সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হাট বসেছে শনিবারে

হ্যাঁ, সেই ছোটবেলায় পড়া এই হাট বসেছে শুক্রবারে নয়। আর বকশীগঞ্জের পদ্মাপাড়েও নয়। এই হাট বসেছে সতীপীঠ মা কঙ্কালীতলায় শনিবারে। মন ভালো করা আকাশে তখন থোকা থোকা মেঘের ইতিউতি আনাগোনা। কেমন যেনো সবুজের মাঝে তুলি দিয়ে আঁকা ক্যানভাসে জলরঙের জলছবি। মন ভালো করা মেঘলা আকাশ দেখতে দেখতে এগিয়ে চললাম আমরা তিনজন বোলপুর থেকে সতীপীঠ মা কঙ্কালীর কাছে তাঁর দরবারে। সেই তিন চাকার টোটোতে চেপে যা আমার খুব পছন্দের। 

দরদাম করে বোলপুর থেকে ভাড়া নিলো যেতে দেড়শো টাকা।তবে এই মায়ের মন্দিরে যাত্রা এবার আর পূজো দিতে নয়। আগে তো কতবার পূজো দিতে মার কাছে গেছি। একেবারে হাটে বসে লাজ, লজ্জা আর ভয় তিন থাকতে নয় এই সত্য কথাকে কাটিয়ে রাস্তায় মাটির উপর বসে দেখতে গেলাম। সত্যিই কি অবস্থা হয় আমাদের যাচাই করতে। আমরা কি পারবো অবশেষে মাটিতে নেমে পড়তে। যে কথা বার বার আমায় শৌনক বলেছে। কিন্তু সেটা পারিনি আমি।প্লাস্টিক পেতে বসতে পারবো কি অন্য আর পাঁচ জন সাধারণ গ্রামের লোকদের মধ্যে। কোনো জড়তা সঙ্কোচ হবে না তো আমার।

 সত্যিই বলতে কি জানেন, যে মানুষটা এই বাড়িতে সব থেকে বেশি কুঁড়ে সেই লোকটাই যে দীর্ঘ পাঁচ বছর কোনো কাজ না করতে পেরে কেমন যেন বুড়ো হয়ে যাচ্ছে দিন দিন সেই মানুষটার কোনো জড়তা সঙ্কোচ বোধ হয়নি একদম আজ। কি সুন্দর ওই যে আমার পাশে বসা একজন মহিলা বাড়ী থেকে লেবু এনে বসে পড়েছেন গাছের নিচে। যে সবুজ লেবু হলদে হয়ে গেছে। যার সাথে যেচে কথা বললাম আমি। আর যখন ঝেঁপে বৃষ্টি নামলো তখন কত অচেনা অজানা মানুষ কেমন যেনো বৃষ্টির মাঝে সবাই মিলে এক হয়ে মিশে গেলাম এক ছাদের তলায়। সত্যিই খুব ভালো লাগলো। এই আমার জীবনের সাথে অন্য পরিচয়হীন জীবনের মিশে একাকার হয়ে যাওয়া সেটার মজাই আলাদা।


চেনা না হলেও, বিক্রি বাটা না হলেও কেমন যেন মাদলের তালে গাছের নিচে সবাই মিলে একসাথে বসে থাকার মধ্য একটা জিনিস পরিষ্কার হলো যে এই ভাবেই তো মানুষ মানুষকে ভালোবেসে ফেলে পরিচয়হীন হলেও। জেনে নেয় তার গ্রামের নাম ঠিকানা ঘর কোথায় সে কথা। আসলে এই যে জীবন এর খোঁজ পাওয়া যা আমার বেশ ভালো লাগলো এদিন। হয়তো বিকি কিনি হলো না কিছুই। যেতে আসতে খরচ হলো তিনশো টাকা। কিন্তু তার মাঝে এই যে বৃষ্টি ভেজা অনুভূতি তার মজাই আলাদা। 



ওই যে মাদল গলায় ঝুলিয়ে হাসি মুখে ঘর থেকে আনা পান্তা ভাত খেয়ে অপেক্ষা কখন থামবে বৃষ্টি সেই সোনা মুর্মুর। আবার সে বাজাবে মাদল। নাচবে তার প্রাণের পাথর খোঁদা সুন্দরী তার একমাত্র নয়নের মনি ফুলমণি। আর তারা অপেক্ষা করবে যদি কিছু টাকা আয় হয় এই আশায় দিন কেটে যায় ওদের। তাই আকাশ পানে ঘন ঘন দৃষ্টি ওদের কখন থামবে বৃষ্টি। 


এর মাঝেই বুটা কালো প্লাস্টিক বিছিয়ে নিজের  তৈরি জিনিস সাজিয়ে বসে পড়েছে ধীরে সুস্থে একটা গাছের নিচে। সত্যিই কি সুন্দর লাগছে ওকে দেখে দুর থেকে দেখলাম ওকে। ধীরে ধীরে মেয়েটা কেমন বদলে গেলো। বড়ো হয়ে গেলো আর আমি বুড়ো হয়ে গেলাম। সারা জীবন অবুঝ থেকে গেলাম আমি। কিন্তু ও কেমন বুঝদার হযে যাচ্ছে ধীরে ধীরে ওর মার সাথে থেকে জীবনের এই ব্যালেন্সের খেলায়।


শুধু বুঝলাম জীবনের এই সব পারিবারিক সম্পর্কের পরিমন্ডল ছেড়ে বেশিদিন দূরে থাকা বড়ো যন্ত্রণার। তাই তো বার বার ছুটে আসি আমি ওদের কাছে বোলপুরে। যে তিনটে জীবন হাজার দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণাকে সহ্য করেও একে অপরকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে এই ভাবেই। অবশেষে বৃষ্টি থেমে গেলো। আবার হাটে তৎপরতা শুরু হলো। কেউ জিনিস গুছিয়ে ঘরে ফেরার অপেক্ষায়। কেউ আবার বৃষ্টি ভেজা গাছতলায় বসে পড়লেন নতুন করে। 


সত্যিই তো জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত, প্রতিটা দিন যাপন যেনো এক অনন্য অনুভূতি এনে দেয় আমাদের। যে অনুভূতির অনুরণন আমায় শিক্ষা দেয় বার বার। জীবনকে দেখার শিক্ষা। সেই কথা মনে পড়ে যায় আমার আবার। যে কথা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় আমায় চিঠিতে লিখেছিলেন বহুদিন আগে। যে চিঠি আমি বহুদিন আগেই হারিয়ে ফেলেছি কোথায় জানি না। কিন্তু সেই চিঠির কথা আজও মনে গেঁথে আছে আমার। অভিজিৎ, জীবনকে দেখো জীবনই হলো সব থেকে বড় শিক্ষক। আমি বৃষ্টি ভেজা দুপুরে সেই জীবনকে দেখার শিক্ষা নেবার চেষ্টা করছি আজও, এতদিন পরেও। 

হাট বসেছে শনিবারে - অভিজিৎ বসু।
বিশে জুলাই, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...