সাদা জীবনের কালো কথায় আজ শুধুই চাঁদের কথা। সত্যিই বলতে কি গুরূপূর্ণিমার সন্ধ্যায় সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম চাঁদ দেখবো বলে। চাঁদের এলো মেলো নরম আলো গায়ে মেখে একটু ঘুরবো বলে। সত্যিই বলতে কি জানেন মন ভরা এই চাঁদের জোছনার আলো মাখা নিঝুম রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে যেতে যেতে মনে হলো। সত্যিই তো এইভাবে কোনো দিন চাঁদ দেখার জন্যে অন্ধকার রাস্তায় ঘোরা হয়নি আমার।শুধুই দৌড়ে গেছি। দৌড় থামিয়ে কই ঘাড় ঘুরিয়ে একটিবারও দেখা হয়নি ওই পূর্ণিমার মায়াভরা চাঁদকে।
কতদিন আগেই তো কবি চাঁদের সঙ্গে তুলনা করেছেন শুকনো ঝলসানো রুটির। যে রুটি আমার বড়ই প্রিয়। তিন চারটে হলে মন ভরে না আমার কিছুতেই। এক পেট খিদে নিয়ে রুটি খেতে বসলে কমপক্ষে খান দশেক হলে ঠিক ঠাক হয় আর কি আমার। তাই কবির লেখার সেই চাঁদ আমার কাছে ঝলসানো রুটি নয়।
তবে সে যাই হোক আবার চাঁদের প্রসঙ্গে আসি। এমন জোছনায় ভেসে যাওয়া রাতে যদি একটি বার বনজোছনার ছায়া ঘেরা আলোয় একদম একা আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেন, দেখবেন কোথায় কলঙ্ক আর কোথায় ঝলসানো রুটি। সে যে বড়ই মায়াময়, মেদুর দৃষ্টি দিয়ে আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। আর দুর আকাশ থেকে নেমে আসছে হাজার রাতের ঝাড়বাতির নরম আলো। যে এলোমেলো পেখম তোলা আলো মেখে কেমন নিশ্চিন্তে রাস্তার পাশে ঘুমিয়ে পড়েছে ওই অবলা জীবদুটো। কি নিশ্চিন্ত হয়ে শুয়ে আছে ওরা।
মেলা মাঠের পাশ দিয়ে সাইকেলে চড়ে যেতে যেতে থমকে দাঁড়িয়ে গেলাম আমি। সত্যিই কত নিশ্চিন্তে ওরা এই জোছনা মাখা রাস্তার ধারে পথের পাশে ঘুমিয়ে পড়েছে চাঁদের আলো গায়ে মেখে। আমি চুপটি করে ওদের দেখে দাঁড়িয়ে পড়লাম। সাইকেল থেকে নেমে আকাশ পানে তাকিয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করে তুলে নিলাম ওদের এই নিশ্চিন্ত জীবনের একটুকরো ছবি। যেখানে ওদের জীবনের চাহিদা কম, দৌড় কম, হুল্লোড় বাজি কম, শুধু কোনো ভাবে কাটিয়ে দিতে পারলেই হলো আর কি।
না হয় অন্যদের মত জীবনের দৌড়ে সামিল হতে পারে নি ওরা কিন্তু তাতে কি খুব ক্ষতি তো হয়নি। কেমন নিশ্চিন্তে রাস্তার পাশে গা এলিয়ে দিয়েছে ওরা। এরপর নিজেই ধীরে ধীরে সেই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে বহুদিন পর চাঁদ দেখলাম। সত্যিই তো ওর গায়ে কলঙ্ক কোথায়। ঠিক যেনো দুর আকাশে মেঘের কোলে এক টুকরো সোনার বরণ নতুন সংসার পাতা মেয়ের অভিমানী একটা মুখ। যার সাথে দেখা হয়নি বহুদিন তার প্রিয় মানুষটির। তাই তো সে আজ এত দিন পর কেমন এলোমেলো আলোর স্পর্শে তুফান তুলেছে বিশ্ব চরাচরে। যদি হারিয়ে যাওয়া মানুষটি একটি বার সেই তুফানে তার কাছে ছুটে আসে।
সত্যিই সেই যে ছোটবেলায় দীঘির ধার ধরে কেমন ওই যে ন্যাড়া বেল গাছের মাথায় চাঁদের টুকরো হাসি দেখে দৌড় দিয়ে ঘরে ফিরে এসেছিলাম একবুক চাপা ভয় নিয়ে। ওই গাছের মাথায় নাকি কে বসে আছে গল্পে তেমন কথাই বলেছিল আমায় দিদা ঘুম পাড়াতে। যে দীঘির ধার ধরে ছুটে বেড়ানো আমার সেই ছোটো বেলায় কেমন যেন মনে হয়েছিল তাহলে কি গা ছমছমে আলোর রাতে তেনারা চলে আসেন সত্যিই, নাকি সেটা আমার মনের ভুল।
আজ এত দিন পরে কেমন যেনো একটু অবাক হয়ে গাছের ছায়া ঘেরা মেঠো নির্জন পথে হাঁটতে হাঁটতে মনে হলো আঁকিবুঁকি অক্ষরে কিছু লেখা দরকার। যে লেখার উৎসাহ দিলো দুর দেশের ওই চড়কা বুড়ির দেশ চাঁদের দেশ। যে লেখার উৎসাহ দিলো ওই নিশ্চিন্তে রাস্তার পাশে আপনমনে শুয়ে থাকা দু পেয়ে জীব।
যেখানে আজ আমরা পৌঁছে গেছি অনেক আগেই বিজ্ঞানের দৌলতে। তবু কেমন যেন অচেনা, অধরা ওই মায়াময় চাঁদকে আজও ঠিক আমরা বুঝে উঠতে পারলাম না কেউই। কখনও সে অভিমানী, কখনও সে উচ্ছল আবার কখনও তার মেদুর আলোয় এলোমেলো হয়ে যায় আমাদের শহুরে জীবনের মানুষের স্মৃতি। আর তখন কেমন অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি তাকে।
দেখি কেমন দূরে, অনেক দূরে চুপটি করে চাঁদমামা আমার দিকে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে। মনে পড়ে যায় ছোটো বেলায় সেই মার আদর করা সেই ডাক। চাঁদ মামা আয় আমার সোনার কপালে টু দিয়ে যা। এই বলে মা স্নান করার পরেই আমায় বড়ো টিপ পরিয়ে নখ কেটে চুপ করে বসে থাকতে বলতেন। আমিও কেমন চুপ করে বসে থাকতাম মার কথা শুনে শান্ত হয়ে।
আজ সন্ধ্যায় একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম ওই চাঁদের পানে আপনমনে। যদি সেই মার ডাক একবার শুনতে পাই কোনো ভাবে এই আশায় আলোমাখা নির্জন পথ ধরে হাঁটলাম আমি। আজ সত্যিই তো এইভাবে যে কতদিন চাঁদ দেখিনি আমি। মার সেই স্মৃতি মেদুর ডাক শুনিনি। না, কলঙ্ক কোথায় তার গায়ে। ঝলসানো রুটি তো নয় সে তাহলে। চাঁদের এলো মেলো আলোর ঝাপটায় আমি কত দিন পর আক্রান্ত হলাম। বড়ো ভালো লাগলো সেই ঝাপটা। যে ঝাপটাকে বুকে আগলে ঘরে ফিরে এলাম আমি ধীরে ধীরে সাইকেল চালিয়ে।
চাঁদের এলোমেলো আলোর স্পর্শ - অভিজিৎ বসু।
একুশে জুলাই, দু হাজার চব্বিশ।
চাঁদ, চাঁদের আলো, দুই অবলা জীব আর এক মায়াবী সন্ধ্যেকে নানা শব্দের বন্ধনে বুনেছেন লেখক। এই লেখা জীবনের এক অনুভবকে আন্দোলিত করে। ভিরের মাঝে একাকী এক মানুষের মনে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। ধন্যবাদ সাদা জীবনের কালো কথার লেখককে।
উত্তরমুছুন