সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বোকার কথা

আজ সাদা জীবনের কালো কথায় বোকার কথা। যে সারা জীবন বোকা হয়ে বেঁচে রইলো আমাদের এই চালাক সমাজে। চালাক হতে শিখল না কিছুতেই গোটা জীবনভর। চালাকি করে জীবনের রাস্তায় হাঁটতে নেমে ঠোক্কর খাবার আগেই সে ছোটো বয়সেই জেনে গেছে যে বোকা হয়ে বাঁচায় কোনো লজ্জা নেই তার।

 তার বাবার মত বোকা মানুষকে সবাই ঠকিয়ে চলে গেলেও সে যেনো কাউকে না ঠকায় এই জীবনে। এই জীবন দর্শন নিয়েই যেনো জীবনভর বেঁচে থাকতে পারে সে। বীরভূমের লাভপুরের শীতল গ্রামের ছোট্টো ছেলে রিক এর জীবনের দর্শন এটাই। 

যার মুখে সারল্যের অমলিন হাসি। দু চোখে কেমন উপচে পরা মায়া মেদুর দৃষ্টি। রোদ মাখা হাসিতে ওর দুটো গজ দাঁতে উপচে পড়ছে  চরম আত্মবিশ্বাস আর ভরসা। যে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলে আমাদের লজ্জা হয়। কিছুটা বোধ হয় ভয়ও হয়। আসলে সেই বারো বছরের বিক্রমকে ভয় পেয়ে ছিলেন আচার্য মশাই। যে বিক্রমের চোখের  সরল দৃষ্টিতে জ্বলে পুড়ে ছার খার হয়ে মারা গেলেন। তেমন অবস্থা হয়েছে ঠিক ওই ছোটো রিকের কথা শুনে। আজ এই রিকের কথা শুনে কাগজে ওর ছবি আর লেখা দেখে কেমন বোধ হয় স্বাভাবিক ভাবেই ভয় পেয়ে গেছে এই চালাক চতুর সমাজে বাস করা সব মানুষজন।

রিকের বাবা পেশায় দিনমজুর। মা ঘর সংসার সামলান। ঘরে অভাব ওদের নিত্য সঙ্গী।  কিন্তু সব কিছুর পরেও ওই ছোট্ট ছেলের চোখে মুখে একরাশ বিস্ময় প্রকাশ পায়। যখন তাকে স্কুলের মাস্টার জিজ্ঞাসা করেন, সে বড়ো হয়ে কি হতে চায়। সবাই বলে কে কি হতে চায়। জীবনের ছোটো কালের স্বপ্ন দেখা সেই সব পড়ুয়ারা সবাই যে যার নিজের মনের কথা বললেও ছোট্ট রিক বলে ফেলে, সে বোকা হতে চায় বড়ো হয়ে।

 আর এতেই একদম হৈ চৈ পড়ে গেছে চারিদিকে গোটা সমাজ মাধ্যমে। সত্যিই অসাধারন কথা বলেছে ওই ছোটো রিক। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার নয় বিশাল বড়ো মাপের কোনো মাতব্বর মানুষ নয়। যার কথায় একদম হেলে পড়বে গোটা সমাজ তা নয়। 

একদম বোকা সোকা একটা মানুষ হতে চায় সে। যাতে সে অন্যকে না ঠকায় কোনো দিন জীবনে।  রিক খুব স্বাভাবিক কথাই বলেছে। একদম সোজা সাপটা একটা নির্মম সত্যি কথা সে বলে ফেলেছে। যা সপাটে চড় বসিয়ে দিয়েছে আমাদের এই চালাক চতুর সমাজে বাস করা সব দু পেয়ে জীবদের গালে ঠাস করে। আর তাতেই বোধ হয় আমরা সবাই হৈ হৈ করে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছি। 

আমরা সব ওর কথা শুনে কেমন যেন হয়ে বোকাই গেছি। তাই বোকা হয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা মানুষদের ভাবছি। এই রে এরা সব কি যে বলে কে জানে। এমন কেউ হয় নাকি। বোকা হয়ে কেউ বাঁচে নাকি। জীবনের রাস্তায় হাঁটতে নেমে একে অপরকে টেক্কা দিয়ে মই থেকে ঠেলে ফেলে দিয়ে এগিয়ে চলে যাবো সেটাই তো স্বাভাবিক নিয়ম জীবনের।

 সেখানে এই ভাবে বোকা সোকা একটা মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার কি কোনো যুক্তি আছে। কে জানে আসলে অমলকান্তি, রিক এরা বোধ হয় জীবনের নিয়ম অনুযায়ী মেপে মেপে পা ফেলে চলে না একদম কোনোদিন তারা এই ভাবে চলতে জানে না। তাই ওরা সব সময় জানে যে বোকা হয়ে বাঁচায় যে আনন্দ আছে সেটা বোধ হয় চালাকি করে বাঁচার মধ্য সেই আনন্দ মেলে না কোনো দিন। তাই রিক বলতে ভয় পায় না, দ্বিধা করে না সে বোকা হতে চায়। এটাই আসল কথা।

যাকে নিয়ে আমরা এত হৈ হৈ করছি সেটা বলতে গিয়ে রিক হোঁচট খায় না একদম। সে সবার সামনে জোর গলায় বোকা হবার কথা ঘোষণা করতে পারে নির্দ্বিধায়। যা শুনে স্কুলের মাস্টার মশাই অবাক হয়ে যান। আমরা অবাক হয়ে যাই। রিক কিন্তু অমলকান্তির মতই ভালোবাসা জড়ানো গলায় বলতে পারে আমি বোকা হতে চাই। যা বলতে বুকের পাটা লাগে। 

আমার বেশ ভালই লাগলো রিকের এই কথা শুনে আজ। মনে হয় আমার সত্যিই তো বেশ ভালই তো, না হয় চালাক হতে পারলাম না কোনো দিন আমিও। বোকা হয়েই বেঁচে রইলাম জীবনের বাকি কটা দিন। পরিবারের সবার কাছে, বন্ধু মহলে, আত্মীয় স্বজন মহলে, কর্ম ক্ষেত্রে না হয় আমি বোকা হয়ে বেঁচে রইলাম। ক্ষতি কি বলুন। বোকা হয়ে বাঁচায় তো কোনো লজ্জা নেই।

বোকা - অভিজিৎ বসু।
তিরিশে মার্চ, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...