সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সাঁকো

সাঁকো পার হয়ে গেলেই যাওয়া যাবে নীলপুরে। এপারে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষন ধরেই ভাবছি আমি। সত্যিই বলতে কি এই সাঁকো পার হওয়া নিয়ে আমার একটু ভয় আছে ছোটো বেলা থেকেই। যে ভয়কে ঠিক বলে বোঝানো সম্ভব নয়। কী জন্য ভয়,অদ্ভুত এই অনুভূতি কে, ঠিক বলে বোঝানো যাবে না কোনো ভাবে আপনাদের। 

আচ্ছা যারা নিশ্চিন্তে সাঁকো পেরিয়ে ওপারে চলে যায়। তাদের কি কোনো ভয় হয় না। ওই যে ছোটো শিশুটা যে অবলীলায় এদিক ওদিক করতে করতে, টাল সামলাতে না পেরেও হাসি মুখে ওপারে চলে যায় তার কি ভয় করে না কোনও। আর ওই যে গ্রামের বউগুলো যারা গল্প করতে করতে এ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে কথা বলতে বলতে তাকিয়ে সাঁকো পার হয় নিশ্চিন্তে, তারাও কি ভয় পায় না কোনো সময়। কে জানে।

এই ভয়টাই আমায় সারা জীবন কুড়ে কুড়ে খায়, ঠিক ঘুন পোকার মতো। কেন যে একে জয় করতে পারলাম না কে জানে। আচ্ছা সেই যে ছোটো বেলার কথা মনে পড়ে গেলো আমার সাঁকোর সামনে দাঁড়িয়ে। 

মার সাথে গেছিলাম মামার বাড়ি হরিপালে। সেখানেই দেখেছিলাম সুমিকে। এক ঝলকে ওকে দেখে মনে মনে বেশ ভালো লেগেছিল তাকে। কিন্তু এই ভয় পেয়েই তো সেদিন তাকে কিছুই বলতে পারিনি। শুধু তাকে দুর থেকে দেখতাম এই মাত্র। 
কিন্তু গ্রামের ওই কালো দীঘল চোখের মেয়েটি হয়তো কিছু বুঝতে পেরেছিল। তাই যেদিন সে আমার কাছে তার মাকে লুকিয়ে দেখা করতে এলো। সেদিন আমি সত্যিই খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম।

 বড়ো বাড়ির চৌহদ্দি পেরিয়ে সে এসেছিল দেখা করতে সবাইকে লুকিয়ে। কী জন্য জানিনা আমি। শুধু এটা জানি, আমিও চাইছিলাম ওর সাথে একটু একান্তে দেখা করতে। 

বাড়ির পেছনের উঠোনে সবে তখন ধান জড়ো করে রাখা হয়েছে শীতের সময়। মাঠ থেকে ওঠা খড়ের গাদায় তখন, সোঁদা মাতাল করা ধানের গন্ধে ম ম করছে গোটা উঠোন। 

সন্ধ্যা হয় হয়। ধান গাদার পাশ দিয়ে একটা সাদা পায়রা উড়ে এসে বসলো। ঠিক আমাদের দুজনের মাথার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা, আম গাছটায়। বক বকম শব্দ করে ওঠে সে আপন মনে। কিন্তু আমরা দুজন নিঃশব্দ। বাকহীন হয়ে দাঁড়িয়ে আছি একে অপরের সামনে।

 সুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে শুকনো খড়ের মাথায় ধানের শীষ কে আঙুল দিয়ে ছিঁড়ে ওর ঠোঁটের মাঝে রেখেছে। অদ্ভুত দেখতে লাগছে ওকে। ভেজা শিশিরের বিন্দুতে স্নান করে। ওর ঠোঁট দুটো , যেনো ভিজে চুপ চুপে হয়ে গেছে। কালো কাজল টানা চোখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ও আমার দিকে। 

গভীর নরম সেই দৃষ্টি। ওর মুখে চাপা একটা হাসি। বলতে নেই দুর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতেই ওকে বেশ লাগতো। কেনো যে সামনে এলাম ওর ডাকে। কে জানে। কিছুটা হলেও অস্বস্তি বোধ করতে লাগলাম আমি একটু। আমার থেকে ও অনেক বেশি সাবলীল,স্বচ্ছন্দ।কোনো জড়তা নেই ওর মধ্যে।

আচমকাই ওর প্রশ্ন, এই কি দেখছো অমন করে আমায়। ওর প্রশ্নে আমার ঝটকা ভাঙ্গে। সত্যিই তো কি দেখছি ওকে অমন করে। ওর কালো রঙের দীঘল চোখের দিকে তাকিয়ে আমি ডুব দি আরও গভীরে। যেনো অতলে হারিয়ে যাই কোথাও।

 ওর ঠোঁটের ফাঁকে ঝুলছে  ধানের টুকরোর ছড়া। একটা হাত দিয়ে ও খড়ের গায়ে হাত বুলিয়ে দিয়ে আলতো করে আঙ্গুল নাড়ছে সে ধানের শীষে পরম যত্নে। একটু যেনো আনমনে এলো মেলো ও নিজেও।ওর কানের লতির পাশ থেকে ঝুলছে এক টুকরো চুল।কানের ঝুমকো দুল দুটো যেনো আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছে।এ ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। 

দুর থেকে দেখা ভালো লাগাকে এত কাছে দেখে,আমি কিছুই বলতে পারিনা ওকে।একদম চুপ করে যাই।মনের মধ্যে উথাল পাতাল করছে আমার। বুঝতে পারি আচমকাই ওর শরীরের আগুন,ছড়িয়ে পড়ে আমার ওপর।খুব ইচ্ছা করে সেই আগুনে জ্বলে পুড়ে ছারখার হতে। মনে হয় ওকে কাছে টেনে বলি সুমি,আমি তোমায় ভালবাসি। খুব,খুব ভালোবাসি।

কিন্তু না,পারি না সেটা বলতে।মনে মনে ভাবলেও কিছুই বলতে পারলাম না আমি তাকে।মনের কথা বলতে পারলাম না আমি। কী একটা পাখির ডাক শুনে ও চমকে ওঠে। দুজনের হাতে হাত লেগে যায় অজান্তে। কিন্তু তবু,আমি পারিনা ওর আঙ্গুল ধরে বলতে আমি তোমায় ভালবাসি সুমি। 

একটা অজানা, অচেনা, ভয় আমার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। দূরে কোনো এক বাড়িতে শঙ্খ বেজে ওঠে। সন্ধ্যা বেলায় তুলসী তলায় পিদিম দিতে আসে কেউ। দুর থেকে তা দেখে সুমি বলে বোকা ছেলে, হাঁদারাম একটা। এই বলে এক দৌড়ে পালিয়ে যায় সে। আমার গালে একটা আলতো করে চিমটি কেটে।

 আমি দাঁড়িয়ে থাকি। একা একা। শুধু দেখি কালো চুলের বিনুনির গোছা ওর পিঠে ঝাপটা মারছে আর ও ত্রস্ত পায়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে। সন্ধ্যার নরম আলোয় ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায় সে।দূরে আরও দূরে। 

নিজের গালে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে অস্ফুটে বিড় বিড় করে আমি বলি। তুমি বিশ্বাস করো সত্যিই তো ভালোবাসি আমি তোমায়। কিন্তু সেই কথা শুনতে পায় না সে।

আর তখন আমার মনে হয় ওকে নয় আমাকে মারছে চাবুকের ঘা ওর চুলের বিনুনি দিয়ে সপাটে। চুপ করে আমি একাই দাঁড়িয়ে রইলাম অনেকক্ষন। অনেক পরে ঘরে ফিরে ওকে কত খুঁজলাম। কিন্তু না কালো কাজল দীঘল চোখের দেখা পেলাম না আর। ভাবলাম ও হয়তো রাগ করেছে। বা হয়তো অভিমান করেছে সে।সত্যিই তো এতে আর আশ্চর্যের কি আছে।

পরদিন মার সাথে ঘরে ফেরার সময় দেখলাম অনেক দূরে সেই খড়ের গাদার পাশে একা একা দাঁড়িয়ে আছে সুমি। কালো দীঘল চোখের দৃষ্টিতে পুড়িয়ে মারছে সে আমায়।

 কিন্তু না, একবারও আর কাছে এসে সে বলেনি, বোকা ছেলে কোথাকার। ভীতুর ডিম তুমি একটা। কালো কাজল পরা চোখ দুটো আমার যাত্রা পথের সারা রাস্তায়। তার চোখের আলোয় আলোকিত করে রেখেছিল গোটা যাত্রা পথ।
আমি চোখ বুজলেই আজও দেখতে পাই ওর ঠোঁটের কোণে ঝুলে থাকা ধানের শীষের মাতাল করা গন্ধ।যা আমার মনকে ভরিয়ে দেয়। আমি ওর শরীরের আগুনের উত্তাপ অনুভব করি চোখ বুজে আজও এই বয়সে।

এই সাঁকোর সামনে দাঁড়িয়ে আমার মনে পড়ে গেল সেই কথা। সেই যে সাঁকো পেরিয়ে সেদিন সন্ধ্যায়, অজানা ভয়ে ভালো লাগাকে কাছে টেনে নিতে পারিনি আমি। সেই ছোটো বেলার ভয় তো আজও আমার মধ্যে রয়ে গেছে। 
তাই আমি থমকে দাঁড়িয়ে আছি এই ছোটো বাঁশের সাঁকোর সামনে। কিছুটা হলেও থমকে গেছি। বড়ো স্মৃতি মেদুর হয়ে গেছি আমি। স্মৃতির উত্তাপে আমি গলে যাচ্ছি দ্রুত।

আসলে এই তো সেদিন, যেদিন কাজের জায়গায় চেনা মুখ গুলো। সব অচেনা হয়ে ধরা দিল আমার কাছে। এক লহমায় সব কিছু দ্রুত ভুলে গেলো চেনা টুকরো টুকরো মুখ গুলো।সেদিন সত্যিই আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।
অফিসের ঠাণ্ডা ঘরে ঢুকে আমিও সেদিন কিন্তু কিছুই বলতে পারিনি সবার সামনে।মাথা নিচু করে সব শুনে অবাক করে বেরিয়ে এসেছি ঘর ছেড়ে।ঠিক এই ভাবেই বাঁশের সাঁকো পার করে বলতে পারি নি কিছু কথা। যা বললে হয়তো কিছু জায়গা পেতাম আমিও। কিন্তু না একটা সংকোচ বোধ হচ্ছিল আমার সেদিনও।

আসলে এই সাঁকো পার করে, নিজেকে বাঁচাতে আমার এগিয়ে আসার অভ্যাসটাই নেই আমার। সেই ছোটো কাল থেকেই এই অবস্থা। কেনো সেই যে রাতে পাড়ার কাকু রাতে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খুব আদর করতে চাইলো বিছানায়, ঘুম পাড়াবে বলে সেদিন ও আমি ঘরে ফিরে বলতে পারি নি কিছুই কাউকে। চুপ করে থাকলাম।
যে দিন কলেজ থেকে বাইরে নিয়ে যাবার কথা হলো শিক্ষা মূলক ভ্রমণে। সেই দিনও তো আমি ঘরে ফিরে বাবা, মাকে বলতে পারিনি সবাই যাবে আমিও যদি যেতে পারি খুব ভালো লাগবে আমার। জীবনে প্রথম সমুদ্র দেখার সৌভাগ্য হবে আমার।আমি জানি সেটা সম্ভব নয় আমাদের ঘরে।তাই সেদিন ও সাঁকো পেরিয়ে বলিনি কিছুই আমি।

আসলে সেই ছোটো বেলা থেকেই এই সাঁকো পেরিয়ে যাবার সাহস হয় নি আমার কোনো দিনই। তাই আজ এই অবস্থা আমার।তাই এই বয়সে এসেও আমাকে ভাবতে হয় সাঁকো পেরিয়ে কি করে ওপারে যাবো সেই কথা।

দূরে ওপারে কে যেনো দাঁড়িয়ে আছে। কে যেনো নীলপুরের রাস্তা ধরে এগিয়ে আসছে সাঁকোর দিকে। আবছা একটা অবয়ব এগিয়ে আসছে ধীরে ধীরে। আমি দুর থেকে দেখি। কিন্তু বুঝতে পারি না। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি আমি সাঁকোর এপারে।

আমি ভাবি ,আগে ওপারের লোক, এপারে চলে আসুক। তারপর ,আমি না হয় ধীরে ধীরে পার হবো।আমার তো কোনো তাড়া নেই জীবনের। যে জীবনের তাড়া খেয়ে,সকাল থেকে রাত অবধি দৌড় করছে অন্যরা।

 একে অপরের সাথে টেক্কা দিয়ে, প্রতিযোগিতা করছে একে অপরের সাথে জোর কদমে। একে অন্যকে ঠেলে ফেলে দিয়ে এগিয়ে চলছে, আগে যেতে হবে বলে।কোনো সম্পর্কের বাঁধন কে অস্বীকার করেই।

কিন্তু তার তো কোনো এই দৌড়ে যাবার মাথা বাথ্যাই নেই। এই অসম দৌড় প্রতিযোগিতায় সে অংশ গ্রহণ করেনি কোনো দিন।আর কোনও তাড়া ও নেই তার।সে তাই বিন্দাস জীবন কাটিয়ে দিতে চায়,অন্যদের থেকে।যে জীবনে ই এম আই এর হিসেব না মিললেও বিন্দাস থাকার জন্য চেষ্টা করা যায় মাত্র।
সত্যিই বলতে কি এটাই বা কজন ভাবতে পারে কে জানে। হয়তো সে পাগল বলেই এমন ভাবতে পারে। নীলপুরের দিক থেকে কালো রঙের একটা মেয়ে কোলে বাচ্ছা নিয়ে এগিয়ে আসছে। দুর থেকে বোঝা যাচ্ছে না কে সে। তবু আমি দুর থেকে দেখি তাকে। 

মনে মনে ভাবি, সে আমার সুমি নয়তো। কে  জানে, হয়তো হবেও। একটু সরে দাঁড়াই আমি সাঁকোর পাস থেকে।ধীরে ধীরে সে এগিয়ে আসে। দুর থেকে কাছে, আরো কাছে। একদম নাগালের মধ্যে। চলে আসে সে।

 বহুদিন পর দেখি কোলে ছেলেকে নিয়ে সুমি সেদিনের মত আজও অবলীলায় সাঁকো পেরিয়ে এপারে চলে এলো নির্ভয়ে। আমার সামনে,একদম আমার সামনে এসে দাঁড়ালো সুমি। ওর ঠোঁটের কোণে এক চিলতে অমলিন হাসি ঝুলছে।

 আগের সেই রূপের আগুনে আমায় পুড়িয়ে মারল না আর।শুধু অস্ফুটে ও বলে ফেলল, আজও ভয় পাও তুমি। এত দিনেও ভয় কাটাতে পারলে না তুমি।সত্যিই কি যে বলি তোমায়। বলে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সে আমার দিকে।

আমি ওর কথা শুনেও চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। দেখলাম পায় পায় তাল মিলিয়ে ধীরে ধীরে সাঁকো পেরিয়ে। আমায় পেরিয়ে, সুমি চলে যাচ্ছে। দূরে অনেক দূরে। 

আমি একাই দাঁড়িয়ে রইলাম, মাথা নিচু করে সাঁকোর সামনে। সত্যিই তো আজ এই বয়সে এসেও আমি ভয় কাটাতে পারলাম না কোনো ভাবেই। 

তাহলে কি আর আমার এই জীবনে কোনদিনই ভয় কাটিয়ে সাঁকো পার হওয়া হবে না।আমি কোনোদিন যেতে পারবো না, ওই ওপারের নীলপুরে।জীবনের  শেষ প্রান্তে এসেও কি সংকোচ আর লজ্জায় লাল হয়ে মরবো তিলে তিলে প্রতি মুহূর্তে। 

এই কথা ভেবে আমি ধীরে ধীরে এগোতে থাকি সাঁকোর দিকে। কিন্তু ভাবি, কি হবে ওপারে গিয়ে আমার ভালোবাসা তো নেই ওপারে নীলপুরে। সে তো হারিয়ে গেছে আমায় ছেড়ে একটু আগেই। যাবার সময় সে বলে গেছে আমায়। আজও তুমি ভয় পাও। ছি ছি এত দিনেও তুমি ভয় কাটাতে পারলে না।
এই ভেবে আর এগোতে, মন চায় না আমার। সাঁকোর সামনে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি আমি। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি ওপারে। ভাবি নিশ্চয় একদিন আমার ভয় কাটবে। এই আশা নিয়েই আমি দাঁড়িয়ে থাকি সাঁকোর সামনে চুপ করে মাথা নিচু করে।

সাঁকো - অভিজিৎ বসু।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...