আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমি সাধারণত রাজনীতির পঙ্কিল আবর্তের মধ্যে ঘুরে বেড়ানো মানুষদের কথা খুব একটা লিখিনা। আসলে কি মন থেকে তাদের কথা লেখার ইচ্ছাও জাগে না আমার। দু একটা ব্যতিক্রমী চরিত্র ছাড়া যেমন আকবর দা তাঁর কথা লিখে আনন্দ পেয়েছি আমি। এমন মানুষ ছাড়া অন্য সব রাজনীতির মানুষদের কথা বলার ইচ্ছাও হয় না আমার। কি বলবো, আর কি লিখব সব চারিদিকে আত্মসর্বস্ব সব মানুষজনের ভীড় উপচে পড়ছে চারিদিকে রাস্তাঘাটে।
আসলে সাংবাদিক হিসেবে মনে হয় যে আমার রাজনীতি তো রাজার নীতি। সেই নীতি তো জন সাধারণের উন্নয়নের জন্য কাজ করার নীতি। আর সাধারণ দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের একটু পাশে দাঁড়িয়ে থেকে একটু সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দেওয়া। এটাই তো রাজনীতির ময়দানে ঘুরে বেড়ানো লোকদের থেকে চায় সাধারণ মানুষজন। যারা হয় তো ভয় পায় কাছে ঘেঁষতে এই সব নেতাদের দুর থেকে কাচু মাচু মুখে দাঁড়িয়ে থাকে হাত জোড় করে। যদি একটু হেসে জিজ্ঞাসা করে নেতা কিরে কিছু বলবি তুই।
একটু হেসে কথা বলবে, ঘরের খবর নেবে, পেটের ভাত জোগাড় হয়েছে কি না জানবে, ছেলে মেয়ের পড়া চলছে কি না সেটা নিয়ে আশ্বাস দেবে। সেই ধরনের নেতা, মন্ত্রী, সান্ত্রী আজকাল খুব কম দেখা যায় রাস্তাঘাটে। রাজনীতির এই চোরা স্রোতে এখন শুধুই ভালবাসার কোনো স্পর্শ নেই। শুধু নিজের আখের গোছানোর পালা আর রাত দিন দরজা বন্ধ করে তার হিসেব নিকেশ করা।
তাই এসব দেখে আমার আর ওই সব মানুষদের কথা বলতে বা লিখতে ইচ্ছা জাগে না। কিন্তু এসবের মাঝেও যে কিছু রাজনীতির মানুষ আকবর আলি খোন্দকার এর মতো না হলেও তাঁর যোগ্য শিষ্য বা উত্তরসূরি হিসেবে ছাতার মতো নীরবে চুপ চাপ কাজ করে যায় দিন রাত। যে খুব গরীব পরিবার থেকেই ঊঠে এসেছিল এই ময়দানে।
রাতে খাওয়া না হওয়া যে মানুষটি রুটি কিনতে পারে না সেই হকার কে রুটি কিনে দিয়ে হাসি মুখে বিদায় দিয়ে বলে এই নে দুশো টাকা রাখ কাল বাজার করবি। আবার কারুর ছেলেমেয়ে পড়ার জন্য বাইরে চলে গেছে মনে করে মাসে মাসে টাকা পাঠিয়ে বলে যেনো পড়া বন্ধ না হয় কোনো ভাবেই দাদা তুমি চিন্তা করো না আমি আছি দাদা। আর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ওষুধ কিনতে না পারা সেই বাড়ির লোকের পাশে দাঁড়িয়ে ওষুধের দোকানে ফোন করে বলে দেয় সব ওষুধ দিয়ে দিতে কোনো টাকা যেনো না নেওয়া হয়।
আবার সকাল বেলায় কারুর জীবনের সবথেকে কাছের প্রাণের বাবা-মা মারা গেলে তার পকেটে টাকা গুঁজে দেয়। মাকে দাহ করার অর্থ না থাকলে ঘুম থেকে উঠে এসে পকেটে টাকা গুঁজে দিয়ে বলে দাদা আমি আছি তুমি চিন্তা করো না কোনো। এই মানুষ নেতাকে নিয়ে কিছু কথা লিখতে ইচ্ছা হয় আমার। যার কথা এই সাদা জীবনের কালো কথা নয় ভালো কথায় লিখতে ইচ্ছা হয়। যে কথা আমায় বার বার এই স্বার্থপর যুগেও বিমোহিত করে। এমন হয় এই আমলেও।
আসলে সাংবাদিক হিসেবে আমি মনে করি নেতা, পুলিশ, সাংবাদিক আমরা যাই হই। সেটা সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কিছু উপকার করার জন্য চেষ্টা করা উচিত। শুধু নিজের আখের গোছানোর জন্য এই সব পেশায় কাজ করা নয়। যে ব্যক্তি এর বাইরে বেরিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে এমন করে সব সময় আমার,আপনার পাশে দাঁড়িয়ে আশ্বাস দেন তাঁর কথা না লিখলে আমি অপরাধ করবো।
তাই আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় এমন এক আমার বন্ধুর কথা বলব আজ যার সাথে আমার প্রায় তিরিশ বছরের সম্পর্ক। যে সম্পর্কের রাস্তায় লেনা দেনা, পাওনা গণ্ডার কোনো হিসেব নেই। শুধু এটাই আছে যে এই মানুষটার কাছে দরকার হলে আমি যখন তখন ফোন করতে পারি। বলতে পারি দাদা এটা আমার দরকার একটু হেল্প করে দেবে। বা ওই লোকটা তোমায় বলতে পারছে না ভয় পেয়ে একটু অ্যাম্বুলেন্স বলে দেবে অসুস্থ মানুষকে হাসপাতাল নিয়ে যাবে কিন্তু ওর অর্থ নেই। এর জন্য কোনো সঙ্কোচ বোধ, লজ্জা, আর দ্বিধা হয়না আমার। আমি জানি সেটার জন্য সে মনে করবে না আমি একজন ধান্দাবাজ সাংবাদিক।
যার জন্য এত গুলো কথা বললাম মুখবন্ধ লিখতে বাধ্য হলাম সে আর কেউ নয় আকবর আলী খোন্দকার এর সুযোগ্য শিষ্য। তাঁর আদর্শের তাঁর ঘরানার সেই ধারাকে অব্যাহত রাখা সেই নেতা দিলীপ যাদব। বর্তমানে উত্তরপাড়া পুরসভার পুরপ্রধান। একসময় যে জেলার সভাপতি, জেলার ট্রেড ইউনিয়নের কর্তা থেকে শুরু করে অনেক দায়িত্ব সামলেও মাটির রাস্তাতে হেঁটে চলে ঘুরে বেড়িয়েছেন সব সময় হাসি মুখ নিয়ে। যাকে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে সাধারণ মানুষের কথা শুনে তার সমাধান এর পথ বাতলে দেন তিনি হাসি মুখে। তার ভয়ে ল্যাজ গুটিয়ে পালাতে বাধ্য হয়না কেউ।
আসলে কি জানেন হাজার স্বার্থপর, আত্মস্বার্থী মানুষের মাঝে একটু অন্যরকম বলে এত গুলো শব্দ খরচ করে ফেললাম ওর জন্য। হয়তো ওর ভালোর মাঝে নিন্দুকেরা বলবেন ওর খারাপ দিকের কথা। এই বলে আমায় তেলবাজ, ধান্দাবাজ সাংবাদিক বলবেন। যদিও তাতে আমার কোনো ক্ষতি নেই। শুধু এটা বলবো এই ভাবেই যেনো সুস্থ থেকে সাধারণের মুখে হাসি ফোটাতে পারো দিলীপদা। এটাই তো রাজনীতির আসল পথ। যে পথে শুধু নিজের সম্পদ অনুসন্ধানে ব্রতী হওয়া নয়। যে পথে শুধু নিজে ভবিষ্যতে ভালো থাকার জন্য টাকা কামিয়ে যাওয়া নয়। এর বাইরেও একটা জগৎ আছে যে জগতে এই ভাবে অপরের কথা ভেবে বেঁচে থাকার সুখ, অনুভূতি আলাদা।
সে যাই হোক দিলীপ যাদব এর সাথে পরিচয় কবে মনে নেই আজ হয়তো। তবে জেলায় খবরের কাজ এর সূত্রে নানা খবর দেওয়া থেকেই জেলা সাংবাদিক এর সাথে আলাপ। ওর সেই ভাঙা মোটর সাইকেল নিয়ে আকবর দা কে পাশে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো দিলীপ যাদব এর। যাদের কাছে সেইসময় পঞ্চাশ টাকা খরচ করে তেল ভরার অবস্থা ছিল না। সারাদিন পেটে গামছা বেঁধে রাজনীতির নেশায় এদিক ওদিক ঘুরে দিন কেটে যেতো যাদের। এই ভাবেই তো রাজনীতির পাঠশালায় হাতে খড়ি ওর। যার রাজনীতির গুরু আকবর দা। সেটা আজও স্বীকার করে সে একবাক্যে।
তবে যে ঘটনা আজ মনে পড়ে গেলো সেই সিঙ্গুরের কারখানা তে লোক কাজে যাবার সময় ভয় দেখিয়ে বৈদ্যবাটিতে মিছিল করে টাটার লোকদের হঠিয়ে দেওয়ার ঘটনা। সেই ছবি ইটিভি করেছিল প্রথমে। আর পুলিশ এর চোখে ধুলো দিয়ে জাল দিয়ে ঘেরা টাটার জমিতে পুলিশ কে এড়িয়ে তৃণমূলের পতাকা আটকে দেওয়া। সাথে ছিলেন সেই সময় সঞ্জয় বক্সী। এই ছবিও ইটিভি করতে পারে সবার আগে দিলীপদার সৌজন্যে। পুলিশ ও তাতে চাপে পড়ে যায় কিছুটা।
আসলে রাজনীতির লোকদের চাপে রেখে নিজের আখের গোছানোর উদ্যোগ কম নিয়ে দলের জন্য ভাবা কাজ করা, দলের সংগঠনকে শক্তিশালী করার যে সদিচ্ছা ছিল সেকালের নেতাদের। সেটা আজকাল খুব কম দেখা যায় এই আমলের নেতাদের মধ্য।আর তাই বোধহয় আমিও আর সেই সব কথা লিখতে চাই না বেশি। কি হবে লিখে, বলে, বদল হবে না কোনোদিন এরা।
আসলে সেই সিপিএম আমল থেকে যে লড়াই সংগ্রাম করে নেশায় বুদ হয়ে রাজনীতি করে গেছে যারা। আজ তারা সেই রাজনীতিতেই পিছিয়ে পড়েছে ধীরে ধীরে। বেমানান হয়ে গেছে সেই দলের অন্য সব উঠতি নেতাদের কাছে। যারা এখন দলের সুসময়ে সম্পদ হয়ে গেছেন দলের কাছে। আর সেই ভাঙা মোটর সাইকেল নিয়ে হুগলীর গ্রাম গঞ্জে ঘুরে বেড়ানো নেতা রাস্তার একপাশে হাসি মুখে অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছেন। কখন কেউ এসে বলবে দাদা একটু কথা ছিল, দরকার ছিল। বলে একপাশে গোপনে আলাদা করে তার কথা শুনে বলবে চিন্তা করো না কোনো।
সেই উত্তরপাড়া বইমেলার কোথাও ভোলা যাবে না কোনোদিন। যেখানে কত বাধা বিপত্তি পার করে সেই বইমেলা আজও চলছে। হয়তো রাজনীতির সিঁড়ি দিয়ে চড় চড় করে উত্থান হয়নি দিলীপ যাদবের অন্য নেতাদের মতো। হয়তো বিধায়ক, সাংসদ, মন্ত্রী হওয়া হয়নি তাঁর আজও। কিন্তু এসব না হয়েও সারাদিন মানুষের পাশে থেকে আর টোটো টোটো করে ঘুরে বেড়িয়ে বেশ ভালই আছেন তিনি।
বিন্দাস জীবন নিয়ে বেঁচে আছেন তিনি হাসি মুখে পাঞ্জাবি পরে। যে ছবিটা দেখে আজ আমার কিছু কথা লিখতে ইচ্ছা হলো। হয়তো পরে আরও কথা লিখবো সুযোগ পেলে কোনো দিন। কিন্তু আজ শুধু পাঞ্জাবি পরা তোমার ওই হাসি মাখা মুখ দেখেই মনে হলো সাদা জীবনের কালো কথায় রাজনীতির পঙ্কিল ঘূর্ণাবর্তের মাঝে তুমি একটু আলাদা হয়েই থাকো। যাতে আমার মত আর পাঁচটা সাধারণ মানুষেরা তোমার কাছে আসতে পারে কাছে ঘেঁষতে পারে আর তাদের সুখ দুঃখের কথা বলতে পারে। ভালো থেকো দিলীপদা।
ভালো থেকো দিলীপদা - অভিজিৎ বসু।
সতেরো জুলাই, দু হাজার চব্বিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন