সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ফিরে পেলাম কালো ডায়েরী

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ ঘরে ফেরা সেই কালো ডায়েরীর কথা। যে কালো রঙের ডায়েরীর অনেক গল্প বলা আমার বাকি আছে। যাকে হারিয়ে আমি কিছুটা মনমরা হয়েই ছিলাম বেশ কিছুদিন ধরে। অবশেষে আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে তার সাহায্যে নিয়ে আজ ফিরে পেলাম তাকে। নিজের ঘরে নিয়ে এলাম তাকে।

আসলে হারিয়ে যাওয়া মানুষকে ফিরে পেলে যেমন আনন্দ হয় আজ সেই কালো ডায়েরীকে ফিরে পেয়ে আমার মনটা কেমন খুশীতে ভরে উঠলো। এর সাথে কত যে নিগূঢ় সম্পর্কের বন্ধনে বাঁধা পড়েছিলাম আমি একসময় সে কথা আর আপনাদের বোঝাই কেমন করে। কিছু নিজের কথা, মনের গভীর গোপন কথা, ফাঁস নাই বা করলাম কি বলুন।

আমি শুধু এটা জানি যে এই ডায়েরীর পাতায় লেখা কিছু নাম, কিছু নম্বর আমার একসময়ের স্থবির জীবনে একটা গতি এনে দিয়েছিল। যে গতিময়তা জীবনের একমাত্র ধর্ম। যে গতি নিয়েই মানুষ বেঁচে থাকে। বাতিলের দলে জায়গা নেওয়া বা সমঝোতা না করে শিরদাঁড়া সোজা রেখে চলার খেসারত দিতে দিতে হঠাৎ আচমকাই আমাকে একটা কাজের সুযোগ করে দেন আমার এক প্রাক্তন দীর্ঘ দিনের এক সময়ের বন্ধু। যার জন্য আমি তাঁর কাছে আজও কৃতজ্ঞ। আজ হয়তো আর সে বন্ধু নেই আমার। তবু কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি আমি সেই সময় আমায় কাজের সুযোগ করে দেবার জন্য।

 সেই সূত্রে কলকাতার এক বড়ো মাতব্বর যার আমায় দেখে মনে ধরেনি তার হাত থেকে সেই সুযোগ কেড়ে নিয়ে আমি আর আমার সেই বন্ধু ঝাঁপিয়ে পড়ি। বহুদিন সাইড লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা বাতিল খেলোয়ার মাঠ পেলে, বল পেলে যেমন দৌড় শুরু করে ঠিক তেমনি করেই আমি আমার দৌড় শুরু করি। আর এই দৌড় দেখে কলকাতার একসময়ের সেই দাপুটে বাঘে গরুতে যার নামে একসাথে জল খাওয়া সেই সাংবাদিক। হোয়াটসঅ্যাপ কল করে আমায় বলেন সব লোককে ডেকে ডেকে কাজ দিচ্ছিস, তুই তো বড়ো মাতব্বর হয়ে গেছিস রে।

 বরাবরের ডাকাবুকো আমি সেই কথায় কান দিতে পারি নি। আমার মনে হয়নি যে আমি কোনো বড়ো অপরাধ করছি কাউকে কাজের সুযোগ দিয়ে। আমার একটাই ইচ্ছা ছিল যে নাম না জানা অজানা প্লেয়ারও খেলতে পারে সুযোগ পেলে সেটাই দেখিয়ে দেওয়া এই সব তথাকথিত মাতব্বরদের। আর সেই কাজে আমি সফল হলাম অনেকটাই। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে কলকাতা, জেলা, গৌহাটিতে লোক নিয়োগ করা গেলো। আর সেই সব লোকের নাম, ফোন নম্বর সব লেখা হলো এই কালো ডায়েরীতে। তাই এই ডায়েরী আমার বড় প্রিয়। 

যে জিনিসটা আমার স্থবিরতা কাটিয়ে আমায় রাস্তায় হাঁটতে শিখিয়েছে নতুন করে। যে আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে অন্যকে কাজ পাইয়ে দেবার সুযোগ করে দিয়েছে। যার জন্য আমি কৃতজ্ঞ থাকব সেই চ্যানেলের মালিকের কাছে। যিনি আমাকে সেই কাজের সুযোগ দিয়েছিলেন। যে গুরু দায়িত্ব পেয়ে আমি কাজ করতে সচেষ্ট হয়েছি। সেই আস্থা, বিশ্বাস নিয়েই আমায় সেই সময় ভরসা করেছেন তিনি। 

আজ এতদিন পরে তাকে ফিরে পেয়ে সেই কালো ডায়েরীর সামনে দাঁড়িয়ে এই কথার স্মৃতিচারন করতে বড়ো ভালো লাগছে আমার। আজ হয়তো আমি সেখানে নেই। থাকার মতো পরিস্থিতি ছিল না বলেই হয়তো আমায় ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য করা হয়েছে। সে প্রসঙ্গে নাই বা কিছু বললাম এই পর্বে। তবু আমি এটা জানি যে একজন মেসি, রোনাল্ডো, আর জিদান এর কাছে একটি উয়াড়ী দলের অনামী এক বাতিল খেলোয়াড় অনবদ্য খেলা খেলে জিতে মাঠ ছেড়েছে। মাথা উঁচু করে মাঠ ছেড়েছে সে। সে পালিয়ে যায়নি মাঠ ছেড়ে ভয় পেয়ে। 

সে অন্তত আর যাই করুক কিছু লোকের পেটে দুটো ভাত এর ব্যবস্থা করেছে। আর যাই হোক সে অন্ততঃ যে মাঠে খেলোয়ার এর অভাবে খেলা শুরু করা যাচ্ছিল না কোনোমতেই বহুদিন ধরে। সেই মাঠে কিছু খেলোয়ারকে জোগাড় করে খেলা শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে। যা অনেক বড় মাতব্বররা তাদের কেরামতি দেখাতে পারেনি নিজেদের ক্ষমতা দেখিয়ে। আর তাই এই রাতের বেলায় কালো ডায়েরীর সামনে দাঁড়িয়ে মনে মনে তাকে প্রনাম জানিয়ে বলি আমি নয়,আমার কেরামতি নয়, সব ওপর ওলার আশীর্বাদ আর তাঁর ইচ্ছায় এসব সম্ভব হয়েছে। 

জীবনের এই দীর্ঘ তিন দশকের বেশি যে মাঠের গন্ধ গায়ে মেখে ঘুরে বেরিয়েছে। সে জানে, সে চেনে, কোন মাঠে কোন খেলোয়ার দিয়ে খেলালে প্রতিপক্ষর সাথে লড়াই করা যায়। খেলা শুরু করা যায়। আমি একজন ছোটো খেলোয়ার হয়ে সেই কাজটাই করেছি মাত্র। এর বেশি কিছুই করিনি আমি। আমি বড়ো মাতব্বর নই। আমি তথাকথিত বড়ো চেহারার মাতব্বর সাংবাদিক নই। একজন ছোটো গ্রামের মেঠো সংবাদ মাধ্যমের কর্মী হিসেবে এটাই বলতে পারি যেনো আমি এই ভাবেই কাটিয়ে দিতে পারি জীবনের বাকি দিন গুলো।

 অহংকার, দম্ভ, আত্মম্ভরিতা যেনো না আসে আমার মনে। মানুষকে ভালোবেসে তাদের কাছে নিয়ে যেনো এই ভাবেই কাটিয়ে দিতে পারি জীবনের বাকি কটা দিন। আর যদি উপকার এর কোনো সুযোগ পাই তাহলে কোনো হিসেব নিকেষ না করে সেই সুযোগ এর সদ্ব্যবহার যেনো করতে পারি আমি। যাতে অভুক্ত মানুষের একটু উপকার হয়। ভগবান এর কাছে আমি এটাই চাইবো। সাদা জীবনের কালো কথায়  আমার কালো ডায়েরিকে ফিরে পেয়ে আজ সত্যিই খুব খুশি আমি। 

ফিরে পেলাম কালো ডায়েরী - অভিজিৎ বসু।
ছয় জুলাই, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...