অসুস্থ অবস্থায় চলে এলাম বোলপুরে কবির ভাষায় প্রাণের আরাম এর জায়গায়। কর্মহীন জীবনে কোনও দৌড় নেই। খবর ধরানোর তাড়া নেই। কারুর কড়া নজরদারি নেই। ঘন ঘনও মোবাইল ফোনের বাজনা নেই। একদম অবসর জীবন।যারা রাতদিন ফোন করতো তারাও জেনে গেছে একে আর কাজে লাগবে না তাদের কারুর কোনোদিন।তাই ধীরে ধীরে আবছা আলোয় আলোকিত মানুষ বড় দূরে সরে যায়।বড়ই অচেনা লাগে এই সব মানুষদের। আমরা তো মানুষ সবাই। হাত পা ওলা যন্ত্র নই। তবু কেমন জানো মনে হয় এই সব মানুষদের নিয়ে এদের পাশে বেঁচে ছিলাম এতদিন। যাদের অস্তিত্ব শুধু গুপি গাইন বাঘা বাইন এর মামদো ভূতেদের মত।যারা আবছা আলোয় আলোকিত হয়ে কখনও হাত পা নেড়ে বলে আমরা সবাই বন্ধু। কিন্তু আদতে আমরা বন্ধু নই। শুধু মামদো ভূতের মতো হেসেছি আর বলেছি কি সব ভালো তো।
এই জন্য কি ভগবান মানুষ তৈরী করলেন। ভুতের মত বাঁচবো বলে কে জানে।হয়তো ভগবান ভাবছেন কি জন্য যে এই কাজ করতে গেলাম কে জানে। গভীর রাতে ভগবান ভাবছেন কি করতে কি করলাম আমি। সত্যি বলছি চাঁদনী রাতে মামদো হয়ে বাঁচতে হবে এটা ভাবলে আমার কান্না পায়।বুকের ভেতরের ছোট্ট যন্ত্রটা চিন চিন করে।অনেক কিছুই হারালাম আমি আর অনেক বেশি চিনলাম।আর তাই মনে হয় আমার এই কর্মহীন জীবনে অনেক বেশি চিনলাম নিজেকে।
যেখানে নিঝুম রাতের অন্ধকারে সাদা পেঁচার ডাক শুনতে পেলাম। তাদের ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ মন ভালো করে দিলো।কমলো বুকের চিন চিন যন্ত্রণা। ভাবলাম না মামদোরা বোধহয় এসব শুনতে পায়না।তারা জানে না জীবনের মানে শুধু হাত পা নাড়া নয়।জীবনের জলতরঙ্গ অন্য কাউকে আনন্দ দেওয়া। অন্যকে ভালোবাসা।রাতের আকাশ দেখে জানলা দিয়ে চোখ বুজে বসে থাকা।এই নৈঃশব্দ্য কে অনুভব করা। রাত পোহালেই ভোর আসবে।আলোকিত হবে আমার প্রাণের অস্তিত্ব। যেখানে কোনো কষ্ট যন্ত্রণা থাকবে না। জীবনের এই ওঠা নামা অনুভব করে ভালো লাগলো।
কত অচেনা মানুষ চেনা হয়ে সামনে এসে দাঁড়ায় বলে কি ভালো আছেন। অনেকদিন পর দেখলাম। আরো কমে বুকের ভেতরের চিন চিন ব্যাথা।আমি ভাবছি এরা মনে হয় বাঁশ বনের সেই মামদো ভুত নয় এরা সত্যিই হাত পা ওলা মানুষ। এটা ভেবে নিজের ভুল স্বীকার করি রাতের অন্ধকারে চুপি চুপি ভগবান এর কাছে। ভুল স্বীকার করি রাতের অন্ধকারে ভগবান এর কাছে আমার ভাবনা ভুল ঠিক কাজ করেছেন তিনি হাত পা ওলা মানুষকে গড়েছেন। যারা এই সব মামদো দের ভীড়ে মিশে আছে যাদের চিনতে হবে কথা বলতে হবে মিশতে হবে। তাহলে অনুভব করা যাবে না সত্যি এই পৃথিবী আজ সুন্দর। একদম খারাপ হয়ে যায়নি।
রাতের ঘড়ি টিক টিক করে জানান দেয় এই তো ঠিক বুঝেছ তুমি। ফালতু এই সব ভেবে কেন কষ্ট পাও তাহলে।আমায় কেউ পাত্তা দেয় না আমি কি কষ্ট পাই তার জন্য।আমি টিক টিক করে চলি।ঘুরে যাই নিজের মত।জানি আমি একদিন আমার ছুটি হবে।আমি কষ্ট পাবো না তোমার মত।কারণ আমার আবেগ নেই আমি জানি কি করে চলতে হয়। শুধু এটা জানবে দিনের শেষে রাত আর রাতের আকাশ পরিষ্কার হলে সূর্য ওঠে।আর সেই আলোয় আলোকিত হয় সবাই।
সত্যি বলেছে ঘড়ি আমি দেখলাম নিকষ কালো অন্ধকার কাটছে ধীরে ধীরে ফিকে একটা আলোর আভা ছড়িয়ে পড়ছে গোটা আকাশ জুড়ে। জানলার পাশে নিম গাছের পাতা হালকা কেপে উঠল আর বললো ভয় কি আমি আছি তো।আমি কেঁদে ফেললাম বললাম তুমি তো মানুষ নয় গাছ।তাহলে তুমিও আমাকে ভরসা দিলে কেন। বৃদ্ধ নিম গাছ বললো সেতো আমি আমরা বন্ধু সবাইকে দিচ্ছি।তোমরা বোঝনা আজ তোমার যন্ত্রণা হচ্ছে তাই হয়তো আমার দিকে তাকালে।দেখলাম সত্যিই ভালো করে দেখিনি ঘরের বাইরের এই গাছকে যে আমার বন্ধু।বুকের চিন চিন ব্যাথা একদম কমে গেলো।চোখ থেকে একফোঁটা জল টুপ করে বালিশে গড়িয়ে পড়লো।এটা বোধহয় যন্ত্রণার কষ্টের জল নয় আনন্দের আতিশয্যে আমার চোখ বুজে এলো কান্নায়।
সত্যিই আজ এই রাতের আকাশ আমায় অনেক কিছুই চিনতে শেখালো।মন্দিরে ঘণ্টা বাজলো , দুর থেকে ভেসে এলো আজান এর আওয়াজ।আরো একটু পরিষ্কার হলো আকাশ। সাদা লক্ষী প্যাঁচা উড়ে চলে গেল দূরে। কর্কশ স্বরে কাক এর আওয়াজ জানান দিল ভোর হয়ে গেছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন