সারা দেশ জুড়ে লোকসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। কন্যাকুমারী থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত এই নির্বাচনের ঢেউ এসে হাজির হয়েছে। বহু দল লড়াই করেছে এই সারা দেশের লোকসভার নির্বাচনে। কিন্তু লড়াই এর কেন্দ্রে দুই দলের দুই প্রধান মুখ। মোদী আর মমতা। এরা এই দুজন দুজনের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে এই বার। আশপাশে আর যেনো কেউ নেই লড়াই এর ময়দানে।
নির্বাচনী ফল বের হবার আগের রাতে ঘুম নেই দুই যোদ্ধার চোখে। ধ্যান করে ক্লান্ত হলেও একজন যাচাই করছেন তার মোদি ম্যাজিক এই বারেও এই বয়সেও কাজ করে কি না আবার। সেটাই আসল অগ্নিপরীক্ষা তাঁর নিজের কাছে, নিজের দলের লোকদের কাছে, দেশের মানুষের কাছে। হাজার ক্যামেরার চোখের সামনে কাল কি ফল হয় সেই দেখার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন তিনি দিল্লির রেসকোর্স রোডের ঝাঁ চক চকে প্রাসাদোপম বাড়িতে।
অন্যদিকে দক্ষিণ কলকাতার ছোটো গলিতে সেই টালির ঘরে জীবন কাটানো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর চোখেও ঘুম নেই আজ। হাজারো ঝড় ঝাপটা সামলে দলের সব সমস্যা সামলে। নিজের জনমোহিনী ক্ষমতা কমলো এত বছর পর না এক আছে তার অগ্নি পরীক্ষা হবে আর কয়েক ঘণ্টা পরেই। তবু তিনি নিজেই নিজের পরীক্ষার ফল যাচাই করতে চাইছেন। দেশের দু প্রান্তের এই দুই ছবি ভোটের ফল বেরোনোর আগের রাতে।
কার জিত, কার হার, সেটার জন্য অপেক্ষার অবসান হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যে। তবু দু পক্ষ নিজেদের শক্তি যাচাই করতে চাইছেন এই লড়াই এর ময়দানে। রাতের বেলায় তাই দিল্লির মসনদে বসার স্বপ্ন দেখা বৃদ্ধ মানুষটি ভাবছেন এই বয়সে এসে আমার কাঁধে ভর করে কি ঠিক কাজ করলো দল। নাকি সত্যিই এ ছাড়া আর উপায় নেই কোনো। কিছুতেই দু চোখের পাতা এক হচ্ছে না আজ তাঁরও।
অন্য দিকে একা কুম্ভ রক্ষা করে নকল বুঁদি গড়। এই ভাবে যে মহিলার কাঁধে ভর করে বেঁচে আছে পশ্চিমবঙ্গের গড়, সাম্রাজ্য। সেই মহিলারও আজ অগ্নি পরীক্ষার কঠিন সময় আগত। কিছু সময় বাদে ফল প্রকাশ হবে। কিন্তু তার আগে কি একটা অস্বস্তি বোধ লাগছে যেনো। কেমন যেনো একটা বোধ কাজ করছে এতদিন পরে। কিছুতেই ঘুম আসছে না ওই টালির চালের ঘরের চৌহদ্দীতে বাস করা বাসিন্দারও।
তিনিও ভাবছেন কেনো যে আজ এমন হচ্ছে কে জানে। এই অবস্থা আগে কোনো ভোটের সময় তো হয়নি। জীবনের এত পরীক্ষা দিয়েও। অন্যদিকে রাজধানী দিল্লির বাসিন্দার ঘরেও কেমন একটা গুমোট ভাব। হাজার ঠাণ্ডা হাওয়া চললেও ঘর ঠাণ্ডা হচ্ছে না কিছুতেই। দেশের দুই প্রান্তের দুই ঘরে আজ যেনো অন্য হাওয়া বইছে। যে হাওয়ায় উড়ে যাচ্ছে নিজেদের আত্মবিশ্বাস, নিজেদের কারিশমা সবকিছু।
শুধু একটা শেষ বারের মত যাচাই করতে চাইছেন তারা দুজনেই। তাদের জন মোহিনী হাওয়ায় কি আবার ভেসে যাবে আমজনতা। গোটা দেশ জুড়ে কি বইবে প্রতিবারের মতো তার এই মোদী ম্যাজিক এই বারও। এই প্রশ্নের উওর খুঁজে চলেছেন তিনি একমনে ধ্যান করতে করতে। আকুল হয়ে প্রার্থনা করছেন ভূতের রাজার বরের মত যেনো ম্যাজিক কাজ করে আবার।
আর অন্যদিকে টালির চালের ঘরে বসে মমতার চিন্তা একটাই। বাংলার মানুষের কাছে কি তাদের সবার দিদির ম্যাজিক আবারও কাজ করবে আগের মতই এক ভাবে। নাকি হাজার ঝড় ঝাপটায় কিছুটা ক্লান্ত হয়ে যাবে তার ক্যারিশমা এই বার। কিছুতেই ঘুম আসছে না আর তাঁর দু চোখেও। এপাশ ওপাশ করছেন দুজনেই। কিন্তু কেউ আর মুখ ফুটে বলতে পারছেন না কাউকেই ফোন করে। রাতের নিকষ কালো অন্ধকার কাটার অপেক্ষায় দুজন দু প্রান্তে প্রহর গুনছেন। নতুন ভোরের আলো ফুটবে কখন সেই অপেক্ষায় লোকসভা ভোটের যুদ্ধের দুই প্রধান যোদ্ধা।
আলো ফোটার অপেক্ষায় - অভিজিৎ বসু।
চৌঠা জুন, দু হাজার চব্বিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন