সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শীতের সেই লাল লেপওলা

শীত এলেই ওরা আসে। প্রতি বছর কালীপুজোর পরে কার্তিক মাসের হিমেল হাওয়া অনুভব করলেই, ওরা সবাই চলে আসে দলে দলে। কেউ সাইকেল নিয়ে, কেউ আবার পায় হেঁটে ঘুরে বেড়ায় পাড়ায়,পাড়ায়। তুলো ভর্তি বস্তা আর লাল রং এর শালু নিয়ে ওরা ঘুরে বেড়ায় পাড়ায়,পাড়ায়। আর অদ্ভুত একটা ডাক দেয় ওরা ঘুরতে ঘুরতে। কিন্তু সেই ডাকটা কি আমি আজও বুঝে উঠতে পারিনি। সেই ছোটো বেলা থেকে এই ডাকটা শুনলেও বুঝতে পারিনি কি বলছে ওরা। লেপ, তশুক করবে গো বলে এমন একটা মন কেমন করা ডাক। সেই ডাক শুনে শীত যেনো লুকোতে চায় লাল শালুর ভিতরে। লাল শালুর ওম পেয়ে কেমন যেন মনমরা হয়ে গুটি সুটি মেরে লুকিয়ে থাকতে চায় শীত। 
ছোটো বেলায় নিঝুম দুপুরে আচমকা আমার জানলার পাশে কেউ এই ভাবেই ডেকে ওঠে। বাড়ির কার্নিশে বসে একমনে সেই ডাক শুনতে পায় একা শালিখটি। যার সঙ্গী অনেকদিন আগেই হারিয়ে গেছে। ঘাড় ঘুরিয়ে সে শোনে সাইকেলের  ঘণ্টির আওয়াজ। কিন্তু তাকে দেখে কিন্তু একটুও অবাক হয় না সে।
 আর সেই আওয়াজ শুনে এক দৌড়ে আমি, তখন জানলার লোহার রডে মুখ ঠেকিয়ে চুপ করে ওদের চলে যাওয়া দেখি। সাইকেল এর ঘণ্টি বাজিয়ে ওরা ধীরে ধীরে চলে যায় দূরে আরও দূরে। কালো টায়ার দিয়ে সাইকেলের কেরিয়ারে তুলোর বস্তাটা বাঁধা থাকে ওদের। একদিকে কাত হয়ে ঝুলে পড়েছে বস্তাটি। লেপ ঠ্যাংয়ানোর লাঠিটা কাঁধের ওপর আলতো করে শোয়ানো সাইকেলের রডে। নিজেই ব্যালেন্স করে এগিয়ে চলেছে তাল মিলিয়ে লাঠিটা সাইকেলের তালে তালে দুলে দুলে। 
আর গফুর চাচা অবলীলায় মুখে বলতে বলতে এগিয়ে চলেছে লেপ তোশুক করবে গো। সেই মন কেমন করা বহু দিনের চেনা ডাক। এই ডাক শুনতে পেলেই মনে হয় সত্যিই তাহলে এসে গেলো গুটি গুটি পায় শীতের আমেজ। আগেকার দিনে শীতের কাল মনে করায় বাড়ির মা কাকিমা দিদিমারা, ঘরের ছেঁড়া পুরোনো কাপড় দিয়ে কাঁথা তৈরি করতেন। আর সেই ভালবাসার সুতো দিয়ে বোনা কাঁথা জড়িয়ে, ঠাণ্ডার মোকাবিলা করতাম আমরা।
আর যাদের একটু অবস্থা ভালো তারাই গফুরদের হাঁক পেড়ে ডাকতো শীতের দুপুরে। তারপর একমনে জরিপ করতো তুলোর বস্তাটা ঠিক আছে কি না। সাদা তুলোর বস্তাটা খুলে দিয়ে তখন গফুর চাচা প্রাণপণে বোঝাত এই তুলোর গরম কত।সাদা তুলো হাতে নিয়ে দেখাতো সে। আর আমার তখন গফুর চাচাকে ঠিক সান্তার মত মনে হতো।আর চাচা বলতো, হাঁড়ি থেকে ধোঁয়া ওঠা ভাতের মত গরম হবে লেপ। এই বলে ফোকলা ছোপ পরা দাঁত বের করে হাসত সে। একদম সোজা সাপটা  অমলিন হাসি তার।
যদি দরদাম করে পোষাতো, তাহলে সে বসে পড়ত মাটির উঠোনে সব জিনিস নিয়ে। উবু হয়ে বসে শুরু করতো তার হাতের কেরামতি। আর সেই কেরামতি দেখতে আমরা অনেকেই ভীড় করতাম তার চারি পাশে। কাঠের দাঁড়ি পাল্লায় তুলো বের করে মাপা হতো প্রথমে। তারপর সেই তুলো কে ভাঙা হতো ধুনুরি দিয়ে। আর এটাই হলো আসল কথা লেপ তৈরীর। মুখে গামছা বেঁধে একমনে তুলো ভাঙার কাজ করতো গফুর চাচা। আর আমরা সেই ধুনুরির আওয়াজ শুনতে সবাই দল বেঁধে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়তাম মাঠের ধারে।এক মনে দেখতাম সেই লেপ তৈরির কাজ।
 এখন তো বাজারে এসেছে সুন্দর সুন্দর মোলায়েম ব্ল্যাঙ্কেট। আর এই নরম সুন্দর মোলায়েম ব্ল্যাঙ্কেট যদিও কিছুটা হলেও লাল লেপের বাজার কমিয়ে দিয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকার লেপের বদলে আটশো থেকে নশো তে মিলছে এই নতুন মোলায়েম ব্ল্যাঙ্কেট। কিন্তু সেই লাল শালুর লেপের নিচে ঠাণ্ডায় কাবু হয়ে সেঁধিয়ে যাওয়া তার আস্বাদ আলাদা মোলায়েম ব্ল্যাঙ্কেটের থেকে। 
নরম তুলো ভরে নিপুণ হাতে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে সেলাই করে লাল লেপ তৈরি করে দিত গফুর চাচা। তার পর সেই ছোপ ছোপ দাগ পড়ে যাওয়া দাঁত বের করে, সে হাসি দিয়ে বলতো কর্তা দেখবেন কেমন আরাম লাগে, শুয়ে দেখে বলবেন। তারপর তার পাওনা বুঝে লুঙ্গির ভেতর গিট দিয়ে টাকা গুলো নিয়ে বেঁধে রেখে সাইকেলের ঘণ্টি বাজিয়ে চলে যেত সে।
আজকাল গফুর চাচাদের আর পাড়ায় পাড়ায় ঘুরতে দেখা যায় না। অনেকটাই কমে গেছে তাদের আসা যাওয়া। তাদের আর আমি দেখতে পাচ্ছি না বেশ কিছু দিন হল। শুনতে পাচ্ছি না, সেই সাইকেলের মন কেমন করা রিং রিং ঘণ্টার আওয়াজ। কে জানে কি হলো তার।
শুনলাম হাওয়া অফিস নাকি বলেছে, জল বায়ুর প্রভাবে কমছে শীতের প্রকোপ এই ভাবে প্রতি বছর। নভেম্বর মাসে গায় লাগছে না ঠাণ্ডা হিমেল হাওয়ার পরশ। আর সেই কথাই কি জানতে পেরে গেছে গফুর চাচারা।তাই বোধ হয় তারা আর লাল শালু নিয়ে,  তুলোর বস্তা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে নি রাস্তায়। আচ্ছা সেই কার্নিশে বসে থাকা শালিখ পাখিটাও কি জানতে পেরে গেছে গফুর চাচার মতই, যে পিছিয়ে যাচ্ছে শীতের আমেজ। তাই ফাঁকা কার্নিশে বসে নেই সেও। শীতের দুপুরে যে ফিঙে পাখিটা আমলকী গাছের ডালে দোল খেতে খেতে ভাবত অন্ধকার নামার আগেই ঘরে ফিরতে হবে তাকে দ্রুত, সেও কিন্তু নিশ্চিন্তে দোল খাচ্ছে একা একা আপন মনে। সে জানে ঝুপ করে সন্ধ্যা নামবে না দ্রুত। ধীর পায়ে আল ধরে মাঠ থেকে ফিরে আসা চাষী জানে, শীতের রাত দ্রুত তাকে ঘিরে ধরবে না।
তাহলে হলো টা কি প্রকৃতির, এই ভাবেই কি ধীরে ধীরে সব বদলে যাবে। যে ঋতুর প্রভাবে এতদিন ছোটো থেকে বড়ো হয়েছে তারা সেই পুরোনো দিন গুলোর কি বদলে যাবার সময় হয়ে গেছে তাদের। মানুষ বদলে যাবার মত, ওরাও কি সব ধীরে ধীরে নিজেদেরকে বদলে ফেলছে আপন মনে নিজের ইচ্ছায়। নাকি এই বদলে যাবার দায় একান্তই আমাদের নিজেদের অদূরদর্শিতা কে জানে।
গত ২২ বছরে 'উষ্ণতম' নভেম্বর মাস এই বছর।
আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী কলকাতায় এ বছরের নভেম্বর ২২ বছরে মধ্যে উষ্ণতম বছর। জেলাতেও পরিস্থিতি কিন্তু আলাদা নয়। কিন্তু  আবহাওয়ার এই অবস্থা দেখে, সত্যিই ভাবতে হয় আমাদের।গরমকালে আমরা জানতে চাই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কত। ঠিক তেমনি শীত এলেই আমরা জানতে চাই আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কত।
আলিপুরের তথ্যে  ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে, নভেম্বরে কলকাতায় এক সময় ১০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও নেমেছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। যদিও তা ১৮৮৩ সালের রেকর্ড, বিশ্ব উষ্ণায়ন পূর্ববর্তী যুগের কথা এটা। কিন্তু বর্তমান শতাব্দীতেও নভেম্বরে ১৪ ডিগ্রিতে নেমেছিল কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। বেশি দিন আগের কথা নয় সেটা ২০১২ সালের কথা। ১৫ ডিগ্রি বা তার নীচে তাপমাত্রা নামার ঘটনাও কম নয়। অথচ, এই বছর বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূমেই ১৫ ডিগ্রির নীচে পারদ নামার ঘটনা একেবারে হাতে-গোনা। যেটুকু ঠান্ডা  লাগছে সেটাও শুধু রাতে আর ভোরের দিকে একটু। দিনে অস্বস্তির গরম সব জায়গায় জেলা বা কলকাতা সব জায়গায় এক অনুভূতি। যা নভেম্বর-সুলভ নয় একেবারেই। 
এই বছরের নভেম্বর মোটেই পূর্বসূরিদের মান রাখতে পারেনি। উল্টে গরমের রেকর্ডে নাম লিখিয়ে ফেলেছ। ২০০১ সালে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সর্বাধিক নেমেছিল ১৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ বার পারদ নেমেছে ১৮.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত, তার নীচে আর নামেনি। নভেম্বরে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড় থাকার কথা ২০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবার সেই গড় দাঁড়িয়েছে ২১.৬ ডিগ্রিতে। চলতি শতাব্দীর নভেম্বরে ২১ ডিগ্রি বা তার উপরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড় পৌঁছেছে মাত্র চার বার, তার মধ্যে জ্বলজ্বল করছে সদ্যসমাপ্ত মাসটা। 
সত্যিই কি অদ্ভুত রহস্যময় পরিবর্তন হচ্ছে জল বায়ুর। আমরা ধীরে ধীরে তা টের পাচ্ছি। কিন্তু সেই পরিবর্তন কে আটকে দেওয়ার কোনো উপায় আমাদের জানা নেই। শুধু এটুকু জানি আমরা যতই আধুনিক মানুষ হই, জেট গতিতে চাঁদে, মঙ্গলে বসতি গড়ার স্বপ্ন দেখি।প্রকৃতির কাছে আমরা সবাই শিশু। সে নিজের ইচ্ছায় নিজের মতো করেই চলে নিজের মত করে আপন খেয়ালে। তার সাজিয়ে রাখা, গুছিয়ে রাখা পরিকল্পনাহীন জীবন নিয়ে। তাকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো উপায় এখনও আমরা আবিষ্কার করতে পারি নি আজও। আর তাই বোধ হয় তারা আমাদের এই পৃথিবীর ভূস্বামী যারা ভাবি নিজেরা। নিজেদের ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর এর সাথে তুলনা করি আর ক্ষমতার মসনদে বসে আস্ফালন করি হাত পা ছুঁড়ে। তাদেরকে প্রকৃতি একটু অবাক চোখে দেখে, আর মনে মনে বলে। সত্যিই তোমরা বড়ো বোকা মানুষ। এত দিনেও তোমরা কেনো যে সত্যিই কারের চালাক হতে পারলে না কে জানে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...