সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নয়ে নবগ্রহ

ছোটো বেলায় দুলে দুলে চিৎকার করে পড়তাম একে চন্দ্র, দুয়ে পক্ষ। তিনে নেত্র। চারে চতুর্বেদ। পাঁচে পঞ্চ বাণ। ছয়ে ঋতু। সাতে সমুদ্র। আটে অষ্টবসু। আর নয়ে নবগ্রহ আর দশে দিক। এই যে নব গ্রহের কথা পড়তাম ছোটো বেলায় তখন কি আর বুঝতাম যে এই নটি গ্রহ জীবনের নানা উত্থান পতনের জন্য একমাত্র বল ভরসা মানুষের। তখন তো দুলে দুলে পড়ে গেছি তাদের কথাই আপনমনে। বড়ো হয়ে বুঝলাম এই নয়ে নবগ্রহ আসল চালিকা শক্তি মানুষের জীবনের। যার জন্য সব কিছু নির্ধারিত হয়। 

এই নবগ্রহ হল হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্রের কিছু পরিচিত প্রতীক ৷ এই নয়টি প্রতীক যা , সৌরজগতের গ্রহসমূহের সাথে তুলনীয় ৷ যেমন :সূর্যদেব(সূর্য), চন্দ্রদেব(চন্দ্র), মঙ্গলদেব(মঙ্গল), বুধদেব(বুধ), বৃহস্পতি দেব (বৃহস্পতি গ্রহ), শুক্র দেব (শুক্র গ্রহ), এবং শনিদেব (শনি), আর রাহু ও কেতু ৷

 যে নটি গ্রহের অবস্থানের হের ফেরে আমাদের জীবনের উত্থান পতন দায়ী বলে মনে করা হয়। কেউ বলেন আমার এখন শনির দশা চলছে। কেউ বলেন মঙ্গল ডাউন আছে এই সময়ে আমার। কেউ আবার বলেন আমার বৃহস্পতি তুঙ্গে এখন।আর কারুর মুখে শুনি রাহু কেতু ভালো অবস্থানে নেই। নানা গ্রহের অবস্থানের কারসাজিতে মানুষের জীবনের হাসি আর কান্না লুকিয়ে থাকে বলে মনে করা হয়। কিন্তু সত্যি কি এই সব গ্রহ নক্ষত্র আমাদের জীবনের ওঠা নামাকে কন্ট্রোল করে। না কি এগুলো সব মনগড়া একটা বিষয়। 
জ্যোতিষশাস্ত্রে একটা খুব প্রচলিত কথা আছে সেটা হলো। ‘শনিবত্ রাহু’ ও ‘কুজবৎ কেতু’। রাহু ও কেতু অনেক বিষয়েই যথাক্রমে শনি ও মঙ্গলের মত বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে ও তদনুরূপ ফল প্রদান করে। সে যাই হোক আমার এই নবগ্রহ নিয়ে লিখতে গিয়ে মনে হলো যে সত্যিই তো এই নবগ্রহ কি জীবনের ঝড় ঝাপটা সামাল দেয়। না কি এদের কোনো প্রভাব নেই। সব নিজের কর্মফল আর প্রারব্ধ কর্ম ফলের ফল মাত্র।
 ভালো কাজের জন্য ভালো ফল। আর খারাপ কাজের খারাপ ফল লাভ হবেই। সে এই জীবনেই হোক বা পর জন্ম বলে যদি কিছু থাকে সেই জন্মেই হোক। এটাই হলো নিয়ম জগতের। কেউ কেউ বলবেন না না এসব ঠিক কথা নয়। অনেকেই খারাপ কর্ম করে তো বেশ ভালই সুখে দিন যাপন করছেন। কই কিছুই খারাপ হয় না তাদের। 
আপাতত ভালো দিন কাটলেও একসময় কালের নিয়মে খারাপ সময় আসবেই সুখের অনুভুতির পরে। এটাই হলো গ্রহের ঘূর্ণাবর্তের প্রভাব। শাস্ত্রের কথায় আছে, সুখানি চ দুখানি চ, চক্রানি পরিবর্তন্তে। সুখ আর দুঃখ চক্রের মতই ঘুরবে জীবনের রাস্তায়। সুখ এলে মনে হবে আমার দেবগুরু বৃহস্পতি তুঙ্গে আছেন। আর খুব খারাপ সময় গেলে মনে হবে শনি, রাহু, কেতু আমায় ঘিরে ধরে আছে। তাই এত ঘোর দুর্দিন।

সুর্য -

এখন এই নবগ্রহের অন্যতম গ্রহ সূর্য তার সাত অশ্বের রথে চড়ে এদিক ওদিক ঘরে বেড়ান। সূর্য (সংস্কৃত: सूर्य, Sūrya, "সর্বোচ্চ আলোক" নবগ্রহের মধ্যে যিনি প্রধান। তিনি ঋষি কশ্যপের পুত্র ৷ তার কেশ এবং বাহু স্বর্ণের ৷ তার রথ সাতটি ঘোড়া দ্বারা চালিত হয়। তার রথের সারথি হলো অরুণদেব। তার সম্মানার্থে সপ্তাহের একটি দিন হল রবিবার ৷ তার স্ত্রীর নাম সংঙ্গা ও ছায়া। তার অস্ত্র ভগবান বিষ্ণুর অস্ত্রের মতোই। শঙ্খ,চক্র,গদা ও পদ্ম। তার কয়েকটি নাম হলোঃ সূর্য, নারায়ণ, আদিত্য,রবি ইত্যাদি। সূর্যের সন্তানরা হলেন, কর্ণ,যম,যমুনা,শনি,ভদ্রা,তপতী,অশ্বিনী-কুমারদ্বয় প্রমুখ। এই সূর্য দেবতার পূজা করলে তাঁর আশীর্বাদ মেলে। 

চন্দ্র-

চন্দ্র  একজন দেবতা ৷ তিনি সুদর্শন, সুপুরূষ, দ্বি-বাহুযুক্ত ও তার এক হাতে অস্ত্র ও অন্য হাতে পদ্ম ৷ তিনি তার সাতটি হরিণের শ্বেত রথে চড়ে রাত্রে আকাশে উদিত হন ৷ তার সম্মানার্থে সপ্তাহের একটি দিন হল সোমবার ৷ তার গায়ের রং শ্বেতবর্ণ। তিনি মহাদেবের জটায় অর্ধচন্দ্র রুপে বিরাজমান। তিনি প্রজাপতি দক্ষের ২৭টি কন্যার জামাতা। এই চন্দ্রের আশীর্বাদ জীবনে সুখ শান্তি নিয়ে আসে।

মঙ্গল-

"মঙ্গল" হলেন ভূমির পুত্র ৷ তিনি যুদ্ধের দেবতা এবং অবিবাহিত ৷ তাকে পৃথিবী/ভূমি দেবীর পুত্র বলা হয়। তার দেহে বিজয় এবং গর্বের চিহ্ন বর্তমান, তার চতুর্বাহু ৷ তার সম্মানার্থে সপ্তাহের একটি দিন হল মঙ্গলবার। তার গায়ের রং লাল। তার বাহন মেষ।

বুধ-

বুধ হল একটি সংস্কৃত শব্দ যে শব্দের অর্থ হল গ্রহ। বুধ, হলেন একজন পৌরাণিক চরিত্র,এছাড়াও তিনি একজন দেবতাও। এছাড়াও তিনি আরও অনেক নামে পরিচিত যেমন সৌম্য যার অর্থ চন্দ্রের পুত্র, যার অপর নাম রোহিনেয়। যার অর্থ হলো রোহিণীর পুত্র এবং তার নামানুসারে সপ্তাহের একটি দিনের নাম বুধবার। বুধকে ভারতীয় গ্রন্থে একজন দেবতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রায়শই তাকে চন্দ্র এবং তারার(বৃহস্পতির পত্নী) পুত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এবং তিনি বিকল্পভাবে দেবী রোহিণী এবং চন্দ্রদেবের পুত্র হিসেবে বর্ণিত হন। তার চার হাত। তার পত্নী ইলা। শ্রীবুধের বাহন হলেন সিংহ। বুধ গ্রহের প্রভাব আছে জীবনে।

বৃহস্পতি/দেবগুরু-

বৃহস্পতি হলেন দেবগুরু। তাই বৃহস্পতি দেবতাদের সবার গুরু। তিনি অঙ্গীরা ঋষির পুত্র। তিনি মহাদেবের তপস্যা করেন। মহাদেব তার তপস্যায় তুষ্ট হয়ে তাকে দেবতাদের গুরু বা আচার্য পদে নিযুক্ত করেন। বৃহস্পতি চার হাত বিশিষ্ট। তার হাতে আছে দন্ড, পদ্ম ও জপমালা। তিনি হলুদ বর্ণের বস্ত্র পরিধান করেন। তার বাহন হস্তি। তার পত্নী তারা দেবী। তার সম্মানার্থে সপ্তাহের একটি দিন হল বৃহস্পতিবার। এই বৃহস্পতির প্রভাবে সংসারে জীবনে সুখ শান্তি সমৃদ্ধি বিরাজ করে।
 

শনি-

শনি নবগ্রহের একটি অন্যতম গ্রহ। শনি গ্রহকে গ্রহরাজ ও মহাগ্রহ বলা হয়ে থাকে। শনিদেব হিন্দুধর্ম মতে একজন দেবতা। জ্যোতিষীদের মতে শনির কুদৃষ্টি অশুভ ফল নিয়ে আসে জীবনে। তিনি খারাপের জন্য খারাপ ও ভালোর জন্য ভালো ফল বয়ে আনেন। সৌরজগতের শনি গ্রহ ও সপ্তাহের শনিবার দিনটি শনিদেবের নামে নামকরণ করা হয়। শনিদেব কে শনিশ্চর বা শনৈশ্চর নামেও ডাকা হয়। তার পত্নী ধামিনী। তার সন্তান মান্দী ও কূলিগ্না। তিনি সূর্যদেব ও ছায়ার পুত্র। তার চারটি হাত। তার হাতে আছে ধনুক,বাণ,ত্রিশুল ও গদা থাকে। তার গায়ের রং কালো। তিনি ধীর গতির তাই তিনি আস্তে চলেন। তার বাহন কাক বা শকুন। এই শনি দেবতার প্রভাবে নানা ধরনের ফল লাভ হয় মানব জীবনে।

শুক্র/দৈত্যগুরু-

শুক্র যে শব্দের অর্থ "নির্মল। এই দেবতা হলেন স্বচ্ছ, উজ্জ্বল, একজন প্রাচীন ঋষি ও দেবতা যিনি বৈদিক পুরাণ অনুসারে অসুর ও দৈত্যদের গুরু। তার সম্মানার্থে সপ্তাহের একটি দিন হল শুক্রবার। তিনি মহাদেবের তপস্যা করে মৃতসঞ্জীবনী বিদ্যা প্রাপ্ত হন। এঁর বাহন হল সাদা ঘোড়া।

রাহু-

রাহু হিন্দু জ্যোতিষ অনুসারে,স্বরভানু নামে এক অসুরের কর্তিত মুন্ড। যে গ্রহণের সময় সূর্য বা চন্দ্রকে গ্রাস করে। জ্যোতিষশাস্ত্রে, একে নবগ্রহের মধ্যে একটি স্থান দেওয়া হয়েছে। দিবাভাগে রাহুকাল নামক মুহূর্তকে (২৪ মিনিট) অশুভ বলে গণ্য করা হয়। এর আবাস হলো পাতাললোকে। এর বাহন নীল বা কালো ঘোড়া। স্বরভানুর মুন্ডকে রাহু ও দেহকে কেতু নাম দেওয়া হয়েছে। ব্রহ্মাদেব রাহু ও কেতুকে গ্রহের স্থান দিয়েছেন। এর প্রভাব আছে মানব জীবনে বলে মনে করা হয়।

কেতু-

কেতু, পুরাণ অনুসারে, ইহা স্বরভানু নামক এক অসুরের মস্তকহীন দেহ। যা সমুদ্র মন্থনের সময় ভগবান বিষ্ণু আপন সুদর্শন চক্রের মাধ্যমে এর মুন্ড ছিন্ন করে দেন। বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্রে, একে নবগ্রহের মধ্যে একটি স্থান দেওয়া হয়েছে। কেতুর আবাস অসুরলোকে। কেতুর বাহন হলো চিল। কেতুর প্রভাব আছে জীবনে।

নবগ্রহ মন্দির-

নবগ্রহ মন্দির আসামের গুয়াহাটিতে অবস্থিত প্রাচীন মন্দির। যে মন্দিরে এই নবগ্রহের পূজো করা হয়। এই নবগ্রহ মন্দির আসামের গুয়াহাটী মহানগরের চিত্রাচল পাহাড় (নবগ্রহ পাহাড়)এ অবস্থিত এক প্রাচীন মন্দির। এখানে সূর্যকে ধরে ন'টা গ্রহের শিলাচিহ্ন আছে৷ এখানে থাকা বিভিন্ন গ্রহের শিলাচিহ্নগুলি হল- সূর্য, চন্দ্র, মঙ্গল, রাহু, শনি, কেতু, বৃহস্পতি, বুধ এবং শুক্র।

এই মন্দির অতি প্রাচীন এবং ঐতিহ্যসম্পন্ন৷ নবগ্রহ মন্দিরের সঙ্গে অনেক কিংবদন্তি এবং জনশ্রুতি জড়িত হয়ে আছে৷ এই মন্দির কবে কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। এই মন্দিরের প্রাঙ্গণে থাকা এক শিলালিপি অনুসারে ১৭৫২ সালে আহোম স্বর্গদেউ রাজেশ্বর সিংহ মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করিয়েছিলেন বলে জানা যায়৷ ১৮৯৭ সালের বিরাট ভূমিকম্পে এই মন্দিরটির বিস্তর ক্ষতি হয় এবং পরে ধর্মপ্রাণ রাজার সহযোগিতায় পুনর্নির্মাণ করা হয় এই মন্দিরের।

এই মন্দিরে দৈনিক নবগ্রহের পূজা-পাঠ হওয়ার সঙ্গে প্রতি বছর মাঘ-ফাগুনের সংক্রান্তিতে মহা সমারোহে তিনদিন ধরে মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়৷ এই মন্দিরে কোনো বলি-বিধানের ব্যবস্থা নেই, যদিও ছাগল, হাঁস ইত্যাদি উৎসর্গ করার সাথে ব্যক্তিগত যাগ-যজ্ঞ হোম ইত্যাদি করা হয়। 
এই নবগ্রহ হলো ৯টি গ্রহ। জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত দেবতাদের দল তাঁরা সবাই। যে দেবতারাই আমাদের জীবনের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে এদিক ওদিক করেন বলে অনেকেই মনে করেন। সেই ছোটো বেলায় নামতা বইয়ে পড়া নয়ে নবগ্রহ। যা তখন বুঝিনি শুধু মুখে আউড়ে গেছি। যার প্রভাবে সংসারে, জীবনে, নানা ঝড় ওঠে, ঝাপটা আসে। আর আমরা সেই সবকে সামলে জীবনের রাস্তায় হাসি মুখে চলার চেষ্টা করি। আর মুখে বিড় বিড় করে বলি জয় নবগ্রহের জয়। 

নয়ে নবগ্রহ - অভিজিৎ বসু।
আটাশে মে, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...