সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সাংবাদিকের মার খাওয়া ও প্রতিবাদ

সাংবাদিকের মার খাওয়া নিয়ে এই প্রতিবাদ সভার ডাক। দেখলাম সমাজ মাধ্যমের দেওয়ালে ঝুড়ি ঝুড়ি পোস্ট। এক দম ঠিক দীঘার সমুদ্রের ঢেউ এর মত আছড়ে পড়ছে তা ফেসবুকের দেওয়ালে। প্রতিবাদ সভায় আমন্ত্রণ জানিয়ে ডাক পেলাম আমিও। এমনকি আমি সাংবাদিকতা পেশা ছেড়ে দিলেও, টোটো চালক হলেও কলকাতার একজন খুব বিখ্যাত সাংবাদিক আমায় প্রতিবাদ সভার খবর দিলেন আচমকাই। আমি আমার মোবাইলে সেই ডাক পেয়ে একটু অবাকও হলাম বটে।
আমার মনে পড়ে গেলো বহু দিন আগের কথা। সবে তখন নতুন চ্যানেল এর চাকরি জুটেছে আমার অনেক কষ্ট করে। সালটা,1999 সাল। কোনো দাদা দিদির হাত না ধরেই সেই চাকরি পাওয়া আমার। এমনকি কোনো রাজনৈতিক দাদা, দিদির সাহায্য না নিয়ে সেই চাকরি জোটানো। বলতে পারেন তখন আমার রক্ত ফুটছে  একে বারে টগ বগ করেই। আমার হাতে নতুন চ্যানে- লের বুম। দুচোখে স্বপ্ন, সবাইকে এইবার দেখে নেবো। বুঝে নেবো এবার। কারণ গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের একটা ছোট শরিক এখন আমিও। ছোটো যাই হই আমি, আমার বুকের পাটা অনেক বড়। আর ক্ষমতা অসীম। তাই নেমে পড়লাম মাঠে আমিও।
দিনটার কথা আজও মনে আছে আমার 2000 সালের 10 আগস্ট। হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় পুরভোট। সকাল থেকেই আমি আমার ক্যামেরামান সৌরভ ব্যানার্জীকে নিয়ে মোটর সাইকেলে করে ঘুরছি।এদিক ওদিক থেকে খবর আসছে এখানে ভোট দিতে গিয়ে দিতে পারছে না কেউ। সিপিএম ঝামেলা পাকাচ্ছে ভোট কেন্দ্রের সামনে। খবর পেয়েই দৌড়ে গেলাম সেই কোতরঙ ভদ্রকালী হাই স্কুলের সামনে। আমি মোটর সাইকেলের পেছনে বসে আছি। সৌরভ গাড়ী চালাচ্ছে। আচমকা জনা কয়েক যুবক এসে আক্রমণ করলো আমাদের। ঘিরে ধরলো আমাদের দুজনকে। আমায় পেছন থেকে টেনে নামিয়ে এলো পাথারি‌ মারতে লাগলো ওরা। আমি পড়ে গেলাম মাটিতে। একজন পিস্তল হাতে আমায় বললো শালা সাংবাদিক গিরি ঘুচিয়ে দেবো তোর। ফলস ভোটের ছবি তোলা।বুঝবি কত ধানে কত চাল এবার। আমার মাথাটা কেমন করছে। টলমল করছে মার খেয়ে। চোখের সামনে সব কেমন ঝাপসা হয়ে আসছে। দু চোখের সামনে সব স্বপ্ন যেনো ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে আসছে আমার। তাহলে কি ওরা আমায় মেরে ফেলবে এই বার। সৌরভ কোথায় কে জানে। পড়ে গেলাম মাটিতে আমি। নর্দমার সামনে, অচৈতন্য অবস্থায়। তারপর আর কিছুই মনে নেই আমার।
অনেক পরে যখন জ্ঞান এলো দেখলাম উত্তরপাড়া হসপিটাল এর বেডে শুয়ে আছি আমি। স্যালাইন চলছে। চারিদিকে অনেক পরিচিত মুখ যারা জেলায় আমার সব সিনিয়র সাংবাদিক তারা দাঁড়িয়ে আছে সবাই আমায় ঘিরে। কিছু পুলিশ যারা সব পরিচিত আমার। কিছু রাজনৈতিক নেতাও আছেন। কিন্তু এরপরেও আরো ঘটনা বাকি ছিল বোধহয়। একটু সময় পরে সবাই যে যার কাজে চলে গেলো আমি বেড এ শুয়ে একা ভাবছি সত্যিই কি হলো। কেনো এমন হলো। এই জন্য কি সাংবাদিকতা পেশায় এলাম আমি।
আচমকা হল্লা শুনলাম আমি নিচে। তারপর দেখলাম একদল উন্মত্ত রাক্ষুসে জনতা কোথায় মালটা,কোথায় রে। শালা কে মেরে ফেল, বলে কাঠের সিঁড়িতে  আওয়াজ করে ওপরে আসছে তারা দ্রুত। একটু যেনো কেমন অসহায় লাগলো আমার নিজেকে। আচ্ছা এই জন্য কি সাংবাদিক হলাম অবশেষে। সত্যিই বলতে গিয়ে মার খেতে হবে, ওদের হাতে বার বার। জীবন বাজি রেখে কাজ করতে হবে তবুও। কেনো ছাপ্পা ভোটের অধিকার যাদের হাতের জাদুতে সংগঠিত হয়, তাদের ছবি তুলতে গিয়ে জীবন বিপন্ন করতে হবে কেনো আমাদের বার বার। আসলে এটাই দস্তুর হয়ে গেছে বোধহয় রাজনীতির আঙিনায়।

বোধহয় তাই, না হলে কি আর রাস্তা থেকে ওরা দৌড়ে দলবল নিয়ে এসে। আবার হসপিটালে ধাওয়া করবে কেনো আমায়। হয়তো আমার জীবন ছিল, তাই কোনো ভাবে বেঁচে গেলাম সেদিন আমি। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতির সামাল দিলো সেদিন। না হলে হয়তো মরেই যেতাম আমি সেদিন। সেই সময় যিনি আমায় বাঁচালেন, তার নাম না বললেই নয়, তিনি সেই সময় এস ডি পি ও শ্রীরামপুর ছিলেন, সুপ্রতিম সরকার।

এরপর উত্তরপাড়া হসপিটাল থেকে আমায় পুলিসি পাহারায় নিয়ে যাওয়া হলো শ্রীরামপুর ওয়ালস হাস- পাতালে।সেই সময় যিনি আমায় সাহায্য করলেন তিনি প্রয়াত তৃণমূল নেতা সংসদ আকবর আলী খন্দকার। আর একজন যিনি আকবরদার চেলা বা অনুগামী যাই বলি না তাকে আমার বন্ধু সেই দিলীপ যাদব। আজ যিনি উত্তরপাড়া পুরসভার পুরপ্রধান। পরে আমি জেনেছিলাম ,আকবর দাকে বার বার ফোন করে আমার খবর নিয়েছিলেন নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেই দিন। আমার বেশ ভালো লেগেছিলো এসব পরে শুনে।

পরদিন সকালে ঘুম ভাঙলো আমার। পুলিশ পাহারা দিচ্ছে আমার কাছে। একদম ভি আই পি মনে হলো নিজেকে।কাগজে কাগজে প্রথম পাতায় আমার ছবি।রাতের পাহারা দেওয়া পুলিশ গুলো কেমন অবাক সম্ভ্রমের চোখে আমায় দেখছে। সব কাগজে আমার ছবি বেরিয়েছে। এই সব দেখে কেমন ভি ভি আই পি মনে হলো আমার নিজেকে। মনে হলো যাই কেলানি খাই আমি ওদের হাতে। বেশ একটা ভালো লাগার শির শিরে অনুভূতি কুল কুল করে বইতে লাগলো আমার সারা শরীরে। মনে মনে ভাবলাম আমি, এই জন্য কি লোকে সাংবাদিক হতে চায়। অনায়াসে যে পাতি পাড়ার নেবু বা গবু থেকে নেবু চন্দ্র হয়ে যাওয়া যায় এক ধাক্কায় এই লেবেল প্লে করে। বা মিডিয়ার লেবেল প্লে করে নিজের চারপাশে।

ততক্ষণে হসপিটালে দেখা করতে এসে গেছেন কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান থেকে শুরু করে আরও অনেকেই। এসেছেন প্রবীর ঘোষাল এর মত বিখ্যাত সাংবাদিক। যাঁকে বর্তমান কাগজের সম্পাদক বরুণ সেনগুপ্ত পাঠিয়েছেন নাকি আমার খবর নিতে। তিনি নাকি বলেছেন, বুকে সাহস নিয়ে আর শিরদাঁড়া সোজা করে কাজ করো। ভয় পেওনা কাউকে। এই বার্তা দিলেন প্রবীরদা আমায়। বরুণ সেনগুপ্তর সেই কথা আমার কচি মনে বেশ ধরেছিল ভালো। যা পরে মেনে চলেছি আজও আমি। ভয় না পেয়েই কাটিয়ে দিলাম এত গুলো বছর।

সেই সময় বর্তমানের হুগলি জেলার রিপোর্টার ছিলেন দেবাঞ্জন দাস। প্রতিদিনের তরুণ মুখোপাধ্যায়। আনন্দবাজারের গৌতম বন্দোপাধ্যায়। আর খাস খবরের ফাল্গুনী বন্দোপাধ্যায়।আজকাল এর নীলরতন কুন্ডু।আর এর মধ্য যার কথা না বললেই নয় তিনি আমার বস ইটিভি র প্রধান লোক আশীষ ঘোষ দা। যিনি সব সময় রক্ষা করে গেছেন আমায়। কী অবস্থা আমার, খবর নিয়েছেন সব সময়। তাঁর সাহায্য ছাড়া এই ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজ করার সাহস পেতাম না আমি কোনো দিনই।

বেশ কিছুদিন ভালো ভাবেই হৈ হট্টগোলে কেটে গেল আমার। পুলিশ কেস করলো। আমাদের তোলা ছবি দেখে দু-একজনকে ধরাও হলো। তারপর ধীরে ধীরে সব ফিকে হয়ে গেলো। কলকাতা প্রেস ক্লাবের তরফে সেই সময় বড়ো মিছিল করা হলো। সেই সময় সাংবাদিক নিগ্রহের বিরুদ্ধে পথে নামলো কলকাতার সব হাউজের সাংবাদিকরা। এমনকি সুমন চট্টোপাধ্যায় ও নাকি কলকাতার রাস্তায় হাঁটতে নেমে পড়েছিলেন এই ঘটনার পরে। সে সব আজ অতীত অধ্যায় আমার সাদা জীবনের কালো কথায়।

দেখতে দেখতে জীবনের প্রায় পঁয়ত্রিশটা বছর কাটিয়ে দিলাম আমি এই পেশায়। এই গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের একটা পায়া ধরে আঁকড়ে ঝুলে কোনো রকমে। কোনো ভাবে একটা অজানা,অচেনা নেশায়। আমি শুধু মাত্র এটা জানি যে, একজন রিপোর্টার মার খাবে  রাজ- নৈতিক দলের নেতার কাছে এটাই তার সাংবাদিক জীবনের ভবিতব্য। কিন্তু তারপরেও সে সব কিছু ভুলে সত্য খবর পেলে দৌড়ে যাবে আবার। সেই খবরকে প্রকাশ করবে সে, কারুর কাছে মাথা নিচু না করেই। কারুর ভয়ে ভীত না হয়েই। এটাই বোধ হয় তাদের এই পেশার স্বাধীনতা। যে স্বাধীনতা তারা ভোগ করে বেঁচে থাকে কষ্ট সহ্য করেও, রাজ নৈতিক নেতার কাছে মার খেয়েও। যে কারণে তারা হাজার কষ্ট যন্ত্রনা সহ্য করেও এই পেশায় লড়ে যায়, দাঁতে দাঁত চেপে পড়ে থাকে। 

সেখানে এটা ভাবা বৃথা যে, সে যে কোনো দল বাম, ডান সে যে দলই হোক। যারা ক্ষমতার দম্ভে নিজেদের অস্তিত্ব বুঝিয়ে দিতে চায় সকলকে জোর করে। যারা একসময় সাংবাদিকদের বন্ধু থাকলেও, সামান্য ক্ষমতা পেয়ে যারা সংবাদ মাধ্যমকে নিজেদের ব্যক্তিগত কুলুঙ্গির সম্পত্তি মনে করে। তাদের কাছে আর যাই হোক আমার মনে হয় সাংবাদিক নিগ্রহের বিচার চাওয়া অর্থহীন হয়ে যায়। কথায় আছে না যেই যায় লঙ্কায়, সেই হয় রাবণ। 

আসলে কি জানেন একটা কথা আছে, আমরা ছাপবো আর ওরা চাপবে। এটাই হলো আসল সাদা জীবনের কালো কথা। একজন সাংবাদিক গভীর গোপন কথা ছেপে দেবে তার নিজের কলজের জোরে। কারুর কাছে মাথা নিচু না করেই। কাউকে জিজ্ঞাসা না করেই। কারুর অনুমোদন না নিয়েই। বা কারুর সবুজ সংকেত না নিয়েই। 

আর সরকার বাবু, সেটা আটকাতে যে কোন মূল্যে তা প্রতিহত করবে। সে মার দিয়ে হোক। ধমকি দিয়ে হোক। ভেট দিয়ে হোক। মানে আপনাকে কিনে নিয়ে হোক। এটাই হলো আসল কথা। আর এই দু পক্ষের টানাপোড়েন নিয়েই, আমাদের দুচোখে স্বপ্ন দেখা গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের শরিকদের লড়াই চলবে আজীবন, আমৃত্যু।

সাংবাদিকের মার খাওয়া ও প্রতিবাদ - অভিজিৎ বসু।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...