রথে জিলিপি আর পাঁপড় ভাজা খেলাম বোলপুরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে রতনপল্লীতে। রাস্তার পাশে মোড়ের মাথায় পরপর দুটি ঠেলা করে দোকান বসেছে। মা আর মেয়ের দোকানে গরম জিলিপি দেখে দাঁড়িয়ে পড়লাম আমরা। পাঁচ টাকা করে জিলিপি আর পাঁপড় ভাজা খেলাম বেশ ভালই লাগলো। এই রতনপল্লী আমার বড়ো প্রিয় জায়গা।
আসলে হৈ হৈ করা রথের দাপট নেই এই শহরে। তবু ছোটো বড়ো নানা মাপের রথ বেরিয়েছে রাস্তায়। আর এই রথের রশিতে টান দেবার দিন থেকেই তো কাউন্ট ডাউন শুরু হয় দুর্গাপুজোর। বড়ো বড়ো মিষ্টির দোকানে জিলিপি নেওয়ার লম্বা লাইন দিতে হচ্ছে কুপন নিয়ে। আমাদের অবশ্য সেই কুপন নেওয়ার কোনো বালাই নেই। আসলে এই দিন সবাই মজা করতে পথে নেমে পড়েছেন। আট থেকে আশি। আমিও পঞ্চাশ পার করে ওদের দলে ভিড়ে গেলাম কিছু সময়ের জন্যে। টাইম মেশিনের কাঁটা ঘুরে গেলো কেমন করে নিজের অজান্তেই।
ছোটো বেলায় এই দিনে বাড়ির কাছের শ্রীরামপুর মহাপ্রভুর বাড়ির সামনে গঙ্গার ধারে রথ টান হতো। রথের উপর থেকে রাস্তায় বাতাসা আর কলা ছুঁড়ে দিত। আর আমরা হুমড়ি খেয়ে সেই বাতাসা কুড়িয়ে দিদা, দাদুর হাতে দিতাম। এটুকু মনে পড়ে আজ এই পঞ্চাশ বছরে। পরে বুটাও তার দিদা আর দাদুর হাত ধরে এই রথ দেখেছে বহু দিন। একটু দূরে মাহেশ হলেও সেখানে যাবার ছাড়পত্র মিলতো না ছোটো বেলায় আমার কোনো দিন। পরে বড়ো হয়ে খবরের কাজের সূত্রে মাহেশ এর রথ দেখতে যেতে হয়েছে আমায়।
সেই রথের মেলায় ইটিভির আশীষ ঘোষদার কথায় রাধারাণী খোঁজার নির্দেশ দেন আমায় তিনি একদিন কলকাতা অফিস থেকে ফোন করে। দু হাজার এক সাল হবে, সেই সময় আমার সাথে আমার ক্যামেরা ম্যান ছিল সৌরভ বন্দোপাধ্যায় বর্তমানে সে এবিপি আনন্দতে কাজ করে। তাকে নিয়ে সেই রাধারাণীকে খুঁজে পাওয়া গেছিলো মাহেশের রথের মেলা এলাকায় ঘুরতে ঘুরতে। তারপর তাকে নিয়েই খবর করা, তার ছবি তোলা, রথের দিন সন্ধ্যায় তার ছবি তার গল্প দেখানো হলো ইটিভির জেলার খবরে। সেই মেয়েটির বাবা রিক্সা চালক তার পা ভাঙা। আর তার মা লোকের বাড়ী কাজ করেন।
সেই মেয়ের রথের মেলায় ফুল, কলা বিক্রির গল্প। যে গল্প ইটিভির আমার বাংলায় দেখানো হলো এমন এক রথের দিন সন্ধ্যায়। আজ এত বছর পরেও আমার সেই কথা মনে পড়ে যায়। আসলে জীবনের এই সব গল্প, কাহিনী সারা জীবন মনে থেকে যায়। এই রথের দিনেই তো আমার বুটাকে কাঁধে চাপিয়ে সমীরন পাল আমার এক সময়ের সহকর্মী মাহেশের রথের মেলা ঘুরিয়েছিল এমন এক রথের দিনে।
প্রতিবছর এমন রথের ভীড়ে অফিসের কাজ সেরে খবর করে মেলার ভীড়ে পরিবার নিয়ে হারিয়ে যেতাম আমরা তিনজনে। মাহেশের মেলার কাদা মাখা মাঠে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা ছিল। আজ সেসব দিন নেই অতীত তবু তার জাবর কাটতে বেশ ভালোই লাগছে। বোলপুরের রাস্তায় সাইকেলে করে ঘুরতে ঘুরতে নানা ধরনের রথ দেখে, রাস্তায় ভীড় দেখে মনে পড়ে গেলো সেই সব কথা।
আসলে জীবনের এই অতীত দিনের গতিময়তা আমাকে আনন্দ দেয়। মনে করিয়ে দেয় জীবনের ফেলে আসা দিনের কিছু ভালো সুখের স্মৃতি। যার আবেশে ডুব দিতে আমার বেশ ভালো লাগে। তাই আজ রথের সন্ধ্যায় রথের অন্যতম পীঠস্থান হুগলী জেলা থেকে অনেক দূরে থেকেও মনে পরে গেলো সেই জেলার কথা। সেই জেলার মানুষদের কথা।
যে জেলায় আমি জন্মেছি , ছোটো থেকে বড়ো হয়েছি, আমার অতীত,বর্তমান ভবিষ্যৎ যে জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আজও। জীবনের এত গুলো বছর কাটিয়েছি আমি এই জেলায়। তাই রথের দিন সন্ধ্যায় সেই সব কথার স্মৃতিচারণ করলাম।
রথের দিনের স্মৃতি চারণ - অভিজিৎ বসু
সাত জুলাই দু হাজার চব্বিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন