সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক পুলিশ অফিসার এর কথা বলবো। বহুদিন পর আজ যার সাথে আচমকাই কথা হলো আমার মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপের লেখার মাধ্যমে বহু দিন, বহু কাল পরে। আচ্ছা আপনি কি সত্যিই টোটো চালান। তাঁর সরাসরি প্রশ্নের সরাসরি উত্তরে আমি বললাম, না।
আসলে সেই বিখ্যাত পুলিশ অফিসার বহু বছর আগে এস ডি পি ও শ্রীরামপুর হিসেবে কাজ করতেন আমার নিজের হুগলী জেলায় নিজের শহরে শ্রীরামপুরে। যে জেলায় আমিও একসময় দাপিয়ে ঘুরে কাজ করেছি একসময় এই জেলার সাংবাদিক হিসেবে। যদিও সেই পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন করে বেঁচে থাকার অভ্যাস আমার নেই একদমই। সেটা কোনো কালেই ছিল না।
যেহেতু আজ বহুদিন পর তাঁর সাথে একটু যোগাযোগ হলো তাই তাঁর কথা লিখতে ইচ্ছা হলো আমার। সেই বিখ্যাত পুলিশ অফিসার হলেন শঙ্খশুভ্র চক্রবর্তী। একদম হিরো স্টাইল এর পুলিশ অফিসার। মারকুটে এই পুলিশ অফিসার। মস্তানদের ধরে রাস্তায় ফ্যাশন প্যারেড করানো সেই বিখ্যাত পুলিশ অফিসার শঙ্খশুভ্র বাবু। যে কারণে হুগলী জেলায় মস্তান আর ডনদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে খবরের কাগজের পাতায় প্রতিদিন খবরে থাকতেন তিনি সেই সময়।
যার সময় খবরের জন্য হা পিত্যেস করে বসে থাকতে হয়নি জেলার এই সব গ্রামের অকিঞ্চিৎকর জেলার মেঠো সাংবাদিকদের। আসলে সাংবাদিক আর পুলিসের এই সম্পর্কের বন্ধন আর যুগলবন্দী যদি সঠিক ভাবে হয় কোনো লেনাদেনা ছাড়াই তাহলে সেই সম্পর্ক বহুদিন টিকে যায় মনে হয়। সে আপনি খবরের সোর্সের পক্ষে খবর করুন আর বিপক্ষে খবর করুন। এটাই হলো আসল কথা সাংবাদিক আর সোর্সের মধ্য সঠিক আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর মধ্যে দিয়ে একে অপরকে দেখা। সেটাই মেইনটেইন করতেন শঙ্খ বাবু।
পক্ষের ফ্যাশন প্যারেডের খবর দেওয়া বা বিপক্ষের ভর সন্ধ্যায় গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেওয়া ব্যবসায়ীর খুন। আবার সেই ঝড়ের তান্ডব এর রাতে জঙ্গিপাড়াতে ট্রাক্টর এর উপর গাছ চাপা পড়ে এগারোজনের মৃত্যুর খবর কোনোটাই কিন্তু আড়াল আবডাল করে লুকিয়ে রাখতেন না তিনি। ফোন করে জিজ্ঞাসা করলেই হেসে বলতেন চলে আসুন আমি বেরিয়ে পড়েছি রাস্তায় আছি। এই অফিসার তো সকাল বেলায় আমায় বললেন দেখুন শ্রীরামপুর পুরসভার ওয়েবসাইটে কি সব জিনিস দেখা যাচ্ছে খবর নিন। সে এক কেলেঙ্কারি অবস্থা। দাপুটে পুরপ্রধান কেষ্ট মুখোপাধ্যায় রেগে আগুন। কি করে হলো এই ঘটনা। পরে সেটা পুরসভার ওয়েবসাইট থেকে ডিলিট হবার পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন পুরপ্রধান কেষ্ট দা। কিন্তু এই কেষ্ট দার মত রাজনীতির লোক আমি খুব কম দেখেছি। সে কথা অন্য কোনোদিন লিখবো। আসলে সেই সব দিন গুলো বোধহয় একটু অন্য রকম ছিল।
জানি না এই সময়ের সাংবাদিকতায় এমন কোনো সুযোগ পুলিশরা সাংবাদিকদের আর দেন কি না। নাকি ল্যাজে খেলান বারবার কোন খবরটা দেবেন আর কোনটা দেবেন না এটা ভাবেন, হিসাব কষেন। সেই সৌভাগ্য আমার হয়নি যে এই আমলে কি ঘটছে সেটাকে আর নতুন করে পরখ করার। যাকগে সে যাই হোক আমার সময় এমন ব্যবহার পেয়েছি আমি এই সব ডাকাবুকো পুলিশ অফিসার এর কাছে।
তবে তাঁর কাছে সবথেকে বড়ো কৃতজ্ঞ আমি এই যে বাংলা ভাষায় আমি যে টাইপ করছি একের পর এক শব্দ। ঝড়ের গতিতে লিখছি এখন। সেই যে রিপোর্টার এক লাইনও বাংলা টাইপ করতে জানতো না। সেই অজ মূর্খ সাংবাদিককে হাতে ধরে বাংলা টাইপ শিখিয়েছেন যিনি তিনি এই পুলিশ অফিসার শঙ্খ শুভ্র চক্রবর্তী।
সেই সময় হায়দরাবাদ এর অফিসের কড়া বার্তা রিপোর্টারকে শুধু খবর পাঠালেই চলবে না। সঙ্গে সঙ্গে সেই খবরের কপি বাংলায় সঠিকভাবে টাইপ করে পাঠাতে হবে না হলে সেই রিপোর্টার এর খবর নেওয়া হবে না আর। আর এতে সব থেকে বেশি বিপদে পড়লাম আমি নিজে। যে বাংলা টাইপ করতে পারতাম না একদমই। কিন্তু সেই সময় কি করে দ্রুত বাংলা টাইপ করতে পারব কোন পদ্ধতিতে টাইপ করলে শিখে যাবো দ্রুত। সেই শিক্ষা দিলেন নিজের অফিসে ডেকে এই দুঁদে মারকুটে পুলিশ অফিসার শঙ্খ বাবু। যাকে ভয় পেতো সবাই।
আসলে সাংবাদিক আর পুলিশের সম্পর্ক এর বাইরেও একটা মধুর সম্পর্ক ছিল আমাদের দুজনের মধ্যে যার জন্য আজ এত দিন পরেও কেমন যেনো ভালো লাগছে এই সব কথা লিখতে। আমি শিখে গেলাম বাংলা টাইপ। কম্পিউটার এর মাউস ধরে একটা একটা শব্দ খুঁজে বের করা আনাড়ি এক গ্রামের জেলার সাংবাদিককে বাংলা টাইপ শিখিয়ে দিলেন তিনি হাসতে হাসতে। আজ আমার এই কথা বলতে বা লিখতে তাই কোনো লজ্জা নেই।
যাকগে এত গেলো নিজের কথা। কিন্তু কাজের জায়গায় কত যে খবরের সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি হাঁসতে হাঁসতে সে কথা বলে শেষ করা যাবে না কিছুতেই। সেই প্রবল ঝড়ের রাতে এগারোজন এর মৃত্যুর খবর পেয়ে নিজেই চলে গেলেন বহুদূর গাড়ি করে। খবর পেয়ে ফোন করলাম তাঁকে, বললেন চলে আসুন দেখা হবে। তারপর জীবনকে হাতে নিয়ে ভাঙা একটা বাইক নিয়ে বড়ো বড়ো গাছ, ইলেকট্রিক তার, ভাঙা গাছের ডাল এড়িয়ে ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মাঝ রাতে পৌঁছলাম সেই স্পটে আমি আর রাজু।নিজেই হেসে বললেন, এই তো ইটিভি এসে গেছে। বলে পুলিশের টর্চের আলোয় ছবি করিয়ে দিলেন তিনি ওই অন্ধকার রাতে। বললেন সাবধানে ফিরবেন রাস্তা খুব খারাপ। কোনো ভাবে সেই রাতে ভোর বেলা বাড়ী ফিরে ছবি পাঠালাম হায়দরাবাদ এর ডেস্কে।
আসলে এই সব ঘটনা গুলো বেশ নাড়া দেয় আমায় এই এত দিন পরে। বাতিল হয়ে যাওয়া এক জন সংবাদ মাধ্যমের কর্মীকে বড়ো নাড়া দেয় এই রাত দুপুরে। আর তাই আজ ভোরবেলায় ওনার এই প্রশ্নের উত্তর লিখতেই এত কথার অবতারণা মাত্র। কিন্তুহুগলী জেলায় যে বুকের পাটা নিয়ে কাজের সুযোগ করে দিয়েছেন এই সব পুলিশ অফিসার যাঁদের কোনো দিন ভুলতে পারবো না আমি। ভুলতে পারবো না সেই রাতে শ্রীরামপুরে বেল্টিং বাজারে দোকানের ভেতর ঢুকে মাস্তানদের গুলি করে মেরে দেওয়া এক ব্যবসায়ী কে। রক্তে ভেসে যাওয়া সেই মৃতদেহ ঘিরে বিক্ষোভ পুলিশকে ঘিরে। কিন্তু এই অবস্থাতেও তো আমাদের ছবি তোলার সুযোগ করে দিয়েছিলেন এই দাপুটে পুলিশ অফিসার। অন্য কেউ হলে বা আজকাল হয়তো সেই সুযোগ আর দিত না পুলিশ সাংবাদিকদের। লাঠি উঁচিয়ে তারা করতো সবাইকে। যাতে ছবি না ওঠে। কোনো প্রমাণ না থাকে সেটাই করতেন দ্রুত।
হয়তো দিন বদলে গেছে এখন। আমাদের সেই সেকালের পুলিশ আর সাংবাদিকদের সম্পর্কের মেঠো রাস্তায় হয়তো অনেক পলি আর কাদা জমে গেছে। তাই হয়তো আজকাল এমন করে আর কাজ করা যাবে না বলবেন অনেকেই। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি সুযোগ পেলে সেই কাজ করে একবার যদি দেখাতে পারতাম আবার। তাহলে হয়তো এই বাতিল তকমাটা বুড়ো বয়সে একবারের জন্য বদলে নিতে পারতাম জীবনের এই ঘামে ভেজা জার্সি থেকে।
শ্রীরামপুর ছেড়ে বদলি হয়ে চলে গেলেন শঙ্খ শুভ্র বাবু সল্টলেকে। ভোটের সময় ব্যাপক লাঠি চার্জ করলেন তিনি বাম আমলে। সেই লাঠির ঘা পড়লো বাম আমলের দাপুটে মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর অনুগামীদের উপর। তারপর বেশ কিছুদিন একটু আড়ালেই ছিলেন এই পুলিশ অফিসার।
যাই হোক তারপর দীর্ঘদিন এদিক ওদিক করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারে এসে একদিন দেখা হলো তাঁর সাথে। মহাকরণে মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিএমও তে কাজ করেন তিনি। বেশ গুরু দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বেশ ভালো লাগলো বললেন অভিজিৎ রাস্তায় অনেক ঘুরেছি এই বার এই ঘরের ভেতর বসে কাজ করছি। সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করছি বেশ ভালো লাগছে আমার। সেই একগাল হাসি মুখে বললেন তিনি মহাকরণের করিডোরে হাঁটতে হাঁটতে। আমিও জেলা ছেড়ে কলকাতায় চলে এসেছি। হয়তো একটু যন্ত্রণা কষ্ট সহ্য করেই এই সিএমওর কাজ করছিলেন তিনি।
কিন্তু পরে আবার বদলি হলেন কলকাতা পুলিশে। রাস্তায় দেখলাম একদিন তাঁকে কোনো এক ইনসিডেন্ট এর ঘটনায় কোনো এক চ্যানেলে বাইট দিচ্ছেন তিনি। ভালো লাগলো দেখে যে সত্যিই তো এই সব পুলিশ অফিসার যদি বসে যান তাহলে কি আর মানায় তাঁকে। যারা সারা জীবন দৌড়ে কাটিয়ে দিলেন। তিনি বসে গেলে কারুর ভালো লাগে না।
এত গেলো তাঁর কাজের নানা কথা এসবের মাঝেও তাঁর ক্যামেরার পেছনে চোখ বুজে তিনি যে ছবি তুলে রাখেন সেটাও তো একটা বড় ব্যাপার। বরাবর ছবি তোলার নেশা ছিল তাঁর খুব। তাই ভালো ছবি তোলা তাঁর অন্য নেশা। নতুন ইউটিউব চ্যানেল করে সেই চ্যানেল এর কাজ করে চলেছেন তিনি আপনমনে। যে কাজ এই পুলিশ সার্ভিসের সাথে হয়তো মেলে না। কিন্তু তাঁর এই সৃষ্টি তাঁর কঠিন কঠোর মারকুটে মনের মধ্য যে একটা অন্য মানুষ লুকিয়ে আছে সেটা বোঝা যায়।
তাঁকে বললাম আসুন বোলপুরে আসুন। ভালো ভালো ছবি তোলার স্পট পাবেন। মন খুলে কামেরার শাটারে ক্লিক করুন আর প্রকৃতি ফুল, গাছ, পাখিকে ধরে রাখুন দেখবেন ভালো লাগবে আপনার। বললেন হ্যাঁ যাবো আমি। বেশ ভালো লাগলো এটা শুনে। সত্যিই আজ এই সব পুলিশ অফিসার এর মাধ্যমে কত যে ভালো ও খারাপ খবরের সন্ধান পেয়েছি যার কথা বলে হয়তো শেষ করা যাবে না কোনো দিন।
কিন্তু যে সম্পর্ক আজ থেকে প্রায় পঁচিশ বছর আগে তৈরি হয়েছিল নিছক একটা কাজের সূত্রে। একজন পুলিশ অফিসার আর জেলার এক অখ্যাত সাংবাদিক হিসেবে। সেই সম্পর্ক আজও বেঁচে আছে এটাই জেনে ভালো লাগলো খুব আমার। আজ আমি হয়তো আর সেই মিডিয়া পেশায় জড়িত নয় তবু এই সব পুরোনো মানুষদের সাহায্য নিয়েই তো এই পেশায় কাজ করেছি এতদিন দাপটের সঙ্গে।
যারা আজও আমায় মনে রাখেন, ভালোবাসেন। আমার কথার উওর দেন রাত বিরেতে। এটাই আজ আমার বড় প্রাপ্তি। ভালো থাকবেন আপনি। শুধু এটাই বলবো আপনাকে দাপুটে পুলিশ অফিসার এর পাশে বাঁচিয়ে রাখবেন আপনার সেই ছবি তোলার নরম মনটা। যে মন আতিপাতি করে খুঁজে বেড়ায় অনেক কিছু। আর তার সন্ধান পেলেই শাটারে ক্লিক করে আপনমনে।আপনি ভাল থাকবেন শঙ্খ শুভ্র বাবু।
ভালো থাকবেন শঙ্খ শুভ্র বাবু - অভিজিৎ বসু।
পনেরো জুলাই, দু হাজার চব্বিশ।
পেশাগত সম্পর্কের বাইরে এক অন্য জীবন।বেশ ভাল লাগল সোজাসাপ্টা এই লেখাটা।
উত্তরমুছুনEto sundor tomar mayer kaj....amr kub pochonder
উত্তরমুছুন