অজানা এই পৃথিবীর অনেক কিছুই আমাদের দুচোখ ধাঁধিয়ে দেয়। আসলে তখন আমরা আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কথা ভেবে সৃষ্টিকর্তার কথা ভাবতে থাকি। এমনই অদ্ভুত কিছু সৃষ্টির কথা শুনে আমরা বিস্ময়ে হতবাক হই। এরকমই এক অদ্ভুত বোভেট দ্বীপের কথা শুনলে অবাক বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেতে হয়। সত্যিই কত অজানা সৃষ্টি যে লুকিয়ে আছে এই পৃথিবীর আনাচে কানাচেতে।
পৃথিবীর বহুদিকে বহু দ্বীপই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। রয়েছে অনেক রহস্যঘেরা দ্বীপ ও উপদ্বীপ। কিন্তু এদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্গম ও রহস্যময় হচ্ছে এই বোভেট দ্বীপটি। এটির অবস্থান হচ্ছে দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে। সেই দ্বীপটিকে এখনো পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া দ্বীপের মধ্যে সবচেয়ে রহস্যময় আর দুর্গম বলে মনে করা হয়। এই দ্বীপে স্থলপথে যাওয়ার কোনো উপায় নেই এবং জলপথে যাওয়াও প্রায় দুঃসাধ্য ব্যাপার। কাজেই এই দ্বীপ মানুষের কাছে সম্পূর্ণ রহস্যজনক হয়েই রয়ে গেছে আজও।
এই বোভেট দ্বীপ দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের একটি দ্বীপ । বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলির মধ্যে একটি, এটি দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপের প্রায় ১৫০০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং অ্যান্টার্কটিকার মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ১০০০মাইল উত্তরে অবস্থিত। আগ্নেয়গিরির উৎপত্তিস্থল, এটি পাথুরে এবং প্রায় পুরোটাই বরফে ঢাকা। উপকূলের চারপাশে বরফের ক্লিফ রয়েছে। দ্বীপে অবতরণ অত্যন্ত কঠিন। এটি একটি জনবসতিহীন দ্বীপ।
রহস্যময় এ দ্বীপ সম্পর্কে যা কিছু জানা গেছে তা জানা হয়েছে কৃত্রিম উপগ্রহ ও বিমানের মাধ্যমে উপর থেকে। বোভেট দ্বীপে যে কখনো মানববসতি গড়ে উঠেছিল এই ধারণার তেমন কোনো প্রমাণ এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা চিত্রে এই দ্বীপটির পাশে ষাটের দশকের একটি পরিত্যক্ত লাইফ বোট দেখতে পাওয়া গেছে। কিন্তু দ্বীপের কোথাও লাইফ বোট ব্যবহারকারী কাউকে দেখা যায়নি এমনকি বোটটি ওখানে কীভাবে আসলো সে কথাও কোনো ভাবেই জানা যায়নি।
বোভেট দ্বীপের সম্পর্কে রহস্যের শেষ নেই, এ দ্বীপ সম্পর্কে এমন কিছু কথা প্রচলিত রয়েছে যার কোন সত্যতা ও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন জন- শ্রুতিতে বলা হয়ে থাকে যে বোভেট দ্বীপের পাশে এমন আরও একটি দ্বীপ ছিল কিন্তু এখনও সেই রকম কোন দ্বীপের উপস্থিতির কোন সন্ধান পাওয়া যায় না।
বোভেট দ্বীপটির মোট আয়তন হচ্ছে ৭৫ বর্গমাইল। এই দ্বীপটি পুরোটা বরফের চাদরে মোড়ানো। এই বরফের কারণে এখানে উল্লেখযোগ্য কোন প্রাণী দেখা যায় না বললেই চলে। বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী এখানে শুধু সিল, পেঙ্গুইন, আর দুই-এক প্রজাতির সামুদ্রিক পাখির সন্ধান পাওয়া যায়। এছাড়া কারুর অস্তিত্ব এই দ্বীপে পাওয়া যায় না।
এই বোভেত দ্বীপ হলো একটি নরওয়েজীয় জনমানবহীন সুরক্ষিত প্রাকৃতিক সংরক্ষিত এলাকা। এই দ্বীপটি দক্ষিণ আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিমে ১৫৬৮ মাইল (২৫২৫ কিমি.) জুড়ে অবস্থিত এবং যা শুধুমাত্র ১৯ বর্গ মাইল এলাকা দখল করেছে।
জানা যায় ১৭৩৯ সালে ফরাসি ক্যাপ্টেন জেয়ান-ব্যাপটিস্টে চার্লস বোভেট ডি লোযিয়ার নামে একজন দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে দূরবর্তী এই দ্বীপ আবিষ্কার করেন। এই ফরাসি ক্যাপ্টেন এর নাম অনুসারে দ্বীপটির নাম বোভেট দ্বীপ রাখা হয়। এই দ্বীপটিকে এযাবত্কালে সন্ধান পাওয়া দ্বীপের মধ্যে সবচেয়ে রহস্যময় আর দুর্গম বলা হয়।
এটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম দ্বীপ হিসেবেও অভিহিত করা হয়। এখানে স্থলপথে যাওয়ার কোনো উপায় নেই, আর জলপথে যাওয়াও প্রায় দুঃসাধ্য ব্যাপার। রহস্যময় এ দ্বীপ সম্পর্কে যা কিছু জানা গেছে তা জানা হয়েছে কৃত্রিম উপগ্রহ ও বিমানেরমাধ্যমে উপর থেকে। বোভেট দ্বীপে যে কখনো মানববসতি গড়ে উঠেছিল তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি আজ অবধি। তবে ষাটের দশকের একটি পরিত্যক্ত লাইফ বোট দেখতে পাওয়া গেছে। কিন্তু দ্বীপের কোথাও লাইফ বোট ব্যবহারকারী কাউকে দেখা যায়নি।
বলা হয়ে থাকে যে, বোভেট দ্বীপের পাশে আরও একটি দ্বীপ ছিল। অথচ তেমন কোনো দ্বীপ ছিল কি না তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পুরোটা দ্বীপ বরফে ঢাকা। তাই উল্লেখযোগ্য কোনো প্রাণীও সেখানে নেই বলে মনে করা হয়। বিজ্ঞানীদের ধারণা, বোভেট দ্বীপে শুধু পেঙ্গুইন, শিল আর দুই-এক প্রজাতির সামুদ্রিক পাখির সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।
বোভেট দ্বীপকে ১৯৭১ সালে একটি প্রকৃতি সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৪ সালে নরওয়ের একটি ক্ষেত্র স্টেশন হিসেবে কাজ করার জন্য এখানে একটি বিল্ডিং স্থাপন করা হয়। ২০০৭ সালে এই স্টেশনটি মোটামুটিভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং বর্তমানে এটি প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। যদিও এই দুর্গম দ্বীপ ঘিরে রয়েছে অনেক রহস্য। কত কিছুই যে এই পৃথিবীর অজানা রয়ে যায় আমাদের কাছে সেটাই আশ্চর্য।
নরওয়ে থেকে এই দ্বীপ এর পরিচালনা করা হয়। এই দ্বীপটি পাখির প্রজনন এলাকা হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনাল বুভেট দ্বীপকে গুরুত্বপূর্ণ পাখি এলাকা হিসেবে মনোনীত করেছে। মাক্যারর্নি পেঙ্গুইন, চিনস্ট্রাপ পেঙ্গুইন, অ্যাডেলি পেঙ্গুইন গুলিকে এই দ্বীপে পাওয়া যায়। এছাড়াও এই জায়গায় পাওয়া যায় সাউদার্ন ফুলমারস, কেপ পেট্রেলস, এবং অসংখ্য আলবার্টস প্রজাতির সামুদ্রিক পাখি দেখা যায়।
বোভেট দ্বীপ - অভিজিৎ বসু।
তেরো মে, দু হাজার চব্বিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন