সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আরামবাগের সুব্রত যশ

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আরামবাগের ইটিভির ক্যামেরাম্যান সুব্রত যশ এর কথা। বহুদিন পরে  সুব্রত এর সাথে মোবাইলে ফোনে কথা হলো আজ। সে নিজেই বহুকাল পর ফোন করলো আমার খবর নিলো কেমন আছি আমি। খুব ভালো লাগলো ওর ফোন পেয়ে আজ এতদিন পরে। 

এক সময় এই সুব্রত আরামবাগ, গোঘাট, খানাকুল আর পুরশুড়ার এলাকার একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে কাজ করত ইটিভির ক্যামেরাম্যান হয়ে। সিপিএম আর তৃণমূলের দু পক্ষের সংঘর্ষে আহত নিহতের খবর করেই দিন কেটে যেতো আমাদের সেই সময়। সেই সময় খবরের ঘনঘটা আর দৌড় করা মনে আছে আজও আমার। 
সেই কবে থেকে যে সুব্রত আর আমার জুটি গড়ে উঠেছে সেটা আজ ঠিক মনে নেই আমার। সালটা দু হাজার সাল হবে বোধ হয়। গ্রামের রাস্তায় তখন সবে মাটি পড়ছে। রাস্তার লোকজন সব লাল পার্টির সমর্থক বেশি। তারমাঝেই ইটিভির সেই একঘন্টা আন্তর খবর করা। আর সেটা নিয়েই কি হৈ হৈ ব্যাপার। 
জেলার নানা সংবাদ দুর থেকে বাস করে, ট্রেন পথে, ক্যাসেট আসতো শ্রীরামপুরের অফিসে। আর তারপর সেই ছবি ভিস্যাট এর মাধ্যমে সোজা চলে যেতো এফটিপি দিয়ে হায়দরাবাদ এর অফিসে। সুব্রত শ্রীরামপুরে অফিসে বা বর্ধমানে অফিসে ক্যাসেট পাঠিয়ে দিত। সেই সময় থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী মুখ রাজনীতির ময়দানে। যে মুখ বিপদে, আপদে, দৌড়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা যেতো তাঁকে। 

যাক ধান ভানতে শিবের গীত গাইবার কি দরকার। হচ্ছিল সুব্রতর কথা। সেই ওর কথায় ফিরে আসি আবার। সেই সময় ঊনিশশো নিরানব্বই আর দু হাজার সাল হবে। আরামবাগ মহকুমায় অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। সকালে তৃণমূলের লোক এর ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে ওদের লোক মরলে। বিকেল হলে সিপিএমের লোক মারা যায়।
গ্রামের রাস্তায় বাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় লাইন দিয়ে। গ্রাম দখলের চেষ্টা চলে অবিরাম। কার দখলে থাকবে এই সব গ্রাম আর গ্রামের মানুষ সেই নিয়েই মারামারি আর লড়াই করা দু দলের মধ্যে। সত্যিই তো গ্রাম্য এই ক্ষমতা দখল করার রূপ আলাদা। যে রূপ আর আজকাল দেখায় যায় না একদম। তবে গ্রামের এই যে রূপ দেখেছি আমি সেটা আজকাল একদম দেখা যায়না বললেই চলে। 

খানাকুলের বন্যা, চব্বিশপুরে সিপিএমের কর্মী খুন, গোঘাটে তৃণমূল কর্মী খুন, কেশপুরে মমতা বন্দ্যো পাধ্যায়ের সভা করা সেই বৃষ্টির দুপুরে। এই সুব্রতর মোটরবাইক করেই তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেশপুর এর পথে যাবার সময় পুলিশ পথ আটকে দিলে কোনো রকমে তিনি পৌঁছে যান পুলিশকে চোখে ধুলো দিয়ে।
সেই খানাকুলের বসন্তবাটি গ্রামে দিনেব বেলায় দুজনকে কুপিয়ে খুন করা হয়। সেই খুন এর লাইভ ছবি পাওয়ার পরে সেই ক্যাসেট নিয়ে নদী পার হয়ে সুব্রত আর আমি বর্ধমানে হীরক কর এর অফিসে হাজির হই কাসেট নিয়ে। আসলে এটা তো বড়ো একটা নেশা। সেই নেশা আজও আছে আমার যে যাই বলুক। 

তাই সুব্রতর গলা শুনে কত কথা মনে পড়ে গেলো। সেই গ্রামের রাস্তায় ঘর পোড়া পরিবারের হাহাকার। স্বজন হারিয়ে আর্ত কান্না। আর আমরা বুকে বল নিয়ে সেই সব ক্যামেরাবন্দি করে চলেছি গ্রাম ঘুরে ঘুরে। কোনো সাবুদ হয়তো নেই কিন্তু সেই সব দিনের ছবির। কিন্তু যে হিংসার ছবি আমরা সেই সময় দেখেছি সেটা আজ কাল একদম দেখা যায় না। 

আজ তো এমন দিনের ছবি তোলার সুযোগ পেলে কত যে গল্প বলে নিজেদের কথা ঢাক পিটিয়ে বলতে পারতো এখনকার সাংবাদিকরা তার হিসেব নেই। তবে সেই পুরোনো দিনের গ্রাম দখলের রাজনীতির ময়দানে নেতারা নিজেদের ক্ষমতা দখল করতে সচেষ্ট হয়ে যে হিংসার রাজনীতি করেছিলেন সেটা মনে করলে আজ মনে হয় রাজনীতি সত্যিই খুব নোংরা।
না হলে শুধু নিজেদের ক্ষমতা দখল করতে হবে বলে এমন গ্রাম পুড়িয়ে, লোক মেরে শুধু নিজের দলের ঝান্ডা তুলে গ্রামের মেঠো রাস্তায় সগর্বে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে এই সব রাজনীতির ময়দানের কুশীলবরা। যাদের নামে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খায় বলে প্রবাদ আছে আরামবাগ, খানাকুল, গোঘাট, পুরশুরা, কেশপুর, গড়বেতায়। আজ তারাও সব অতীত ইতিহাস হয়ে হারিয়ে গেছেন। 

 আরামবাগের সুব্রত যশ - অভিজিৎ বসু।
ঊনত্রিশ জুন, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...