সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ফুটবলকে ভালবেসে

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ বাবা ও ছেলের নানা অজানা কাহিনী। সত্যিই বলতে কি আজ এই মোহনবাগান দিবসে অন্যরকম এই কাহিনী লিখতে ইচ্ছা হলো আমার। আত্মবিস্মৃত এই আমরা কত সহজেই যে কত কিছু ভুলে যাই আমরা কে জানে। আসলে আমাদের গর্বের উজ্জ্বল সব ঘটনাও কেমন করে যেন হারিয়ে যায় আমাদের জীবন থেকে, কাছ থেকে ধীরে ধীরে। আসলে মনে হয় এই হারিয়ে যাওয়া দিনকে মনে রেখে, তাঁকে স্মরণ করাই তো আমাদের কর্তব্য। সেই সব দিনের কথা তুলে ধরা হলো সেই সব পুরোনো দিনের মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানো।
আজ ঊনত্রিশ জুলাই এই তারিখটা ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম একটা আবেগের দিন। উনিশশো এগারো সালের এই দিনে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এগারো জন দামাল বাঙালি ছেলে ইস্ট ইয়র্কশায়ারের বিরুদ্ধে আই এফ এ শিল্ড ফাইনালে মুখোমুখি হয় মোহনবাগান দল। আর সেই ম্যাচে ঐতিহাসিক জয় পায় সেই সবুজ মেরুন মোহনবাগান। সেদিন বুট পরে খেলতে নামা ইংরেজদের বিরুদ্ধে খালি পায়ে খেলতে নামে খেলা পাগল বাঙালির কিছু তরতাজা যুবক ফুটবলার।
 তাদের অদম্য জেদের কাছে হার মেনে নেয় ব্রিটিশরা। আর সেই দলে ছিলেন উত্তরপাড়ার সেই মনমোহন মুখোপাধ্যায়। উত্তরপাড়ার শিবতলা স্ট্রীটের এই বাড়ী ছিল মনমোহনের ছোটবেলার আস্তানা। যে বাড়ী আজও দাঁড়িয়ে আছে নানা স্মৃতিকে আগলে নিয়ে। সেই মোহনবাগানের অমর এগারোর একজন যোদ্ধা ছিলেন এই মনমোহন মুখোপাধ্যায়। আড়াইশো বছরের পুরনো বাড়ী আজও বহন করে চলেছে সেই ইতিহাস। বাড়ির পলেস্তারা খসে পড়ছে কিন্তু আজও এই বাড়ী ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মনমোহন স্মৃতিকে বুকে আগলে ধরে। 
আসলে শহরের বুকে হারিয়ে যাওয়া এই বাড়ির নানা স্মৃতি। এই বাড়ির মানুষদের কর্মকৃতিত্ব তো ভুলে যাবার নয় কিছুতেই, কোনো ভাবেই। স্বাধীনতার আগের যুগের সেই সময় এমনই নানা ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে এই বাড়ী। যেখানে শুধু খেলার মাধ্যমে জেগে উঠেছিল দেশপ্রেমের দীপশিখা। খেলার মাঠে বিদেশিদের হারিয়ে দিয়ে সেদিন বাংলার কিছু তরতাজা যুবক বুঝিয়ে দিয়েছিল তারাও কম যায় না। সেই দলে ছিলেন হীরালাল মুখোপাধ্যায়, ভুটি সুকুল, সুধীর চট্টোপাধ্যায়, মনমোহন মুখোপাধ্যায়, রাজেন সেনগুপ্ত, নীল মাধব ভট্টাচার্য, কানু রায়, হাবুল সরকার, অভিলাষ ঘোষ,বিজয় দাশ ভাদুড়ী, আর অধিনায়ক ছিলেন শিবদাস ভাদুড়ী।

এত গেলো কিছুটা বাবার কথা। এই বাবার সুযোগ্য ছেলে হলেন বিমল মুখোপাধ্যায়। যার নামের পরিচিতিও কম নয় খেলার মাঠে। আজ মোহনবাগান দিবসে উত্তরপাড়া কোতরং পুরসভা তাই বাবার মূর্তির পাশেই ছেলের মুর্তি বসিয়ে তাঁকেও সম্মান ও শ্রদ্ধা নিবেদন করলো। উত্তরপাড়া পুরসভার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, হয়তো আমাদের একটু দেরি হলো তবে এই আজকের দিনে বিমল মুখোপাধ্যায় এর মুর্তি স্থাপন করতে পেরে উত্তরপাড়া পুরসভাও গর্বিত।
 উত্তরপাড়ার এই দুই কৃতী মানুষকে আমরা সম্মান জানাতে পেরে আমরাও আজ সত্যিই খুব খুশি। আমরা মনমোহন মুখোপাধ্যায় এর নামে মনমোহন সরণী করেছি কিছুদিন আগেই। তাঁর মূর্তিও স্থাপন করেছি। আগামী দিনে এই সব গুণী মানুষদের নিয়ে আরো কিছু কাজ করতে চাই আমরা অনুষ্ঠানও করতে চাই শহরে। যাতে এই শহরের মানুষ আমাদের এই অতীত দিনের সব দিকপালদের মনে রাখতে পারেন জানান পুরপ্রধান দিলীপ যাদব। 
সত্যিই তো সেই দিকপাল রাইট হাফের খেলোয়াড় মনমোহনের ডাক নাম ছিল টেরিয়ার। সারা মাঠ জুড়ে দাপিয়ে খেলতেন তিনি। বিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিতে তার জুড়ি মেলা ভার। আর সেই দিকপাল রাইট হাফের খেলোয়াড় বিখ্যাত বাবার ছেলে বিমল আবার মোহনবাগানের  প্রথম লীগ জয়ী দলের ক্যাপ্টেন। উনিশশো উনচল্লিশ সালে মোহনবাগান প্রথম লীগ যেতে তাঁরই নেতৃত্বে। এই সব সাল তামামির জটিলতা থেকে বেরিয়ে আমি অন্য একটা গল্প শোনাই আজ এই মোহনবাগান দিবসে।
 কিন্তু যে মানুষটার বাবা একজন এত বিখ্যাত ফুটবলার। সেই বাবার ছেলে বিমল মুখোপাধ্যায় এর খুব ইচ্ছা তিনিও মোহনবাগান মাঠে খেলবেন একদিন। এই স্বপ্নে বিভোর হয়ে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। খুব সাধ তাঁর ওই বাবার দলে খেলার। কিন্তু উপায় কি খেলব বললে কি আর খেলা যায় মোহনবাগানে। কিছুতেই সেই মাঠের এদিক ওদিক ঘুরেও কোনো ফল হলো না তাঁর।

 কিছুতেই যখন মোহনবাগান মাঠে খেলার ছাড়পত্র মিলছে না সেই সময় তিনি মনস্থির করেন ঠিক আছে তাহলে পাশের ইস্টবেঙ্গল মাঠেই খেলতে নামবেন তিনি। একজন পরিচিত বলেন ঠিক আছে চেষ্টা করে তিনি দেখবেন কি করা যায়। সেই পরিচিত মানুষের হাত ধরে ইস্টবেঙ্গল মাঠে খেলা পাকা করে ফেলেন বিমল মুখোপাধ্যায়। কিন্তু কোনো ভাবে এই খবর গেলো মোহনবাগান টেন্টে। মনমোহন মুখোপাধ্যায়ের ছেলে সই করছে ইস্টবেঙ্গলে। 
ব্যাস আর কি। সোজা বিমল বাবুকে ডেকে পাঠানো হয় মোহনবাগান টেন্টে। বিমল মুখোপাধ্যায় এলে তাঁকে বলা হয় যদি প্রমাণ করতে পারে সে খেলতে পারবে ঠিক মত। তাহলে সুযোগ মিলবে মোহনবাগানে খেলার। আর প্রথম খেলাতেই বাজিমাৎ করলেন বিমল মুখোপাধ্যায়। পুলিশের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে তিনি প্রমাণ দেন। প্রথম ম্যাচেই দু গোল করেন তিনি। 
তারপর থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে কোনোদিন। উনিশ শো ত্রিশ সাল থেকে টানা দশ বছর চুটিয়ে খেলেন তিনি সবুজ মেরুন জার্সি পরে রাইট হাফে। উনিশশো আটত্রিশ সালে বিমল কে ক্যাপ্টেন করা হয় মোহনবাগানের। আর উনিশ শো উনচল্লিশ সালে মোহনবাগানকে প্রথম লীগ খেতাব এনে দেন সেই তিনি। সত্যিই যে মানুষটা এই মোহনবাগানে খেলতে সুযোগ পাচ্ছিলেন না সেই মানুষটা কেমন ইতিহাসের পাতায় পৌঁছে গেলেন অনায়াসে।
আর আজ সেই উত্তরপাড়ায় তাঁর নিজের শহরে পুরসভা তাঁর মুর্তি বসালো সেই মোহনবাগান দিবসে। বাবার পাশে ছেলের মুর্তি বসলো। আর সেই ঘটনার সাক্ষী থাকলেন বিমল মুখোপাধ্যায় এর ছেলে নিখিল মুখোপাধ্যায় নিজে। যিনি আজ খুব খুশি। তাঁর প্রিয় শহরে বাবার মুর্তি, দাদুর মুর্তি স্থাপন হলো বলে। তাঁর কথায় পুরসভার এই উদ্যোগকে তিনি সাধুবাদ জানান।বলেন যাক খুব ভালো লাগছে এই আজকের দিনে। এমন একটা কাজ হলো আমার বাবার স্মৃতিও ধরা থাকলো এই শহরের বুকে।
ভুলে গেলেও কি আর সেই অতীত দিনের ইতিহাসকে ভুলে যাওয়া যায় কোনো ভাবে। উত্তরপাড়ার এই  মনমোহন স্মৃতি নামের বাড়িতে কত গল্প কত ইতিহাস যে জড়িয়ে আছে কে জানে। ভেঙে পড়া এই পুরোনো বাড়ির অন্দরে কান পাতলে আজও নানা ঘটনার কথা শোনা যায়। দেশ প্রেমে উদ্বুব্ধ হয়ে কিছু দামাল ছেলে সেদিন ব্রিটিশদের বুঝিয়ে দিয়েছিল তারা প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে ফুটবলকে। তাই সেদিন তারা বিদেশিদের হারাতে পেরেছিল। 
সত্যিই বাঙালির প্রিয় খেলা ফুটবল। আত্মবিস্মৃত হলেও এতদিন পর আজ মোহনবাগান দিবসে উত্তরপাড়া পুরসভার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানায় শহরবাসী। সত্যিই তো এই সব মানুষদের জন্য গর্বিত উত্তরপাড়ার শহরের মানুষ। যারা অন্ততঃ রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে এই মুর্তি দেখে তাদের মনে হবে এই শহরের দুই কৃতী সন্তানের কথা। যারা একদিন দেশের নাম উজ্জ্বল করেছিল শুধু ফুটবলকে ভালোবেসে।

ফুটবলকে ভালোবেসে - অভিজিৎ বসু।
ঊনত্রিশ জুলাই, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...