সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জয় জগন্নাথ

রথযাত্রা, লোকারণ্য, মহা ধুমধাম,
ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম।
পথ ভাবে আমি দেব রথ ভাবে আমি,
মূর্তি ভাবে আমি দেব--হাসে অন্তর্যামী।

রথ যাত্রার এই চিরন্তন সত্য লাইন কবি লিখেছিলেন বহুকাল আগেই। যা যুগ যুগ ধরে আমরা সবাই পড়ে আসছি, জেনে আসছি। যে জগন্নাথের রথ যাত্রা আমাদের কাছে একটা বিশেষ দিন। যে দিন জগতের প্রভু, জগৎ প্রভু রথে আরোহন করে বেরিয়ে পড়েন মাসীর বাড়ীর উদ্দেশ্যে। সাথে থাকেন বলরাম আর সুভদ্রা। আর সেই জগৎ প্রভুর রথকে ধরে টেনে নিয়ে যায় সাধারণ মানুষ। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই রথের রশিতে টান দেন।

আসলে কি জানেন জগন্নাথ, যিনি আমাদের সবাইকে জগৎ সংসারে ধরে রাখেন, রক্ষা করেন। আজ তো সেই প্রভুকে রথের রশিতে টান দিয়ে একটিবার তাঁকে স্পর্শ করে,ছুঁয়ে দেখার একটা দিন। যে দিন বছরে এই একটিবার আসে। প্রভুর রথের রশিতে টান দিয়ে জীবনের সব কিছু পাপ, তাপ, কালিমা, দুঃখ, কষ্টের অবসান হয়। ভক্তকে এদিন ধরা দেন প্রভু নিজেই।

তাই তো জগন্নাথ অর্থাৎ, জগতের নাথ বা জগতের প্রভু হলেন একজন হিন্দু দেবতা। ভারতের ওড়িশা, ছত্তিশগড় (বস্তার অঞ্চল), পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, আসাম, মণিপুর ও ত্রিপুরা রাজ্যে এবং বাংলাদেশে তার পূজা প্রচলিত। জগন্নাথ হলেন হিন্দু দেবতা বিষ্ণু বা তার অবতার কৃষ্ণের একটি বিশেষ রূপ। তাকে তার দাদা বলরাম ও বোন সুভদ্রার সঙ্গে পূজা করা হয় এই রথের দিন। বিষ্ণু বা কৃষ্ণের বিমূর্ত রূপ হলো জগন্নাথ। তাঁর আবাস হলো নীলাচল। আর তাঁর মন্ত্র ওঁ জগন্নাথদেবায় নমঃ।

সেই প্রভু জগন্নাথের মূর্তি সাধারণত কাঠে তৈরি করা হয়। নিম গাছের কাঠ দিয়ে জগন্নাথদেবের প্রধান বিগ্রহগুলো জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা তৈরি করা হয়। এই মূর্তির চোখদুটি বড়ো বড়ো ও গোলাকার। হাত অসম্পূর্ণ। মূর্তিতে কোনো পা দেখা যায় না। বিগ্রহে অসম্পূর্ণ হাত ও পায়ের অনুপস্থিতি নিয়ে নানা ধরনের মতবাদ এবং পবিত্র বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে। জগন্নাথের পূজা পদ্ধতিও অন্যান্য হিন্দু দেবতাদের পূজাপদ্ধতির চেয়ে আলাদা। ওড়িশা রাজ্যের পুরী শহরে জগন্নাথের প্রধান মন্দিরটি অবস্থিত। এই মন্দির হিন্দুধর্মের চারধামের অন্যতম।

বেদে জগন্নাথের সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই। তিনি দশাবতার অথবা বৈদিক হিন্দু দেবমণ্ডলীর সদস্যও নন। অবশ্য কোনো কোনো ওড়িয়া গ্রন্থে জগন্নাথকে বিষ্ণুর নবম অবতার রূপে বুদ্ধের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। বিষ্ণুর রূপভেদ হিসেবে জগন্নাথ এক অসাম্প্রদায়িক দেবতা। তাকে এককভাবে হিন্দুধর্মের কোনো একটি সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত করা যায় না। বৈষ্ণব, শৈব, শাক্ত, স্মার্ত সকল শাখার অনুগামীরাই জগন্নাথকে পূজা করেন। এমনকি বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম সম্প্রদায়ের সঙ্গেও জগন্নাথের যোগ দেখানো হয়।

জগন্নাথের সবচেয়ে বিখ্যাত উৎসবটি হল এই রথযাত্রা। এই উৎসবের সময় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি মূল মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে বের করে এনে কাঠের তৈরি তিনটি বিরাট রথে করে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে গুণ্ডিচা মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। ভক্তরাই এই রথগুলো টেনে নিয়ে যান। যেখানেই জগন্নাথ মন্দির আছে, সেখানেই এই ধরনের রথযাত্রা আয়োজিত হয়।

 জগন্নাথ শব্দটি লোকনাথ বা অবলোকিতেশ্বর শব্দ দুটির মতো একটি বর্গনাম। আসলে যে দেবতাকেই সর্বোচ্চ জ্ঞান করা হয়, তাঁকেই জগন্নাথ বলা চলে।
জগন্নাথ শব্দের অর্থ যিনি চলমান জগতের আশ্রয় বা প্রভু। ওড়িয়া ভাষায় জগন্নাথ নাম থেকে উৎপন্ন জগা বা জগবন্ধু শব্দদুটিরও প্রচলন লক্ষ করা হয়। এছাড়া জগন্নাথের মূর্তির গড়ন অনুসারে তার "কাল্য" (অর্থাৎ, "কালো দেবতা" বা "কালের দেবতা"), "দারুব্রহ্ম" (অর্থাৎ, কাষ্ঠরূপী ব্রহ্ম), "দারুদেবতা" (অর্থাৎ, কাঠের দেবতা), "চকাআঁখি", "চকাডোলা বা "চকানয়ন" (অর্থাৎ, যে দেবতার চোখ গোলাকার) নামও প্রচলিত আছে তাঁর।

কোনো কোনো গবেষকের মতে, "জগন্নাথ" শব্দটি কোনো সংস্কৃতায়িত আদিবাসী শব্দ। এই গবেষকেরা জগন্নাথকে মূলত আদিবাসী দেবতা বলে মনে করেন। ওড়িশার আদিম আদিবাসী শবর ছিল বৃক্ষ-উপাসক। তারা তাদের দেবতাকে বলত "জগনাত"। সম্ভবত, এই শব্দটি থেকে "জগন্নাথ" শব্দটি এসেছে। যদিও এই সব মতবাদ সর্বজনসম্মত নয়। 


কিন্তূ ওড়িয়া গ্রন্থ নীলাদ্রি মহোদয় গ্রন্থে এই সম্পর্কে অনেকটা ধারণা পাওয়া যায় "দৈতাপতি" নামে পরিচিত একটি অব্রাহ্মণ শ্রেণীকে নীলমাধবের পরম ভক্ত বিশ্বাবসুর (শবর উপজাতির রাজা)বংশধর হিসাবে মেনে নেয়া হয় ,যার অনেক প্রমাণ আছে । তারা পুরীর মন্দিরের কয়েকটি প্রধান দায়িত্ব পালন করেন (গুন্ডিচা যাত্রা, নবকলেবর, সপ্তাভরণ, শ্রীঅঙ্গ সেবা ইত্যাদি এবং ঈশ্বরের পরিবার নামে পরিচিত হন। আর বিদ্যাপতির বংশধরেরা পতি মহাপাত্র হিসেবে পরিচিত, রথযাত্রা ও নবকলেবরে এঁদেরও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

জগন্নাথদেবকে কেন্দ্র করে দুটি জনপ্রিয় কাহিনি প্রচলিত আছে। প্রথম কাহিনি অনুসারে, কৃষ্ণ তার ভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের সম্মুখে আবিভূর্ত হয়ে পুরীর সমুদ্রতটে ভেসে আসা একটি কাষ্ঠখণ্ড দিয়ে তার মূর্তি নির্মাণের আদেশ দেন। মূর্তিনির্মাণের জন্য রাজা একজন উপযুক্ত কাষ্ঠশিল্পীর সন্ধান করতে থাকেন। তখন এক রহস্যময় বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ কাষ্ঠশিল্পী তার সম্মুখে উপস্থিত হন এবং মূর্তি নির্মাণের জন্য কয়েকদিন চেয়ে নেন। সেই কাষ্ঠশিল্পী রাজাকে জানিয়ে দেন মূর্তি নির্মাণকালে কেউ যেন তার কাজে বাধা না দেন। বন্ধ দরজার আড়ালে শুরু হয় কাজ। রাজা ও রানি সহ সকলেই নির্মাণকাজের ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

 প্রতিদিন তারা বন্ধ দরজার কাছে যেতেন এবং শুনতে পেতেন ভিতর থেকে খোদাইয়ের আওয়াজ ভেসে আসছে। ৬-৭ দিন বাদে যখন রাজা বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন এমন সময় আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। অত্যুৎসাহী রানি কৌতূহল সংবরণ করতে না পেরে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করেন। দেখেন মূর্তি তখনও অর্ধসমাপ্ত এবং কাষ্ঠশিল্পী অন্তর্ধিত। এই রহস্যময় কাষ্ঠশিল্পী ছিলেন দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা। মূর্তির হস্তপদ নির্মিত হয়নি বলে রাজা বিমর্ষ হয়ে পড়েন। কাজে বাধাদানের জন্য অনুতাপ করতে থাকেন। তখন দেবর্ষি নারদ তার সম্মুখে আবির্ভূত হন। নারদ রাজাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন এই অর্ধসমাপ্ত মূর্তি পরমেশ্বরের এক স্বীকৃত স্বরূপ। এঁকেই পূজা করুন। সেই হলো প্রভু জগন্নাথের নতুন রূপ।

দ্বিতীয় কাহিনিটি হলো আগের গল্পের ব্যাখ্যা ও সংশয় নিরসনের উদ্দেশ্যে। বৃন্দাবনে গোপীরা একদিন কৃষ্ণের লীলা ও তাদের কৃষ্ণপ্রীতির কথা আলোচনা করছিলেন। কৃষ্ণ গোপনে সেই সকল কথা আড়ি পেতে শুনছিলেন। কৃষ্ণভগিনী সুভদ্রাকে নিয়োগ করা হয়েছিল গোপীরা যখন কৃষ্ণের কথা আলোচনা করেন তখন কৃষ্ণ যেন তাদের নিকটবর্তী না হতে পারে সেদিকে নজর রাখার জন্য। কিন্তু গোপীদের কৃষ্ণপ্রীতি দেখে পরিতুষ্ট সুভদ্রা তাদেরই কথা শুনতে শুনতে বিমোহিত হয়ে গেলেন। দেখতে পেলেন না যে তাদের দুই দাদা কৃষ্ণ ও বলরাম এগিয়ে আসছেন। শুনতে শুনতে দুই ভাইয়ের কেশ খাড়া হয়ে উঠল, হাত গুটিয়ে এল, চোখদুটি বড় বড় হয়ে গেল এবং মুখে আনন্দের উচ্চ হাসির রেখা ফুটে উঠল। এই কারণেই জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার এইপ্রকার রূপ। বৈষ্ণবরা কৃষ্ণের এই বিমূর্ত রূপটিকে পূজা করেন সেই সময় থেকেই।

পুরীর জগন্নাথ মন্দির ভারতের অন্যতম প্রসিদ্ধ মন্দির। কলিঙ্গ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই মন্দিরটি শ্রীমন্দির নামে পরিচিত। গর্ভগৃহের মাথায় রয়েছে একটি সুউচ্চ শিখর বা চূড়া। প্রদীপ উৎসর্গের জন্য রয়েছে ফসিল হয়ে যাওয়া কাঠের একটি স্তম্ভ। মন্দিরের প্রধান দ্বার সিংহদ্বারের রক্ষক দেবতা জয় ও বিজয়। মূল প্রবেশ পথের সামনে রয়েছে অরুণস্তম্ভ নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। আজ সেই পুরীর রথে লক্ষ লক্ষ ভক্তের ভীড়। 

পুরীর রথ যদি হয় নীলাচল। শ্রীরামপুরের মাহেশের রথ হলো নব নীলাচল।  পুরীর মতো মাহেশের জগন্নাথ মন্দির ঘিরেও রয়েছে নানা জনশ্রুতি। পশ্চিমবঙ্গে সবথেকে পুরানো ও বড় রথযাত্রা উৎসবও পালিত হয় এখানে। পুরীর মতো মাহেশের রথযাত্রারও রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস।

মাহেশকে বলা হয় 'নব নীলাচল'। অর্থাৎ নতুন পুরী। এখানকার রথযাত্রা উৎসবকে বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীনতম হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রতি বছর এই উপলক্ষে ২ লক্ষর বেশি ভক্তর সমাগম হয় এই রথে।
কথিত আছে, জগন্নাথদেবের ভক্ত শ্রীচৈতন্য একবার পুরী যাত্রার পথে মাহেশের মন্দির পরিদর্শনে এসেছিলেন। এখানে তিনি অচৈতন্য হয়ে পড়েন এবং গভীর সমাধিতে চলে যান। তার পর থেকে এই জায়গার নামকরণ হয় নব নীলাচল।

 হুগলিতে ছশো আঠাশ বছরের বেশি ইতিহাসের সাক্ষী বহন করে আজও উজ্জ্বল মাহেশের এই মন্দির। জনশ্রুতি আছে, ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক সাধুকে একবার পুরীর জগন্নাথকে ভোগ নিবেদন করতে দেওয়া হয়নি। মনমরা হয়ে ওই সাধু আমৃত্যু অনশনে বসেন। কয়েকদিন পরে ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারীর স্বপ্নে আসেন প্রভু জগন্নাথ। তাঁকে অনশন তুলে নিতে বলেন। তিনি নিজেও তাঁর ভক্তের কাছ থেকে ভোগ খেতে চান বলে জানান জগন্নাথ। ধ্রুবানন্দকে মাহেশে যেতে বলেন তিনি। আশ্বাস দেন, নদী দিয়ে নিমকাঠ পাঠানোর । যা দিয়ে তৈরি হবে বিগ্রহ।

মাহেশে ফিরে আসেন সাধু। গঙ্গার তীরে শুরু করেন সাধনা। এক ঝড়বৃষ্টির রাতে একটি নিমকাঠ পান তিনি। তা দিয়েই জগন্নাথ দেবের মূর্তি তৈরি করেন। ছোট ওই শহরে এর পর একটি মন্দির স্থাপন করেন। আজ ওই মন্দিরের নতুন পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে। কিন্তু রথযাত্রা চলছে সেই সময় থেকেই। মাহেশের মন্দির এবং বিগ্রহ তৈরি করেছিলেন ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী। কিন্তু, রথযাত্রা উৎসব শুরু করেন শ্রীচৈতন্যর শিষ্য কমলাকর পিপলাই । যিনি পরে মন্দিরের প্রধান পুরোহিত হন। পিপলাই পরিবারের উত্তরসূরীরাই রয়েছেন এই মন্দিরের তত্ত্বাবধানে।
 
১৭৯৭ সালে মন্দিরে কাঠের রথ দান করেন রামকৃষ্ণ দেবের শিষ্য বলরাম বসুর দাদু কৃষ্ণরাম বসু। কয়েক বছর পর এটি পুড়ে যায়। আরও দুটি রথের একই পরিণতি হয়। এর পর ১৮৮৫ সালে তৎকালীন হুগলি জেলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ান কৃষ্ণচন্দ্র বসুর পৃষ্ঠপোষকতায় লোহার রথ তৈরি করে মার্টিন বার্ন কোম্পানি। সেই রথই এখনও চলছে। এটি নবরত্ন রথ। ১২টি লোহার চাকা আছে। চারতল বিশিষ্ট এই রথ ৫০ ফুট উচ্চতার এবং ১২৫ টন ওজনের। রথের সামনে আছে তামার দুটি ঘোড়া। ঐতিহ্যবাহী জিটি রোড দিয়ে হাজার হাজার ভক্ত প্রভু জগন্নাথকে তাঁর 'মাসির বাড়ি' নিয়ে যাওয়ার জন্য রথের দড়ি টানেন।

মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম রথযাত্রার জন্য যে বিগ্রহ তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিলেন তা আজও ব্যবহার হয়।
সাধারণ দিনগুলিতে ভক্তদের বিগ্রহ স্পর্শ করতে দেওয়া হয় না। কিন্তু, রথ এবং উল্টো রথের দিন সকলেই এই বিগ্রহ স্পর্শ করতে পারেন। মালা পরিয়ে প্রার্থনা জানাতে পারেন। তাই এমন একটা সুযোগ হারাতে চান না ভক্তরাও।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়- এর বিখ্যাত উপন্যাস 'রাধারাণী' মাহেশ রথযাত্রায় বিস্ময়কর বিবরণ নিয়ে তৈরি। রাধারানী, উপন্যাসের বীরাঙ্গনা মেলায় হারিয়ে এবং তারপর তার ভবিষ্যত প্রেমিকা দ্বারা পাওয়া গিয়েছে। বঙ্কিম -এর বর্ণনা না শুধুমাত্র উৎসবের একটি প্রাণবন্ত ছবি দেয় কিন্তু এটা ন্যায্য একটি রোমান্টিক সাহিত্য কবজ দিলেন। কথিত আছে যে, আজও এক ভগ্নান্তঃকরণ মেয়েটির দুঃখ বোধ করতে পারে। তাই মাহেশের রথের সাথে রাধারাণী এই নামটাও জড়িয়ে গেছে বহুকাল ধরেই। 

আসলে এই রথ যাত্রা হলো মিলন দিবস। ভক্তের দল তাদের প্রভু জগন্নাথকে যিনি জগতের নাথ তাঁকে নিয়ে পথ পরিক্রমা করেন। যে পরিক্রমা নিয়ে সেই বিখ্যাত লেখা মনে পড়ে যায় -

পথ ভাবে দেব, রথ ভাবে আমি।
মুর্তি ভাবে আমি দেব, হাঁসে অন্তর্যামী।

সত্যিই তো আমাদের জীবনের সেই অন্তর্যামী যিনি আমাদের অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ সব কিছু জানেন। সবার অলক্ষ্যে তিনি রথে চড়ে হাসেন। আর ভাবেন সত্যিই কি বোকা আমরা। 

জয় জগন্নাথ - অভিজিৎ বসু।
সাত জুলাই, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...