সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

স্বপ্নের কারিগর

সাদা জীবনের কালো কথায় এক নাম পরিচয় না জানা এক যুবকের জীবনের লড়াই এর কাহিনী। যে কাহিনী আমার সবটা কেনো কিছুই জানা নেই তার বিষয়ে। তবু আজ সন্ধ্যায় শ্রীরামপুর স্টেশন এর তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের ভীড়ে আমি দেখলাম তাকে। নীল প্যান্ট পরা পা ওই যুবক বা ছেলেটি পা টেনে টেনে এগিয়ে চলেছে ভীড় ঠেলে কোনো রকমে। কোনো ট্রেন ধরবে হয়তো সে।

 দুটো পা গোড়ালি থেকে নেই তার। মুখের হাসিটা মিলিয়ে যায়নি তার এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতায়। হাঁটুর ওপর ভর করে অবলীলায় এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে সে। এদিক ওদিক থেকে শুনতে পেলাম ট্রেনে কাটা পরে ওর পা দুটো কাটা পড়েছে বেশ কিছুদিন আগে। ছেলেটির বাড়ী সিঙ্গুরে। খুব ভালো ছেলে সে।এটাই জানলাম প্ল্যাটফর্মের দোকানদারদের কাছ থেকে।

 সন্ধ্যার সময় বেশ ভীড় প্লাটফর্ম। হাওড়া স্টেশন থেকে সন্ধ্যা ছটা চল্লিশ মিনিটের তারকেশ্বর লোকাল ধরে বাড়ী ফিরবে সে। ভীড় ঠেলে এদিক ওদিক করে ঠিক কি সুন্দর করে ব্যালেন্সের খেলায় ছেড়ে দেওয়া ট্রেন এর হাতল ধরে টুক করে ট্রেনের কামরায় উঠে পড়ল সে আমার চোখের সামনে। না আমায় ক্যামেরাবন্দী করার কোনো সুযোগ না দিয়েই। সত্যিই তো কি সুন্দর ব্যালেন্স ওর।

শুধু একটা ওর কথা কানে বাজছে আমার, কি ভাবছো তোমরা সবাই, আমি আর দাঁড়াতে পারবো না কোনো দিন নিজের পায়ে। ঠিক দাঁড়াবো দেখো তোমরা। নকল পা জোগাড় করতে চেষ্টা করছি বনহুগলী যাচ্ছি আমি। ওরা পা তৈরি করে দিলেই আমি সেই নকল পা পরে দেখবে কেমন হেঁটে হেঁটে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াবো। আবার কাজ করব। এই বলেই টলমল হাঁটুর ওপর ভর করে চলে গেলো ওই নাম না জানা যুবক। আমি কেমন স্থবির হয়ে ওর চলে যাওয়া দেখলাম প্লাটফর্মে  দাঁড়িয়ে একা একা। 

সত্যিই তো জীবনের এই ব্যালেন্সের খেলায় আমরা যে যত পারদর্শী সে ততই ভালো জীবন কাটিয়ে দিতে পারছি। আর যে পারছে না সে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে। সমাজ, সংসার, বন্ধু, আত্মীয়স্বজন সবার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এটাই তো জগতের নিয়ম। কিন্তু ওই ছেলেটির আবার নকল পা জোগাড় করে আবার নতুন করে দাঁড়িয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখা দেখে আমার বেশ ভালো লাগলো এই ভর সন্ধ্যায়। 

আমার মনে হলো হেরে গেলেও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখা ভালো তাহলে। যে স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি আমি, আপনি সবাই। কুরুস কাঁটা দিয়ে স্বপ্নের জাল বুনে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখায় তো কোনো অপরাধ নেই বলুন। সেই স্বপ্ন সত্যি হোক, সফল হোক বা বিফল হোক। জীবনের এই মোরাম রাস্তায় হাঁটতে নেমে ভীড় উপচে পড়া প্লাটফর্মে এমন ঘুরে দাঁড়ানোর ঘোষণা কে আর বুক বাজিয়ে করতে পারে বলুন। 

সত্যিই নিজেকে ওই ছেলেটার কাছে কেমন যেনো অনেক ছোটো মনে হলো আমার। ওর আত্মবিশ্বাস, ওর এই সগর্বে ঘোষণা শুনে মনে হলো এমন ভাবনা, এমন আত্মবিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে আমি কেনো পারি না কে জানে। সব থেকেও কেনো যে আমি এমন ভাবে আমার কিছুই নেই বলে হা হুতাশ করি কেনো কে জানে। একাই দাঁড়িয়ে রইলাম ওই চলে যাওয়া ট্রেনের ফাঁকা প্লাটফর্মের উপর চুপ করে। যে পথ ধরে ওই ছেলেটি চলে গেলো সেই অন্ধকার রেল লাইনের দিকে তাকিয়ে রইলাম আমি একদৃষ্টে। যেখানে হারিয়ে গেছে ওই স্বপ্নের কারিগর।

স্বপ্নের কারিগর - অভিজিৎ বসু।
পাঁচ জুলাই, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...