সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

তিন চাকার টোটো

তিন চাকার টোটো নিয়ে আমার দুর্বলতা অনেক দিনের। খোলা মেলা এই যানটি বেশ পরিবেশ বান্ধব। সব দিক থেকেই এই গাড়ি চড়তে বেশ ভালো লাগে আমার। টোটোতে বসে নিজেকে কেমন যেন পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়া রাজা মশাই বলে মনে হয় আমায় নিজেকে।পকেট গড়ের মাঠ হলেও নিজের ভিতরে যে 
বাবুয়ানি ভাব, সেটা কেমন করে যেন ফুরফুরে মেজাজে হাওয়া লেগে বেরিয়ে পড়ে আচমকা এই তিন চাকার টোটোতে চেপে। ফুর ফুর করে  তারা উড়ে যায় যেনো ডানা মেলে এদিক থেকে ওদিক লাল নীল প্রজাপতির মত। সত্যিই আমি খুব উপভোগ করি টোটো করে ঘুরে বেড়ানোকে। যার অন্য কোনো কারণ আছে কি না জানিনা আমি। যাই হোক ধান ভানতে শিবের গীত রচনা করা আমার উচিৎ নয়।
যে কোন জায়গায় এখন পা টানা রিকশ চালকদের পেছনে ফেলে দ্রুত এগিয়ে চলছে টোটো রাস্তা ঘাটে।পাড়ার দাদাদের কল্যাণে তারা এখন মিষ্টি বাহন শহরে আর গ্রামে। সত্যিই বলতে কি অনেকে এই যানকে পছন্দ করলেও কেনো যে টোটো চালক এর কাজ কে পছন্দ করে না কে জানে। অনেককেই আমি বলতে শুনেছি ও বাবা, টো টো চালায় ও, এতে নাক সিটকানোর কি আছে কে জানে। এই কাজ করে তো টাকা রোজগার করে ওরা। খারাপ উপায়ে তো টাকা আয় করছে না টোটো চালকেরা। তাহলে ওদের নিয়ে এত হাসাহাসির কি আছে কে জানে কেনো যে এত উপহাস করা জানিনা।
এই তো আমি নিজেই, কিছু দিন আগেও বেশ একটা ভালো মিডিয়াতে কাজ করতাম। মাসের শেষে ভদ্রস্থ টাকা আয় করতাম। নিত্য নতুন জামা জুতো পড়ে অফিস যেতাম। মাসে চারবার সেলুনে গিয়ে চুলে বাহারি স্টাইলে ছাঁট দিতাম। আমার আশ পাশে সব দাপুটে সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের ভীড় দেখতে পেতাম সব সময়। সব স্বপ্নের মত বিরাজ করতেন তাঁরা আমার চোখের সামনে। যেমন ছিল তাঁদের দাপট, তেমন তাঁদের রূপ। এদের কোনো দিন নিজের চোখে দেখতে পাবো তা স্বপ্নেও ভাবি নি আমি।
ওদের দেখে আমি তো অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি শুধু। যেনো এঁদের কোনো দিন এই ভাবে নিজের চোখে দেখতে পাবো ভাবিনি আমি। একদম গা ছম ছম করা পরিবেশে কাজ করতাম। খালি মনে হতো এই বোধহয় সবার সামনে ভুল ধরে অপদস্থ হতে হবে আমায়। আচমকা একদিন আমার মনে হলো, না এই কাজটা আর করা যাবে না।আর যেমন ভাবা তেমন কাজ। আগু পিছু না কিছু না ভেবে দুম করে ছেড়ে দিলাম সংবাদ মাধ্যমের সেই চাকরি। 

কত কাঠ খড় পুড়িয়ে এই কাজ জোগাড় করতে হয়েছিল আমায় একদিন। যদিও এই কাজটি আমায় ডেকে দেন কলকাতার একজন বিখ্যাত সাংবাদিক অনির্বাণ চৌধুরী। তাঁর কাছে আমি কৃতজ্ঞ থাকবো সারা জীবন। এই সুযোগ করে দেবার জন্য। না হলে কি আর দাপটের এমন হরেক রূপ দেখতে পেতাম কোনো দিন আমি। ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের দাপট দেখার সৌভাগ্য হলো আমার। পুরুষের দাপট, নারীর দাপট। বিখ্যাত সেই সিনেমার ডায়লগ মনে পড়ত বোধ হয় রবি ঘোষ বলেছিলেন, বাবা কি দাপট...। যা দেখে কিছুটা হলেও থমকে গেল আমার মন। আর কিছুটা তার জেরেই কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে এলাম আমি। 
সত্যিই বলতে কি কম বেশি ক্ষমতা পেলে এরা সব বাঘ এর মত হয়ে যায়। হাতে চাবুক ঘুরিয়ে নিজেকে কেউ সম্রাট আকবর, কেউ নিজেকে ঝাঁসির রানী লক্ষীবাই ভাবেন। আসলে এরা বোধহয় সেটাই হতে চেয়েছিল জীবনে।কিন্তু ভুল করে তা না হতে পেরে এই অন্য সংবাদ মাধ্যমের পেশায় এসে গেছেন। কী আর করবেন তাই কিছুটা বাধ্য হয়ে আমরাও যারা কাজ করতে যেতাম এই ভাবেই প্রতিদিন হালুম এর পাল্লায় পড়ে রক্তাক্ত হতাম। আবার পরদিন ওষুধ সেবন করে অফিস যেতাম। কিন্তু একদিন মনে হলো এই ভাবে প্রতিদিন হালুম এর পাল্লায় পড়লে মরে যাবো আমি। আসলে এরা সত্যিই হালুম না অন্য কিছু সেটা নিয়ে আমার কিছু বলার আছে। পরে সেটা নিয়ে বলা যাবে অন্য কোনো দিন। শুধু এটুকু বলতে পারি এরা নিজেরা, সত্যিই খুব ভীতু প্রকৃতির জীব। 

যাই হোক একদিন কাজ ছেড়ে চলে এলাম আমি।কাজ ছেড়ে চলে আসার পর অনেকেই বলেন এই ভাবে কাজ ছাড়লে বিপদ হবে তোমার ভবিষ্যতে। কারণ রিলিজ লেটার না নিলে অন্য কোথাও কাজে যোগ দেওয়া যাবে না আর কোনো দিন। কিন্তু আমার তখন কিছুই মাথায় নেই। শুধু মুখে হাসি নিয়ে বলে ছিলাম টোটো চালাতে কি আর রিলিজ লেটার লাগবে আমার কোনো দিন। আর সেটাই বিপদ বাড়িয়ে দিল আমার জীবনে। সত্যিই তো কি হবে যেখানে নিজের কাজের জায়গায় অপদস্থ হবার আতঙ্কে কেউ কাজ করবো না বলে কাজ ছেড়ে দেয়। সেখানে কাজ ছাড়ার মুক্তির চিঠি,ঘরের আলমারিতে ফাইল বন্দী করে না রাখলে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হবে কে জানে। তাই আমি এই কথাই বলেছি, যে টোটো চালাতে আমার রিলিজ লেটার লাগবে না। আর এটাই আমার গায়ে সেঁটে দেওয়া হলো যে আমি টোটো চালক হয়ে বেঁচে আছি মিডিয়া ছেড়ে।
সত্যিই বলতে কি খারাপ লাগেনি এসব শুনে বরং আমার ভালো লেগেছে সেই সময় এটা শুনে। যাই হোক চোর পকেটমার তো বলে নি এরা এটাই ভাগ্য আমার। আমার আজও মনে আছে সাধারণত মিডিয়ার কাজ ছাড়লে কেউ আর যোগাযোগ রাখে না তার সাথে। কারণ তারা অন্য গ্রহের যাত্রী, আর আমি আলাদা ভিন দুর গ্রহের অতি সাধারণ একজন মানুষ। যদিও এদের মধ্য হাতে গোনা কয়েক জন আলাদা আছেন যারা এই সময়েও আমায় সাহস ও সাহায্য দুটোই একসাথে দিয়েছেন এখনও দিয়ে যাচ্ছেন। 
যাই হোক কলকাতার এক রিপোর্টার আমায় ফোন করে বলেছিলেন, দাদা আমি শুনলাম তুমি বোলপুরে টোটো চালাও। আমায় তুমি টোটো চালক এই ছবিটা একটু দেবে আমি একটা খবর করবো তোমায় নিয়ে। সেই রিপোর্টার এর কথা শুনে আমি হাসতে হাসতে তাকে বললাম ভাই নিশ্চয়ই দেবো। সেই ছবি পেলে সে খবর করবে আমায় নিয়ে। সত্যিই কি অদ্ভুত আবদার তার। এমন আর একজন বোলপুরের দাপট ওলা রিপোর্টার বললো, আচ্ছা দাদা বোলপুরে কোন রুটে তুমি টোটো চালাও বলতো তোমায় তো আমি দেখতে পাচ্ছিনা রাস্তায়। একটু টোটোর রুট টা আমায় বলো তুমি দেখতে পাইনা তোমায়। এটা শুনেও একটু হাসি পেলো আমার।যিনি বলছেন বাংলা মিডিয়ার চ্যানেলে তার সুনাম এর থেকে বদনাম বেশি রটেছে। যাক এসব কথা বেশি না বলাই ভালো। 

এই প্রসঙ্গে আর একটা কথা বলি চোখে চোখ রেখে কথা বলা বাংলার এক দাপুটে সাংবাদিক আমায় শীতের রাত দুটো অবধি বসিয়ে রেখে ইন্টারভিউ না নিয়ে বলেছিল তোমার ইন্টারভিউ হয়ে গেছে দাদা। সত্যিই কি অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিল সেদিন আমার। আবার সেই বিখ্যাত সাংবাদিক আমায় বলেছিল গঙ্গা পেরিয়ে এসে কাজ করতে পারবো কি না। হাঁ বলাতে বলেছিল কম টাকার কাজ। কমতে কমতে সেই টাকার পরিমাণ পাঁচ হাজার এর নিচে নামলেও আমি রাজি হলেও পরে সে জানায় না এত টাকা দেওয়া যাবে না। আমি বলি কত দু হাজার টাকা দেবে তুমি। সে বলে দেখি ভেবে বলবো। না আর সেই চোখে চোখ রাখা সাংবাদিক ভেবে বলতে পারে নি আজও এত দিন পরেও। সেই তো একদিন সেক্টর ফাইভ এর রাস্তায় আমায় কিছুদিন আগেই একদিন হাত নেড়ে নাম ধরে ডেকেছিল। আমি একটা চ্যানেলে কাজ করছি বলে সে জানতে পারে,কিন্তু আমি তাকে না চিনে চলে এলাম পাশ কাটিয়ে। যদি তার চোখের উত্তাপে আমি পুড়ে যাই এই ভয় পেয়ে, বাবা কি দাপট।
আবার যে চ্যানেল ছেড়ে টোটো চালাবো বলে রাস্তায় নেমে পড়লাম সেই চ্যানেল থেকে আচমকাই একদিন আমায় ডাকা হলো। ভাবলাম হয়তো আবার আমি ফিরে পাবো আগের জীবন, ফিরবো সংবাদ মাধ্যমে। বেশ আনন্দ নিয়ে গেলাম সেখানে আমার ছেড়ে আসা পুরোনো অফিসে। ঝা চকচকে অফিসে এসে কেমন যেনো নিজেকে বেমানান মনে হলো। চুপ করে বসে রইলাম আমি। অনেক পরে অবশেষে আমার ঠাণ্ডা ঘরে ডাক পড়ল। একবারে দৌপ্রদীর স্বয়ম্বর সভার মত ডাক পড়লো আমার সবার সামনে। আমায় গোল করে ঘিরে আছে সব ডাক সাইটে দুঁদে সাংবাদিক এর দল। একমনে জরিপ করছেন তারা আমায়। অন্য গ্রহের জীব আবার ফিরে আসতে চায় তাদের দলে, তাদের গ্রহে। তাকে কি ফিরিয়ে নেওয়া উচিত না, তাকে নেওয়া হবে না সেই নিয়ে সভা। অবশেষে সেই পুরোনো কথা উঠলো আবার ,তুমি তো টোটো চালাবো বলে চলে গেলে। আসলে আমার জীবনে টোটো শব্দটা একদম যেনো সম্পৃক্ত হয়ে গেছে অজান্তেই। তাকে আমি হাজার চেষ্টা করেও ঝেড়ে ফেলতে পারিনি কিছুতেই।ঠান্ডা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে একটু স্বস্তি পেলাম আমি। দম বন্ধ করা পরিবেশ ছেড়ে নিশ্বাস নিলাম প্রাণ ভরে। অনেক পরে বুঝলাম টোটো চালক বলার জন্য হয়তো আমায় ডাকা হয়েছিল সেদিন কাজ ফিরিয়ে দেবার জন্য নয়।
 রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ভাবলাম, খারাপ কি খুব টোটো চালক হয়ে বেঁচে থাকা। এর মধ্যে কি কোনো লজ্জা লুকিয়ে আছে কি কোথাও। খবরের দুনিয়া ছেড়ে অন্য গ্রহ ছেড়ে, হাঁটতে হাঁটতে ভাবলাম আমি এটাই। সত্যিই বলতে কি আমি কোনো দিন এখনও টোটো চালক হইনি। পেটের ক্ষিধে মেটাতে, যদি তাই হতে হয় সেটায় লজ্জার কিছু নেই আমার কাছে। অন্তত সম্মান রক্ষা করে বাঁচবো আমি। কোনো দিন রাজনীতির কারবারির কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করে বাঁচবো না আমি। বলবো না আমি তাকে, যে কিছু খবর করেছি আমি তোমায় নিয়ে আমায় খাবারের টাকা দাও। এটা তো আরো লজ্জার অপমানের ব্যাপার। যদিও এই অপমান গায়ে মেখেই অনেকে চলছেন আজ কাল। যাক গে বাদ দি এই সব প্রসঙ্গ। 

টোটো তে ফিরে আসি। টোটো তে উঠেই আমার পছন্দের আসন ড্রাইভার এর পাশের আসন। সেদিন আমি তাই করলাম বসে পড়লাম ওর পাশে। গল্প জুড়লাম ওর সাথে। জানলাম ও বোলপুরে থাকে না। একটু দূরে থাকে ইলামবাজারের দিক থেকে আসে সে। নিজের টোটো কিনেছে সে বাবার জমি বিক্রি করে। সারাদিন এদিক ওদিক ঘুরে চলে যায় তার কোনো রকমে। কারণ তাকে টোটো ভাড়া দিতে হয় না কাউকে। সারাদিন পাঁচশো টাকা রোজগার না হলে পাঁচটা পেট চলা দায় এই বাজারে ,তবু  যা আয় হয় কষ্টে সৃষ্টে চলে যায় তার নিজের টোটো বলে। কথায় কথায় সে জানালো বোলপুর শহরে এমন প্রায় পনেরো হাজার কার্ড ওলা টোটো চলে। আর কার্ড ছাড়া টোটো চলে প্রায় পাঁচ হাজার। আমি শুনে অবাক এই ছোটো শহরে প্রায় কুড়ি হাজার টোটো চলে।
 ফেরার পথে সন্ধ্যা হয়েছে আর একজনের সাথে ফিরতে ফিরতে শুনলাম তার গল্প। তার নিজের টোটো নয়। মালিকের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া টোটো তার। সারাদিন এদিক ওদিক ঘুরে যা আয় হয় তার মধ্যে আড়াইশো টাকা মালিক কে দিয়ে দিতে হয় তাকে। ভাড়ার গাড়িটা মালিকের বাড়ীতে থাকে। সেখানেই চার্জ দেওয়া হয়।তারপর যা আয় হয় সেটা নিয়ে ঘরে ফিরতে হয় তাকে প্রতিদিন। লাভ এটাই বাবা বিশ্বকর্মা কোনো দিন খালি হাতে ফেরায় না তাকে। হয়তো কোনো দিন নিজের পকেট হাতড়ে আড়াইশো টাকা গাড়ি রাখার সময় মালিক কে দিয়ে আস্তে হয়।তবু অন্য কোনো দিন ঠিক বাবা বিশ্বকর্মা সেটা পুষিয়ে দেন এটাই অনেক বড় প্রাপ্তি কি বলেন। আচমকা ওর মুখে এই কথা শুনে আমি হাসতে গিয়েও পারি না। জীবনের পরতে পরতে কি গভীর বিশ্বাস নিয়ে বাঁচতে জানে এরা। কই আমরা তো পারি না, এই বিশ্বাসের জোরে বাঁচতে শুধু বাবা বিশ্বকর্মা কে ভরসা করে। 
দ্রুত সন্ধ্যার আলো আঁধারিতে টোটোটা এগিয়ে চলে। আমি বসে থাকি চালকের পাশে চুপটি করে। আকাশের তারাগুলি, পূর্ণিমার চাঁদটা সরে সরে যায় দ্রুত। তবু  অদ্ভুত মায়াবী চাঁদের আলোয় আলোকিত হতে হতে ইসমাইল টোটোর হাতলে চাপ দেয় আরো জোরে দৌড় করে তার ভাড়া নেওয়া স্বপ্নের যানটি। আমি শুধু ওকে দেখি আর ভাবি যারা আমায় এত কিছু বলেছিল তারা কি কোনো দিন এই ইসমাইল কে আমার মত এত কথা বলতে পারবে। ভাঙতে পারবে তার বিশ্বাসকে। যে বিশ্বাস নিয়ে সে প্রতিদিন হালুমদের এড়িয়ে রাস্তায় নামে নির্ভয়ে।সে জানে তাকে এই রাস্তায় কেউ ক্ষত বিক্ষত করবে না। সন্ধ্যায় সে আকাশের তারা দেখে। চাঁদ মামা কে দেখে ,আর মনে মনে ভাবে আড়াইশো টাকার গন্ডি পেরিয়ে গেলেই তো তার নিজের আয় হবে। যে টাকা আয় করে তার ঘরের চাঁদকে একটু ভালো রাখতে পারবে সে। এই আশা ভরসা নিয়েই তো ইসমাইলরা বেঁচে থাকে প্রতিদিন।কোনও লজ্জা সরম নিয়ে নয়, লুকিয়ে নয়, একদম বিন্দাস জীবন নিয়ে ওরা জীবনকে বাজি রেখে ছিনিমিনি খেলে ওরা দাঁতে দাঁত চেপে নীরবে, নিভৃতে, নির্ভয়ে। 
আর আমরা ওদের দুর থেকে দেখি বলি, ছি ছি তুমি টোটো চালাও। কিন্তু অস্ফুটে বলি আহারে আমিও যদি ওর মতো জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারতাম। সন্ধ্যায় চাঁদ মামা কে দেখে দৌড়তে পারতাম আলো আঁধারি রাস্তা দিয়ে। আড়াইশো টাকার গন্ডি ছাড়িয়ে গেলেই উৎফুল্ল হয়ে ভাবতে পারতাম বিশ্বাস করতে পারতাম বাবা বিশ্বকর্মা ঠিক আছেন, তিনি সব সময় রক্ষা করেন। তাহলে বোধহয় আমার জীবনটাও বদলে যেত। কিন্তু পারলাম কই ইসমাইল -এর মত গভীর জীবনবোধ আর বিশ্বাস নিয়ে বাঁচতে। এই জীবনে বোধহয় আর ইসমাইল এর মত বিশ্বাস নিয়ে বাঁচা হলো না আমার।

তিন চাকার টোটো- অভিজিৎ বসু।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...