সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

অন্যায় না করার নিদান

আজ গুরু পূর্ণিমা। এর থেকে ভালো দিন আর কি হতে পারে বলুন। জীবনের গুরুকে সম্মান জানানোর, শ্রদ্ধা জানানোর সেরা দিন এটি। সে মা বাবার আদেশ হোক কিংবা জীবনের শিক্ষা গুরুর আদেশ হোক যাই হোক। আর রাজনৈতিক গুরুর আদেশকে মাথায় নিয়ে ঘরে ফিরে সেই আদেশকে বাস্তবায়িত করার সেরা দিন সেরা সুযোগ হলো এই গুরু পূর্নিমার দিন। 

সত্যিই বলতে কি গুর ব্রম্ভা , গুরু বিষ্ণু, গুরু দেবো মহেশ্বর। এই আপ্ত বাক্য জীবনের একমাত্র চলার পথ। গুরুর বাণী , তাঁর আদর্শ, তাঁর শিক্ষা, তাঁর আদেশকে মাথায় নিয়ে চলা। জীবনে সফল হতে গেলে এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে বলুন। গুরুই তো অন্ধকার জীবনের আলোর পথের একমাত্র দিশারী। যে দিশা আমাদের অন্ধকার জীবনে একমাত্র আলোকবর্তিকা। 
তাই আজ একুশে জুলাই এর মঞ্চে দাঁড়িয়ে যে কথা তৃনমূল সুপ্রিমো তাঁর দীর্ঘ এক ঘন্টার রাজনৈতিক ভাষণের প্রায় শেষ পর্বে বললেন, সেটা শুনে আমার এই গুরু পূর্ণিমার দিন মনে হলো এর থেকে ভালো রাজনৈতিক বার্তা আর কি হতে পারে বলুন। বাংলার আপামর জনসাধারণ এর নয়নের মনি। তাদের সবার ঘরের সেই প্রিয় তাদের দিদি, যার এক ডাকে আট থেকে আশি পর্যন্ত বয়সের লোকদের হৃদয় আন্দোলিত হয়। হিন্দোলিত হয় শরীর মন সব কিছুই। 

আর তাই এই বৃষ্টি ভেজা দুপুরে দাঁড়িয়ে একুশে জুলাই এর মঞ্চের ওপর থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের রাজনীতির গুরু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদাত্ত কণ্ঠে বললেন, আর অন্যায় করবো না তো আমরা। অন্যায় করবো না তো। অন্যায়কে সাপোর্ট দেবেন না তো। দুর্নীতিতে কেউ জড়াবেন না তো। যারা জড়াবে তাদের সঙ্গে সঙ্গে ধরবেন তো। অভিযোগ করবেন তো। একদম মনে রাখবেন এই শিক্ষা আজ এখান থেকে নিয়ে যান। আমরা মানুষের পাহারাদার। আমরা ভোটের সময় বসন্তের কোকিলের মত ঘুরি না। আমরা তিনশো পঁয়ষট্টি দিন মানুষের সেবা করি। এই কাজটা যেনো সবাই মিলে করতে পারি। 
সত্যিই গুরু পূর্ণিমার দিন এর থেকে ভালো কথা, ভালো বাণী, ভালো উপদেশ, আর আদেশ যাই বলুন আর কি হতে পারে বলতে পারেন। অন্যায় না করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তাদের সকলের প্রিয় দিদি। যে অন্যায় করবে তাকে সমর্থন নয়। যারা করবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে বলছেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। এই শিক্ষা নিয়েই ঘরে ফিরতে বললেন তিনি সবাইকে। কারণ তাঁর সৃষ্টি দল বসন্তের কোকিল নয়। তাঁরা সারা বছর মানুষের সাথে থাকেন, পাশে থাকেন। 

তাই যা হয়েছে, যা ঘটে গেছে সব কিছু থেকেই নতুন করে শিক্ষা নিয়ে আজ নতুন পথ দেখালেন বাংলার অগ্নিকন্যা একুশে জুলাই এর মঞ্চে। তিনি তো সারা জীবন নিজেই আপোষহীন সংগ্রাম করে গেছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন, প্রতিবাদ তাঁর জীবনের মূল মন্ত্র। তাহলে হঠাৎ কেন এই গুরু পূর্ণিমার দিন আবার নতুন করে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান।
কেনো আবার গর্জে উঠলো তাঁর সেই পুরোনো কন্ঠ। হয়তো সেই পাঠশালায় বা টোলে পড়তে আসা, শিখতে আসা নতুন প্রজন্মের কাছে এই বার্তাই পৌঁছে দিলেন তিনি আজ অতীত এর অনেক ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে। বলে দিলেন আগের লোকজন যা ভুল করেছে, যা অন্যায় করেছে তার কোনো ক্ষমা নেই। কিন্তু এরপর যদি আবার এক ভুল, এক অন্যায় কেউ করে তাকে আর সমর্থন নয়। বরং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করুন। 

সত্যিই তো কি অসাধারন কথা বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রাজনীতির পাঠশালায়। যে পাঠশালায় পড়তে আসা, শিখতে আসা শিক্ষার্থীরা আজ এই কথা শুনে ফের নতুন করে আন্দোলিত হল, হিন্দোলিত হলো, উত্তাল হলো। যাদের জীবন, যৌবন সব সমর্পিত এই পাঠশালায়। সেই পাঠশালায় গুরু পূর্ণিমার দিন এমন আদেশ শিরোধার্য করেই ঘরে ফিরলেন সবাই হাসি মুখে ভিজতে ভিজতে।
 কারণ গুরুর আদেশ শিরোধার্য করেই যে চলতে হয়। কারণ বসন্তের কোকিল হয়ে নয় তারা যে বাংলার সাধারণ মানুষের সুখে দুঃখের একমাত্র বন্ধু। আর সেই পাশে থাকার একমাত্র বন্ধুর ভুলকে শুধরে নেবার এইটুকু সুযোগ নিশ্চয়ই গ্রাম বাংলার মানুষজন একটু দেবেন। 
সেই ভরসা নিয়েই তো এমন সুকৌশলী বার্তা দিকে দিকে ছড়িয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে বার্তায় দিকে দিকে রটি গেলো ক্রমে। সেই কবিতার লাইনের মত সবাই মিলে গুরুর বাণী, গুরুর আদেশ শিরোধার্য করেই তাঁর জীবনে চলার শিক্ষা লাভ করলেন। সত্যিই এমন শিক্ষার নিদান, অন্যায়কে প্রশ্রয় না দিয়ে প্রতিরোধ এর নিদান দিলেন তাদের সবার দিদি। গুরু পূর্ণিমার দিন এর থেকে ভালো শিক্ষা আর কি হতে পারে। 

অন্যায় না করার নিদান - অভিজিৎ বসু।
একুশে জুলাই, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...