সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভালো থাকবেন আশীষ দা

সাদা জীবনের কালো কথায় নয় একদম সাদা জীবনের ভালো মুহূর্তের কথা। আজ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো এমন একজন মানুষের কথা যার নাম সংবাদ মাধ্যমের সবাই জানেন আপনারা। সে প্রিন্ট মাধ্যম বা খবরের কাগজের লোক হোক বা সেই বোকা বাক্স বা টিভি মিডিয়ার লোক হোক। 
আমরা যারা একটু আধটু বাংলা টিভি মিডিয়ার চটি চাটা সাংবাদিক না হয়ে একটু শিরদাঁড়া সোজা রেখে কথা বলতে জানি, চলতে জানি জীবনের পথে। সেটা সেই মানুষটার জন্য সম্ভব হয়েছে বলে আমার অন্তত ধারণা। কারণ অন্তত আমার জীবনে সেই মানুষটার অবদান অনস্বীকার্য। যে মানুষটা আমায় হাতে ধরে আমায় এই ইটিভির চাকরি না দিলে হয়ত আমার এই সাংবাদিক জীবনের এত নানা রঙের রোদ্দুর ঝলমল জীবনের সন্ধান আমি পেতাম না কোনোদিনই।
 আর তাই আজ শ্রদ্ধেয় আশীষ ঘোষ দার কথা আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় নয়, ভালো কথায়। যেখানে শুধু কিছু ভালো মুহূর্তের স্মৃতি রোমন্থন করে বেঁচে থাকি আমি আজ এই ভাবেই। আসলে কি জানেন তো হাজার হাজার চরিত্রের ভীড়ে এমন কিছু মানুষের সাথে জীবনের মোরাম রাস্তায় আপনার দেখা হয়ে যায়। আপনার তাদের আর সারা জীবন ভোলা যায় না কিছুতেই কোনো দিন। তাদের প্রভাবে প্রভাবিত হয় গোটা জীবন এর নানা সময়। নানা ঘাত, প্রতিঘাত ভালো, মন্দ সুখে দুঃখে তাঁর সাথে সব কিছুই যেনো  তাঁকে না বললে কেমন একটা অস্বস্তি বোধ হয় জীবনে। 
তাই আশীষদাকে আমি  ভয় পেতাম আমি একদম যমের মত আর সেটা বোধ হয় এখনো পাই। তেমনি শ্রদ্ধাও করি আমি তাঁকে। শুধু মানুষটার ওই শিরদাঁড়া সোজা রেখে চলার জন্য। যেটা পরে আমার মধ্য একটু হলেও সেটা সঞ্চারিত হয়েছে অল্প একটু। তাঁকে নিয়ে মুখবন্ধ লিখে হয়তো শেষ করা যাবে না কিছুতেই। কোনটা দিয়ে শুরু করবো আর কোনটা দিয়ে শেষ করবো হাতড়ে বেড়াচ্ছি আমি এই ভোরবেলায়। আসলে কি জানেন  সাংবাদিক অভিজিৎ বসু যে আজ হাবুডুবু খাচ্ছে মাঝ সমুদ্রে ওই মানুষটার কথা বলতে গিয়ে কারণ কোথা দিয়ে শুরু করবো ভেবে পাচ্ছি না আমি। 
আকাশবাণীর ক্যাজুয়াল কাজ করি সালটা ঊনিশশো নিরানব্বই। খবর পেলাম বাংলা চ্যানেল আসবে সেখানে জেলার সাংবাদিক নেওয়া হবে। আশীষ দা সেই সময় বর্তমান কাগজের কর্মরত সাংবাদিক ছিলেন। কোনো একসূত্র ধরে বর্তমানের সন্দীপন বিশ্বাসকে ধরে পৌঁছে গেলাম জোড়া গির্জার অফিসে। দুরু দুরু বুক নিয়ে। কাচের দরজার ওপরে অন্য জগতের সব সাংবাদিকরা ঘোরা ফেরা করছেন বাঘের মতো। একজন মহিলা রিসেপশনিস্ট আমায় স্লিপ লিখে জমা তাঁর কাছে জমা দেবার পরে বসতে বললেন। 
কিছুক্ষণ পর দরজা ঠেলে এলেন তিনি। একদম সাদা মাটা পোশাক। মুখে হাসি নিয়ে।অল্প দু একটা কথা হলো সেই দিন। বললেন যোগাযোগ রাখিস। বাস স্লিপে সই করে দিলেন আমায়। সেই প্রথম দর্শন আমার আশীষ ঘোষ দা কে। পরে সন্দীপন্দার হাত ধরেই তরুণ কান্তি দাস এর সাথে পরিচয় হওয়া। যে ইটিভির জেলার দায়িত্ব পালন করতেন। জেলা কো অর্ডিনেটর এর পদ ছিল তাঁর। তরুণদার হাত ধরেই গুটি গুটি পায়ে ইটিভির সেই তিন নম্বর চৌরঙ্গী স্কোয়ারে বুট জুতো জোগাড় করে আমার জুতো ছিল না নিজের ইন্টারভিউ দিতে যাওয়া দুরু দুরু বুকে।
 বসে আছি কখন নাম আসবে ডাক পড়বে আমার। অবশেষে ডাক এলো। দরজা ঠেলে ঢুকলাম একদিকে চেয়ারে বসে আছেন এস আর রামানুজন ডিরেক্টর আর অন্য দিকে সেই আশীষ ঘোষ দা। মামুলি এক মিনিটের ইন্টারভিউ ইংরাজি না জানা এক যুবকের জীবনের প্রথম ইন্টারভিউ। একটি প্রশ্ন হুগলি জেলার থেকে কতদূর এই কলকাতা সেটাও বোধ হয় তালে গোলে আর টেনশনে ভুল বলেছিলাম ইংরিজি বলতে গিয়ে। সেটাও শুধরে দিলেন আশীষ দা রক্ষা কর্তা হয়ে। বললেন চলে যা হয়ে গেছে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি ঘর থেকে বেরিয়ে।
অন্য সব জেলার সাংবাদিক নিয়োগ হয়ে গেছে সেই সময় ইটিভিতে। শুধু হুগলী জেলার জন্য একটাই পোস্ট একজনকেই ডাকা হলো ইন্টারভিউ তে যাতে আমি পাস করি ফেল না করি কোনো মতেই। যার জন্য আশীষ দা, তরুনকান্তি  দাস আর বর্তমানের সন্দীপন দার কাছে আমি সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। না হলে হয়তো হুগলি জেলার ইটিভির সাংবাদিক হওয়া আমার এই জীবনে আর হতো না। যে জন্যে আজ আমি সাদা জীবন আর কালো কথা, ভালো কথা লিখতে পারছি আজ। না হলে কোথায় যে হারিয়ে যেতাম ভেসে যেতাম কে জানে। 
ইন্টারভিউ পর্ব মিটে গেলো ভালোয় ভালোয়। কিন্তু চাকরির পাকা খবর আর আসে না। মাঝে মাঝেই দুরু দুরু বুকে রাস্তার টেলিফোন বুথ থেকে আশীষ দার বাড়িতে ল্যান্ড ফোনে করি দাদা ভালো আছেন। বলেন হ্যাঁ রে। কিন্তু পরের প্রশ্ন করার বুকের পাটা আমার ছিল না যে দাদা কোনো খবর আছে চাকরির। একদিন হায়দরাবাদ এর ঠিকানা থেকে সাদা খামে উড়ে এলো সেই কাঙ্খিত চিঠি। আমার কাজের নিয়োগ পত্র। তিন হাজার তিনশো একচল্লিশ টাকা বেতনে রিপোর্টার এর চাকরির খবর পেলাম আমি। মা এই চিঠি পেয়ে কতবার যে ঠাকুরকে প্রনাম করলেন সেটা আজও আমার মনে আছে। 
ভেসে যাওয়া একটা পরিবারের কাছে 1999 সালের 18 ডিসেম্বর এই চিঠির প্রাপ্তি ছিল বাঁচার ঠিকানার সন্ধান পাওয়া একটা দিন মাত্র। যে দিন আশীষ দা কে ফোন করলাম দাদা, চিঠি পেলাম আজ। ওপর প্রান্ত থেকে বললেন খুব ভালো কাগজপত্র নিয়ে কলকাতায় চলে আসিস আর খুব ভালো করে ফাটিয়ে কাজ কর। এটাই সাংবাদিক জীবনের একটা অধ্যায়ের যাত্রা শুরু হলো যার মূল মানুষটি হলেন এই আশীষ ঘোষ। 
এরপর তো শুধু খবরের জগতের মাঝে ভেসে যাওয়া। কিন্তু সকাল হলেই জেলায় জেলায় সেই ফোনে কথা বলতেন তিনি কি রে আজ কি আছে রে।  এই ফোন এলেই কেমন বিছানায় শুয়ে থাকলেও লাফিয়ে উঠে পড়তাম আমি ভয়ে ভয়ে। সেই ভয় আজও আছে আমার। যেটা বোধ হয় বুড়ো বয়সে কাটবে না আর কোনো দিন একদিকে ভয় অন্য দিকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। 
আজও মনে পরে আমার এই রথের দিন বললেন আজ কি খবর হবে রে। আমি বললাম দাদা, আজ তো রথ। বললেন বাহ খুব ভালো কথা। এই শোন তোদের শ্রীরামপুরের রথ কি জন্যে বিখ্যাত জানিস তুই। আমি বললাম দাদা রাধারাণীর জন্য বিখ্যাত। বললেন যা আজ তাকে খোঁজ কর তুই। বলে ফোন নামিয়ে দিলেন। আমি তো অবাক কোথায় পাবো রাধারানীকে। ক্যামেরাম্যান সৌরভকে নিয়ে গেলাম রথের মেলায় । পেয়েও গেলাম একটা মেয়ে যার বাবা ভান চালায়, মা লোকের বাড়ী বাসন মাজে সে রথে ফুল আর কলা বিক্রি করতে এসেছে। দুটো পয়সার জন্য। ছবি হলো বাইট হলো ভি স্যাট সেন্টার দিয়ে সব পাঠিয়ে দিলাম আমি বললেন ঠিক আছে এরপর তুই জিলিপি খা। সন্ধ্যায় রাধারাণী দেখানো হলো আমার বাংলায়, রাত নটায় দু বার দেখানো হলো। একবার পিঠ চাপড়ে বললেন না ভালো কাজ করেছিস তুই অভিজিৎ। এটাই হলো আমাদের সবার আশীষ দা। যিনি রিপোর্টার এর থেকে কাজ করিয়ে নিতে জানতেন কিন্তু খুব বাহবা দিয়ে রিপোর্টার এর মাথা ঘুরিয়ে দিতেন না তিনি কোনো দিন। 
জেলায় জেলায় প্রবল ঠাণ্ডা। ঠিক ঘড়ি ধরে উওরবঙ্গ থেকে দক্ষিণ বঙ্গের রিপোর্টার দের আশীষ দার ফোন আজ কি আছে রে। সবাই তখন ঘুমের দেশে বেশির ভাগ রিপোর্টার। আমরা কাঁচা ঘুম ভেংগে আমতা আমতা করছি। বললেন এই কটয় সরকারি অফিস খোলে রে। সেই টাইম এর আগে সব রিপোর্টার হাজির ডিএম অফিসে। ঠাণ্ডায় সরকারি বাবুরা জেলায় অফিস আসছেন হেলে দুলে। ঘড়ির কাঁটায় তখন বারোটা বেজে গেছে। সন্ধ্যা হলো আমার বাংলায় রাজ্যের সরকারি অফিসে কর্ম সংস্কৃতির ছবি জেলায় জেলায়। বাস সুপার হিট সেই খবর। এই হলেন বাংলা মিডিয়ার বোকা বাক্সের একজন সুক্ষ্ম কারিগর। যিনি জানতেন কি করলে এই বোকা বাক্সের দর্শক কে ধরে রাখা যায়। তিনি প্রিন্টের লোক হয়েও কি করে যে এত ভালো টিভি চ্যানেলের খবরের মাটির গন্ধ বুঝে যেতেন কে জানে।
এমন বহু ঘটনার মধ্য আর একটা ঘটনার কথা না বললেই নয়। সেটা হলো একটি রাস্তা নিয়ে খবর আমার। গ্রামের এক রাস্তা খুব খারাপ। কাঁচা মাটির রাস্তা। যে রাস্তা বছর বছর সারানো  হয় না কিছুতেই। কিন্তু বর্ষার সময় এই রাস্তা দিয়ে গ্রামের যাদের প্রসূতি মা তাদের খাটিয়া করে হাসপাতাল নিয়ে যাবার সময় কাদায় পড়ে যায় অনেকেই পা পিছলে। আর সেই অবস্থায় পথেই বাচ্চা প্রসব করেন মা। যাদের নাম রাখা হয় পথিক। 
এমন বড়ো পথিক থেকে একদম মার কোলের বাচ্চা পথিক পেয়ে গেলাম আমি সেই গ্রামে গিয়ে। হৈ হৈ করে ছবি করলো সৌরভ বন্দোপাধ্যায় আমার ক্যামেরাম্যান সে ইটিভির। ফুরফুরা আইয়া বড়গাছিয়া রাস্তা এটি। হাওড়া ও হুগলী জেলার বর্ডার এর গ্রাম।থানা ছিল জঙ্গিপাড়া। আমার বাংলায় সেই পথিক এর খবর দেখানো হলো। লেখা লিখলো কৌশিক। যাকে আমরা ও আশীষ দা ক্যাপ্টেন বলতেন। অসাধারন সেই প্যাকেজ দেখানো হলো। আকবর আলি খোন্দকার বিধায়ক খবর দেখে জেলাশাসক কে বলে রাস্তার জন্য নিজে টাকা দিলেন সেই রাস্তা তৈরি হলো পাকা হলো। আবার দেখানো হলো সেই খবর পাকা রাস্তার খবর। এটাই আমাদের সবার আশীষ দা। 
আসলে কাজ আর কাজের ব্যাপ্তি নিয়ে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন তিনি। কোনো হিসেব নিকেশ আর চাওয়া পাওয়ার হিসেব না করেই। বহুদিন পর সিঙ্গুরের কারখানা তৈরীর সময় প্রতিদিন ফোন করতেন আমায় বলতেন অভিজিৎ যা একবার গ্রামে যা তুই চাধীদের সাথে কথা বলে দেখ। সেই সময় তিনি বাংলা স্টেটসম্যান কাগজে আর আমি ইটিভি তে কাজ করি। যাই হোক সিঙ্গুরের গল্প অন্য সময় বলবো বা লিখবো কোনো দিন। কিন্তু এই মানুষটা বুঝেছিলেন জমির এই আন্দোলন খবরের সন্ধান দেবে একদিন। তাই সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের ইস্যু তে তিনি আগে থাকতে আঁচ করেছিলেন এমন হবে তাই বোধ হয় যেতে বলতেন গ্রামে গ্রামে। নিজেও ঘুরতেন গ্রামে।
 যে রাজনীতির লোকদের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল সেই সুযোগে হয়তো রাজনীতির পালা বদলের পর অনেক বড় মাতব্বর সাংবাদিকদের দলে তিনিও নাম লেখাতে পারতেন। ভীড়ে যেতে পারতেন কিন্তু না সেটা করলেন না তিনি। ক্ষমতার মসনদে বসা মানুষদের কাছে এসে বলতে পারলেন না আমায় দেখবেন একটু। আসলে এটা বোধহয় সবার পক্ষে সম্ভব নয়। আর তাই তিনি ভীড় এড়িয়ে দূরেই থেকে গেলেন ক্ষমতার বৃত্ব থেকে।
সেই হট্ট মেলার সময় দুপুর বেলা আসতেন কলকাতা থেকে তিনি।  কত মজার স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই সময়ে। আমার বিয়ের সময় বাড়িতে অশান্তি সেই সময় শাশ্বত কে পাঠিয়ে দিলেন তিনি। যাতে কোনো সমস্যা না হয়। পরে বিয়ের অনুষ্ঠানে এলেন সবাইকে নিয়ে কলকাতা অফিস থেকে। মেয়ের মুখে ভাতেও এলেন। আমার সেই ভাঙা টালির ঘরে রিষড়াতে গেলেন একদিন মার সাথে দেখা করে এলেন। মাটিতে বসে লুচি আর ধোঁকা খেয়ে মাকে প্রণাম করে ফিরলেন এটাই আমার আশীষ দা।
 আসলে একদম মাটির সাথে সম্পৃক্ততার  আচ্ছাদনে নিজেকে ঘিরে রেখেছিলেন তিনি সারা জীবন। কিন্তু ক্ষমতার মাতব্বরি দেখাতেন না কোনোদিন। শুধু বুঝিয়ে দিতেন এটা তিনি পছন্দ করছেন না। বাস এতে কাজ হাসিল হয়ে যেতো। উত্তর থেকে দক্ষিণে সব অনামী ছেলেদের তিনি বিখ্যাত সাংবাদিক তৈরি করে দিলেন তিনি শুধু খবর তৈরি করে। 
জেলায় জেলায় আমাদের মত অচেনা অনামী মানুষদের সবাই চিনে গেলো শুধু এই খবরের দৌলতে। যে সময় এত লাইভ এত ফোন এত নাম প্রচারিত হয়নি আমাদের। তবু আমরা আজও জেলায় জেলায় সমান ভাবেই জনপ্রিয় শুধু সেই ইটিভির পুরোনো আমলের সাংবাদিক বলেই। যে ইটিভির আমার বাংলার খবর আজও মাইলস্টোন হয়ে আছে বোকা বাক্সের জগতে।
 আর আমাদের সবার আশীষ দা আজও নানা খবরের সূক্ষ্ম কারিগর হয়েই  আছেন। আজও হাসি মুখে যখন তখন ফোন করলেই বলেন কিরে কি খবর তোর। কেমন আছিস তুই। কোথায় আছিস বোলপুরে না শ্রীরামপুরে। বয়স হচ্ছে মাথা ঠান্ডা করে চল। যে কোনো সমস্যায় আশীষ দা আজও যে কোনো মিডিয়া হাউসে আজও সমানভাবে দরকারি একজন মানুষ তাঁর বয়েস হলেও। 
যে মানুষটা জানেন খবরের গন্ধ। যে মানুষটা জানেন কি করে এই চূড়ান্ত রাজনীতির খবরের মাঝেও কি খবর কোন খবর মানুষের মন ছুঁয়ে যাবে সেই কথাটা। সেই গ্রামীণ সাংবাদিকতার গুরু ছিলেন তিনি। আসলে খবরের এই  সুনিপুণ দর্জি তো একদিন আমাদের মত ছেঁড়া ফাটা ছেলেদের নিয়েই খবর এর সাম্রাজ্যে ইতিহাস তৈরী করেছেন।
 সেই তাঁর সাথে কাজ করতে পেরে আমি গর্বিত। যে স্বপ্ন নিয়ে রামোজি রাও বাংলায় টিভি মিডিয়া এনেছিলেন যে প্রযুক্তি নিয়ে ইটিভি বাংলা চালু হয়েছিল। সেই স্বপ্নের খবরের কারিগরকে স্যালুট জানাই আমি। দাদা আমার প্রনাম নেবেন। আপনি ভালো থাকবেন দাদা। সুস্থ থাকবেন। আপনি না আমায় সেদিন সুযোগ দিলে আজ হয়তো আমি আমার সাংবাদিক জীবনের উজ্জ্বল এই স্মৃতি কথা লিখতেই পারতাম না কোনো দিন। দাদা আজও আমি ভয় আপনাকে ভয় পাই। আপনার ফোন এলে দাঁড়িয়ে পড়ি। শুধু এটা জানি যে মেরুদণ্ড সোজা রেখে জীবনে চলার শিক্ষা আপনার কাছ থেকে শিখেছি আমি সেটা যেনো সারাজীবনে আমি ভুলে না যাই। এই আশীর্বাদ করবেন দাদা।

ভালো থাকবেন আশীষ দা - অভিজিৎ বসু।
ষোল জুলাই, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

  1. সংবাদ জীবন,সাংবাদিক জীবন আর অকপট ঘটনাপ্রবাহ মন ছুঁয়ে গেল।

    উত্তরমুছুন
  2. কত স্মৃতি! আশীষদা নিজেও বড় সাংবাদিক ছিলেন। বিহার নিয়ে লম্বা সিরিজ লিখেছিলেন - এক কথায় অপুর্ব।

    উত্তরমুছুন
  3. সত্যিই লেখাটা খুব দরকারী ছিল। আশিসদাকে নিয়ে এমন লেখা অসাধারণ হয়েছে। আমিও কৃতজ্ঞ আশিসদার কাছে, একই কারনে। আমিও মফস্বলের একটা আনকোরা ছেলে, তাকেও উনি সুযোগ দিয়েছিলেন কোনও কিছু না ভেবেই। সারা জীবন মনে রেখে চলেছি। তাই তো মানুষকে আমিও আজও আপনি করেই বলি, বাবার মত সম্মান করি। সত্যিই ভাল থাকবেন আশিসদা।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...