নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।
একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর জমি দখলের কোনোও রাজনীতি নেই। যে রাজনীতি নিয়ে শাসক আর বিরোধী দলের মধ্যে কোনোও ধরনের বিতর্ক নেই ঝামেলাও নেই। ফলে শপিং মলের উদ্বোধনে আপত্তি উধাও।
দল তৃণমূল কংগ্রেস ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। মা মাটি মানুষের সরকার চলছে বটে। কিন্তু ধীরে সুস্থে কেমন কর্পোরেট স্টাইলে চলছে এই সরকার আর দল। দলে এখন নবীন আর প্রবীণের মিলমিশ নিয়ে আলোচনা হয় না বিশেষ খুব একটা। সেখানে সিঙ্গুর আন্দোলনের অন্যতম নেতা মন্ত্রী বেচারাম মান্না যে নতুন পরিবেশে মিশে একাকার হয়ে সস্ত্রীক একটা ঝাঁ চকচকে জীবন আর শপিং মল উদ্বোধন করবেন তাতে আর ক্ষতি কী। এই নিয়ে এত শব্দ খরচ করারই বা কি দরকার?
তবু কেমন যেন লাগে আমার। চেনা মুখ এর অচেনা ছবি। সেই সিঙ্গুর থেকে দুর হটো। টাটা তুমি দুর হটো বলা মন্ত্রী বেচারাম মান্না আজ এই নতুন প্রজন্মের কাছে সব থেকে প্রিয় শপিং মলে না হয় ঢুকে পড়েছেন। ক্ষতি আর কী তাতে। সেই কম্পিউটার আটকে দেওয়া লাল পার্টির বামেরা যদি বদলে যেতে পারে ধীরে ধীরে তাহলে আর এই মা মাটির মানুষের বেচারাম মান্নার বদলে যেতে ক্ষতি কী?
শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী - অভিজিৎ বসু।
২৮ মে, দু হাজার পঁচিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন