সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সেলফির স্মৃতি

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ শুধু সেলফি তোলার কথা। এই সেলফির এখন খুব চল হয়েছে। আজ সেলফি তোলা এক গল্পের দুই বন্ধুর বন্ধুত্বের নানা অজানা কথা। আসলে এই সেলফি তো শুধু মাত্র একটা নিজের উপস্থিতির প্রমাণ করা নয়। এই সেলফি একদম চুপ চাপ দুজনে দুজনকে আশ্লেষে জড়িয়ে ধরে নিগূঢ় বন্ধনে বাঁধা থেকে সেলফি তুলে ভবিষ্যতের জন্য ধরে রাখার কথা। যার জন্য আমিও একটু অবাক হয়েছিলাম দুর থেকে ওদের দুজনকে দেখে।

ভরা হাটে একজন অপর জনকে ডেকে নিয়ে ছবি তুলছে আপন মনে হাসিমুখে। কেমন যেনো কোনো দিকে নজর নেই ওদের দুজনেরই। যেনো কত দিনের পুরোনো চেনা সম্পর্ক ওদের। সত্যিই তো জীবনের এই সব ছোটো ছোটো ঘটনা ঘটে যায় আমাদের সবার চোখের সামনে। কিন্তু সেই সব ঘটনার পেছনে লুকিয়ে থাকে হাসি, কান্না, সঙ্কোচ, বেদনা আর বিহ্বলতা। সেই রকম ভাবেই ওরা ছবি তুলে ধরে রাখলো দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে। 

আজকাল তো পটাপট মোবাইল ফোনে আনলিমিটেড ক্যামেরার লেন্সে চোখ রেখে কেমন যেন একটা ছবি তোলার হিড়িক পড়েছে সর্বত্র। সে পাহাড় থেকে হোক, ট্রেনের দরজা থেকে ঝুলতে ঝুলতে হোক, কিম্বা জঙ্গলের গহন বনে চাঁদনী রাতে হাঁটতে হাঁটতে হোক, পাহাড়ী ঝর্ণার নিচে দাঁড়িয়ে দু হাত তুলে ধরে হোক, বিপদসঙ্কুল সমুদ্রের ঢেউ দেখতে দেখতে পা ভিজিয়ে ব্যালেন্স হারিয়ে ভেজা বালিতে পড়ে যেতে যেতে হোক এমন কি প্রিয়জনকে হারিয়ে তাঁকে শেষ বিদায় বেলায় হোক সেলফি কিন্তু মাস্ট। চাই চাই, আর সেটা না হলে সেই কবিতার লাইন এর মত বিদ্যে বোঝাই বাবু মশাই এর জীবনের মত ষোলো আনাই বৃথা এ পোড়া জীবন। 
জীবনের সুখে, দুঃখে, যন্ত্রণায়,আবেগে ভেসে যেতে যেতেও সেলফি কিন্তু চাই চাই। আসলে এটা যে এখন জীবনের অন্যতম অঙ্গ হয়ে গেছে সেটা ভুলে গেলে চলবে কি করে আমাদের। জীবনের সাথে এর সম্পর্ক এখন যে কত গভীর। তাই আজ সেলফি কথা লিখবো বলেই আমি ঠিক করলাম আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় আঁকাবাঁকা অক্ষরে আঁকিবুঁকি ব্লগে। 

সত্যিই বলতে কি জানেন তো আমিও আপনাদের মতই সেলফি তুলে রাখার অনেক সুযোগ পেয়েছিলাম একসময়। সেই সময় আমি কলকাতায় আকাশবাণীতে সাংবাদিকতার কাজের সুত্রে এই সব সুযোগ পেয়ে ছিলাম একসময়। আজ থেকে প্রায় পঁচিশ বছর বা তার আগে এই সেলফি তোলার সুযোগ পেলে যার সাথে একটিবার সেলফি তুলে রাখতাম তিনি অবশ্যই সেই যে বিশ্ব সুন্দরী সুস্মিতা সেন। 

মিস ইউনিভার্স হয়ে প্রথম কলকাতায় এলেন যেদিন গড়িয়াহাটে তাঁর আত্মীয়ের বাড়িতে। আকাশবাণীর তরফে সেদিন সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে অত কাছ থেকে বিশ্ব সুন্দরীকে দেখে ওই তার পেলব সুন্দর ঠোঁট, টানা টানা চোখ আর মাখনের মত গায়ের রং দেখেও যে সেলফি তোলা হয়নি আমার সেদিন। আসলে সেই সময় কি আর এসবের চল ছিল। না কোথায় সেলফি জোন আর কোথায় মোবাইলের এত দাপট ছিল সেই সময়। তাই আমার সেই দুঃখ আজও রয়ে গেছে সেই আমার স্বপ্নকন্যা বিশ্ব সুন্দরীর সাথে যদি একটা সেলফি তুলে রাখতে পারতাম। তাহলে বোধহয় আমার এই পাঁশুটে জীবনটা একটু এই বুড়ো বয়সে এসে বেশ ভালো লাগতো। 

নোনতা স্বাদহীন‌ জীবনে কেমন একটা সুন্দর স্বাদ পেতাম আজ আমিও। সবাইকে বেশ হাসি হাসি মুখে বলতে পারতাম যে আমিও এদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি এক সময়, দেখো দেখো তোমরা সবাই। কিন্তু কই কোনো সাবুদ নেই যে আমার কাছে। তাহলে কি করে বলব। 

আর সেই যে যেদিন সানন্দার অফিসে সাক্ষাৎকার নেবো বলে দরজা ঠেলে ঠাণ্ডা ঘরে ঢুকলাম যখন বুকটা কেঁপে উঠেছিল একটু। ঘরে ঢুকে দেখলাম চোখে কালো রোদ চশমা পরে বসেছিলেন সেই বিখ্যাত অভিনেত্রী সুন্দরী অপর্ণা সেন। যে সেই সিনেমায় যেমন করে অপেক্ষা করেছিলেন, ট্রেন ধরে চলে যাবার সময় যে দৌড়ে এসে ছিলেন রিক্সা করে হন্তদন্ত হয়ে সৌমিত্রের জন্যে প্ল্যাটফর্মে। তারপর ট্রেন ছেড়ে চলে যাবার পর টলটলে দু চোখের কোল ভেসে যাচ্ছিল তার। সৌমিত্রর ডাকে যার সম্বিৎ ফেরে। সেই ডাক সাইটে অভিনেত্রী একমনে আমায় দেখে বুঝলেন, না এর জন্য এত চড়া লিপস্টিক আর এত সাজ না করলেই হতো বোধহয়। সেই বিখ্যাত অপর্ণা সেনের সাথেও যে একটাও সেলফি তোলা হয়নি আমার সেদিনও ওই সাদা বাড়ির ওই ঠাণ্ডা ঘরে বসে সাক্ষাৎকার নেবার পর। 

আসলে সেই আমলে তো আর এমন কলি যুগের মত সেলফি যুগ হাজির হয়নি খুব একটা। যে যুগে একদিন সকাল বেলায় অসুস্থ অভিনেতা অনিল চট্টোপাধ্যায়কে দেখতে এলেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ গাড়ি নিয়ে সেই টালিগঞ্জের বাড়িতে। একটা সোফায় বসে জিজ্ঞাসা করলেন কেমন আছেন অনিল জেঠু। সেই সকালে তো আমিও হাজির ছিলাম সেদিন ওই বাড়িতেই। চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখলাম সেই ছায়াছবির সেই দুই নায়কের মিলন দৃশ্যও কিন্তু ছবিতে ধরে রাখতে পারিনি সেই মুহূর্তও। আজ এসব ভাবলে বড়ো আফশোষ হয় আমার। 

আসলে কি করবো আমাদের সেই সব দিনগুলোতে যে এমন করে সেলফির ঝড় ঝাপটা আসেনি আমাদের জীবনে এখনকার মত। তাহলে কি আর হাতের সামনে সেই ডিস্কো ড্যান্সার এর জন্যে বিখ্যাত মিঠুন চক্রবর্তীকে হাতের নাগালে পেয়েও কেউ একসাথে হাসি মুখে ছবি না তুলে ছেড়ে দেয় পার্ক হোটেলের ঘরে বসে একা একা শুধু নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তা নিয়ে অফিস ফিরে আসে। কি করবো বলুন তো সেই সুযোগ ছিল না যে সেদিন। 

বহু পড়ে যখন আমি কাজের সূত্রে নানা চ্যানেলে কর্মরত হলাম হাতে মোবাইল পেলাম, ছবি তোলার সুযোগ পেলাম। না, সেদিনও তো সেই নানা বিখ্যাত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে হাসি হাসি মুখ করে সেলফি তুলে নিজেকে কেউকেটা মাতব্বর ভাবতে পারিনি আমি। উল্টে কিছুটা যেনো সঙ্কোচ আর কিছুটা নিজের কাছে নিজের জড়তা কাটিয়ে এগিয়ে যেতে পারিনি হাল আমলের দেব, জিৎ বা ঋতুপর্ণার কাছে। এমনকি মহাকরণে লাইন দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে হাতে রাখী পড়ে তার ছবি তুলে ধরে রাখার দিনেও কেমন যেনো গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে গেছিলাম আমি। আসলে কেমন যেনো লজ্জা পেয়ে ছিলাম আমি সেদিনও কিছুটা দ্বিধাও ছিল। 

আসলে এক ছোটো অতি ক্ষুদ্র জীবন এর সাথে এক বৃহৎ অতি বৃহৎ জীবনের এই ভাবে ছবি তুলে ধরে রাখা কেমন যেন বেমানান লাগে আমার। আজকাল অবশ্য এটাই নিয়ম। তোমার কার সাথে পরিচয় আছে সেটা নির্ণয় হয় তার সাথে কটা ছবি তোলা আছে তোমার মোবাইলে সেটার ওপর নির্ভর করে সেই ব্যক্তির গুরুত্ব কতখানি সমাজে তার কি স্ট্যাটাস সেটার ওপর। তোমার মোবাইলের পর্দায় সেই সব বিখ্যাত ব্যক্তির ছবি জ্বল জ্বল করছে। এটাই তো হল আসল কথা। কিন্তু সেসব কিছুই করা হয় নি যে আমার এই জীবনে। তাই বোধহয় আমি পিছিয়ে পড়েছি এই আধুনিক সেলফির যুগে। সে যাকগে পিছিয়ে পড়ি তাতে আমার কোনো দুঃখ নেই।

 কিন্তু যে জন্য এত কথা বললাম সেই দুজনের দুই মহিলার দিনে দুপুরে হাটের মাঝে সেলফি তোলার হিড়িক দেখে চমকে গেলাম একটু। আমি হয়তো তাদের সেই দুজন মহিলার কোনো ছবি তোলার চেষ্টা করিনি কিছুটা ভয় আর সঙ্কোচে। কিন্তু অনেক পরে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলাম আমার পাশে বসা সেই মহিলাকে ছবি তুললেন কেনো অমন করে দুজনে মিলে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে। একদম আদি অকৃত্রিম হাসি হেসে সোজা সাপটা জবাব তাঁর। ও আমার বহু পুরোনো দিনের বন্ধু। বহু দিনের বন্ধু ও জানেন। সেই কবেকার বন্ধুত্ব আমাদের দুজনের। কিন্তু জানেন তো ওর হার্টের রোগ ধরা পড়েছে। কানেরও সমস্যা আছে। অপারেশন করতে হবে। ডাক্তার বলেছে খুব ভালো নেই ও। তাই আজ হাটে এসে আমায় দেখতে পেয়ে বলল চল দুজন মিলে মজা করে এই খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে অর্জুন গাছকে সাক্ষী রেখে আমরা দুজন একটা সেলফি তুলি। আমি যখন থাকবো না তখন তুই এই ছবিটা দেখবি। আর আমার কথা মনে করবি, ভাববি। মনে পড়বে তোর আমার কথা। 

আমি এই সব কথাগুলো শুনে কেমন যেনো চুপ করে স্থবির হয়ে গেলাম একটু । সত্যিই তো কেমন অকপটে সেলফি তোলার আসল উদ্দেশ্য কি সেটা বলে দিলো আমায় ওই হাটে বসা গ্রাম্য মহিলা। যে হাসতে হাসতে বলে দিলো জীবনের ডাক কার কখন আসে কে জানে। তাই তো দুজন মিলে একসাথে ছবি তুলে রেখে দেওয়া। আমি কি আর বলব চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম সেই নাম না জানা ওই গ্রাম্য মহিলার সামনে। যে আমায় বলে দিলো কত অবলীলায় কার ডাক কখন আসে কে জানে। তাই তো একটু ছবি তুলে রাখা দুজনের। ডাক্তার তো আমার বন্ধুকে বলে দিয়েছে ওর শরীর ভালো নেই তাই একটু ছবি তুলে রাখা।
এই অবস্থায় সেলফি তুলে দুজন দুজনকে হারিয়ে ফেলে একে অপরের সাথে থেকে যাওয়া ওই মোবাইলের মাধ্যমে। আর যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে এত বছরে সেই সম্পর্ককে জাগিয়ে রাখা এই বুকের মাঝে। এই বলে কেমন যেন একটা মায়াময় দৃষ্টি দিয়ে আমায় বলল কি করবো বলুন ডাক্তার যে ওকে বলে দিয়েছে ওর শরীর ভালো নেই অবস্থা ভালো নয় ওর। এমন কেউ বলে বলুন আপনি। 

আমার মুখ থেকে কোনো কথা নেই। চুপ করে মাথা নিচু করে সেই মহিলার কথা শুনলাম আমি। দুই ছেলে, বড় ছেলে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে সামনের বছর। স্বামী কলকাতায় রান্নার কাজ করে অল্প টাকা আয় করে। সংসারের খরচ চালানোর প্রয়োজনে সে এই হাটে এসে বসেছে কঙ্কালীতলায়। ছেলে দুটোকে তো মানুষ করতে হবে বলুন। আমি চুপ করে শুনছিলাম ওর কথা। 

আমি যেনো সাদা জীবনের কালো কথা লিখতে হবে বলে এমন কথা আমায় লিখতে হবে বলে ভাবিনি কোনো দিন আমি। এমন একটা চরম সত্য, নির্মম সত্য কথা জেনেও হাসি মাখা মুখে কেমন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে সেলফি তুলে রাখা। একজন অন্য জনকে ছেড়ে চলে গেলে, হারিয়ে গেলে এক বন্ধু যেনো দেখতে পায় অন্য বন্ধুকে। সত্যিই এমন সেলফিও হয় তাহলে। কে জানে হয়তো হয়। আমার জানা ছিলো না।

 জীবনকে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে রাখার সেলফি। যে জীবনের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে সুখ, দুঃখ, ভালোবাসা,যন্ত্রণা, বন্ধুত্বের নানা অজানা অচেনা সম্পর্কের হাজারো গভীর গোপন কথা। যেগুলোকে ধরে রাখতেই এই বন্ধুত্বের সেলফি। যে সেলফির স্মৃতি, তার স্বাদ একদম আলাদা। যে সেলফির মধ্যে লুকিয়ে আছে গভীর নিখাদ ভালোবাসা।

সেলফির স্মৃতি - অভিজিৎ বসু।
ঊনত্রিশ জুলাই, দু হাজার চব্বিশ

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...