সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আজ উল্টোরথ

আজ উল্টোরথ। আজ সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। কখনও কালো মেঘ আবার কোনো সময় আকাশে রোদ ঝকমক করছে। এই উল্টোরথে। উল্টো পথে নিজের বাড়ী ফিরবেন প্রভু জগন্নাথ দেব। মাসীর বাড়ী থেকে আজ চলে যাবেন তিনি নিজের ঘরে। এসেছিলেন তিনি নিজের ঘর ছেড়ে আজ সেই মাহেন্দ্রক্ষণ প্রভুর মাসীর ঘর ছেড়ে নিজের ঘরে চলে যাবার দিন। উল্টোরথ টানার মধ্য দিয়ে এই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় পর্ব শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব শেষ হয়। আবার এক বছরের প্রতীক্ষা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস হলো জগন্নাথ দেব হলেন জগতের নাথ বা অধীশ্বর। জগত হচ্ছে বিশ্ব আর নাথ হচ্ছেন ইশ্বর । তাই জগন্নাথ হচ্ছে জগতের ইশ্বর। তাই তাঁর অনুগ্রহ পেলে মানুষের মুক্তিলাভ হয়। জীবরূপে তাকে আর জন্ম নিতে হয় না কোনো দিন। এ বিশ্বাস থেকেই রথের ওপর জগন্নাথ দেবের প্রতিমা রেখে রথযাত্রা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। শুধু জগন্নাথ নয় সাথে থাকেন বলরাম আর শুভদ্রাও। 
সোজা রথের পরে উল্টো রথে জগন্নাথ দেবকে গুন্ডিচা মন্দির থেকে লীলাচলে জগন্নাথদেবের মন্দিরে নিয়ে আসা হয়। এর আগে রথ যাত্রার শুরুর দিন লীলাচল থেকে জগন্নাথদেবকে গুন্ডিচা মন্দিরে নেওয়া হয। কথিত আছে সত্যযুগে ইন্দ্রদুম্ন্য রাজার স্ত্রী গুন্ডিচাকে শ্রীকৃষ্ণ সন্তান হিসাবে প্রতিবছর নয় দিন তার কাছে থাকার থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন। আর তাঁর রাখা
সেই প্রতিশ্রুতি রাখার জন্যই নাকি রথের শুরুর দিন গুন্ডিচা মন্দির থেকে লীলাচলে জগন্নাথদেবের এই মন্দিরে নিয়ে আসা হয়। সারা দেশ জুড়ে পালিত হয়  উল্টো রথ যাত্রা উৎসব। যা দেখে ছোটো বেলার কথা মনে পড়ে যায়। 
বীরভূম জেলার মোহাম্মদ বাজার ব্লক এর এই পুরাতন গ্রামে  রথ যাত্রা উপলক্ষে মেলা বসেছে পুরাতন গ্রামে। আর এই গ্রামের চার কন্যা বের করেছে রথ। যা দেখে মন ভরে যায়।আসলে জগতের নাথের রথকে ওরা কয়েকজন বেশ হাসি মুখে টেনে নিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পাকা রাস্তা দিয়ে। একদম সাজিয়ে গুজিয়ে ছোটো ওই রথেই বসে আছেন জগতের নাথ হাসি হাসি মুখে। আর ওরা চারজন কেমন যত্ন করে প্রভুকে রথে বসিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ওদের পড়নে সস্তার ফ্রক জামা। আর খালি পা। মাথায় কোনো রকমে একটা চুলে ক্লিপ আটকানো। কারুর আবার সেটাও জোটেনি ওদের। কিন্তু মুখের নির্মল হাসিটা একদম অকৃত্রিম অমলিন আর কলুষহীন। 
বাঁশের টুকরো দিয়ে রথের আদলে তৈরি হয়েছে প্রভু জগন্নাথের ছোটো রথ। যে রথের চাকা তৈরি হয়েছে বাঁশের খুঁটি কেটে গোল করে। আর সেই রথের মুর্তি কেনার পয়সা নেই ওদের। তাই ঘর থেকে জগতের প্রভু জগন্নাথের একটি ছবিকে রথের সামনে ঝুলিয়ে দিয়ে মহানন্দে রথ টানছে ওরা হাসিমুখে। আর মুখে বলছে জয় জগন্নাথ। সত্যিই তো কি সুন্দর এই ছোটো রথে অধিষ্ঠান করেছেন জগতের নাথ। আর কি সুন্দর এই রথের বাহকেরা। যা দেখে মন প্রাণএকদম ভরে যায়। কোনো আড়ম্বর নেই, হৈ হুল্লোড় নেই, বাজনা নেই, ভীড় নেই। তবু প্রভু ওদের হাত ধরেই পথে বেড়িয়ে পড়েছেন মহানন্দে হাসিমুখে। 
যাদের কোনো ভাবনা নেই, চিন্তা নেই। জীবনের হাজারো ঝড় ঝাপটা সামলে চলতে গিয়ে এক পেট খিদে পেলেও কোনো অভাব অভিযোগ নেই ওদের কারুর কাছে। কপাল চাপড়ে হা হুতাশ করে ভগবানের দোহাই দেওয়া নেই। শুধু এটা আছে তারা সকলেই গভীর বিশ্বাস আর আস্থা নিয়ে এই রথের রশিতে টান দিয়েছে তারা একসাথে একমনে। প্রভুকে আপন মনে করে নিজের করে নিয়েছে এই ছোটো কালেই ভালোবেসে। আর তাই বোধহয় কোনো প্রশ্ন নেই ওদের। জগতের প্রভুর কাছে চাওয়া আর পাওয়ার কোনো হিসেব নেই। আর তাই অনুযোগও নেই।
হাসি মুখে সবটা মেনে নিয়ে শুধু রথের রশিতে হাত ছুঁইয়ে পথ চলা আছে। যে পথ চলায় কোনো ক্লান্তি নেই তাদের। ওদের দেখে মনটা বড়ো ভালো হয়ে গেলো আজ। বীরভূমের প্রত্যন্ত গ্রাম এই পুরাতন গ্রামের এই ছবি নতুন করে আমার জীবন বোধের শিক্ষা দিলো আমায় আজ এই উল্টো রথের দিন।
 যে ভগবান, জগতের নাথ এর কাছে শুধু চাওয়া আর পাওয়ার সম্পর্ক নয়। সেটার পূরণ না হলে তাঁর প্রতি অভিমান নয়। কপাল আর ভাগ্যের দোহাই নয়। এটাই চেতনা যে প্রভু যেভাবে যেমন করে রাখবেন সেভাবেই আমরা তাঁকে নিয়ে চলবো জীবনের পথে। তাঁর রথের রশিতে হাত দিয়ে এই প্রার্থনা করি আমি। 
জীবনের সোজা আর উল্টো পথের মাঝে হাজারো ঝড় ঝাপটা এলেও যেনো থমকে না দাঁড়িয়ে পড়ি বিশ্বাস হারিয়ে। মনে পড়ে যায় সেই বিখ্যাত লাইন।  রথ ভাবে আমি দেব, পথ ভাবে আমি। মূর্তি ভাবে আমি দেব হাসেন অন্তর্যামী। সেই অন্তর্যামী বোধহয় সবার অলক্ষ্যে দাঁড়িয়ে আছেন। আর সেটা বুঝতে পেরেই ওরা চারজন হাসি মাখা উজ্জ্বল মুখে প্রভুকে আপন করে নিজের ঘরে নিয়ে যাচ্ছে। জয় জগন্নাথ।

উল্টোরথ - অভিজিৎ বসু।
পনেরো জুলাই, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...