সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সবজিওলা পল্টু

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমাদের পল্টুর কথা। আসলে পল্টুর কথা বলতে যাবার কারণ কিছুই নয়। এমন আমার পাড়ায় যেমন পল্টু, ঠিক তেমনি আপনার পাড়ায় হয়তো ভোলা বা বিশু থাকে। যে সকাল হলেই ঘুম থেকে উঠে হাট থেকে সবজি কিনে কোনো বাড়ির সামনে বা রাস্তার ফুটপাথে বসে পড়ে। আর ঘরের কাছে এমন হাতের কাছে সবজি পেয়ে আমরাও পল্টু, বিশুর কাছে একদম আত্মসমর্পন করে ফেলি। কারণ ওরাই যে সব আমাদের কাছে এই সবজি বাজার সাপ্লাই করে তাতে ওদের যেমন দুটো পেটের ভাত জোটে সংসার চলে। ঠিক তেমনি আমাদের ও ঘরের পাশে সব কিছু হাতের কাছে পেয়ে একদম খুব সুবিধা হয় আর কি।
আসলে পল্টুর কথা হয়তো বলতাম না আমি। সকালে গুটি গুটি পায়ে ঝোলা নিয়ে গেছি ওর কাছে একটু যদি সস্তায় কিছু বাজার পাওয়া যায় এই আশায়। একমাত্র পল্টু একটু কম দামে আর কেনা দামে বাজার দেয় আমায় শ্রীরামপুরে। ব্যাগ ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে দরদাম না করে বাজার নেওয়া শ্রেনীর তালিকা থেকে অনেকদিন আগে থেকেই আমার নাম কাটা  হয়ে গেছে। যেমন ভাবে দীর্ঘদিন স্কুলে না গেলে ছাত্রের নাম কাটা যায়। তাই একটু দুরুদুরু বুকে হাজির হলাম আমি পল্টুর কাছে। 

কিন্তু আজ যে ওর উত্তেজনা চরমে। দাদা, আর পারা যাবে না কিছুতেই। ব্যবসা আর করা যাবে না কিছুতেই। কেনো কি হলো পল্টু। দাদা,এক কেজি আলু পঞ্চাশ টাকা দাম। সেকি পল্টু তাহলে কি খাবো রে। তাহলে আর বলছি কি। আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম কেনো এমন হলো রে। এই তো সেদিন দেখলাম সরকার দাম কমানোর মিটিং করলেন। কত হৈ চৈ হলো। বাজারে বাজারে ঘোরা হলো অফিসারদের। সব টিভি চ্যানেলে দেখানো হলো। আরে ওসব যাই হোক উত্তেজিত পল্টুর মুখে একদম বুদ্ধের অহিংস বাণী।

 সে উত্তেজিত হয়ে জানালো ওই যে দিদি বলেছিল না যে আমাদের আলু আর বাইরে যাবে না কিছুতেই।আগে আমাদের রাজ্যের লোক খাবে তারপর দেখা যাবে। ব্যাস তাতেই সব ফুটুস্ ডুম হয়ে গেলো দাদা। আমাদের আলু যখন বাইরে যাবে না তাহলে বাইরের লোক খেতে পারবে না। তেমনি আমরাও আর খেতে পারবো না আমাদের রাজ্যের আলু। ব্যবসায়ীরা সব ঝোপ বুঝে কোপ মেরে দিল আলুর স্টোর রুমে তালা ঝুলিয়ে দিলো। বললো না, তাহলে কারুর আর আলু খাবার দরকার নেই।

 সেকি, হ্যাঁ দাদা তাহলে আর বলছি কি। আর তাই তো আজ দু বস্তা আলু কিনলাম আমি 3600 টাকায়। মানে একশো কেজি আলু তিন হাজার ছয়শ টাকা দাম পড়লো। মানে 36 টাকা কেজি করে কেনা পড়লো আমার। তারপর হাট থেকে আনার খরচ আছে। সেটা ধরলে চল্লিশ টাকা ছাড়িয়ে গেলো খরচ। আর তারপর আছে সেই আলুর বস্তায় ফাটা, কাটা, পচা আলুর বাদ পরা আছে। আরোও পাঁচ টাকা ধরতে হবে। দাদা, ছত্রিশ এর আলু কিনে প্রায় পঁয়তাল্লিশ টাকা খরচ হচ্ছে। পঞ্চাশ এ না বিক্রি করলে চলে।  একদম পদার্থ বিদ্যার মত একটা জটিল বিষয় কে কি সহজ করে বুঝিয়ে দিল পল্টু হাসতে হাসতে। 
আমি বললাম তাহলে এখন কি হবে ভাই। বলল কি আর হবে সরকার বৈঠক করবে আলু ব্যবসায়ীদের সাথে। তারপর হয়তো আলু বের হবে কোল্ড স্টোর থেকে। ততদিন যতটা লাভ করে নেওয়া যায় ব্যবসায়ীরা করবে লুটেপুটে। কে আর কি করবে। বৈঠক হবে, আলোচনা হবে, কিন্তু স্টোর খুলবে না আর আলু বের হবে না কিছুতেই। আমি একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম একশো টাকার নোট নিয়ে বাজার এসে যদি পঞ্চাশ টাকা আলু কিনতে চলে যায় তাহলে আর খাবো কি রে। না ভাই পল্টু আলুর শোকে আমার আলু তোলার সময় হয়ে গেছে আমি চলি ভাই। আরে না না তুমি তো কম দামে আমার কেনা দামে আলু নেবে। সেটা তো আলাদা বিষয় পল্টু। কিন্তু বাকিদের কি অবস্থা হবে। যারা দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ তারা কি করবে রে। 

আসলে পল্টুর সাথে আমার পরিচয় সেই বহুকাল আগেই। কোন্নগর থেকে এসে শ্রীরামপুরের এই রাস্তায় কবে থেকে বাজার নিয়ে বসে ও। পথচলতি মানুষজন, অফিস ফেরত লোকজন ওর থেকে বাজার নিয়ে ঘরে ফেরে। সেই সময় আমিও এই শ্রীরামপুরের কুমিরজলা রোড এর এই জায়গায় থাকি। ওর কাছ থেকে সবজি কিনি মাঝে মাঝে। একদিন ও আমায় বললো দাদা এই জায়গায় বসতে দেবে না বলছে। শুনেই আমার মনে হলো কেনো কে বলেছে দাঁড়াও আমি দেখছি। বলে এলাকার দাপুটে কংগ্রেস এর কাউন্সিলর প্রয়াত সমীর দে কে ফোন করলাম। উনি সব শুনে বললেন অভিজিৎ চিন্তা করোনা আমি দেখছি। না, তারপর আর পল্টুকে ঠাঁই নাড়া হতে হয়নি কোনোদিন। ভাবতে হয়নি তার এই বসার জায়গা নিয়ে। 
সেই থেকে পল্টুর আমার প্রতি কিছুটা বিশ্বাস আর ভরসা বেড়ে যায় বোধহয়। কংগ্রেসের সেই কাউন্সিলর এর জায়গায় তৃণমূলের রেখা দি কাউন্সিলর হন। তারপর গুন্ডা দা এলাকার কাউন্সিলর হন। সেই সময় পল্টু যে কোনো অসুবিধা হলেই আমায় ফোন করেছে আমার সাহায্য পেয়েছে সে। ধীরে ধীরে পল্টু আর আমার সম্পর্ক একদম ক্রেতা আর বিক্রেতার নয়। দাদা আর ভাইয়ের সম্পর্ক হয় গেছে ধীরে ধীরে। এই তো সেদিন লক ডাউন এ যখন সব জিনিস কম কম করে বিক্রি হচ্ছে। জিনিসের আকাল বাজারে সবজি নিয়ে টানাটানি। সেই সময় কম দামে আলুর বস্তা বাড়ী পৌঁছে দিয়ে বলেছে দাদা রেখে দাও কোনো চিন্তা নেই। ধীরে সুস্থে টাকা দিও তুমি। ডিম সাপ্লাই করে বলেছে দাদা এই দিয়ে চালিয়ে নাও তুমি। চিন্তা করো না আমি আছি তো তোমার জন্য।
আসলে এই সব মানুষ গুলো বোধ হয় জীবনের অনেকটা জুড়ে বেঁচে থাকে। এই তো আগুন জ্বলছে যখন সবজি বাজারে তখন অনেক কম দামে সবজি দিয়ে আমায় লুকিয়ে টাকা ফেরত দেয় যখন আমার মনে হয় এই ভাবে কে যে আমায় বাঁচায় আমার এই হঠাৎ গরীব হয়ে যাওয়া মানুষটিকে কে জানে। আসলে মানুষ বড়ো ভালোবাসার কাঙাল যে। এক সময়ের ক্ষমতাবান মানুষটা আজ ক্ষমতাহীন মানুষ একটি। তবু সেই ক্ষমতাহীন মানুষ এমন একজনের কাছে কিছু সাহায্য পেলে কেমন অবশ হয়ে যায়, বিবশ হয়ে পড়ে। তার মনে হয় জীবনের এই সব ওঠা নামা, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের কাছে, সম্পর্ক গুলো হলো দামী জড়োয়ার গয়নার মত রক্ষিত হয়। আমরা যেমন হিসেব কষে পা ফেলি তারা তেমন করে না।
আমি ভাবি তাহলে এমন মানুষও এই দুনিয়াতে মেলে। যে পুরোনো কথা মনে রেখে তাকে এখনো এই দুর্মূল্যের বাজারে হাসতে হাসতে বলে দাদা তোমার জন্য চিন্তা নেই। যা লাগবে নিয়ে যাও পয়সা নিয়ে ভেবো না তুমি। সত্যিই তো টাকা পয়সা নিয়ে ভাবিনি আমি কোনোদিন জীবনে। হিসেব করিনি আমি কোনো সময়। তাই আজ হয়তো এই অবস্থা আমার। তবু আজ পল্টু হাসতে হাসতে সেই চরম সত্যিই একটা কথা হিসেব করে বুঝিয়ে দিলো আমায়। আলুর দাম এর মত যে জীবনে বোধহয় হিসেব করেই চলতে হয়। মেপে চলতে হয় না হলে বাঁচা মুসকিল হয় খুব এই কঠিন জীবনে। 
এলোমেলো এলেবেলে জীবনের যাত্রাপথে অনেক কষ্ট যন্ত্রণা লুকিয়ে থাকে। যাকে হয়তো আঁকা বাঁকা অক্ষরে লিখে রাখা যায় না কিছুতেই। শুধু এই হিসেবের মাঝে লুকিয়ে থাকে গভীর গোপন কিছু মানুষের সাথে এমন ভালোবাসার সম্পর্ক। যে ভালবাসা রয়ে যায় আজীবন। গভীর মমত্ববোধ নিয়ে যে ভালোবাসাকে সযত্নে আগলে রাখে ওই পল্টুর মত গুটিকয় মানুষজন। 
যারা হয়তো খুব বেশি শিক্ষিত নয়, যারা সমাজের উচ্চ শিখরে ওঠার সুযোগ পায়নি কোনোদিন। তারা জানে না ক্ষমতাহীন একটা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তার লাভ আর ক্ষতি কি হবে। তবু কোনো হিসেব না করেই সেই ক্ষমতাহীন মানুষটার পাশে হাসি মুখে দাঁড়ায় পল্টুর মত কিছু মানুষজন। যে জীবনের চরম শিক্ষা দিয়ে গেলো পল্টু যে মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক শুধুই লাভ ক্ষতির হিসেব কষে হয় না। সবজিওলা পল্টু আমায় এই জীবনের দর্শন দিয়ে আমার চোখ খুলে দিলো। 

সবজিওলা পল্টু - অভিজিৎ বসু।
পঁচিশে জুলাই, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...