সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কুর্চির টানে


কুর্চির টানে ------

একসময় এই গ্রামটার নাম এক ডাকে সবাই চিনে গেছিলো। শুধু মাত্র বললেই হতো অনাহার এর গ্রাম। অমনি চোখের সামনে ভেসে উঠতো আমলাশোলের নাম জ্বল জ্বল করে। যে নামটা সবাই কে নাড়িয়ে দিয়েছিলো আমাদের সেই সময়। 

যে গ্রামের ছবি দেখে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে মিডিয়ার সামনে আওয়াজ তুলে ছিল। এসব কি হচ্ছে কি। মানুষ কেউ এইভাবে বাঁচে, বাঁচতে পারে। এত খিদে নিয়ে বাঁচা যায়। কিন্তু অনাহার যাদের নিত্য সঙ্গী ছিল তারা কি করে বাঁচবে কে জানে। 

মৃত্যুর অভিশপ্ত সেই দিনগুলোর গুজরান করেই তো তারা বেঁচে ছিল কষ্ট করে। দারিদ্র্যের সাথে সংগ্রাম করে, লড়াই করে বাঁচতে চেয়েছিল জীবনে। কিন্তু পারেনি বাঁচতে ওরা। তাই আমরা জানতে পেরেছিলাম তাদের জীবনের গভীর গোপন কথা। যা ফাঁস হয়ে গেছিলো সংবাদ মাধ্যমে। আর তাতেই হৈ চৈ পড়ে যায় রাজ্য জুড়ে।

আজ এতদিন পরে আমলাশোল কেমন আছে সেটাই মনে হলো আমার। নিজের চাকরি জীবনে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে হয়েছে অনেক। সরকারি চাকরির সুবাদে সেই সব জেলায় ঘোরা কিন্তু খুব যে সুখকর হয়েছে সেটা নয়। এই জেলাতেও  কাজ করতে হয়েছে, কিন্তু সেই দিনের কথা ভুলে যাই কি করে।

 সেই সময় এই আমলাশোলের ঘটনায় নড়ে ওঠে গোটা রাজ্য। একি অবস্থা হলো না খেতে পেয়ে গ্রামের মানুষরা অভুক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে থাকতে মারা যাচ্ছে। কেউ দেখার নেই। কেউ খোঁজ নেবার নেই। 2004 সালের ঘটনা এটা। সেই ঘটনার কালো দাগ এখনও লেগে আছ, যার দাগ তোলা কঠিন। 

চাকরি জীবন কাটিয়ে অবসর দিন যাপন চলছে আমার কিছু দিন হল। একেবারেই অবসর যাপন যাকে বলে। সরকারি চাকরির সুবাদে বাম আমলের আমলাশোল এই আমলে কেমন আছে সেটা জানতে মন চায় আমার। একবার ঘুরে দেখে এলে কেমন হয় তাকে। এই ভেবেই খোঁজ খবর নিতে শুরু করলাম আমি।

এদিক ওদিক খুঁজে জানতে পারলাম সেই আমলা- শোলে রয়েছে সুন্দর হোম-স্টে। আর সেই খবর পেয়ে মনটা কেমন যেন খুশিতে ভরে গেল আমার। আরো ভালো লাগলো যখন সেই হোম স্টের নাম জানলাম কুর্চি। নামটা শুনেই মনটা বড়ো ভালো হয়ে গেলো। সত্যিই বলতে কি আমলাশোলে কুর্চি কে পাবো এতটা আশা করিনি আমি। 

ব্যাগ পত্তর নিয়ে গুটি গুটি পায়ে হাজির হবো বলে ঠিক করলাম সেখানেই। সত্যিই বলতে কি কিছু কিছু নাম-এর মধ্যে যেনো একটা অদ্ভুত মায়া লুকিয়ে থাকে। কুর্চিও সেই গোত্রে পরে আমার মনে হয়। কুর্চি ফুল খুব সুন্দর। ঠিক একদম রঙ্গন ফুলের মত।বেশ সুন্দর গন্ধ ওর।

 পেটের রোগে এই গাছ খুব ভালো কাজ করে বলে জানা যায়। এর আদি বাসস্থান মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতীয় উপ মহাদেশ ও চীনের কিছু অংশে। সারা বর্ষা ধরেই কুর্চির ফুল ফোটে। আর সেই গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে যায় গোটা বাগান। সেই প্রিয় কুর্চি নামের ভালোবাসার ঘর পাবো এই অনাহারের গ্রামে আমি সত্যিই এতটা ভাবিনি, আশা করিনি। 

সত্যিই বলতে কি একদম চুপ চাপ কটা দিন কাটাবো এই আশা নিয়ে ব্যাগ গোছালাম আমি। বেরিয়ে পড়লাম একাই। শহুরে জীবনে অভ্যস্ত আমি ফিরতে চাইলাম কুর্চির আশ্রয়ে, শান্তির আশ্রয়ে কিছুদিনের জন্য আশ্রিত হতে। ওর কাছে নিরালা, নির্জনে একদম চুপ করে ওকে উপভোগ করবো বলে বেরিয়ে পড়লাম।

 কিন্তু তখনও আমি ভাবিনি যে কুর্চির শরীরে বিকাশ ছড়িয়ে গেছে বেশি করে। যাকে কাছ থেকে পাবো বলে গেলাম সে অনেক দূরে সরে গেছে আমাদের জীবন থেকে। এটা যখন দেখতে পেলাম ভালো লাগলো না আমার সত্যিই মনে হলো এত বদল না এলেও হতো বোধহয়।

আমি পৌঁছে গেলাম ওর কাছে ব্যাগ পত্তর নিয়ে। কিন্তু সেই গ্রামকে কি পেলাম আমি।সত্যিই বলতে কি কিছুটা আশাহত হলাম। অনাহার যাদের নিত্য সঙ্গী ছিল তারা এখন অনেক বদলে গেছে যেনো। গ্রামের মেঠো পথে এখন কলকাতার বাবু বিবিরা আসছেন ঘন ঘন। গাড়ির আওয়াজ, লাল মাটির ধুলোয় চাপা পড়ে গেছে ওদের জীবনের সহজপাঠ। 

পেটের ক্ষিধে মেটাতে এখন আর ঘরের শিশুরা নাকি মুড়ি খায় না। কুরকুরে খায় গ্রামের দোকান থেকে কিনে। গ্রামের মেঠো দোকানের পাশে এদিক ওদিক কুরকুরের প্যাকেট পড়ে আছে।যা একদম বিসদৃশ লাগে।তবুও বিকাশের ছোয়া পেয়ে কেমন যেনো বদলে গেছে এই  অনাহারের গ্রাম।

এই ভাবে ওদের কাছ থেকে দেখবো আমি ভাবিনি। এই সব শুনে অবাক হলাম আমি। তাহলে একদিন যারা ক্ষিদের জ্বালা মেটাতে পিঁপড়ের ডিম ভাজা খেত বলে শুনেছি সেটা কি তাহলে অভিনয় ছিল ওদের। না, বললেন গ্রামের শিক্ষক মধু মান্ডি। 

গ্রামের এই মানুষটি যিনি নিজেই একটা স্কুল চালান অন্যর কাছে সাহায্য নিয়ে। তিনি বলেন কি আর বলবো আপনাকে বলুন। এত আলোচনা ,এত বড় বড় খবর হয়েছে এই গ্রাম নিয়ে। কিন্তু তারপর এত বিকাশ না হলেও হতো বুঝলেন। এই বিকাশের মাধ্যমে আমাদের যে টুকু নিজস্বতা ছিল সেটা হারিয়ে যেতে বসেছে প্রায়।

আমি তো অবাক ওর কথা শুনে বলেন কি মশাই। বিকাশের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে গোটা দেশ। গোটা রাজ্য আর আপনি অবলীলায় মুখে হাসি নিয়ে বলছেন ওটা একটু কম হলেও ক্ষতি ছিল না। বলতে কি এই কথা শুনে আমি নিজেও একটু অবাক হলাম। কী গভীর সত্য কথা এক লহমায় বলে দিলো এই ছোট্ট মানুষটি নিজের মুখে অবলীলায়।

সত্যিই তো দুই পাশে জঙ্গল, মাঝে পিচঢালা মসৃণ কালো চকচকে ঝক ঝকে রাস্তা হয়েছে। সত্যিই তো বিকাশ ছড়িয়ে পড়েছে এই রাস্তা ধরে দূরে, অনেক দূরে। সেই বিকাশের ছোয়া পেয়ে কেমন যেনো একটু অবাক হয়েছে আমলাশোল গ্রাম নিজেই।

যাওয়ার পথে গ্রামের রাস্তায় নজরে পড়ল অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। তার পাশে আর একটা পাকা বাড়ি আইসিডিএস সেন্টার। যেখানে ভাত খেয়ে পেট ভরায় গ্রামের শিশুরা।যে ভাতের অভাব ছিল বলেই গ্রামের লোকদের এই ভাবে বেঁচে থাকতে হয়েছে এক সময়।

গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মধু মান্ডি স্মৃতি হাতড়ালেন, এখনকার চেহারা দেখে তখনকার গ্রাম কি আর বুঝতে পারবেন আপনি। তখন এই কাঁকড়াঝোড়ে গাড়ি যাতায়াতের  কোনও পাকা রাস্তাও ছিল না। এখন বেলপাহাড়ি হয়ে চমৎকার রাস্তা। সত্যিই তো বলছে সে।অনেক বদলে গেছে এই গ্রাম।

  হোম স্টে-তে বসে শীতসন্ধ্যার নিঝুম হিমেল অন্ধকারে শুনতে পেলাম দুর রাস্তায় গাড়ির হর্নের আওয়াজ। অন্ধকারের বুক চিরে সাদা আলোর রোশনাই ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে।কারা যেনো শহর থেকে এলো এই কুর্চিতে।

সত্যিই তো বিকাশ ছড়িয়ে গেছে গোটা গ্রামেই। চারদিকে ঝিঁঝিপোকার কলতান, তার মাঝে সন্ধ্যায় এসে পৌঁছল নতুন অতিথি। 

গমগম করে উঠলো এই হোম স্টে। সুন্দরীদের কলতানে মুখরিত হলো চারিদিক। সত্যিই তো এদের দেখে কি মনে হয় এরা উপভোগ করতে এসেছে ছোট্ট গ্রামকে। তাহলে এত মেকি রং বদলে কেনো এসেছে এরা, জানি না আমি।

কিছুটা বিরক্ত হলাম আমি। এই ভাবে জানলে সত্যিই আসতাম না আমি। নতুন অতিথিদের কথা কানে এলো, একি এখানে ওয়াই ফাই নেই চলবে কি করে। তাহলে কি অদ্ভূত জায়গা রে বাবা। তার মানে বিকাশ সঠিক ভাবে ছড়িয়ে না পড়লে আমরা সবাই বাঁচতে পারবো না। 

এই নিঝুম রাতে মনে হলো আমার।সত্যিই কথা বলেছেন ঐ মাস্টার মশাই এত বিকাশ না হলেও হতো। তাহলে হয়তো রাতে ঘরে শুয়ে কুর্চির গন্ধ পেতাম আমিও। যে মাস্টার মশাই এক দিন এই জঙ্গল মহলের মানুষদের নিয়ে অন্য স্বপ্ন দেখতেন। বিকাশ এসে তার স্বপ্নকে সফল হতে দেয়নি।তাই তিনিও আজ কোনো ভাবে গা এলিয়ে বেঁচে থাকতে চান এই বদলে যাওয়া নিজের আস্তানায়।

অনেক কিছুই এখনও বাকি রয়েছে কাজের এই গ্রামে। আমলাশোলের প্রাথমিক শিক্ষক মধু জানালেন, অষ্টম শ্রেণি অবধি পড়ার ব্যবস্থাটুকুই রয়েছে। তার পর ওদলচুয়া বা বাঁশপাহাড়ির স্কুল থেকে মাধ্যমিক। অতঃপর শিলদায় কলেজ। দূরের কলেজে যেতে হবে কিন্তু তার আগের পড়া তো করতে হবে।সেই স্কুল টাই তো নেই কাছে। তাহলে কলেজে পড়তে যাবে কি করে।

শিলদা নামটা আজও আমাদের মনে আছে। মাওবাদী বিশৃঙ্খলার সময় সেখানে থানা থেকে বন্দুক লুট হয়ে ছিল। সেই বিখ্যাত শিলদায় কলেজ গড়ে উঠেছে।এটাও তো বড়ো বিকাশ একটা।

 জঙ্গল এখন শুধু একটি বিষয়ের নীরব প্রস্তুতিতে।শুধু ইকো টুরিজ়ম! বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হচ্ছে আরও চার-পাঁচটি রিসর্ট।  কাঠ চেরাই ও ড্রিলিং মেশিনের আর্তনাদ,ছেনি হাতুড়ির ঠকাঠক শব্দ। এই নিয়েই এখন বেঁচে আছে আমলাশোল।ঠাণ্ডার মরশুমে পর্যটকের ঢল নেমেছে এই জায়গায়।

অনাহারের দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে  আমলাশোল এখন সেই ভালর জন্য দিন গোনে। যে ভালোর জন্য সেখানে আর কুর্চি তার নিজের মতো করে হাসে না। হাসি পেলেও থমকে যায় সে। জঙ্গলের  নিঃস্তব্ধ রূপ দেখে মনে হয় সে নিজেও বোধ হয় এই বিকাশের চাপে, কিছুটা হলেও নুজ্ব্য হয়ে গেছে।

বিকাশের দাপটে খিদে পেটে নিয়ে স্কুলে আসা পড়ুয়ারা আকাশ পানে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখে, তারা ভাবে বড়ো হয়ে এই সব রিসোর্টে নিশ্চয়ই তারা একদিন কাজ পাবে। কিছু রোজগার করবে তারা। মোবাইলের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে তারাও। 

আর আমলাশোলে ভোর হয়, রাত হয় নির্দিষ্ট নিয়মে,বিকাশের ঠক ঠক শব্দে। আমি দ্রুত ফিরে আসি কুর্চিকে ছেড়ে। জঙ্গলের নিঃস্তব্ধ রূপ কে ছেড়ে ফিরে আসি নিজের ঘরে। বিকাশের আরও কাছে একদম গহ্বরে।

 দেখি লাল রাস্তার পাশে জঙ্গলের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে বৃদ্ধ মধু মান্ডি। যে বিড় বিড় করে বলে চলেছে এত বিকাশ না হলেও হতো বোধ হয়।বেশ তো ছিল আমার এই গ্রাম। 

আমরা তো বদল চেয়ে ছিলাম এক দিন, কিন্তু সেই বদল হয় নি, করতে পারি নি আমরা। আজ কেনো যে বিকাশের দোহাই দিয়ে গ্রামটা এত দ্রুত দলে গেলো কে জানে। স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মধু মাস্টার দূরে জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে। কিছুটা আত্মগ্লানি আর এক রাশ অভিমান নিয়ে। কুর্চি দুর থেকে মাথা নিচু করে তা দেখে আর মনে মনে কষ্ট পায়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...