সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

লাল আমলের এক পুলিশের গল্প

আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বহু পুরোনো দিনের গল্প কথা। কিন্তু একদম সত্যি কথা। যে গল্পের সত্যতা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। যে ঘটনার ঘনঘটায় জড়িয়ে আছে পুলিশ ও রাজনীতির এক দোর্দণ্ড প্রতাপ নেতার লড়াই এর করুন কাহিনী। যে লড়াই এর পরিণতি বড়ই করুন ছিল। কিন্তু সেই বাম আমলে যে সাহস ওই দাপুটে পুলিশ অফিসার দেখিয়েছিলেন তাঁকে স্মরণ করেই আমার এই লেখা।

যাই হোক যে গল্পের এই কুশীলবদের নাম পরিচয় বলা যাবে না হয়তো এই লেখায়। কিন্তু এই বর্তমানে এই সামাজিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে চারিদিকে যখন শুধুই ক্ষমতার মসনদে বসা একদল লোভী রাজনীতির মানুষ আর পুলিশ প্রশাসনের নির্লজ্জ দালালি দেখি। আর প্রশাসনের ভঙ্গুর শিরদাঁড়ার ঝুঁকে পড়া দেখি। তখন বড়ো লজ্জা হয় আমার। আর সেটা দেখে বারে বারে আহত হই আমি। তাহলে কি সত্যি কোনো নির্ভেজাল পুলিশ অফিসার নেই, যে সাদা কে সাদা আর কালোকে কালো বলার বুকের দম রাখে। যে বুক ফুলিয়ে চলতে জানে মাথা উঁচু করে চলতে জানে। কারুর সাথে কোনো ভাবে আপোষ না করেই। আইনের নিয়ম মেনে যা করা উচিত সেটাই স্বাভাবিক নিয়মে করতে পারে সে। 

সেই সময় এমনই এক বহু পুরোনো ঘটনা উঁকি দেয় আমার স্মৃতির পাতায় মনের মণিকোঠায়। যে ঘটনা আজও অমলিন হয়ে বেঁচে আছে আমাদের অনেকের মনেই। আসলে রাজনীতির কুশীলব আর পুলিশ প্রশাসন হল একে অপরের পরিপূরক। যে যেভাবে যাকে ব্যবহার করবে সেটাই হলো আসল ব্যাপার। 

যাক ধান ভানতে শিবের গীত না গেয়ে আসল ঘটনায় আসা ভালো। আমি ভাবি যে ঘটনা আজ বা কাল এই হাল আমলে কি কোনো পুলিশ অফিসার এর বুকের পাটা হতো এমন করার। জানি না আমি, সেই ঋজু মেরুদণ্ড ওলা পুলিশ অফিসার  কি আছেন কোথাও লুকিয়ে কে জানে। এই লাল জমানার পর ঘাস ফুলের গন্ধ মাখা মাটিতে কি আছেন এমন কেউ কে জানে।

 আজ থেকে প্রায় পঁচিশ বছর আগের ঘটনা এটি। রাজ্যর সব জায়গায় সেই সময় বামেদের লাল পার্টির পতাকা জ্বল জ্বল করছে জেলায় জেলায়। গ্রামে গ্রামে, এমনকি ঘরে ঘরে। শুধুই লাল লাল আর লাল। বলতে গেলে একটাই কথা বলব যে বাবা কি দাপট। এই কথা বলতে হয় শুধু।

 এমন এক দক্ষিণ বঙ্গের জেলা লাল দুর্গের ঘটনা এটি। সালটা 1998 সাল হবে। তৃণমূলের সবে জন্ম হয়েছে রাজ্যের মাটিতে। তাদের তখন দূরবীন দিয়ে দেখতে হয় প্রায়। লাল পার্টির ডাকাবুকো ছোটো, মেজো, সেজো নেতারা সব হুস হাস করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নিজেদের রাজ্যপাট দেখভাল করছেন। বড়ো নেতার দল সব হাসি মাখা মুখে আলিমুদ্দিন এর ঘেরা টোপে বসে তাদের বলছেন সব ঠিক আছে তোমরা চালিয়ে যাও আমরা তোমার সাথে আছি।

 আর এটাই হলো আসল খেলা। বাম ঐক্যজোট মুখে বললেও সিপিএমের সেই দাপটে নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল রাজ্যের সাধারণ মানুষের। এমন কথা বলে বিরোধী সদ্য গজানো দল তৃণমূল মিনমিন স্বরে আওয়াজ তোলার চেষ্টা করছে মাত্র সে সময় জেলায় জেলায়। সেই সময় জেলার সদর শহর থেকে অনেক দূরে এক মহকুমা সদরের একটি ঘটনা। সদ্য দায়িত্ব পেয়ে সেই মহকুমায় এস ডি পি ও হয়ে এলেন এক ডাকাবুকো আইপিএস অফিসার। 

একদম দাবাং স্টাইলের এই অফিসার আবার শাসক দলের নেতাদের কাছে মাথা নোয়াতে জানতেন না কোনো ভাবেই। তাই তাকে তার জন্যে কম মাসুল গুনতে হয়নি নিজের কর্মজীবনে। সে যাই হোক নতুন মহকুমা শহরে এসেই হোম ওয়ার্ক করে কাজে নামলেন সেই অফিসার। দলের গোষ্ঠী কোন্দলের মোকাবিলা করতে গিয়ে লাল পার্টির দলের নেতাদের হাতে ঘেরাও হলেন এক সন্ধ্যায় এই আইপিএস ডাকাবুকো এস ডি পি ও। কারণ একটাই দলের সাদা পাজামা পাঞ্জাবী পরা দাদার লোকদের কেনো গ্রেফতার করা হয়েছে এই অভিযোগে।

এই খবর পেলেন সদ্য বদলি হয়ে আসা নতুন এসডিও সাহেবের কাছে। যে সময় আতঙ্কে কেউ এই মহকুমা সদর শহরে বদলি হয়ে আসতেই চাইতেন না এক সময়। এমনকি আগের মহকুমা শাসক যিনি কোনো ভাবে সপ্তাহের প্রথম কটা দিন নিজের অফিসে কাটিয়ে সপ্তাহের শেষ কটা দিন জেলা সদরে গিয়ে হাঁফ ছাড়তেন জেলা শাসকের আশ্রয়ে। এহেন পরিস্থিতিতে নতুন এসডিও বাক্স প্যাটরা বেঁধে অফিসে জয়েন করতে না করতেই এসডিপিও ঘেরাও আটক। কি যে বিপত্তি হলো। 

আপাত ঠাণ্ডা মাথার লোক হলেও এই এসডিও সাহেব বেশ কড়া প্রকৃতির লোক।  লাল পার্টির নেতাদের কাছে মাথা নিচু না করা এই এই ডব্লিউ বি সি এস ক্যাডারের এই অফিসার সঙ্গে সঙ্গে অর্ডার দিলেন ফোর্স পাঠিয়ে যেভাবে হোক এসডিপিও কে উদ্ধার করতে হবে। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটদের বললেন যান আপনারা যেভাবেই হোক এস ডি পি ও সাহেবকে উদ্ধার করে নিয়ে আসুন। সেই লাল জমানায় নদীর ধার থেকে এক গ্রাম থেকে উদ্ধার করা হলো সেই ডাকাবুকো এস ডি পি ও সাহেবকে অনেক কষ্ট করে।

 এত গেলো প্রথম ধাপের গল্প। কিন্তু গোল বাঁধলো অন্য জায়গায়। এই এস ডি পি ও কিন্তু জানতেন কে এই ঘটনার প্রধান নাটের গুরু। আর কে এর মদত দাতা। তাই জীবনের আর নিজের কাজের মায়া না করে সেই সময় সেই দোর্দণ্ড প্রতাপ লাল পার্টির এক পুরপ্রধান কে গ্রেফতার করে নিলেন এসডিপিও কাউকে কিছু না বলেই। ব্যাস আগুন জ্বলে উঠলো সেই সময় সদর মহকুমা শহরে। 

লাল পার্টির দলের সাদা পাঞ্জাবি আর পাজামা পরা সেই দাপুটে নেতাকে কি না একজন পাতি পুলিশ অফিসার গ্রেফতার করে। চারিদিকে খবর ছড়িয়ে গেলো আগুনের ফুলকির মতো। গোটা জেলায় যেনো বন্ধের আহ্বান করা হলো সেই সময়েই। আর সেই মহকুমা সদর শহরে শুরু হয়ে গেলো চেয়ারম্যান কে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ঘণ্টার পর ঘন্টা রাস্তা অবরোধ। থমথমে একটা পরিবেশ চারিদিকে। সবাই এ ওর মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে কিন্তু কেউ কিছু বলছেন না। কি হবে কে জানে।

 সেই অবস্থায় ঘন ঘন ফোন আসছে এসডিও আর এসডিপিও সাহেবের কাছে। জেলা শাসকের ফোন, মহাকরণের ফোন, আলিমুদ্দিন এর ফোন, জেলা লাল দুর্গের হেড অফিস থেকে ফোন। কিন্তু সেই এস ডি পি ও  একদম চুপ। রাত অনেক গভীর হলো। চারিদিকে বাস, লরির সারি দাঁড়িয়ে গেলো। কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শুধুই গাড়ির বিশাল লাইন পড়ে গেলো। অবরোধ কারীদের একটাই দাবি ছেড়ে দিতে হবে চেয়ারম্যানকে। 

যে চেয়ারম্যান একসময় টানা 27 বছর পুরপ্রধান ছিলেন সেই পুরসভায়। এক দাপুটে সাংসদ এর দক্ষিণ হস্ত ছিলেন তিনি। যিনি একসময় রেকর্ড ভোটে তাঁর কেন্দ্র থেকে জিতে সারা দেশে  হৈ চৈ ফেলে দিয়ে ছিলেন গোটা দেশ জুড়ে। বহু কাল পরে যদিও সেই দোর্দণ্ড প্রতাপ সি পি এম নেতাকে দল বহিষ্কার করে। অনেক পরে মিটিং করে জেলার প্রশাসনের কর্তারা সিদ্ধান্ত নেন সাধারণ মানুষের কথা ভেবে সেই নেতাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সব কিছু স্বাভাবিক হয়।

 কিন্তু ওই কিছু সময়ের জন্য হলেও যে চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করে পুলিশ অফিসার নিজের বুকের পাটা দেখিয়েছিলেন সেই জমানায় আজ বোধহয় এমন কথা ভাবতেও পারিনা আমরা। আসলে সাংবাদিক জীবনের এমন হাজারো ঘটনার ঘনঘটা জড়িয়ে আছে আমার সাদা জীবনের কালো কথায়। যে কথার মাঝে লুকিয়ে আছে গভীর গোপন জীবন বোধ আর সরকারি পদে থেকেও কোনো পার্টি অফিসে হাজিরা না দিয়ে প্রশাসনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা। রাজনীতিকরণ না করা। যেটা আজকাল বোধ হয় খুব বিরল হয়ে গেছে।

 আর তাই ডিজি নির্দেশ দেবার পরে তারপর দেখলাম কুলতলীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ সেই বিখ্যাত সোনা পাচারকারীর বাড়ী ঘিরে ফেলে। সোনা উদ্ধার করার জন্য। আর মিডিয়াকুল সেটা নিয়ে হৈ হুল্লোড় করে। না হলে স্থানীয় পুলিশের হাত পা বাঁধা থাকে স্থানীয় নেতার কাছে কিংবা কোনো এমন জেলার দাপুটে দুষ্কৃতী আর অপরাধীর কাছে। নিজেরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছুই করতে পারে না তারা চোদ্দ তোলার কোনো নির্দেশ না এলে। আর এটাই হলো রাজনীতির আসল খেলা। যে খেলায় সবাইকে নিজের হাতে রাখো যে কোনো উপায়ে।

 যে চিরাচরিত খেলার মাঝে এমন দু একজন খেলোয়াড় দেখতে পাই আমরা। যিনি আমাদের সবাইকে শিক্ষা দেন রাজনৈতিক নেতাদের মাতব্বরির কাছে মাথা নিচু করা নয়। তাদেরকে বুঝিয়ে দেওয়া যে আমি সরকারের লোক তোমার সেবা করতে আসিনি আমি। সাধারন মানুষের জন্য কাজ করতে এসেছি আমি। যে ভাবনা চিন্তা আজ আর নেই কোথাও। তাই চারিদিকে এত অবক্ষয়। 

যদিও সেই এসডিও সাহেব পরে সচিব হয়ে এখন অবসর নিয়েছেন বেশ কিছুদিন হলো। নিজের ঘরে বসে আছেন অবসর জীবন কাটাচ্ছেন এখন। হয়তো এই লেখা পড়ে তিনিও ভাববেন সত্যিই তো এমন একটি দিনের সাক্ষী ছিলেন তিনি সেই সময়। এমন একটা দিন ছিল তাঁর কর্মজীবনে। 

আর সেই দাপুটে পুলিশ অফিসার এখনো কাজ করে চলেছেন তিনি মাথা উঁচু করে। যিনি বহু উচ্চপদে কাজ করেও সেই অনমনীয় মনোভাব পোষণ করেই এখনো মাথা নিচু না করে, কারুর তোষামোদি না করেই দিব্যি সুখেই বেঁচে আছেন তিনি। ভালো থাকবেন আপনারা দুজনেই স্যার। সাদা জীবনের কালো কথায় তাই আজ কোনো ছবি নয়। আমার মনে আমার এই সাংবাদিক জীবনে যে ছবি আজও ধরা আছে। সেই ছবি দিয়েই কিছু আঁকিবুঁকি কাটলাম আজ। মনে হলো এই কথাও তো লেখা দরকার। 

লাল আমলের এক পুলিশের গল্প - অভিজিৎ বসু।
সতেরো জুলাই, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...