সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভালো থাকবেন স্যার।

সাদা জামা। সাদা প্যান্ট। সাদা জুতো। সেই রামোজি  রাও আর নেই। ইনাডু কাগজ আর ইটিভির কর্ণধার রামোজি রাও চলে গেলেন। আজ ভোর বেলায় এই খবরটা পেলাম হায়দরাবাদ এর এক বন্ধুর থেকে ফেসবুকে। যিনি দেশের মধ্যে মিডিয়া জগতের এমন একজন সাদা মানুষ হয়ে বেঁচে থাকবেন আমাদের সবার কাছে সারা জীবন।

কত কথা, কত স্মৃতি, কত জীবনের ফেলে আসা অতীত দিনের ঝলমল করা সব দিন কাটিয়ে এসেছি আমরা। আমার সাংবাদিকতার পাশাপাশি জীবনে শিরদাঁড়া সোজা করে এই ভাবে যে কারুর কাছে মাথা নিচু না করে, অকুতোভয় হয়ে বেঁচে থাকা যায়। যে কোনো খবর করেও কোনো নেতাদের ভয় না পেয়ে সেই সাহস দেওয়া  মানুষটা আমাদের সবার চেয়ার ম্যান স্যার আর নেই।
 কি বলবো আর আমি আজ এই সাত সকালে এই খবর পেয়ে আমার লেখা আসছে না আর কোনো। আমার জীবনের যা কিছু পরিচিতি উত্থান সব কিছু হয়েছিল এই মানুষটার নিজের হাতে তৈরী ইটিভি বাংলা চ্যানেলে কাজ করার সুবাদে। যার জন্য আমরা জীবনে সাংবাদিক হতে পেরেছি। বুক ফুলিয়ে বলতে পেরেছি ইটিভি বাংলার প্রতিনিধি আমরা। যাদের কেউ কোনো দিন বলতে পারে নি তোমার মালিক তো ওদের হয়ে ওই দলের হয়ে প্রচার করেন। তোমরা ওই দলের মিডিয়া। তুমি মিডিয়া থেকে টাকা তুলে উপার্জন করো।
ভাবলেও অবাক হই হায়দ্রাবাদের পাহাড়ে বসে সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ইটিভির নানা রাজ্য জুড়ে আঞ্চলিক ভাষার একের পর এক চ্যানেল। এক ছাতার তলায়, এক ছাদের তলায় গোটা দেশকে জড়ো করেছিলেন তিনি খবরের মোড়ক দিয়ে। এনেছিলেন জেলায় জেলায় ভি স্যাট সেন্টার দিয়ে ছবি পাঠানোর সুবন্দোবস্ত ব্যবস্থা, যা জেলা থেকে হায়দ্রাবাদের রামোজি ফিল্ম সিটি তে ছবি চলে যেতো অনায়াসে এফটিপি দিয়ে। জেলার খবর, গ্রামের খবর এক নিমেষে পৌঁছে যেতো সেই ভি স্যাট এর মাধ্যম দিয়ে। আর সেই ইটিভির আমার বাংলা যার জন্যে আমরা আজও পরিচিতি পাই রাস্তা ঘাটে সব জায়গায়। সেই মানুষটা রামোজি রাও আজ সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন।

শুধু মাত্র অনেক কথার মাঝে একটা ঘটনা বলি আমার  বাংলায় দেখানো হলো শ্রীরামপুর শহরে এক মাটির পুতুল করা কুমোর ঝুলনের পুতুল তৈরি করেছে আমার বাংলার বিখ্যাত অ্যাঙ্কর কাকলি গোস্বামীকে নকল করে। খবর দেখানো হলো ইটিভি তে। সেই সময় হায়দরাবাদ এ কাজ করা চেয়ারম্যান স্যার এর প্রিয় ডেপুটি নিউজ কো অর্ডিনেটর ধ্রুবজ্যোতি প্রামাণিক আমায় জানালো এই পুতুল হায়দরাবাদ পাঠাতে হবে ভালো করে প্যাকিং করে। আমি ওর কথা মত সেই পুতুল জোগাড় করে পাঠিয়ে দিলাম আমি সেই মাটির জিনিসটা। পরে চেয়ারম্যান স্যার নিজে তার প্যাডে আমায় লিখে জানালেন এই কাজ খুব ভালো হয়েছে। সেটি তাঁর নিজের সংগ্রহশালায় রেখে দিয়েছেন তিনি। চেয়ারম্যান আজ নেই, কিন্তু তাঁর সেই সই করা চিঠি আমার জীবনের সেরা উপহার হিসেবে আজও রয়ে গেছে আমার আলমারিতে ফাইলে বন্দী হয়ে।

অনেক কথা, অনেক স্মৃতি আজ সব ঝাপসা হয় যাচ্ছে। গুলিয়ে যাচ্ছে আমার। এই সকালে আমাদের সবার চেয়ারম্যান স্যার নেই খবর শুনে একটাই কথা বলে শেষ করি যে, এই মানুষটার জন্য আমরা বাংলার বহু মানুষ মিডিয়ার মাঠে ময়দানে কাজ করতে শিখে জীবন নির্বাহ করতে পেরেছি। কেউ অনেক বড় হয়েছি, কেউ সেই ভাবে বড়ো হতে পারিনি। কিন্তু রামোজি রাও এর ট্রেনিং সেন্টার এর যে শিক্ষা পেয়েছি সেটা কোনো দিন ভুলতে পারবো না আমরা কেউই। 
আমরা সবাই গর্বিত আমরা সবাই ইটিভিয়ান বলে। যে পরিবারের সবার মাথা, সবার অভিভাবক, সেই সকলের ছাতা রামোজি রাও আজ আর নেই আমাদের মধ্যে। চেয়ারম্যান স্যার আমার প্রনাম নেবেন। ভালো থাকবেন স্যার আপনি। আজ আমাদের মন খারাপের দিন। তবু সবাইকে এক সুতোয় বেঁধে দিলেন আপনি আমাদের ছেড়ে অনেক দূরে চলে গিয়েও। 

ভালো থাকবেন স্যার - অভিজিৎ বসু।
আট জুন, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...