সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জৈনদার বুক স্টল

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ শ্রীরামপুর রেল স্টেশন এর সেই জৈনদার বুক স্টল এর কথা।  শ্রীরামপুরের ডাউন প্ল্যাটফর্মের এই বুক স্টল কবে থেকে তার ঝাঁপ খুলেছিল আমি ঠিক জানি না। হয়তো জিজ্ঞাসাও করিনি আমি সেই কথা। খুব ছোটবেলা থেকেই আমি ট্রেন এর যাত্রী। যতদূর মনে পড়ে ক্লাস টু তে যখন আমি পড়ি সেই সময় থেকে আমি ট্রেন এর যাত্রী।

 মার হাত ধরে পূর্ণচন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসতাম। রিষড়াতে তখন আমরা চলে গেছি শ্রীরামপুরের বন্দনা মাসি, বিলু মামাদের এঁদো পুকুরের ভাড়া বাড়ী ছেড়ে। সেই সময় কি এই স্টলটা ছিল স্টেশনে কে জানে। স্মৃতির আয়নায় জল দিয়ে মুছেও ঠিক মনে পড়ছে না কিছুতেই আজ এত দিন পরে সেই কথা। আমার স্মৃতি মেদুরতা নিয়ে আমি গর্ব করি খুব। কিন্তু এই যে গর্বের স্মৃতি আজ এই মেঘলা আকাশে আমার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখছে না আর। তারকাটা স্মৃতি বিছিন্ন হয়ে বলছে হায়রে এত গর্ব ভালো নয় হে। সত্যিই বোধ হয় তাহলে আমার ব্রেন সেল কি শুকিয়ে যাচ্ছে, বুড়িয়ে যাচ্ছি আমিও। হয়তো তাই হচ্ছে ধীরে ধীরে। 


যাকগে সে যাই হোক এই বই স্টল এর কথায় আসি। যে প্রসঙ্গে এই লেখা আমার। ছোটো বেলায়, স্কুল জীবনে, কলেজ জীবনে জাল দিয়ে ঘেরা টোপে বসে থাকতে দেখেছি জৈন দাকে। সাদা জামা পরে গম্ভীর মুখে বসে আছেন তিনি। দৌড়ে ট্রেন ধরা যাত্রীরা কাগজ কিনে ট্রেন ধরতেন সবাই। নানা কাগজ, ম্যাগাজিন সুন্দর করে ঝুলিয়ে রাখা হতো সেই সময়। ঘাড় উঁচু করে নাগাল না পেলেও দেখতাম সেই সব।পূজোর সময় পূজো বার্ষিকী দেখতাম দুর থেকে।

 পরে একটু বড় হলাম ছোটো কাগজের অফিসে কাজ করার সুযোগ হলো আমার। সেই ওভারল্যান্ড
কাগজে লিখে কিছু রোজগার করা সম্ভব হলো। প্রতি লেখায় পঞ্চাশ বা ষাট টাকা। তারপর কাজ করলাম পট পরিবর্তন কাগজে। জৈন দার সাথে কথা শুরু হলো সেই সময়। আলাপ শুরু হলো ধীরে ধীরে। গম্ভীর ভারী মুখের জৈন দা কাছের মানুষ হয়ে গেলেন কি করে কে জানে। জেনে গেলেন আমিও কাগজের লোক বা বলা যায় রিপোর্টার। আজ থেকে প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর আগেকার কথা হবে সেই সব। 

তারপর আজকাল, বর্তমান, দিল্লির কাগজ অক্ষর ভারত সব কাগজেই লেখা লিখতাম ঘুরে ঘুরে কোনো সময়ে জেলা সাংবাদিক হয়ে আবার কোনো সময় কলকাতায় ফ্রিল্যান্স করে। আর এই স্টলে এসে একটা একটা কাগজ ঘেঁটে দেখতাম আমার লেখা বেরিয়েছে কি না। কাগজের সেই সাদা পাতায় ছাপার অক্ষরে নামটা বেরোলে কি যে অনুভূতি হতো বলে বোঝাতে পারবো না আজ সেই সব কথা। পকেটে কোনো রকমে একটা ছেঁড়া ফাটা দশ টাকা বা কিছু খুচরো পয়সা দিয়ে কাগজটা কিনে ঘরে ফিরতাম আমি যুদ্ধ জয় করে। মাকে দেখাতাম, বাবাকে দেখাতাম কাগজে আমার নাম বেরিয়েছে অভিজিৎ বসু। সত্যিই বোধ হয় খুব বোকা বোকা একটা ব্যাপার কিন্তু এই যে অনুভূতি সেটা তো আজও এই বাদল দিনে মনে পড়ে।
সেই যে প্রেমে পড়লাম কাগজে ছাপার অক্ষরে নাম বেরোবে কাগজে সেই মোহ থেকে আর বের হতে পারলাম না এই জীবনে কোনো দিন। আসলে এত দিন পর দীর্ঘ জীবনের সাথে এই পেশায় কাজ করে মনে হয় সাংবাদিক কি এই মোহের জন্য হয়ে গেলাম। নাকি অন্য কোনো কাজ করতে পারিনি বলে এই পেশায় নেমে পড়ে  সাংবাদিক হয়ে গেলাম কে জানে। যাক গে কিন্তু সেই সব দিনের সাক্ষী ছিল এই জৈনদার বুক স্টল। 
কিছুদিন পর কাগজ এর নাম এর মোহ ছেড়ে চলে এলাম টিভি মিডিয়াতে। সালটা উনিশশো নিরানব্বই সাল। ইটিভির হুগলি জেলার রিপোর্টার হয়ে গেলাম আমি। বড়ো মাতব্বর আমি। জেলার চার মহকুমায় লোক রাখা আছে। ক্যামেরাম্যান ছবি হলেই সেই ক্যাসেট পাঠিয়ে দেয় ট্রেন পথে। তারকেশ্বর লোকাল ধরে ক্যাসেট নিয়ে শ্রীরামপুরে আসছেন ছানাওলা। ব্যান্ডেল লোকাল ধরে কোনো যাত্রী আসছেন ক্যাসেট নিয়ে শ্রীরামপুরে। আর সব খবরের ক্যাসেট জড়ো হচ্ছে এই জৈনদার বুক স্টলে। ক্যাসেট এসেছে ফোনে জেনে নিয়ে ধীর পায়ে ক্যাসেট আনতে চলে যেতো আমার হুগলী ইটিভির অফিসে কাজ করা সেই সুদীপ।
 
কিছু দিন আগেও কাঠের পার্টিশন দেওয়া সেই বই এর স্টল এ বসতে শুরু করলো জৈনদার ছেলে অভিষেক। কিন্তু ধীরে ধীরে কাগজ বিক্রি কমলো স্টলে। একদিন জৈন দার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলাম বাবা কেমন আছেন। বললো বাবা ভালো আছেন বয়স হয়েছে। স্টেশনে ট্রেন ধরতে গেলে দেখতাম স্টল খুলে বিক্রির আশায় বসে আছে জৈনদার ছেলে চুপ করে। কাগজের পাশে চাকরির ফর্ম বিক্রি শুরু করা হয় এই স্টলে। কিন্তু যাই হোক সেই জৈনদার স্টল বন্ধ হয়ে গেলো আচমকাই।
কাগজের সেই গন্ধ মাখা মাখি ফাঁকা স্টল এখন নতুন ঝাঁ চকচকে খাবার এর দোকান হবে হয়তো। তেমন শোনা যাচ্ছে কিন্তু সেই পুরোনো ফেলে আসা দিনের কথা ভুলব কেমন করে।ছোটো অক্ষরে কাগজের নাম ছাপা দেখে কোনো রকমে পকেট হাতড়ে তিন টাকা বের করে সেই একপেট খিদে চেপে একটা কাগজ কিনে ঘরে ফেরা। মা, বাবা শুকনো মুখে ঘরে ভাত নেই জেনেও কেমন অনায়াসে সেই কাগজ দেখে খুশি হয়ে যাওয়া চুপটি করে। ছেলের নাম বেরিয়েছে যে কাগজে আজ। 
সত্যিই আজ সেই পুরোনো দিনের স্মৃতি জড়ানো দোকানে, ঝাঁ চকচকে নতুন রং এর প্রলেপ পড়েছে আজ। পুরোনো গন্ধ হারিয়ে গিয়ে নতুন গন্ধ পাওয়া যাবে কিছু দিন বাদেই। কিন্তু আমি আজ এই এত দিন পরেও যে সেই পুরোনো চেহারার সেই জৈন দার স্টলকে খুঁজে বেড়াই আজও। এত দিন পর মনে হয় সত্যিই কি মোহ আঁকড়ে এত গুলো বছর কাটিয়ে দিলাম আমি ভুল করে। নাকি ভালোবেসে ওই ছাপার অক্ষরের প্রেমে পড়ে কাটিয়ে দিলাম জীবনের বেশির ভাগ সময়। জানি না আজ কিছু আর জানতে ইচ্ছাও করে না আমার।
 শুধু মনে হয় যদি আবার ওই শ্রীরামপুর স্টেশনের ডাউন প্ল্যাটফর্মের জৈনদার স্টল খুলে যায একটিবার।  যদি দৌড়ে গিয়ে দেখতে পাই ছাপার অক্ষরে নিজের নাম বেরিয়েছে আবার কোনো একটা কাগজে। পকেটে টাকা না থাকলেও খুচরো পয়সা দিয়ে একটা কাগজ কিনে এক দৌড়ে মার কাছে যেতে পারতাম আবার। মা দরজা খুলে রাগী মুখে দাঁড়িয়ে থাকতো আমার সামনে। আর আমি বলতাম মা, আজ কাগজে নাম বেরিয়েছে আমার। এক নিমেষে মার সব রাগ গলে জল হয়ে যেতো।
 আকাশের জল এর ধারা আমার দু চোখে সব কিছু ঝাপসা হয়ে আসছে আমার। কোনো অক্ষর দেখতে পাচ্ছি না আর। শুধু মাত্র মার ঝাপসা মুখ আমার চোখের সামনে ভাসছে। আর দু চোখ বেয়ে নেমে আসছে জলের ধারা। না, কোনো নামের মোহ নয়। ছোটো ছোটো ভালোবাসা যেনো আকাশ থেকে গলে গলে জল হয়ে পড়ছে টুপ টাপ করে। আমি ভিজে যাচ্ছি অবিরাম। আজ এত দিন পর বৃষ্টিতে ভিজতে বড়ো ভালো লাগছে আমার।

জৈনদার বুক স্টল - অভিজিৎ বসু।
তেসরা জুলাই, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...