সাদা জীবনের কালো কথায় একটা ফোন এর কথা। যে ফোন পেয়ে মনটা কেমন দুঃখ কষ্টে আরও বেশি করে মনটা ভরে গেলো আমার। খারাপ লাগলো আমার শুনে আর পারা গেলো না দাদা। তাই ছেড়ে দিলাম কাজটা। এমন কথা ফোন করে কেউ বলবে আমি ভাবিনি।
আসলে পৃথিবীর সব লোকজন, মিডিয়ার দাপাদাপি থেকে দূরে অনেক দূরে সরে গেছি আমি এই পাঁচ বছরে। নিজেও তো একদিন কাজ করতে না পেরেই কাজটা ছাড়তে বাধ্য হয়ে ছিলাম এক সময়ে। আসলে এই সব অত্যাচারী শাসক দলের সাথে লড়তে না পেরে যারা ঘরে ভাতের উনুনকে নিভিয়ে দিয়ে। ক্ষুধাতুর শিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে যারা এই ভাবে অবলীলায় কাজ ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হয় তাদের কুর্নিশ জানাতে হয়।
আসলে কি জানেন মিডিয়ার এই সব অত্যাচারী শাসকদের বাংলার সুবেদার করে দিলে কি যে হতো কে জানে। হয়তো বাংলার চিত্রটাই বদলে যেত। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলার ভোল বদলে যেত। আর সেই শাসক কূল হাতে চাবুক নিয়ে বাংলার রাজপথে ঘুরে বেড়াতো কাকে কখন শায়েস্তা করা যায় সেই সব ফন্দি ফিকির খুঁজতো তারা। না হলে যে তাদের শান্তিতে ঘুম হতো না কিছুতেই।
কিন্তু চাবুকের ঘা খেয়েও যারা হাসি মুখে অবলীলায় কাজ ছেড়ে চলে আসতে পারে তাদের জন্য গর্ব হয় আমার। বুকটা ভরে ওঠে। বুকের পাটা আছে বলতে হয়। সেই সব অত্যাচারী রাজা, রানীদের মুখে ঝামা ঘষে যারা একবাক্যে কাজ ছেড়ে বলতে পারে আমি তোমার দাসত্ব করবো না সেটা কম গর্বের কথা নয়।
তাই যে ফোন করে বলল আমি পারলাম না কাজ ছেড়ে দিলাম অত্যাচারে আর নোংরামোতে তার কথা শুনে মনে হলো এখনো এমন কিছু মানুষ আছে যারা এই ভাবে ক্ষমতার মসনদে বসে থাকা রাজাদের, রানীদের মুখের ওপর জবাব দিতে জানে। শুধু কটা টাকার জন্য এই ভাবে পড়ে পড়ে মার খায় না তারা। ঘরে ভাত জোগাড় করতে না পারলেও যারা নিজেদের আত্মসম্মান বিকিয়ে কাজ করে না , চাকরি করে না। নিজের শিরদাঁড়া কে বিক্রি করে দেয় না।
এরা বড়ো বড়ো চেহারার সব মাতব্বর নয় কিন্তু এদের মধ্যে একটা আগুন জ্বলে। যে আগুনে এরা জ্বলে পুড়ে খাঁটি সোনার মতো বেঁচে থাকে। আর তাই বোধ হয় এমন করে কাজ ছেড়ে দেওয়া লোকজন আমায় ফোন করে বলে দাদা তুমি ডেকে কাজ দিয়েছিলে আমি ছেড়ে দিলাম ভোটের সময়। অন্য জায়গায় কাজ করবো। মনটা বড়ো ভালো হয়ে যায়। সত্যিই তো জীবনের এই পাওনাই বা কম কি।
আবার এই যে ভোটের ডিউটি সেরে কলকাতা ফেরার পথে কিছু চেনা লোকজন ডেকে কথা বলে সেটাও বেশ ভালো লাগে আমার। আসলে এই কাজের সম্পর্কের অনুভূতিগুলো কেমন করে যেন হারিয়ে যায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাপ্তির কাছে। তবু সেই সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়ে যখন দেখি যে পুরোনো দিনের কিছু চেনা মানুষ কথা বলে, ফোন করে হয়তো স্বার্থ নিয়ে তখনও ভালো লাগে বেশ।
মনে হয় সত্যিই তো জীবনের এই সব মানুষদের জন্য একসময় কত উপকার করলাম কিন্তু তারাই কেমন করে অত্যাচারী শাসকদের চাপে পড়ে কেমন করে সব বদলে গেলো। আমায় বন্ধু থেকে সবাই শত্রু ভাবলো। আবার তারাই যখন সাত সকালে দেখা করতে বলে সাইকেল চালিয়ে ছুটে যাই দৌড়ে গিয়ে হাসি মুখে কথা বলি, দেখা করি আমি তাদের সাথে। ভাবি সত্যিই তো কতদিন এদের সাথে কাজ করেছি একসাথে।
এই সব কথা ভেবে বেশ ভালই লাগে। শুধু মনে হয় অত্যাচারী শাসকদের একদিন ক্ষমতা চলে যাবে। হুংকার কমে যাবে। নখদন্তহীন হয়ে পড়ে থাকতে হবে একা একা। কমে যাবে সেই বিখ্যাত সিনেমার লাইন এর কথা, বাবা কি দাপট। সেই দিন তারা কাদের ধমকায়, কাদের চাকরি খায়, কাদের ঘাড় ধরে বের করে দেয় সেটাই দেখার বিষয়। ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। বহু দিনের গড়ে ওঠা সম্পর্ক গুলোকে সযত্নে আগলে রাখুন। রাজা বা রানীর ভয়ে সম্পর্ক গুলোকে মেরে ফেলবেন না।
বাবা কি দাপট - অভিজিৎ বসু।
পনেরো মে, দু হাজার চব্বিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন