিন নিয়ে চলে যেতাম আমরা দুজন। বর্তমানে একজন তৃণমূলের মুখপাত্র অনেক বড় মাপের সাংবাদিক ও রাজনীতির লোক। দলের অন্দরে অনেক দূর অবধি তাঁর হাত বিস্তৃত। অন্যদিকে আর একজন ৩৫ বছর এই বাংলা মিডিয়াতে কাজ করে এখন বাতিলের দলে টোটো চালক হয়ে গেছে আর কি।
যাক সেই রনজিৎ এর আজ জন্মদিন। মনে পড়ে গেলো আমার নানা কথা। রণজিৎ দে। সেই কাকুড়গাছিতে বাড়ী তার। সেই কবে থেকেই তো মদন মিত্রের ছায়া সঙ্গী হয়েই ঘুরে বেড়ানো তার। সেই ২৪ চৌরঙ্গী রোডের অফিস, সেই মনীষা অন্তর্ধান এর ফাইল বের করে দেওয়া। সেই বিমান বসুর হাতে লেখা চিঠি। চিঠির নিচে লেখা ব ব। সেই নিয়ে কত কিছুই যে হয়েছিল সেই সময়। আজ তো সবটাই ধামা চাপা পড়ে গেছে। নিশ্চয়ই মনীষার মা আর বেঁচে নেই। এতদিন বাদে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট কন্ট্রোলার এক্সাম মনীষা ভট্টাচার্য মনে হয়।
কত কিছুই যে ছিল সেই সময় এই খবরের দুনিয়ায় আমাদের কাছে সাংবাদিকদের কাছে। সেই প্রতিদিন কাগজে আর পট পরিবর্তনে সেই খবর বের করা হয়েছিল সিরিজ করে মনীষা অন্তর্ধান নিয়ে। ধীরে ধীরে সব কিছুই কেমন হারিয়ে গেলো চাপা পড়ে গেলো মনীষার খবর। একটা মেয়ে কোথায় হারিয়ে গেলো কেউ আর তার খোঁজ পেলো না কিছুতেই। সত্যিই অসাধারণ এই ঘটনা। যা আজ আর মনে নেই আমাদের অনেকেরই। সেই কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অ্যাসিস্টেন্ট কন্ট্রোলার এক্সাম একজন সে উধাও হয়ে গেলো। কোনোও খোঁজ পাওয়া গেলো না তার আজও।
তারপর সেই উত্তরপাড়াতে রামঘাটে রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশন এর অফিস। সেই গোপাল চট্টোপাধ্যায় আর শিবপদ ভট্টাচার্য্য মদনদার সাথে দেখা করতে আসতেন সেই অফিসে। সেই কত দিন যে এসেছেন মদন দা, রনজিৎ, স্বপন দা এরা সব এই রমঘাটে। সেই গোপাল দাও আজ আর নেই। স্বপন দাও নেই। শিবু দা বেঁচে আছেন সেই হাওড়া বর্ধমানের কর্ড লাইনে বেলমুড়ি গ্রামে থাকেন বোধহয়। সেই আমলের কংগ্রেস করা লোক আজ একদম কোণঠাসা হয়ে গেছেন তিনি এই তৃণমূলের আমলে পুরোনো কর্মী হয়েও। স্থানীয় বিধায়কের চাপে ও নতুন গোষ্ঠীর নেতাদের চাপে।
সেই মেট্রোর চেকিং অ্যাসিস্ট্যান্ট ইউনিয়ন। সেই হলুদ ট্যাক্সির প্রগ্রেসিভ ট্যাক্সি ইউনিয়ন। সেই কত খবর দেওয়া মদনদার আমাদের। আর মদনদার খোঁজ না পেলেই রনজিৎকে জিজ্ঞাসা করা কী গো দাদা আসবে তো। মেট্রোর ইউনিয়নের পদে থাকা রনজিৎ এর। সেই আন্দোলন করা মেট্রো ভবনে। বেশ ভালই লাগত কিন্তু আমার। নানা ভাবেই ভালোবেসে খবর দেওয়ার চেষ্টা করা। সে যে খবর হোক। আজকাল তো নেতাদের কাছে খবর পাওয়ার চান্স খুব কম। নেতাদের আশপাশের লোকজন এর কাছেও খবর মেলে না কিছুতেই। আর সেই আমলে কত ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল আমাদের সাংবাদিকদের সাথে। নেতার থেকেও কাছের জন ছিল এই রনজিৎ।
আর এই তাই ওর জন্মদিনের দিন শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে এসব পুরোনো দিনের স্মৃতি কথা মনে পড়ে গেলো আমার। সেই মহাকরণে মন্ত্রী হয়ে প্রবেশ করা। রণজিৎ এর তখন একটু কদর বেড়েছে চারিদিকে। কিন্তু ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে নেতার পাশে জুটে যায় আরও অনেকেই। চলে এলো প্রশান্ত প্রামাণিক। ধীরে ধীরে রনজিৎ দূরে সরে গেলো যেনো। সেই গাড়ি থেকে নেমেই ২৪ চৌরঙ্গী রোডের অফিসে মদন মিত্র আসলেন এক সন্ধ্যায় বৃষ্টির মধ্য। চেয়ারে বসতেই দাদা বললেন রনজিৎ চা বল একদম ভিজে গেছি। রনজিৎ রাস্তায় বসে থাকা চা ওলার কাছে খবর দিতে গেলো। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে। সেই কত যে এমন গভীর গোপন কথা মনে পড়ে যায় আজ ওর জন্মদিনের দিন আমার।
সেই বিমান বাবুর মনীষাকে লেখা চিঠি আনন্দবাজার পত্রিকার বিখ্যাত বাম বিটের এক সাংবাদিক এর হাতে চলে যায়। তিনিও আজ আর নেই আমাদের মধ্যে।
সেই সিঙ্গুরে অন্দোলন এর সময় মদন দার সাথে রনজিৎ এর দিন রাত পড়ে থাকা। তারপর ২০১৭ সালে মদন মিত্রের জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর দূরে সরে যাওয়া ওর। সেই আমার অসুস্থ হয়ে পড়ে আছি ওষুধ কেনার অবস্থা নেই আমার মদন দা কে খবর দিয়ে দেওয়া। আর কলকাতা থেকে গাড়ী নিয়ে মদন দা সোজা আমার রিষড়ার টালির বাড়ীতে চলে যাওয়া। আমার মা বাবাকে বলা চিন্তা করবেন না আপনারা। সেই রনজিৎ খবর না দিলে তো আর মদন দা জানতেই পারতেন না আমার অসুস্থ হবার কথা।
সেই লাইভে বসাতে হবে অন্য চ্যানেলকে টেক্কা দিয়ে রনজিৎ ব্যবস্থা করে দিলো ঠিক ম্যানেজ করে। আজ সেই রনজিৎ এর জন্মদিন ফেসবুকের খাতায়। আর সেটা দেখেই আমার মনে পড়ে গেলো সেই আজ থেকে ত্রিশ বছর আগের কথা বা তারও বেশি হবে। সেই বাংলায় দাপিয়ে রাজত্ব করা লালপার্টি হাতুড়ি আর কাস্তের কি দাপট। সেই আমলে কংগ্রেস থেকে তৃণমূল কংগ্রেস করে দিব্যি হাসি মুখে দিন কাটিয়ে একদিন সব ছেড়ে, হাত আর ফুলের মায়া কাটিয়ে রাজনীতি ছেড়ে কবিতা লিখে সময় কাটে ওর।
রাজনীতির ময়দানে ঘুরে বেড়ানো রনজিৎ এখন কবি। নানা এক্সক্লুসিভ খবর দেওয়া রণজিৎ আজ বসন্তের ঝিম ধরা দুপুরে লাল পলাশের হাসি মেখে কবিতা লেখে। যে কবিতা জীবনের কবিতা। কবিতা লিখে পুরস্কার নেয় হাসিমুখে। সে স্বপ্ন দেখে মনে মনে। নতুন ভোরের স্বপ্ন, নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন, যে স্বপ্ন দেখে মনে মনে সে ভাবে এইভাবেই না হয় স্বপ্ন দেখেই কেটে যাক এই জীবন। রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তে পড়ে আর হাবুডুবু নয়। ভালো থেকো তুমি। হ্যাপি বার্থডে দাদা। আর সেই কথাই আমি লিখে ফেললাম আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায়।
হ্যাপি বার্থডে রনজিৎ দা - অভিজিৎ বসু।
এগারো ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন