আজ সাদা জীবনের কালো কথায় রাজনীতির ময়দানে এমন এক বর্ণময় নেতার কথা বলবো যার নাম বাংলার রাজনীতিতে সবাই একডাকে চেনেন তাঁকে। যাঁর মাথায় ভর করে একের পর এক ভোট বৈতরণী নিশ্চিন্তে পার হয়ে যায় শাসক দল তৃণমূল কোনো টেনশন ছাড়াই। সেই আমাদের অতি পরিচিত অনুব্রত মণ্ডল। যাকে আমরা সবাই কেষ্ট মন্ডল বলেই জানি। বীরভূমে যার কথায় বাঘে গরুতে একসাথে জল খায়।যার কথা অনস্বীকার্য। আমাদের অতি কাছের মানুষ, কাজের মানুষ কেষ্ট দা।
এই ছবিটা পাঁচ বছর আগের ছবি। 2019 সালের লোকসভা ভোটের আগের এই ছবিটা দেখে বেশ ভালো লাগলো আমার। সত্যিই তো এই ছবিতে বীরভূমের দুই তৃণমূল প্রার্থীকে নিয়ে আমাদের সবারই প্রিয় কেষ্টদা হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছেন নিজের চিরপরিচিত স্টাইলে। সেই চির চেনা মুখে একগাল হাসি নিয়ে। যে হাসিতে ঝরে পড়ছে আত্মবিশ্বাস। আর আমাদের সবার কেষ্ট দা দাঁড়িয়ে আছেন মঞ্চে। পাশে দুই প্রার্থীকে নিয়ে শতাব্দী রায় ও অসিত মাল। দুজনে লোকসভা ভোটের তৃণমূলের প্রার্থী। বীরভূমের তৃণমূলের দাপুটে জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডল। যার নামে বাঘে গরুতে একসাথে জল খায়। আসলে অনুব্রত মন্ডল না বলে, তাকে কেষ্টদা বলাই ভালো। সবার দাদা তিনি, বল ভরসার দাদা। সে দলের হোক, বা অন্য সবার মুশকিল আসান এই কেষ্ট দাদা।
ভোটের আগে থাকতেই কেমন করে যেনো তিনি জানেন, কি করে ভোটের বাজার গরম করতে হয়। চাঙ্গা রাখতে হয় দলের নেতা আর কর্মীদের। আর তাই গুড় বাতাসা, চড়াম চড়াম আওয়াজ থেকে শুরু করে পুলিশকে বোম মারার নিদান দিয়ে ভোটের বাজার গরম করে রাখতেন কেষ্ট মন্ডল। আর সব থেকে বেশি জনপ্রিয় স্লোগান ছিল তাঁর খেলা হবে স্লোগান। যা গোটা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছিল। বিখ্যাত সেই খেলা হবে স্লোগান এখন তৃণমূলের সবার মুখে মুখে। সেই খেলার নিদান দিয়ে তিনি যুদ্ধে জিততেন হিসেব কষে, অঙ্ক কষে মেপে মেপে। যে হিসেবের কোনো নড়চড় হয়নি তাঁর। তাই তাঁর গোঁফের ফাঁকে সেই বিজয়ীর হাসিটা লেগে থাকতো বরাবর।
যদিও সেই কারণে ভোটের সময় তাঁকেও কম হ্যাপা পোহাতে হয়নি। কমিশন তাঁকে নজরবন্দি করেছে তবু তাঁর হুংকার কমেনি এতটুকুও। যদিও বীরভূমের বাঘ এখন আর আগের মত চড়াম চড়াম আওয়াজ করতে পারছেন না। তিনি আর বীরভূমের মাটিতে দাঁড়িয়ে বলতে পারছেন না যে আবার খেলা হবে। খুব জোর খেলা হবে। ভয়ঙ্কর খেলা হবে। কারণ সেই বাঘ এখন খাঁচা বন্দী।
সত্যিই তো সেই ভোটের খেলা জমিয়ে দেওয়ার মালিক বা কারিগর সেই অনুব্রত মন্ডল আজ বীরভূমে নেই। প্রায় দেড় বছর হতে চললো প্রায় তিনি তিহার জেলে বন্দী আছেন। গরু পাচার কেসে সিবিআই এর হাতে বন্দী তিনি। কিন্তু সে যাই হোক ভোটের বাজারে তাঁর মুখের সেই বিখ্যাত স্লোগান খেলা হবে, দেখা গেলো ভোট প্রচারে দেওয়ালে লেখা হয়েছে জ্বল জ্বল করছে সেটা।আর যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান উতর।
দুবরাজপুর হেতমপুরের দেয়ালে এই খেলা হবার কথা লেখা দেখে অনেকের মনে পড়ে গেছে এই খেলা হবে স্লোগানের কারিগর এর কথা। তাঁদের অতি প্রিয় দাদার কথা। যিনি রাজনীতির ময়দানে একদম বিরাট কোহলি ষ্টাইলে ব্যাট করেন। কাউকে রেয়াত করেন নি কোনো দিন। যাকে তৃণমূল নেত্রীও বলেন ওর মাথায় একটু অক্সিজেন কম যায় কিন্তু তিনিও সেই মুখ্যমন্ত্রীও বার বার কেষ্টতেই আস্থা রাখেন বিপদে আপদে সেই তাকে উদ্ধার করবেন বলে।
আর তাই বোধ হয় তিনি গ্রেফতার হবার পরেও জেলা সভাপতির পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দিয়ে অন্য কাউকে সেই আসনে বসান নি স্বয়ং মমতা। বরং পাঁচ জনের কোর কমিটি করে দিয়েছেন তিনি বীরভূম জেলায়। যারা দেখবে জেলার দলের কাজ কর্ম। তিনি জানেন কি করে ভোট বৈতরণী পার করতে হয় দলকে। খেলার মাঠে কি করে তুড়ি মেরে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে নিজের দলকে জেতাতে হয় সে কথা।
আর সেই কেষ্ট মন্ডল এখন তিহার জেলে বন্দী। তিহারে বসেই খেলা হবে। এই কথা লেখা হয়েছে বীরভূমের দুবরাজপুরের হেতমপুরের দেওয়ালে।
তাই এই বারের লোকসভা ভোটের ময়দানে নিজে হাজির না থেকেও বীরভূমের এই ভোট সেনাপতি কিন্তু এখনও অনুব্রত মণ্ডল। বীরভূমের রাজনীতির ময়দানে এখনও তিনি উজ্জ্বল হয়ে আছেন বীরভূমের মাটি থেকে অনেক দুরে থেকেও। কর্মীদের কাছে তাঁদের প্রিয় দাদা এখনোও ভোট ভগবান বলেই বিবেচিত হয়।
আর সেই ভোটের ভগবান এই বার ভোটে হাজির নেই। কিন্তু সেটা মানতে রাজি নয় দলের সাধারণ কর্মীরা। তাই তারা দাদাকে স্মরণ করে দেয়ালে লিখেছেন তিহার থেকেই খেলা হবে। আর তাতেই গোল বেঁধেছে। গরু পাচার মামলায় সিবিআই এর হাতে গ্রেফতার অনুব্রত মন্ডল। তিনি এখন তিহার জেলে বন্দী। কিন্তু সেটা মনে প্রাণে অনেকেই মানতে পারছেন না। তাই নিজেদের আবেগ আপ্লুত অনুভুতির কথা প্রকাশ করেছেন তারা। তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায় এর সমর্থনে দেওয়াল লিখতে গিয়ে লিখেছেন তিহার জেল থেকে খেলা হবার কথা। যা নিয়ে বেশ শোরগোল পড়ে গেছে ইতিমধ্যে গোটা জেলা জুড়ে।
বিজেপির কথায় প্রভাবশালী অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। অন্যদিকে তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায় এর কথায়, কর্মীদের আবেগ তো ব্যাকরণ মেনে চলে না। তৃণমূল প্রার্থীর শতাব্দীর কথায়, দেওয়াল লিখন ব্যাপারটাই বুথের কর্মীদের উপর নির্ভর করে। বীরভূমে বহু নেতাই নেতা হয়েছেন অনুব্রত মণ্ডলের জন্য। সে জন্য কোনও কর্মী যদি অনুব্রত মণ্ডলের কাছে কৃতজ্ঞ থাকেন, সেই বোধ থেকে কেউ যদি দেওয়াল লেখে, তাতে কোনও অপরাধ নেই তো। আর খেলা হবে তো তৃণমূলের স্লোগান। সেটা নিয়ে এত কথা উঠছে কেনো সাফ জবাব তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়ের।
আর তাই আজও কর্মীদের কাছে তিনি তাদের প্রিয় দাদা এখনও হিরো ইমেজ নিয়েই বেঁচে আছেন। তাই তারাও দাদার পুরোনো খেলা হবের ফর্মুলায় ভোট করতে চায় বীরভূমে। ভগবান যেমন অন্তরাল থেকে আশীর্বাদ করেন, প্রেরণা দেন, নির্দেশ দেন, সেভাবেই কর্মীরা তাঁকে সামনে রেখেই ভোটে লড়তে ‘খেলা হবে’ এই স্লোগানকে বুকে আগলে জড়িয়ে নিয়ে এগোতে চাইছেন সামনের লোকসভা নির্বাচনে। যাতে তাদের দাদার খেলা হবের জয় হয় আবার বীরভূমের মাটিতে।
খেলা হবে - অভিজিৎ বসু।
27 মার্চ, দু হাজার চব্বিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন