গুপী ও বাঘার মত হটাৎ যদি আজ বাঁশ বনে এমন একটি ভূতের সাথে দেখা হয় আমার, আর সে বলে যে কোন একটা বর তোমাকে দেওয়া হবে, তুমি কি চাইবে....? সত্যিই এটা একটা বড়ো চিন্তার বিষয়। সারা রাত ধরে ভাবতে হবে কি চাইব ভূতের রাজার কাছে।
গোল গোল চোখ করে হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ভূতের রাজা। মিটি মিটি হাসছে আর নাকি সুরে বলছে কোন বর , কোন বর ,তাড়াতাড়ি বলে ফেলো, বলে ফেলো। ভোর হয় ,ভোর হয়। কিন্তু না হাজার চিন্তা করেও মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলেও কি চাই বলতে পারলাম না তাকে।শুধু অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি ভূতের রাজার মুখের দিকে।
ভাবি তাহলে ওই বাঁশবনের ভূতের রাজা মশাই সত্যিই এলেন আমার কাছে। ভূত চতুর্দশী রাতে গোপন অভিসারে এলেন তিনি ,ভূতের রাজা ঠিক রাজার মতোই এলেন। নিশুতি রাতে চারিদিক নিস্তব্ধ অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে সবকিছু। তার মাঝে তার এই আগমন। আমরা কি জানি ,আমরা কি চাই। যা নিয়ে আমরা আমাদের চাহিদার অন্ত হয়েছে বলে ঢেঁকুর তুলবো সবার সামনে। আমরা কি জানি যা চেয়ে পেলাম তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে থাকবো বাকি জীবন। আর ডাকব না কাউকে ,বলবো না এটা একটু দাও। না হলে যে চলছে না আমার।
মনে হয় না আমার গুপি আর বাঘা বেশী সময় ধরে ভাবনা চিন্তা করেছিলেন কি চাইবে তারা। তারা পট পট করে তিনটি বর চাইলেন আর ভূতের রাজা সেই বর মঞ্জুর করলেন তাদের। এত ভাবতেই হয় নি কাউকে ওদের। দুর থেকে রাতের অন্ধকারে কালো কুকুরের ডাক ভেসে এলো। জানলার পাশে ডানা ঝাপটালো নাম না জানা পাখি। ঘরে নিঃশব্দ দেওয়ালে হেলান দিয়ে ধূসর পেটমোটা টিকটিকি তার উপস্থিতি জানান দিল। আর জানলার বাইরে গোল চোখে হেসে যাচ্ছেন ভূতের রাজা মশাই, কিন্তু আমি বিশ্বাস করে তাকে কি চাই বলতে পারলাম না সারা রাত ভেবেও।
এর থেকে যন্ত্রণা আর কি আছে বলতে পারেন। বললে তো হতো রাজা মশাই আমায় ক্ষমতা নয় ,ক্ষমা করার শক্তি দিন যাতে কেউ ক্ষমা চাইলে অক্লেশে তাকে ক্ষমা করে দিতে পারি। দুবার না ভাবি সেটা করতে, কোনও হিসাব না করি কেনো ক্ষমা করব।এটাও তো বলতে পারলাম না কাউকে উপকার করে তাকে বার বার যেনো না বলি আমার উপকার নিয়ে তুমি বেঁচে আছো। এই বলে তাকে দিন রাত তির বিদ্ধ না করি। আর সে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে এটা দেখে আমি সুখে আহ্লাদিত না হই। এই বরটাও তো চাইতে পারতাম।
কেনো আমি এগুলো বলতে পারলাম না, কেনো আমার জিভ দিয়ে এই কথা গুলো বের হলো না কে জানে। বলতে পারলাম না রাজা মশাই আমি যেনো হাসি মুখে তোমার মত অন্যকে আনন্দ দিতে পারি আর কিছুই চাই না আমি। নাহ পারলাম না ,এসব কিছুই বলতে। ধীরে ধীরে আবছা আলোয় আলোকিত অবয়ব টিকে দেখলাম হাত নাড়তে নাড়তে দূরে মিলিয়ে যাচ্ছে। আর বলছে সব তোরা ভালো থাক, ভালো থাক।আমার বড় ভয় হয়, ভয় হয়। তোকে নিয়ে ভয় হয়।
আমি শুকনো ঠোঁটে জিভ বুলিয়ে অস্ফুটে বলি কেনো মহারাজ ভয় কিসের। চোখ পিট পিট করে বলেন তিনি,মনে বড়ো জোর আন ,জোর আন।কি চাস ভেবে বুঝে ঠিক কর, ঠিক কর। শুধু নিজে ভালো থাকা, নাকি অন্যকেও ভালো রাখা সেটা ভাব ,সেটা ভাব।ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যায় আলোক বৃত্ত। ক্ষীণ হয়ে যায় তার গলার আওয়াজ। আমি চোখ কচলে দেখি সত্যিই না মিথ্যে কেউ কি আছে।
নাহ জানলার পাশে কেউ নেই, শুধু উত্তুরে ঠান্ডা হাওয়া শন শন করে বয়ে যায়।সেই ঠাণ্ডা হাওয়ায় আমার অস্থির জীবন ধীরে ধীরে স্থির হয়ে আসে। ঠাণ্ডা হাওয়ার ঝাপটা আমার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।চোখ বুজে সেই ঠান্ডা হাওয়া অনুভব করি আমি।দেখি রাতের নিস্তব্ধ অন্ধকারে কোথায় হারিয়ে গেছে কে জানে সেই ভূতের রাজা।
ভূতের রাজা দিলো বর- অভিজিৎ বসু।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন