আজকের সাদা জীবনের কালো কথায় একজন কালারফুল বয় এর কথা। রাজনীতির ময়দানে যে সত্যিই রঙিন মানুষ। একদম রঙিন রংবাজ রাজনীতির ময়দানে অন্যতম এক নেতা। যার কাছে অবারিত দ্বার সবার। যে কোনো দরকারে প্রয়োজন হলে যাকে নির্দ্বিধায় বলা যায় দিনে, রাতে, যে কোনো সময়। বিশেষ করে কোনো রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হলেই যার নাম মনে পড়ে যায় সবার সেই মদন মিত্র।
কিন্তু আজ ফেসবুকে মদন মিত্রের একটি ছবি দেখে মনটা বড়ো খারাপ হয়ে গেলো আমার। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তিনি। বাংলা রাজ- নীতির এই বর্ণময় নেতার এমন শরীরের অবস্থা দেখে খারাপ লাগলো খুব। বিধানসভায় এসেছিলেন দেখলাম তিনি। সেই সবুজ জামা,চোখে কালো রঙের রোদ চশমা। কিন্তু শরীর টা একদম ভেঙে গেছে মদন দার।
স্মৃতির সরণি বেয়ে পিছিয়ে গেলাম আমি। কত বছর হবে প্রায় ত্রিশ বছর আগের কথা তো বটেই। চব্বিশ চৌরঙ্গী রোডের সেই ছোট্ট অফিস। মদন মিত্র তখন ডাকাবুকো কংগ্রেস নেতা। প্রিয় রঞ্জন দাস মুন্সীর অনুগামী। ট্যাক্সি ইউনিয়নের অফিস এই ছোট্টো অফিস হলো এই জায়গায়। সবে কিছুদিন হলো কলকাতায় ছোটো কাগজে কাজ পেয়েছি। গুটি গুটি পায়ে হাজির হয়েছি কিছু খবরের আশায়।
সাদা জুতো, সাদা জামা। চোখে এক স্টাইলে কালো চশমা পরে অফিসে এলেন ঠিক সন্ধ্যার আগে। কি খবর ভাই। ভয়ে ভয়ে নিজের কাগজটা এগিয়ে দিলাম। একটা ছোটো খবর বেরিয়েছে। আপনাকে দিলাম। সেই শুরু আলাপ পর্ব। কথা বলতে বলতেই অফিসে হাজির কুণাল ঘোষ। হাতে সংবাদ প্রতিদিনের সান্ধ্য কাগজ নিয়ে। আলাপ, গল্প, নানা কথা এই ভাবেই ধীরে ধীরে আমি মদন দার কাছের লোক হয়ে গেলাম। ঘরের লোক হয়ে গেলাম।
তাই একদিন সেই মনীষা অন্তর্ধান রহস্যের কথা বলতে গিয়ে গোটা একটা ফাইল দিয়ে বললেন এতে যা আছে লিখে শেষ হবে না ভাই। যা লিখে ফেল পারলে।আসলে বলতে নেই সেই শুরু তারপর ধীরে ধীরে নতুন চাকরি পাওয়া ইটিভির। নানা ভাবে সেই চৌরঙ্গীর অফিস আর ভবানীপুরের অফিসটাই মদন দার রাজনীতির আসল ঠেক।
কলকাতা ছেড়ে জেলায় যাবার পরেও যোগাযোগ থাকতো মদন দার সাথে। তবে একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে গেলো। একবার খুব অসুস্থ হলাম আমি। আর্থিক ভাবে খুব খারাপ অবস্থা আমার সেই সময়। সেই সময় দীর্ঘদিন কলকাতা যেতে পারছিনা আমি। সোজা কলকাতা থেকে মদন দা গাড়ি নিয়ে আমার রিষড়ার টালির এক চালার বাড়িতে হাজির। হাতে ফলমূল আর ওষুধ নিয়ে। আমি অবাক, আমার মা বাবা আপ্লুত। একজন গরীব সাংবাদিক হইনি সেই সময় তার খবর নিতে সোজা কলকাতা থেকে ছুটে আসা মদন দার। বলতে হবে এটাই স্বাভাবিক ছিল তাঁর কাছে। যে কোনো লোকের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়া। সে যে দলের লোক হোক এটাই বর্ণময় মদন দা।
আমি এরপর ইটিভির কাজ পেলাম। মদন দার সাথে দেখা হলেই গরম গরম কথা বলে বাজার গরম করতেন তিনি। উত্তরপাড়াতে রামঘাটে সেই প্রতিবন্ধী দের নিয়ে যে সংস্থা হয়েছিল সেই উত্তরপাড়ায় আসতেন নানা অনুষ্ঠানে। খবর করে দিতাম গোপাল চট্টোপাধ্যায় খবর দিতেন আমায় দাদা আসবেন। যোগাযোগ আরো ভালো হয়ে গেলো সেই সময় থেকেই। আর তারপর সিঙ্গুরের জমি দখল এর সময় মদন দার সাথে প্রতিদিনের যোগাযোগ। প্রতিদিন খবর। গরম গরম বাইট। সিপিএমের চামড়া গুটিয়ে ডুগডুগি বাজানোর কথা বলে খবরের হেডলাইনে জায়গা করে নেওয়া এটাই হলেন মদন মিত্র।
বলতে নেই গোটা সিঙ্গুরের আন্দোলনে বহু নেতাই মমতার সাথে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু সাংবাদিকদের সাথে সু সম্পর্ক ছিল বেশি জনপ্রিয় ছিলেন মদন দা। খবর কি করে করতে হয় সেই টেকনিক ভালই জানতেন তিনি। আমার আজও মনে আছে অনশন মঞ্চ থেকে কলকাতা থেকে তাপসী মালিক মারা যাওয়ার খবর পেয়ে মদন দা আমায় তাঁর ফোন থেকে মমতার সাথে কথা বলিয়ে দেন আঠারো ডিসেম্বর ভোর চারটের সময়। বলেন এই ধর ফোন, দিদি কথা বলবেন তোর সাথে। তারপর তো সবটাই ইতিহাস।
তাপসী মালিক এর সেই আধপোড়া দেহের ছবি হয়েছিল অনেক কষ্ট করে। সেদিন ওই শীতের ভোর বেলায় চারটার সময় ফোন না করলে তাপসীর ঝলসানো দেহের ছবি হতো না মনে হয়। এটাই মদন দা। কিন্তু মাঝে একটু সম্পর্কে অবনতি হলো সিঙ্গুরে বড়া মোড়ে তৃণমূলের সভায় আমার ক্যামেরাম্যান মিন্টে ভালো নাম জ্যোতির্ময় বোস এর মার খাবার পরে। সেটা তৃনমূল সমর্থকদের আক্রমণে হলো। মিন্টেকে শ্রীরামপুরের ওয়ালস হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। ভয়ঙ্কর অবস্থা ওর।
সেই সময় হাসপাতালে দেখতে এলো মদন দা আর পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আমার মাথায় তখন রাগ ফেটে পড়ছে। যারা মারলো তারা আবার ফুল নিয়ে দেখা করতে এসেছে। খুব চিৎকার করলাম ওদের দেখে। গাল দিলাম খুব। ফুল নিয়ে দেখা করার কোনো দরকার নেই। বলে মদন দা আর পার্থ দাকে প্রায় ঘাড় ধরে বের করে দেবার অবস্থা হলো হাসপাতাল থেকে। সত্যিই বলতে কি আমার ক্যামেরাম্যান এর ওই অবস্থা দেখে আমার মাথার ঠিক ছিল না সেই দিন। খালি ভাবছিলাম যদি কিছু হয়ে যায় ওর। তাই একটু মাথা গরম করে চিৎকার করে ফেলি। যদিও মদন দা, পার্থ দা কিছু বলেন নি আমায় সেদিন।
পরে অফিস এর কলকাতার সাংবাদিক জয়ন্ত চৌধুরীকে বলেছিলেন এই কথা পরে শুনেছিলাম আমি। যাই হোক পরে সরকার বদল হলো মদন দা মন্ত্রী হলেন পরিবহন মন্ত্রী। কলকাতায় রাইটার্স বিল্ডিং এ দেখা হলো। সেই এক স্টাইলে পায়ে সাদা জুতো। পরিপাটি করে চুল আঁচড়ানো। সাদা পাঞ্জাবি বা রঙিন নানা রঙের পাঞ্জাবি।একদম রঙিন মানুষ মন্ত্রী মদন মিত্র। গট মট করে হেঁটে যাচ্ছেন করিডোর ধরে একদম জীতেন্দ্র স্টাইলে।
সেই মদন দার এই ছবিটা ফেসবুকে দেখে খুব, খুব খারাপ লাগলো আজ আমার। বেশ কিছু দিন আগে তাঁর ফেসবুক লাইভে দেখছিলাম তাঁর আকুল আবেদন মা আমার শরীরটা সুস্থ করে দাও। সত্যিই তো এই রকম একজন ডাকাবুকো নেতা সে আজ শরীরের নানা রোগে কাহিল। স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফিরতে পারছেন না কিছুতেই। ভাবলেও কেমন লাগে যেনো।
জীবন সত্যিই খুব অনিত্য । এই এত ক্ষমতা, এত অর্থ, সবটাই কেমন ইতিহাস হয়ে যায় এক লহমায়। আজ মদন দাকে দেখে সত্যিই মনটা বড়ো খারাপ হয়ে গেলো। রফিক এর করা পোস্ট থেকে ছবিটা নিয়ে এত গুলো কথা লিখে ফেললাম আমি তাই। আরো অনেক কথা হয়তো লিখে বলা যেত সেগুলো না হয় পরে লিখবো।
ভালো থাকবেন আপনি দাদা। দ্রুত গতিতে সুস্থ হয়ে আবার রাজনীতির ময়দানে নামুন দাদা আপনি। আপনার সেই গা গরম করা কথা হুংকার ছাড়া কি আর বাংলার ভোটের ময়দান জমে দাদা।
ভালো থাকবেন আপনি। দ্রুত সুস্থ হয়ে আপনি আবার আগের মত কোমর বেঁধে নেমে পড়ুন বাংলার ভোট ময়দানের রাজনীতিতে। যেখানে আপনার মত বর্ণময় নেতার আজও খুব দরকার আছে। এমন পরের কথা ভেবে ঝাঁপিয়ে পড়া নেতার আজ বড়ো আকাল যে।
মদন মিত্র - অভিজিৎ বসু।
সাতাশে মার্চ, দু হাজার চব্বিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন