সাদা জীবনের কালো কথায় আজ সবজি বাজার দর বৃদ্ধি, সাধারণ মা মাটি মানুষের গন্ধ মাখা ক্রেতা আর দাম নিয়ন্ত্রণে মূখ্যমন্ত্রীর বৈঠক। এই বিষয় নিয়েই দু চার কথা লিখি আমি। আসলে বেশ কিছুদিন ধরেই মরশুমি ফলের মতো বাজার দর বেশ কিছুদিন ধরেই অগ্নিমূল্য হয়েছে। বাজারের এই ছ্যাঁকা খেয়ে পকেটেও তার আঁচ লেগেছে আম জনতার। আর এতে সাধারণ দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের একেবারে নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম হয়েছে।
কিন্তু উপায় কি তাদের বুক ফাটলেও মুখ ফোটে না যে কিছুতেই। এই শ্রেণীর দু পেয়ে মানুষরা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা রপ্ত করেছে হাসি মুখেই সারা জীবন ধরে। সে জিনিসের দাম বাড়ুক কিম্বা রাস্তায় জল জমুক, বাড়িতে পাড়ার চাঁদার দাবিতে টাকার পরিমাণ বাড়ুক, কিম্বা মাসের শেষে হঠাৎ আচমকাই বাড়িতে আত্নীয় স্বজনের ভিড় বাড়ুক। সবটাই কি করে যে তারা কেরামতি করে হাসিমুখে সামাল দেয় কে জানে।
আসলে মধ্যবিত্ত পরিবারের এই শ্রেনী বোধ হয় সব কিছু পারে। কিন্তু বাজারে সবজির দাম বাড়লে এই সব হলেও তাতে আর ক্ষতি কি, ওই বাবু শ্রেণীর চাকরি করা আর মোটা অংকের ব্যবসা করা সেই সব লোকদের যাদের বেগুনের একশো টাকা দাম নিয়ে ভাবতে হয় না কোনো সময় কোনো দিন। যারা বাজারে গিয়ে টাটকা মাছ আর সবজি সওদা করেন ব্যাগ ফেলে দিয়ে কোনো দরদাম না করেই। যাদের হাতে আছে অফুরন্ত টাকা। তারা এত ছোট জিনিস নিয়ে ভাবিত নয়। তাদের অনেক বড় বড় জিনিষ নিয়ে ভাবতে হয় তাদের। এত ছোট বিষয় নিয়ে ভাবলে চলে তাদের।
আর সেই সুযোগ নিয়েই বিক্রেতারা হাসি মুখে তাদের ব্যাগে ভরে দেন সব টাটকা জিনিস পত্র কোনো দর দাম না করেই। এটা তাদের জানা আছে যে এই ধরনের ক্রেতা একশোজনে দু একজন পাওয়া যায় । কিন্তু এই শ্রেণীর মানুষ তো খুব কম বাজারে মেলে। যাই হোক কম মানুষদের নিয়ে তো আর চিন্তা নেই আমাদের সবার দিদির। খেটে খাওয়া, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের জন্যই তো তাঁর যত চিন্তা ভাবনা।
কি করে যে এত কষ্ট করে দাম বাড়লেও মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে তারা কে জানে। সেই সিনেমার বিখ্যাত দৃশ্য মনে পড়ে গেলো আমার। বাজারে গিয়ে পুলিশ অফিসার চাষীর থেকে বিনা পয়সায় লাউ কিনে ঘরে ফিরবেন সেই সময় বাজারে থানার বড়ো বাবুর আবির্ভাব। বগলে লাউ নিয়ে সেই বিখ্যাত উক্তি দাম চেয়ে নিতে পারিস না। মাত্র দু টাকা দাম কি করে পারিস রে তোরা এত কম দামে কেনো দিস।
সত্যিই তো কি বা করতে পারে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের দল। মুখ বুজে সব সহ্য করেও তারা হাসি মুখে চলতে জানে। যাকগে সেই জন্য তো তড়িঘড়ি করে বাজারের জিনিসের দাম কমাতে উদ্যোগী হয়েছেন মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নিজেই আসরে নামলেন তড়িঘড়ি। যদিও এটা নতুন নয় প্রতি বছর ঋতু পরিবর্তনের মত জিনিসের দাম বাড়ে আর এই টাস্কফোর্স কর্তাদের তলব পড়ে বৈঠকে।
সেই দশ বছর আগেও আমি দেখেছি জিনিসের দাম বাড়লেই মহাকরণে মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক। গম্ভীর মুখে টাস্ক ফোর্সের কর্তাদের সঙ্গে নিয়ে, প্রশাসনের কর্তারা উদ্বিগ্ন মুখে কথা শোনেন মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা। তিনি বলেন, আপনারা কিছুই নজর দেন না। আর কত দিকে আমি নজর দেবো বলতে পারেন। আপনারা সব কি ঘুমোচ্ছিলেন সব জেনেও জিনিসের দাম বৃদ্ধির পরেও। কেনো আপনারা কি বাজারে জিনিস কিনতে যান না।
আর সেই কথা শুনে কেমন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা পুলিশ প্রশাসন আর টাস্ক ফোর্সের কর্তাদের। আমার বেশ ভালো মনে আছে মহাকরণে এমন একদিন বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে বলতে আসেন টাস্ক ফোর্সের সেই রবীন্দ্রনাথ কোলে। তাঁর কাঁধে সাইড ব্যাগ ঝুলিয়ে। আমরা বলতাম দাদা কাল থেকে কি দাম কমবে দাদা বাজারে। মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে কোলে বাবু বলতেন একটু অপেক্ষা করুন আপনারা উপকৃত হবেন কিছুদিনের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী নজর দিয়েছেন তো।
একদিন এমন প্রেস কনফারেন্সের সময় তার টেবিলে রাখা সাইড ব্যাগ থেকে তার বৈঠক শেষে দেওয়া মিষ্টির প্যাকেট কে যেনো সরিয়ে দিলো কোনো এক সাংবাদিক। কি আর করবেন তিনি এদিক ওদিক অনেক খুঁজেও না সেই প্যাকেট না পেয়ে কিছুটা মনের কষ্ট নিয়েই ঘরে ফিরে গেলেন কোলে বাবু।
যদিও এরপর থেকে তিনি মিটিং সেরে সাংবাদিক বৈঠক করলেও সতর্ক থাকতেন যাতে মিষ্টির প্যাকেট না আর খোয়া যায় তার কোনো ভাবেই। এই সজাগ দৃষ্টি যদি সারা বছর তিনি ও তার দলবল মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের বলার আগেই সবজি বাজারে নজর দিতেন তাহলে বোধ হয় কিছুটা কাজ হতো। এই খেটে খাওয়া দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের একটু উপকার হতো।
সে যাই হোক এটাই হলো আসল কথা যে টাস্ক ফোর্সের দলবল থাকলেও মূখ্যমন্ত্রী বাজারের দাম বেড়েছে কাউকে মনে না করিয়ে দিলে কিছুতেই যত দাম বাড়ুক জিনিসের সে প্রসঙ্গ উত্থাপন করতেন না কেউই। সে দশ বছর আগেও যে প্রথা আমরা দেখে এসেছি। আজ এতদিন পরেও এক নিয়ম মেনে কাজ হচ্ছে নবান্নে। এটাই তো অনেক বেশি পাওনা মা মাটি মানুষের গন্ধ মাখা খেটে খাওয়া মানুষের কাছে। যে তাদের দিদি তাদের কথা ভেবে এত কাজের মধ্য বাজারের আলু পটল বেগুনের দাম নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। এর থেকে বড় পাওনা আর কি হতে পারে তাদের কাছে বলুন।
এই না হলে তাদের সবার প্রিয় দিদি। যিনি স্বয়নে, স্বপ্নে একমাত্র তাদের মঙ্গলের কথাই ভাবেন। না হলে কি আর এত কাজের মধ্য তিনি বাজার নিয়ে বৈঠক করেন। আসলে সাংবাদিক হলেও এখন আমার মনে হয় কোলে বাবুরা জানেন কোন সময় জিনিসের দাম বৃদ্ধি পায়। সেই সময় তাঁরা জানেন কিছুদিন ব্যবসায়ীরা মুনাফা লুটে পুটে নেওয়ার পরে সবজি বাজারে রাশ টেনে নেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই।
যাতে আম জনতা বুঝতে পারে যে দিদি ছিলেন বলেই তাদের সবাই এই দুর্মূল্যের বাজারে তারা কোনরকমে বেঁচে বর্তে আছেন দিদির দয়ায়। দিদি না থাকলে যে কি হতো তাদের কে জানে। এটাই হলো রাজনীতির ময়দানে এক নতুন পন্থা। যে করে হোক এগিয়ে যাও এই সব দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের পাশে দাঁড়াও আর মুখে তাদের কাছে ভালো থাকার বার্তা দাও। তাদের দুঃখের কষ্টের শরিক হয়ে যাও। আর তাতেই কেল্লা ফতে।
আর কেউ কোনো দিন কোনো মুখ্যমন্ত্রী কি চৌত্রিশ বছর রাজ্য শাসন করেও এমন করে বাজার ঘুরে ধমকেছেন বাজারের আলু ওলাকে। সে হাত জোড় করে ক্ষমা ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন সবার সামনে। কেউ বলেছেন আগে আমাদের রাজ্য বাঁচুক তারপর বাইরে আলু পাঠাও। এসব মজুতদারি আর কালো বাজারি চলবে না কোনো ভাবেই আমার আমলে। কেউ বলেছেন এমন করে এসব চলবে না আমার রাজত্বে এই ভাবে ব্যবসা করে মুনাফা লুটে পুটে নেওয়া যাবে না কোনো ভাবেই।
না, এই ভাবেই এক চালেই কিস্তি মাত করেছেন তিনি হাসি মুখে। যে চালে কুপোকাত হয়েছে আমজনতা, কুপোকাত হয়েছে বিরোধী রাজনীতির লোকজন।আর বাজারের আলু পটল বেগুন ওলা। এটাই হলো আসল রাজনীতির খেলা। যে খেলা শুরু করেছেন তিনি সব জেনে বুঝেই। অন্য বিরোধীদের হাজার যোজন পিছনে ফেলে তিনি এইভাবেই আমজনতার দিদি হয়ে গেছেন।
যে দিদি তাঁদের রান্নাঘরের হেঁসেলের খবর রাখেন। যে দিদি তাদের মনের দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণার কথা জানেন। তাই একটু না হয় বাজারে সবজির দাম বেড়েছে। ঠিক সময় করে দিদি সেটা কমিয়ে দেবেন। এই আশা ভরসা নিয়েই তো বেঁচে আছে বাংলার আম জনতা।
বাজারে দাম বৃদ্ধি ও দিদির নিদান - অভিজিৎ বসু।
বারো জুলাই, দু হাজার চব্বিশ।
সত্যি কিছু মানুষের বেঁচে থাকাটাই একটা যুদ্দ। কোথা থেকে টাকা আসবে,কীভাবে দিন চলবে সেটাই প্রতিদিনের চিন্তা একটা বড় অংশের মানুষের।বাজারে কাটা আলু, ব্যাঁকাটারা শশা, আলাদা করে রাখা পিঁয়াজের খদ্দের বাড়ছে।একই ছাদের নীচে চলে একটা সমান্তরাল বাজার। এ লেখাটা খেটে খাওয়া মানুষের বাজার আর টাস্ক ফোর্স নামক চোর-পুলিশ খেলার রাজনীতি আর অর্থনীতির চিত্রটা একটা অন্য মেজাজে তুলে ধরেছে।
উত্তরমুছুন