সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভালো থেকো বেচা দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আপনাদের কাছে যার কথা বলব তার পরিচয় দেবার কোনো দরকার নেই মনে হয়। তার কারণ একটাই একসময়ে যখন রাজ্যের বিরোধীদল তৃণমূল প্রায় নির্মূলের মুখে। কোনো ভাবেই শাসক দল সিপিএমের মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়াবার অক্সিজেনের সন্ধান মিলছে না কিছুতেই। সেই সময় যে হুগলীর ডাকাবুকো তৃণমূল নেতা একমাত্র নিজের সংগঠনের আর ক্ষমতার জোরে আর নিজের কলজের জোরে সিপিএমের চোখের ঘুম কেড়ে নিলেন। 
যে সিঙ্গুরের মাটি কামড়ে পড়ে থেকে বাম সরকারের জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন গড়ে তুললেন। যে আন্দোলনের ঢেউ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লো। হারিয়ে যাওয়া একটা রাজনৈতিক দল যে অক্সিজেনের অভাবে মারা যেতে বসেছিল প্রায় সেই দল তৃণমূলকে চাঙ্গা করে দিলো।
এই সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন যার নেতৃত্ব দিলেন সেই সিপিএম ছেড়ে আসা সেদিনকার যুবক বেচারাম মান্না। যাকে কোনো ভাবেই আকবর আলি খোন্দকার টিকিট দিতে চাননি পঞ্চায়েত এর আসনে। তাঁর বক্তব্য না, কোনো সিপিএম থেকে আসা লোককে জায়গা দেওয়া হবে না এই তৃণমূলে। কিন্তু সেই সময় অনেক বুঝিয়ে তারক কর্মকার জেলার বহু পুরোনো তৃণমূল নেতা আর একজন জেলার প্রবীণ সাংবাদিক বেচারাম মান্নার টিকিট কনফার্ম করেন দলের উচ্চ নেতৃত্বের কাছে আবেদন করে। আর সেই আসনে জিতে পরে বেচারাম মান্না তৃণমূলে যোগ দেন। 
সেই বহু পুরোনো তৃণমূল নেতা তারক কর্মকার এর হাত ধরে যার এই তৃণমূলে যোগ দেওয়া। পরে যদিও সেই তারক কর্মকারকেই আর বেচারাম আর মনে রাখে নি। সেটাই যদিও রাজনীতিতে স্বাভাবিক ঘটনা। কোনো ভাবেই পুরোনো স্মৃতি কে মনে না রেখে এগিয়ে যাওয়া নির্দিষ্ট গন্তব্যে ও লক্ষ্যে। আর বেচারাম মান্না সেই কাজ করেছিলেন হাসি মাখা মুখে। যদিও তারক কর্মকার এর কাছে শুধু বেচারাম মান্না কৃতজ্ঞ নয় বহু জেলার সাংবাদিকদের বিপদে পড়লে তিনি সাহায্য করতেন। খবর করতে গিয়ে গাড়ির তেল ফুরিয়ে গেলে তেল ভরতে তাঁর ইটের ভাটায় অবলীলায় ঢুকে পড়তো জেলার সাংবাদিকরা। আর তিনি হাসি মুখে সেই সব সামলে দিতেন। আর বলতেন দাদা কি সৌভাগ্য আমার এই বলে।
আমার খুব ভালো মনে আছে পূজোর সময় দু হাজার টাকার একটি নোট নিয়ে তার ভাটার অফিস ঘরে ডেকে চুপি চুপি দিতে গেছিলেন আমায় পূজোর বোনাস হিসেবে। সেই সময় দু হাজার টাকার দাম অনেক। আমায় সেটা দিয়ে বলেন দাদা পূজো আসছে এটা আপনি রেখে দিন। আমি হেসে বলেছিলাম দাদা এসব কথা বলবেন না। টাকা নিলে অধর্ম করা হবে। টাকা ফেরত নিতে গিয়ে তারক দার মুখের হাসি উধাও হয়ে গেছিল সেদিন। কিন্তু তারক কর্মকার হুগলি জেলার তৃণমূলকে চাঙ্গা করতে অনেক টাকা খরচ করেছিলেন সেই সময়। যদিও তৃণমূল দল সেটা মনে রাখেন নি। এখন তিনি সমাজসেবী হয়ে গেছেন।
যাকগে এইবার বেচারাম মান্নার এর কথায় আসি।তার সিঙ্গুরে আন্দোলনের জেরে চৌত্রিশ বছরের জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা একটা সরকারের শিকড় উপড়ে গেলো এক লহমায়। যেটার মূল কারিগর যদি হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাহলে সেই আন্দোলনের গতি প্রকৃতি বুঝে নদীর ঢেউ কে পাশ কাটিয়ে সঠিক ভাবে নৌকো চালিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে আন্দোলনের সুফল তুলে দিলেন তিনি সেই মমতার প্রিয় তাজা যুবক বেচা। আর সেই মানুষটি হলেন সিঙ্গুর কৃষি জমি রক্ষা কমিটির আহবায়ক ডাকাবুকো নেতা বেচারাম মান্না। যার হাতেই ছিল সিঙ্গুরের কারখানা তৈরীর ভবিষ্যত এর চাবি কাঠি। 
নিজে যদিও সেই সময় সে শ্রীরামপুরে ইন্ডিয়া জুট মিলে কারখানায় কাজ করতেন তিনি। মাঝেই মাঝেই সিঙ্গুর থেকে ট্রেন করে শ্রীরামপুরে আসার সময় রানা কর্মকার আমাদের ক্যামেরাম্যান এর কাছ থেকে আমাদের ইটিভির অফিসে এসে খবরের ক্যাসেট নিয়ে এসে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি হাসি মুখে। তারপর একটি বহু পুরোনো সাইকেল নিয়ে জুট মিলের কাজে যেতেন। আর বলতেন অভিজিৎ বাবু একটু চালিয়ে দেন আমাদের এই খবর গুলো। 
গ্রামের মেঠো রাস্তায় হেঁটে চলে বেড়ানো একদম মাটির সাথে যোগ এই নেতাকে আমারও বেশ ভালো লাগতো। তাই যখন কেউ বেচারামকে দেখিয়ে তার ছবি ছেপে তাঁকে প্রচার দেয়নি আমি সেটা করিনি। সিঙ্গুরের আন্দোলনের সেই প্রথম দিন থেকেই যেদিন রবিকান্ত সিঙ্গুরের জমি পরিদর্শনে এলেন আর গ্রামের মহিলারা শুয়ে পড়লেন তাঁর গাড়ির সামনে। সেই থেকেই তো শুরু হলো বেচারাম মান্নার রথের রশিতে টান দেওয়া। যে টানে দাম্ভিক উন্নাসিক সিপিএমের 34 বছরের সরকারের শিকড় উপড়ে গেলো কেমন করে সেটা তারা নিজেরাও বুঝতে পারল না। 
যেটা বোধ হয় স্বপ্নে ভাবেন নি স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাই বেচারাম মান্নাও তাঁর দু চোখের মণি হয়ে গেলেন নিজের গুণেই। তারপর সবটাই ইতিহাস। যে ইতিহাসে নাম উঠে গেলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই এক ইতিহাসের পাতায় নাম উঠে গেলো সিঙ্গুরের কারখানা বন্ধ করে জমি আন্দোলনের অন্যতম নেতা বেচারাম মান্নার। আর তার পুরস্কার তাঁকে দিলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। প্রথম তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী হলেন সেই বেচারাম মান্না। এরপর শুধুই উত্থান আর উত্থান।
যাকে প্রচারের আলোয় আলোকিত করতে যে মিডিয়া হুগলি জেলার সাংবাদিককূল দিন রাত এক করে তাঁর হয়ে প্রচার করেছে। সেই তাদেরও সঠিক ভাবে ব্যবহার করে ঠিক সময়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন হুগলি জেলার দাপুটে এই নেতা। যিনি নিজে মন্ত্রী হয়েছেন সিঙ্গুরে। তাঁর নিজের ঘরের লোককে আর একটি বিধায়ক করেছেন হাসতে হাসতে। তাঁর এলাকায় কোনো ভাবেই অন্য কোনো নেতার মুখকে আলোয় আসার সুযোগ করে দেননি তিনি নিন্দুকেরা এমন অভিযোগ করেন যদিও তিনি এসব নিয়ে আমল দেন না। যেভাবে সিঙ্গুরের প্রবীণ নেতা বিধায়ক মাষ্টারমশাই রবীন বাবুকেও পিছনে ফেলে দিয়েছেন তিনি হাসতে হাসতে। যেটা সবথেকে ভালো পারেন তিনি একদম। গাছের ডাল ধরে ওপরে উঠে সেই ডালকে কেটে দিয়ে নির্মূল করে দেওয়া। 
তবে জনসংযোগ করতে তার জুড়ি মেলা ভার। বিয়ে, জন্ম, মৃত্যু হলেই এই নেতা তাঁর বাড়ী পৌঁছে যান নিজেই। সকাল বেলায় নিয়ম করে তাঁর সিঙ্গুরের বাড়িতে লাইন পড়ে নেতার কাছে চিঠি নেবার জন্যে ভোর থেকে। এক নিয়ম করেছেন তাঁর স্ত্রী হরিপালের বিধায়ক করবী মান্নাও। জেলা জুড়ে এই দুজনের জুটি সত্যিই অসাধারন জুটি। একদম মেসি আর নেইমার এর জুটি। যে জুটির খেলা ভাঙতে হিমসিম খাচ্ছে তাঁর নিজের দলের অন্য সব সতীর্থরা। যেভাবে সেই আমলে সিপিএম হিমসিম খেয়ে খাবি খেতে খেতে ডুবে গেলো একটা গোটা সরকার। আসলে গোটাটাই কপাল আর নিজের পরিশ্রমের ফল লাভ করেছেন এই  মাটির গন্ধ মাখা নেতা। 
যার সাথে আমার মহাকরণের দেখা হয়েছে বহুবার। অভিজিৎ বাবু বলে হাত জোড় করে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে পড়েছেন প্রেস কর্ণারের সামনে। অন্য সব সাংবাদিকরা সেটা দেখে থতমত খেয়েছে। আজ এত দিন পর একজন আমার নিজের কাছের এই নেতার এত উন্নতি দেখে আমার বেশ ভালই লাগে। মনে হয় যাকে এত প্রচার দিয়েছিলাম সেই সময় ইটিভির অফিসে কাজ এর সুবাদে সেই মানুষটা যে আমাদের জন্য দুপুরে ক্যাসেট নিয়ে এসে আমাদের অফিস এসে একগ্লাস ঠাণ্ডা জল খেয়ে তারপর জুট মিলে কারখানায় কাজে যেতো। তাঁর এই জীবনের স্বপ্নের উত্থান আমায় সত্যিই গর্বিত করে। সিপিএমের লোকদের মুখে ঝামা ঘষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলার যে কারিগর সেই কারিগর তো সিঙ্গুরের এই মাঠের ছেলে বেচারাম মান্না। 
যে কিছুদিন মন্ত্রীর পদ না পেয়ে প্রায় আমায় ফোন করেছে বলেছে অভিজিৎ বাবু কেমন আছেন আপনি। আমি বলেছি দেখো একদিন নিশ্চয়ই আবার তোমার দিন ফিরবে ভেবো না কষ্ট পেয়ো না তুমি। কত গভীর রাত পর্যন্ত যে আমাদের কত কথা হতো সেসব আর নাই বা লিখলাম আজ। আবার বেচারাম এর কপাল খুলে গেলো। মন্ত্রী হলো সে দ্বিতীয় বার। একগাল হেসে রাজভবনে শপথ নিলো সে।দুর থেকে দেখে মনে মনে বেশ খুশি হলাম আমি। যদিও আমি তখন আর কোনো মিডিয়ার খবর করা লোক নই। দূরে সরে এসেছি নিজের ইচ্ছায়। আর কোনো যোগাযোগ হয়নি ওর সাথে আমার। আমিও নিজে থেকে যোগাযোগ করিনি আর যেটা আমার সাংবাদিক জীবনের প্রথম শর্ত। কোনো রাজনীতির লোকদের কাছে নিজে বিকিয়ে যাওয়া নয়। বরং তাঁকে ঋণী করে রাখা যেনো সে বিপদে আপদে মনে রাখে তোমায়। 
হ্যাঁ মনে রেখেছিল সে। সিঙ্গুরের ঐতিহাসিক সেই রায় এর দিন যেদিন গোটা মিডিয়া বেচারামকে তাঁর চ্যানেলে বসাবে বলে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সেই যে কামারকুন্ডুর সেই চেনা পার্টি অফিসে। হাজার মিডিয়ার ওবি ভ্যানের ভীড় উপচে পড়ছে। সবুজ আবীর মেখে ওর চোখে মুখে আনন্দের ছোঁয়া। সেই দিন ও কথা রেখেছিল আমার মুখ রক্ষা করে। 24 ঘন্টা চ্যানেলে কাজ করি আমি সেই সময়। সবাইকে টপকে গিয়ে আমাদের প্যানেলে বসেছিল বেচারাম মান্না। মনে হয়েছিল যাক আর যাই হোক ভুলে যায়নি ওই ভুলোমনা নেতা এই বিশেষ দিনে। 
কিন্তু এরপর ওর দৌড় আর আমার জীবন অন্য খাতে বয়েছে। সেখানে নেতা, মন্ত্রী, খবর কিছুই নেই আমার। বহুদিন পর একদিন হঠাৎ শ্রীরামপুরে প্রেস ক্লাবের কোনো এক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসে শুনলাম ও খবর নেয় আমার কোথায় অভিজিৎ বসু। সেই সময় আমার ভালো বন্ধু সমীর সাহা ওকে ওর ফোন থেকে আমায় ধরিয়ে দেয় বলে এই নাও বেচাদা কথা বলবে তোমার সাথে। কিছুটা অভিমান আর কিছুটা মন খারাপ নিয়েই ওকে বললাম দাদা আমার মা মারা গেছে তুমি তো খবর নাওনি আমার একবারও। আজ লোকের ফোন থেকে কেনো জিজ্ঞাসা করছো কেমন আছি। ওপর প্রান্তে আওয়াজ এল আমি জানতাম না এই খবর। আমি বললাম কিছুটা অভিমান নিয়েই শোনো তুমি লোকের ফোন থেকে আর ফোন করে আমার খবর নিওনা কোনোদিন। যদি মনে করো তাহলে নিজের ফোন থেকে ফোন করো তুমি। সেই শেষ কথা। না, এরপর আর কোনো ফোন আসেনি আর আমার কাছে। জানি আর আসবেও না। সেটা আমি চাইনা। 
আমি জানি সাংবাদিক এর কাজ হলো নেতার বেগবান আন্দোলনকে তুলে ধরে সঠিক ভাবে খবর পরিবেশন করা আর কিছু নয়। এটাই একজন সংবাদ মাধ্যমের কর্মীর কাজ। এরপর নেতা চলবেন তাঁর নিজের  জীবন নিয়ে। হুটার নিয়ে। মোসাহেবদের নিয়ে। নিরাপত্তা রক্ষী নিয়ে। আর আমরা ছাপোষা সাংবাদিকরা দুর থেকে সেটা দেখে মনে মনে খুশি হয়ে ভাববো যাক আমার নিজের তৈরি এই মানুষটা আজ কত বড় নেতা মন্ত্রী হয়েছে দেখেও ভালো লাগে। 
যার কাছে অন্ততঃ আমায় কোনোদিন হাতজোড়  বলতে হয়নি দাদা আমায় একটু দেখো দাদা। দু হাত জোড় করে ওর কাছে গিয়ে দাঁড়াতে হয় নি। ওর ঘরের বাইরে লাইন দিতে হয়নি অন্য সব সাধারণ মানুষের মতো। আর যাই হোক জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যেনো অন্ততঃ সেটা না করতে হয় আমায়। ভগবানের কাছে এই প্রার্থনা জানাই। ভালো থেকো তুমি বেচাদা তোমার মন্ত্রিত্ব নিয়ে। সুখে থাকো। আনন্দে থাকো। শুধু একটাই অনুরোধ মাটির গন্ধ মাখা মানুষদের ভুলে যেওনা তুমি।

ভালো থেকো বেচা দা - অভিজিৎ বসু।
বিশে জুলাই, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...