সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভালো থাকবেন কেষ্ট দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এই ফাঁকা শুনশান একটা বাড়ীর কথা। ভাবা যায় ভরা ভোটের বাজারে বোলপুরের এই বাড়িতে একটাও লোক নেই, ভীড় নেই, কোনো গাড়ীর লাইন নেই, ফোনের পর ফোন নেই, চড়াম চড়াম ঢাকের বাদ্যি নেই, গুড় বাতাসা প্রসাদ নেই, কত লিড হলো বলে চিৎকার চেঁচামেচি নেই, নেতার ঠান্ডা চোখের সামনে হাত জোড় করে কর্মীদের হা পিত্যেশ করে বসে থাকা নেই, সাংবাদিকদের থিক থিকে ভীড় নেই, পুলিসের জোর তৎপরতা নেই। 
আজ এই প্রখর গরমে কেমন যেনো নেতিয়ে পড়ে আছে এই বাড়িটা। বোলপুরের অনুব্রত মণ্ডলের ওরফে আমাদের সবার কেষ্টদার এই বাড়িটা। কেমন যেনো প্রাণহীন ট্রাম লাইনের মত পড়ে আছে এই বাড়িটা রাস্তার একপাশে। সত্যিই তো ভাবুন কত দাপট, কত অহংকার, কত হুমকি, মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা কেমন থমকে যাওয়া উন্নয়নের প্রতীক হয়ে এই বাড়িটা আজ দাঁড়িয়ে আছে কেমন জনমানবহীন হয়ে। এই বাড়ির সবাই আজ সেঁধিয়ে গেছে তিহার জেলের অন্দরে।
 ভাবলেও কেমন আমার খুব যন্ত্রণা হয়, কষ্ট হয়, বুকের মাঝে একটা চাপা কষ্ট অনুভব হয়। একজন রাজনীতির ময়দানে চড়াম চড়াম করে ঢাক বাজানো নেতার হাত থেকে ঢাকের কাঠি কেড়ে নেওয়া হলো হঠাৎ করেই। যে রাজনীতির কারবারিকে দিয়ে বীরভূমের এই লাল মাটিতে গোলাপ ফুল এর বদলে সবুজ ফুল ফোটানো হলো, ঘাসের ওপর ফুল ফুটলো। যার কারিগর একমাত্র তিনিই। যার হাত ধরে ফুটবল ম্যাচে জিতলো তৃণমূল সেই কেষ্ট দা আজ জেলায় নেই, নিজের বাড়িতে নেই, এলাকায় ভোটের মাঠে ময়দানে নেই। এটা ভাবলেও কেমন অবাক লাগে তাই না। 
কত গর্ব, অহংকার, নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই বাড়িটা যেনো আজ ভোটের বাজারে কেমন নিঝুমপুরী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একদম একা, একা। ফ্ল্যাশলাইটের সব আলোটাই কেমন যেন আজ ম্রিয়মান হয়ে গেছে আচমকাই। হাত তুলে সবাইকে অভয় দেওয়া সেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ সেই নেতা কেষ্টদাকে আজ আর কেউ অভয় দেয় না। বলে না যে দল সব সময় তোমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তোমার পরিবারের সদস্যদের সাথে আছে। তোমার মেয়ের পাশে আছে।তুমি একদম ভেবোনা। সবটাই তো আমরা জানি এগুলো সব রাজনীতির প্রতিহিংসার খেলা। তুমি ভেঙে পড়ো না। 
না, তেমন কথা, তেমন আশার কথা কে আর বলে এই ভোটের বাজারে তাকে। মেয়েটাও কেমন যেন হয়ে গেছে আজকাল। মনে মনে কষ্ট হয় তাঁর মেয়ের কথা ভেবে। মা মরা বাপের একমাত্র মেয়ের জন্য দু চোখের কোল ভিজে যায় তাঁর জেলের অন্দরে বসে। ভাবে সত্যিই তো জীবনের এই ঝুঁকি নিয়ে অনেক কিছুই করলেও দল তো সেভাবে তাঁকে নিরাপত্তা বলয় দিতে পারে নি। তাহলে এত মারদাঙ্গা করে লালপার্টির হাত থেকে জোর করে ক্ষমতা দখল করে কি লাভ হলো তার নিজের জীবনে। 
তিহার জেলের অন্ধকার কুঠুরীতে বসে বসে আজ আকাশ পাতাল স্বপ্ন দেখে কেষ্ট মন্ডল। মনে পড়ে যায় তাঁর প্রিয় সেই বাড়িটার কথা। যে বাড়িটায় আজ আর কেউ দেখভালের নেই। বাড়ির চারিদিকে হুটারের আওয়াজ নেই। ভোটের সময় দড়ি বেঁধে ট্রাফিক কন্ট্রোল করতে হচ্ছে না কাউকে। এবার বোধ হয় ভোট দেওয়া হবে না তার আর। ভোট দিতে যাবার সময় কত ক্যামেরার চোখ তাক করা থাকত তাঁর দিকে। কি ভালো যে লাগতো তাঁর বেশ উপভোগ করতেন মজা করে কমিশনের ঘেরাটোপে নজর বন্দী হয়ে।
 সব কিছুই মিস করছেন তিনি আজকাল এই বছর লোকসভা ভোটের সময়। ভাবছেন পুরোনো সেই অতীত জীবনটা বেশ ছিল। সেই বাজারে মাগুর মাছ বেচার জীবন। এই সাধারণ জীবন যাপন বেশ ভালই ছিল। রোজগার কম ছিল কিন্তু এত চিন্তা ছিল না। সেই সব সাধারন জীবন যাপন করতে করতে রাজনীতির আঙিনায় প্রবেশ করা। আর তারপর ধীরে ধীরে বীরভূমের বেতাজ বাদশা বনে যাওয়া তাঁর। যার নামে এক সময় বাঘে গরুতে একসাথে জল খেত বীরভূমের মাটিতে। আজ সেই বাদশার চোখে জল।

যে বেতাজ বাদশার এই ভোটের মরশুমে সত্যিই মন ভালো নেই। মন খারাপ না করে, ভালো থাকবেন আপনি কেষ্ট দা। রাজনীতির ঘোরপ্যাঁচ, মারপ্যাঁচ খুব জটিল কেষ্ট দা। তাই এরপর থেকে একটু হিসেব করে পথ চলুন আপনি জীবনে। সবাইকে বিশ্বাস না করে, ভরসা না করে নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নিন। দেখবেন আপনি পরিবার নিয়ে মেয়েকে নিয়ে ভালো থাকবেন অনেকটা। 
একটু কম ক্ষমতার অধিকারী হয়েও, কম টাকার মালিক হয়েও সাধারণ মানুষ হয়ে বেঁচে থাকা যায়। এটাকে রপ্ত করে নিন, দেখবেন সহজেই আপনার জীবনটাও ভালো হয় যাবে আবার। আর এই মনের চাপা কষ্ট, যন্ত্রণা অনুভবটাও কেমন করে কেটে যাবে ধীরে ধীরে। এই ফাঁকা বাড়িটায় একা একা বসে আকাশ দেখবেন আপনি ভালো লাগবে। ভীড় উপচে পড়া বাড়ীর থেকে ফাঁকা শান্তির বাড়ী অনেক ভালো।ভালো থাকবেন কেষ্ট দা। মন খারাপ করবেন না।

ভালো থাকবেন কেষ্ট দা - অভিজিৎ বসু।
ঊনত্রিশ এপ্রিল, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...